২৮ অক্টোবর- ৭ বছরের উত্তর ৭ মিনিটে

হাজার ঘণ্টা রাজনৈতিক বক্তব্যের এক তোলাও মূল্য পাওয়া কঠিন। সাত বছরের প্রশ্নের উত্তর সাত মিনিটে সম্ভব কিভাবে?
রাজনীতিকে ইয়াবার আসক্তি মনে করলে, গাঁজার আসর চলবে অনন্তকাল। নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের প্রয়োজন এক দিনের জন্যও শেষ হবে না। ধোয়া তুলসীপাতা একজনও নয় কিন্তু রাজনীতিতে যে ‘জঙ্গি মরিচ’ এনেছে সরকার, পূর্বসুরিরা ধারেকাছেও নেই। সংসদীয় গণতন্ত্রের পর থেকেই সহিংসতার জন্য হুকুমের প্রকৃত আসামি কে, বিতর্ক জরুরি।

২৮ অক্টোবর-১/১১-বিডিআর-৫ জানুয়ারি অবশ্যই এড়ানো যেত কারণ, লিংকন ও ম্যান্ডেলা এই যুগেরই উদাহরণ। লিংকন না চাইলে ক্রীতদাস প্রথা দীর্ঘতর হতো। ম্যান্ডেলার সাদা-কালোরা আওয়ামী-বিএনপির মতোই রক্তারক্তি করত। যার যা এখতিয়ার নয়, সে যখন সেটাই করে, সমস্যা অনিবার্য। যোগ্য নেতৃত্বের বিকল্প নেই। উদাহরণস্বরূপ, পুলিশের আইজির এখতিয়ার কি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনা করা? তার কথায়, পশ্চিমারা সবাই মানসিক রোগী। তা হলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা কি আঙুল চুষবেন? সাহিত্যের প্রফেসর বাজেট আলোচনা করলে কবিতা লিখবে কে? ইউনূসের মতো বিজ্ঞ অর্থনীতিবিদকে শুধু তাড়িয়েই দেয়া হয়নি, এত বেশি অপমান করা হয়েছে, যা নোবেলের ইতিহাসে নজিরবিহীন। অথচ ২৫০ ডলারে টিকিট কিনে বিদেশীরা তার বক্তব্য শোনে। কিন্তু নিজের দেশেরই সরকার তাকে অপমানে চ্যাম্পিয়ন এবং ভারতের দলিত কন্যার মতো পতিত বানানোর জন্য অবশ্যই নোবেল পেতে পারে। ইউনূসের ঘটনা রাজনৈতিক জঙ্গিবাদের যেন ১ নম্বর সম্পত্তি। আওয়ামী লীগ শুধু জঙ্গি রাজনীতির জন্মই দেয়নি, কিভাবে বাবা-মাকে অপমান করতে হয় সেটাও শিখিয়েছে কৃতিত্বের সাথে। অর্থাৎ জোর করে ক্ষমতা দখলে রেখে যা খুশি করছে। এ জন্য প্রতিবাদী কণ্ঠের প্রয়োজনও বন্ধ করে দিয়েছে। অন্য কোনো গণতান্ত্রিক দেশ হলে, নির্বাচনী প্রহসনের বিচার হতো। অবৈধ সরকারের একটাই কাজ, ২০ দলের লাইফ সাপোর্টটি ঠিকঠাক রাখা, যেন প্রয়োজন হলেই বলতে পারে, ‘দেখুন! লাইফ সাপোর্ট চলছে! তবে উন্নতির বন্যায় ভেসে যাচ্ছে দেশ। সুতরাং লাইফ সাপোর্ট বিরোধী দলই ভালো।’ বান কি মুনরা সেটাই বিশ্বাস করেছেন। প্রশ্ন, ‘জঙ্গি আছে নাকি নেই, থাকলে কারা?’

সাত বছরের প্রধান খবর, জামায়াত-বিএনপি জঙ্গি দল। বিদেশীদের কাছে ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করা হলো ‘খালেদার জঙ্গি কানেকশন এবং জামায়াতকে নিষিদ্ধ না করলে এই দেশ মধ্যপ্রাচ্যের মতো হবে।’ তারা তা হতে দেবে না বলেই জঙ্গি মারছে। এমনকি জাতিসঙ্ঘে গিয়েও বিশ্বের কাছে একই প্রচার। বান কি মুনরা সেটাও মেনে নিলেন। সুতরাং নির্বিঘেœ চলছে বিরোধী শিবিরে দমননীতি। দুই বিদেশী হত্যার আগে বিশ্বকে বুঝিয়েছে, জঙ্গি আছে। হত্যার পরেই বলছে, নেই। অর্থাৎ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হিসাব আর স্টেট ডিপার্টমেন্টের হিসাব আলাদা। স্বরচিত জঙ্গিবাদ কায়েম করে কী লাভ করল আওয়ামী লীগ, ব্যাখ্যা প্রয়োজন।

এ অবস্থায় পৌঁছলাম কী করে?
২৮ অক্টোবর ২০০৬ সালে ‘জনতার মঞ্চ’ থেকে জঙ্গি রাজনীতির ঘোষণা দিয়েছিল হাইকমান্ড। মানুষ কি ভুলে গেছে, ‘১/১১’ না আসা পর্যন্ত দিনের পর দিন হরতাল, জ্বালাওপোড়াও, বোমাবাজি, ট্রেনলাইন উপড়ে ফেলা? অবশেষে আনল ১/১১। ২০ দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ ‘হুকুমের আসামি’ খোঁজে, কিন্তু আমার এই লেখাতে তথ্য-প্রমাণসহ হাজির করব হুকুমের আসামি কে অথবা কারা! দুঃখজনক, ২৮ অক্টোবরের ঘটনাকে এমনকি জোটের শরিকেরাও পাত্তা দেয় না অথচ ১/১১ এবং ৫ জানুয়ারির কারণ, নির্বাচনের দাবিতে জঙ্গি রাজনীতির ডাক (দ্র: দেখুন ৩২.১১ মিনিটের লগি-বৈঠা ভিডিওর ৪ থেকে ৫ মিনিটের মধ্যে)। ওই ভিডিওকে তালেবানদের কর্মকাণ্ডের সাথে তুলনা করা যায়।

সরকারের ভয়ে ভীত, টেলিভিশনগুলো ঘটা করে ২১ আগস্ট দেখায় কিন্তু ২৮ অক্টোবর উপলক্ষে এক মিনিটও ব্যয় করে না। অথচ আজকের পরিস্থিতির গোড়া সেটাই। যে পর্যন্ত না ২৮ অক্টোবরের বিচার হবে, সে পর্যন্ত রাজনৈতিক জঙ্গিবাদ দূর হচ্ছে না। ওই দিন কয়েকজন তাজা মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করেছিল আওয়ামী ক্যাডাররা এবং হুকুমের আসামিরও প্রমাণ ইউটিউবে। গণহত্যা অর্থাৎ, বিশেষ গোষ্ঠীর এক বা একাধিক ব্যক্তিকে হত্যা (জাতিসঙ্ঘের সংজ্ঞার চ্যাপ্টার নম্বর-১)।

ভয়াল ২৮ অক্টোবর রাজনীতির নতুন মোচড়।
ওই দিন আওয়ামী লীগ হাড়েহাড়ে প্রমাণ করল, পেট্র্রলবোমা দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারার প্রয়োজন ২০ দলের নয়। কারণ ১/১১-এর ষড়যন্ত্র করে যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় গেছে তারাই। হিলারির বক্তব্য সেটাই প্রমাণ করে দিলো। টেলিগ্রাফ পত্রিকার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে কথাটি ১৮ মাস আগেই স্পষ্ট করেছিল সজীব, ‘আমার কাছে তথ্য আছে আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় যাবে।’ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভারত ও ভুটান ছাড়া তৃতীয় কোনো পর্যবেক্ষক দেশ ছিল না কেন? ১৫৪ জন অনির্বাচিত প্রতিনিধি এবং পাঁচ শতাংশ ভোটের প্রমাণ আর্কাইভে এবং ইন্টারনেটে। পেট্রলবোমার প্রয়োজন ২০ দলের হওয়ার সুযোগই ছিল না কিন্তু দারুণ লাভবান হলো আওয়ামী লীগ। এখন ২০৪১ সাল পেরিয়ে ক্ষমতার গ্যারান্টি দিয়েছে পুবের পরাশক্তিরা। হাজার হাজার পারিবারিক পোস্টার, ডায়নেস্টির বার্তা নিয়ে এসেছে। হাওয়া ভবনের দোহাই দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্বাসনে রেখে পারিবারিক ডায়নেস্টি প্রতিষ্ঠার আলামত সুস্পষ্ট।

সুযোগ পেলেও ২০ দলের মুখপাত্ররা সঠিকভাবে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করতে পারে না। তাদের অথর্ব ভূমিকা অগ্রহণযোগ্য। সরাসরি মতপ্রকাশের টকশো ‘ফ্রন্টলাইন’ বন্ধ করে প্রমাণ করা হলো কারা স্বৈরশাসক। হাতে বন্দুক, রামদা, বল্লম, মালাটাভ ককটেলসহ ছবির প্রমাণ ক্ষমতাসীন ভিন্ন অন্য দলের নেই। হাতেনাতে ধরার বহু ফুটেজ আর্কাইভ এবং ইন্টারনেটে। তা ছাড়াও ১/১১-এর রিমান্ডে অনেকেই দুর্নীতি এবং জঙ্গি তথ্য ফাঁস করে নেত্রীর রোষানলে। বলছি, ২৮ অক্টোবর, ১/১১ এবং ৫ জানুয়ারির মতো পরিকল্পিত সুযোগ তৈরি করে ক্ষমতা ভোগ করছে বিএনপি নয়, বরং আওয়ামী লীগ। ক্ষমতায় যারা তাদেরই প্রয়োজন রাজনৈতিক জঙ্গিবাদ বজায় রাখা। অতএব, আশঙ্কা হয়- রাজনৈতিক জঙ্গিবাদ চলবে এবং র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে খুন হতে থাকবে সন্ত্রাসী।

কোনো দল করি না কিন্তু কিছু তথ্য সামনে আনা প্রয়োজন। নেত্রী যখন বিরোধী দলকে জ্বালাওপোড়াওয়ের জন্য দায়ী করেন, হুকুমের আসামির খোঁজে ফিরে যাই ইতিহাসের কাছে। ২৮ অক্টোবরের আগে লগি-বৈঠা-চইর হাতে রাস্তা দখলের হুকুম দিলেন কারা? এর পরই পল্টনে রাজনৈতিক জঙ্গিবাদের ভয়াবহ দৃশ্য। পরবর্তী সময়ে হত্যা এবং জ্বালাওপোড়াওয়ের কারণও সেটাই। সরকার নিয়ন্ত্রিত মিডিয়াগুলো অসত্য বলে। যা সত্য, মিডিয়া ট্রায়ালে হাজির করা হচ্ছে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ছাড়াই, জুডিসপ্রুডেন্সে এর ন্যূনতম গ্রহণযোগ্যতা নেই। মির্জা ফখরুল গার্বেজ ট্রাকে আগুন দিয়েছেন শুনলে পাগলও হাসবে। একটি ঘটনারও গ্রহণযোগ্য তদন্ত করে দেখানো যায়নি। আইজি সাহেব একজন মন্ত্রীর মতো কথা বলছেন। কালশী, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কক্সবাজারের খুনিরা দলীয় এমপি দ্বারা মদদপুষ্ট; কিন্তু কোনটার বিচার হলো?
রাজনৈতিক জঙ্গিবাদের ১ নম্বর সাক্ষী বার্ন ইউনিট।
অপরাধ প্রমাণের গোডাউন এটি। হুকুমের আসামি প্রমাণে সাত বছর নয়, বার্ন ইউনিটের সাত মিনিটই যথেষ্ট। আগেও উদাহরণ দিয়েছি লিংকন-ম্যান্ডেলার। একমাত্র সুস্থ অভিভাবকই তৈরি করে সুস্থ সন্তান। আজকের ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য কি কম দায়ী হাইকমান্ড? যে পর্যন্ত না নির্বাচিত সরকারের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে, সমস্যা কোথাও যাচ্ছে না। এমনটি চলতে দিলে ভবিষ্যতে আরো বেশি বার্ন ইউনিটের প্রয়োজন হবে। বিষয়টি এমন, হিলারি হোয়াইট হাউজে ঢোকার আগেই প্রতিশোধস্পৃহা শেষ করে ফেলতে হবে। ক্যামেরা এবং দলবলসহ বার্ন ইউনিটে যাওয়ার উদ্দেশ্য বোঝার জন্য পণ্ডিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। কৃত্রিম কান্নার দৃশ্য মানবতা নয়; বরং গীতা সরকারের কথাই যথেষ্ট, ‘আমরা অসুস্থ সরকার চাই না, আপনারা দু’জন মিলেমিশে রাজনীতি করুন।’ সুতরাং বার্ন ইউনিটের পরেও যারা ৫ জানুয়ারি কায়েম করেন, তারাই হুকুমের আসামি বলে মানুষ মনে করে। পরবর্তী ঘটনাগুলো ধারাবাহিকতা মাত্র। বর্ষপূর্তিতে খালেদার আন্দোলনের সুফল ভোগ করেছে আওয়ামী লীগ। ওই সুযোগে তারা কাণ্ড ঘটিয়ে সব দায় চাপিয়েছে ২০ দলের ওপর। এই দৃশ্য মিডিয়ায় পেয়েছি। তদন্তের আগেই সার্টিফিকেট; বিনা প্রমাণে বলা হচ্ছে- সন্ত্রাসের জন্য দায়ী বিএনপি-জামায়াত। হোসনি দালানের ঘটনা গুরুত্বের সাথে প্রচার করল বিশ্বমিডিয়া। বেশির ভাগই নিন্দা করল প্রশাসনের বক্তব্যের। এই দফায় এত বেশি জঙ্গি চুলকানি, হোসনি দালানের পর বলব, খাল কেটেছেন ক্ষমতাসীনেরা। সংসদীয় গণতন্ত্র ধ্বংসের জন্যও দায়ী তারাই। এরশাদের মতো রাজনৈতিক পতিতকে সংসদে ঢুকিয়ে সংবিধানের সতীত্ব নষ্ট করার জন্য দায়ী কারা? প্রথম থেকেই সহিংসতা বেছে নেয়ার যথেষ্ট আলামত আর্কাইভে। জঙ্গি রাজনীতি আর সংসদীয় রাজনীতির মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, প্রথম আলো ২০ জুলাই ২০০০, ‘একটা লাশ পড়লে আরো ১০টা লাশ পড়বে’। ইউটিউব ২০০৭, ‘নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন না করলে আবারো রক্ত ঝরবে’।

বেগম জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি আগেই সমাধান করলে, ‘১/১১’ হয়তো এড়ানো যেত। মিডিয়াকে সাক্ষী রেখে লগি-বৈঠা-বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে বহু তাজা মানুষ খুন করল আওয়ামী লীগ। ২৮ অক্টোবরে বোমায় কেঁপে উঠেছিল ঢাকার পল্টন। জ্বালাওপোড়াও ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটল। ওই দিন পাঁচ বছর পূর্তিতে দুটো জনসভার আয়োজন করেছিল চারদলীয় জোট। জামায়াতের পূর্বনির্ধারিত অনুষ্ঠানস্থল বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট। এর আগেই লগি-বৈঠা-চইর-বোমা নিয়ে হাজার হাজার ক্যাডারের পল্টন দখল।
লেখার স্বার্থে সব কিছুই আমলে নিতে হয়। ইন্টারনেটে লগি-বৈঠা সিরিজের ভিডিওগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। ১. নিজ মুখে নির্দেশ দিচ্ছেন, লগি-বৈঠা-চইর নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। ২. ‘জনতার মঞ্চ’ থেকে জ্বালাময়ী বক্তব্য, অর্থাৎ তারা আর মাঠ ছাড়ছেন না। ৩. সংসদে একটি চাঞ্চল্যকর বক্তব্য- স্পিকারকে ধমকাচ্ছেন, কিছু বক্তব্য এখনই এক্সপাঞ্জ করতে হবে। বলছেন, সংসদে এরা সব ক’টা খুনি। খালেদা জিয়া সাইফুর রহমানকে ছাড়তে পারে কিন্তু ইলিয়াস আলীকে ছাড়তে পারে না কেন? তার কি গুণ্ডাপাণ্ডার প্রয়োজন?’ মিসেস আলীর উচিত, বিষয়টি আমলে নেয়া।

পল্টনে অনুষ্ঠানের মধ্যেই বোমাবাজি শুরু। চার দিকে আগুন আর নাস্তানাবুদ মানুষের হিরোশিমা। ধোঁয়ার কুণ্ডলি এবং পিটিয়ে হত্যার লাইভ দৃশ্য। হাতে ক্রিকেট ব্যাটের মতো লগি, রামদা ও বাঁশ। উদোম শরীরে এবং লগির গায়ে লেখা ‘জয়বাংলা’। ১৪৪ ধারার মধ্যেই রক্তারক্তি। পিটিয়ে হত্যার দৃশ্য সরাসরি প্রচার করছিল চ্যানেলগুলো। হতাহতদের শরীরে রক্তের ঢল এবং জিরো পয়েন্ট থেকে আঘাত। মরে যাচ্ছে, তবু ছাড়াছাড়ি নেই। মোড়ে মোড়ে লাশ। ওই দিনের ভিডিও যতই দেখি, ততই মনে পড়ে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের হাতে বিশ্বজিৎ খুনের নৃশংস লাইভ দৃশ্য।
বিশ্ববাসীও ওই ঘটনায় স্তম্ভিত। বিশ্বজিতের ঘটনা এবং ২৮ অক্টোবরের দৃশ্যের পার্থক্য করা কঠিন। দলে দলে ক্যাডার বের হয়ে বকশিবাজার দখলে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করল ছেলেটিকে এবং পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল। বিশ্বজিৎ যে কায়দায় খুন হলো, একই টেকনিক ২৮ অক্টোবর। অর্থাৎ বরাবরই রাজনৈতিক জঙ্গিবাদে চ্যাম্পিয়ন ওরা। কিন্তু আমাদের করণীয় কী? ওই সব অশান্তির জন্য ‘নোবেল’ পাওয়া উচিত। ২৮ অক্টোবর এবং ১২/৯/১২, মিলিয়ে নিন ঘড়ির কাঁটা।

এসব কেন বলছি?
কোনো দলকে হেয় করার জন্য নয়, বরং সাত বছরে যা খুঁজে পাচ্ছেন না বুদ্ধিজীবীরা, আমি গাধা সেটাই খুঁজছি। ওই দিন পল্টন দখলের ঘোষণার মধ্যেই আজকের রাজনীতির সব হিসাব-নিকাশ। ‘বিরোধী দলে থেকে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন না করলে আবারো রক্ত ক্ষরণের হুমকি! কিন্তু ক্ষমতায় থাকাকালে খালেদার মার্চ ফর ডেমোক্র্যাসি বন্ধ করার জন্য বালুর ট্রাক, জলকামান, বাঁশ দিয়ে ঘিরে ফেলা। এখানেই চিহ্নিত করতে হবে মূল আসামি কে।’
খালেদা হয়তো বিচারকদের বয়স না বাড়ালেও পারতেন। কিন্তু তার মানে এটা নয়, ১/১১ না আসা পর্যন্ত এভাবে মানুষ মেরে, সম্পদ ধ্বংস করে, ক্ষমতায় যেতে হবে। শেরাটন হোটেলের সামনে বাসে গান পাউডার দিয়ে সর্বপ্রথম মানুষ পুড়িয়ে মেরেছিল কোন দল? এই তথ্য মিডিয়ায় এবং ওবায়দুল কাদেরেরাও ১/১১-এর রিমান্ডে স্বীকার করেছেন। ৩০৩ দিন হরতালে বিশ্বরেকর্ড আওয়ামী লীগেরই। ২০০৬-এর আগে এবং পরে, ৩০৩ দিনের হরতালে যে ধ্বংসযজ্ঞ, ‘চোরের মায়ের বড় গলা’ অবশ্যই। আমি মনে করি, বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সাত বছর নয়, সাত মিনিটের সন্ধানই যথেষ্ট। এটাও মনে করি, বিচারকদের বয়স বাড়ানো উচিত হয়নি। তবে নেত্রী নিজ মুখে স্বীকার করেছেন, তাদের আন্দোলনের ফসল ১/১১।

মইনু-ফখরুর অনুষ্ঠানে গিয়ে তাদের সব অবৈধ কর্মকাণ্ড বৈধ করার প্রতিশ্র“তি তারই। ১/১১ কিভাবে এসেছিল, সবাই জানেন। ইউনূস প্রশ্নে হিলারির খোলামেলা বক্তব্য, ভুলে যেও না তোমাকে ক্ষমতায় এনেছি আমরাই। এ কথাও স্পষ্ট, ৯/১১-এর মতো ১/১১ও একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। দেশ বেচে হলেও ক্ষমতায় থাকতে হবে? ১০০ অর্থনৈতিক জোন ঘোষণা বাংলাদেশের জন্য সম্পূর্ণ অবাস্তব। কারণ সেই অবকাঠামো ৫০ বছরেও সম্ভব নয়, বরং পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার কথা। ২৮ অক্টোবর যে কুরাজনীতির অভিষেক হয়েছিল, পরে এক দিনের জন্যও পরিস্থিতি আওয়ামী লীগের প্রতিকূলে যায়নি। ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সোনার হরিণ। আর এই হরিণটি বাক্সে ভরে এত দূর এগিয়ে গেছে। ঘুরেফিরে ২৮ অক্টোবর আসবে কিন্তু কালশী এবং বাকশাল দিবসের মতোই মিডিয়া থেকে দূরে রাখা হবে।

আইন সবার জন্য সমান। মাত্র ২০ মিনিট টেপের জন্য পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন নিক্সন। ওই টেপটি ছিল হুকুমের আসামির প্রমাণ। সব আলামত বাদ দিয়ে যদি শুধু হাইকমান্ডের ভিডিও বক্তব্য আমলে নেই, ২৮ অক্টোবরের হত্যার জন্য অভিযোগ যথাযথ প্রমাণিত। ৪০ বছর পর মুজিব হত্যার বিচার হয়েছে। আইন সবার বেলায় সমানভাবে প্রয়োগ না করলে ‘জজ মিয়া’ খোঁজাখুঁজি চলবে অনন্তকাল। ২৮ অক্টোবরের খুনিদের বিচার করে, বিচারের সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। পদবি আর ডায়নেস্টি দিয়ে জীবনের মূল্য ধার্য করা যাবে না।
সারমর্ম : যে পর্যন্ত পদত্যাগে বাধ্য করে নির্বাচিত সরকার না আসবে, সমস্যা থাকবে বহুকাল, র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে সন্ত্রাসী খুনের ঘটনাও চলতে থাকবে।
[email protected]
www.minafarah.com

Loading

Comments are closed.