পদ্মা সেতু তৈরি নিয়ে কয়েকটি কথা

পদ্মা সেতুর অবশ্যই প্রয়োজন আছে। কিন্তু, সেতুটা এখনই তৈরি করা প্রয়োজন আছে কিনা ভেবে দেখার সুযোগ আছে। সময় মত পদ্মা সেতু না করাতে, কয় একটা প্রবলেমের উদ্ভব হইছে। সেই গুলোর আলোকে কথাটা বলতাছি।

প্রবলেম ১। বিশ্ব ব্যাঙ্ক ক্রেডিট তুলে নেয়াতে, সামসাইং এবং ডেইলিম এর মত কন্ট্রাক্টররা চলে গ্যাছে। আছে এক চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং। এবং বিশ্ব ব্যাঙ্ক যে দুর্নীতি অভিযোগ তুলছিল, সেইটা আমার হিসেবে প্রমাণিত হইছে। চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং বাংলাদেশের অলিখিত পার্টনার হইলো বাংলাদেশের সব চেয়ে দেশপ্রেমিক প্রতিষ্ঠান সাকো ইন্টারন্যাশনাল যার প্রধান হইলো, প্রখ্যাত দুর্নীতি মুক্ত দেশপ্রেমিক আবু্ল।

প্রথম আলোর ২২ তারিখের তথ্য মতে, এই প্রতিষ্ঠান সাকো ইন্টারনশনালের সাথে পাকশিতে লালন সেতু নির্মাণ করতাছে। এবং ঢাকা ট্রিবিউনের নিউজে দেখলাম, এরা কুড়িল ফ্লাইওভারের বড় একটা অংশ এরাই করছে।তার মানে আবুলের আমলের কাজ গুলো সব এরাই পাইছে।

পদ্মা সেতু আমাদের দেশের অত্যন্ত গুরুত্তপুরন সেতু। এই সেতুর নির্মাণ পরিকল্পনা হইতে শুরু করে কন্ট্রাক্ট ইভালুয়েশান এমন একটা কোম্পানির সহযোগী হইছে, যেই কোম্পানির মালিক দেশের যোগাযোগ মন্ত্রী ছিল মাত্র ৬ মাস আগে। এখনও তার নিজের লোক, ইনফ্লুয়েন্স সব কিছু আছে। এইটা যদি কনফ্লিক্ট অফ ইন্টেরেস্ট না হয়, কনফ্লিক্ট অফ ইন্টেরেস্ট কাকে বলে জানিনা। কোন পেপারকেও দেখলাম না, এইটা নিয়ে ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্ট করতে।

প্রবলেম ২। ৯০০০ কোটি টাকা থেকে পদ্মা সেতুর খরচ এখন পউছাইছে ১২,০০০ কোটি টাকা। এবং প্রফেশনালের বদলে প্রফেশনালি দুর্নীতিবাজ কোম্পানি দিয়ে কাজ করাইলে, যেইটা হবে সেইটা এখন ঢাকা চিটাগন চার লেইনে চলতাছে। এরা প্রথমে কম খরচ দিয়ে কন্ট্রাক্ট জিতে নেয়, তারপরে প্রজেক্টরে বিভিন্ন ভাবে টালবাহানা করে আটকায় দিয়া খরচ বাড়াইতে থাকে। এবং আমাদের প্রশাশনের, এদেরকে আটকানোর মত দক্ষতা বা আইনি সুরক্ষা নাই। এর ফলে, এরা বিভিন্ন ভাবে চিপে টাকা বের করতে থাকে। গতকাল প্রথম আলোতে ছিল, ঢাকা চিটাগং চার লেইন প্রজেক্টের ৭০% কমপ্লিট না করে চাইনিজ কোম্পানি কেমনে সরকাররে ব্লাকমেইল করতাছে।

কারণ, এই সব প্রফেশনালি দুর্নীতবাজ কোম্পানি যারা বাংলাদেশের সরকারকে চিপে টাকা বের করার সিস্টেম বুঝে গ্যাছে, কারণ, তাদের সাথি হইলো, দেশের সব চেয়ে দেশপ্রেমিক ব্যক্তি এবং তাদের সাঙ্গোপাঙ্গোরা।

পদ্মা সেতুতে এখন, বিশ্ব ব্যাঙ্ক , জাইকা, এডিবি না থাকার কারনে, প্রতিটা পদে আর কেউ দুর্নীতির আওয়াজ তুলবেনা। ইন্টেরন্যাশ্নাল স্ট্যান্ডার্ডে দুর্নীতি হবেনা, বাংলা স্ট্যান্ডার্ডে দুর্নীতি হবে।

সাপ্লাই চেইনে যেই কাজ করেছেন, সে জানেন। যে কোন প্রোজেক্টের সব চেয়ে গুরুত্তপুরন সিদ্ধান্ত হচ্ছে, ভেন্ডর সিলেক্সান।

পদ্মা সেতুর মত কাজে এই ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন টেন্ডারে একক কোম্পানি দিয়ে কাজ করানোর জন্যে আমাদের কয় শতক ধরে সাফার করতে হবে।

তৃতীয় আলাপ। এইটা প্রবলেম না। এইটা মত। এইটায় আপনি আমার সাথে সম্মত নাও হইতে পারেন।

সেইটা হইলো, নদীমাতার দেশের সন্তান হিসেবে আমাদের নদীকে ভয় পাইলে চলবেনা।

এমননা যে, পদ্মা নদীকে পার হওয়া যাইতেছে না। ফেরি দিয়ে পার হওয়া যাচ্ছে।

পদ্মা নদীর উপরে সেতু নাই, সেইটা কিন্তু আসল সমস্যা না। সমস্যা হইলো, ঢাকা থেকে দক্ষিন বঙ্গে পরিবহণে প্রয়োজনের থেকে দীর্ঘ সময় লাগে।

এবং এর অনেক গুলো কারনের মধ্যে একটা কারণ হইলো পদ্মা নদীর উপরে সেতু নাই। কিন্তু, বাকি কারণ গুলো যদি দেখেন তাইলে দেখবেন, ঢাকা থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত চিকন রাস্তা, জ্যাম, অনেক গুলো বাজার এবং শহর পরে। এই রাস্তাগুলোকে যদি চার লেইন করা যায়, এবং এই জ্যাম যদি কমিয়ে নিয়ে আসা যায় এবং টাউনশিপগুলোকে বাইপাস করা যায় এবং ফেরি ঘাটে আধুনিক সিগনাল সিস্টেম করে, কয় একটি ফেরি এবং ঘাট এমনভাবে সৃষ্টি করা যায় যে, কোন গাড়িকেই ফেরির জন্যে অপেক্ষা করতে হবে না, একটা না হলে অন্য লেনের ফেরীতে উঠে যাবে -তাহলেও কিন্ত সমস্যা সমাধান হয়। এবং এর ফলে, কিন্তু এই পারের মানুষের ঢাকার সাথে যোগাযোগ সহজ হয়ে উঠবে।

আবার এইটা আমার পারসেপ্টরি মতামত। বিসেষজ্ঞরা বিভিন্ন অপশনের কস্ট বেনেফিট এনালাইসিস করে, সঠিক সিদ্দান্ত নিবেন। এইটাই আমরা আশা করি।

আমার জাস্ট ভয়, ১৩০০ কোটি টাকার একটা চাপ বাজেটের উপরে গেলে, সেইটা দেশের অন্য ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টকে, ক্ষতি করতে পারে।

চতুর্থ এবং ফাইনাল প্রবলেম । এই ধরনের বিশাল প্রজেক্ট অবশ্যই ওয়ার্ল্ড ক্লাস কোম্পানি দিয়ে করানো উচিত। যাদের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে সুশাসনের চর্চা আছে, যারা ঠিক টাইমে প্রজেক্ট বের করে নিয়ে টাকা তুলে নিয়ে যেতে চায়। এই ধরনের কোম্পানিকে আকর্ষণ করাটা একটা চ্যলাঞ্জ। কিন্তু, পদে পদে টাকা দিতে হয় বলে, এরা বাংলাদেশে আসেনা। অথছ, বেশী টাকা লাগলেও, শুধু মাত্র এই ধরনের কোম্পানি দিয়ে পদ্মা সেতু করলেই আমাদের স্বার্থ রক্ষিত হবে। সাকো ইন্টেরন্যাশনালের সহযোগীরা, যারা বাংলাদেশের দুর্নীতি মগ্ন প্রশাসনকে প্রতিনিধিত্ব করে, তাদের দ্বারা পদ্মা সেতু করলে, আমাদেরকে অনেক সাফার করতে হবে।

এবং চিনা ব্রিজ কোম্পানির ইতিহাস বলতাছে, এরা চাইনিজ মাল, যারা বাংলাদেশে কাজ করার গর্ত এবং আরাম বুঝে গ্যাছে ।

প্রবলেম শুধু দুর্নীতি না, প্রবলেম হইল্‌ আমরা চাইনা, পদ্মা সেতু, আরেকটা চাইনিজ মাল হোক।

Loading

জিয়া হাসান

About জিয়া হাসান

লেখক: প্রাবন্ধিক। প্রকাশিত গ্রন্থ : শাহবাগ থেকে হেফাজত: রাজসাক্ষীর জবানবন্দি -

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *