হাল আমলের নাস্তিক এবং ইসলাম বিদ্বেষী চক্রের আরেকটি অপপ্রচার

হাল আমলে নাস্তিক এবং ইসলাম বিদ্বেষী চক্র অপপ্রচার করে যাচ্ছে যে, ইসলাম ধর্মে নর নারীর স্বইচ্ছা কৃত যৌন মিলন অবৈধ হলেও ধর্ষণের মত জগণ্য অপরাধকে বৈধ করে রেখেছে ; তাই ইসলাম ধর্মে ধর্ষকের কোন শাস্তি নাই, বরং ধর্ষক হিসাবে কারো প্রতি অভিযোগ করতে হলে চার জন পুরুষ স্বাক্ষী দ্বারা তা প্রমাণিত করতে হবে যে, ঐ অভিযুক্ত ব্যক্তি সত্যি নারীটিকে ধর্ষণ করে ছিলো। যদি কোন ধর্ষিতা নারী তার বলৎকারের পক্ষে চার জন পুরুষ স্বাক্ষী হাজির করতে অক্ষম হলে, ইসলামী শরীয়াহ মিথ্যা অপবাদে অভিযুক্ত করার অপরাধে ধর্ষিতা কে শাস্তি দেয়। 
তাদের অভিযোগ নিম্নরূপঃ-
১।"ইসলামী আইনে ধর্ষণ প্রমাণ করার জন্য চার জন 'পুরুষ' চাক্ষুস সাক্ষীর বিধান রয়েছে।" 
সে আরো বলেছে-.
২। "শরিয়া আইনে ধর্ষন প্রমাণ না করতে পারলে উলটে ধর্ষিতাকেই শাস্তি দেয়া হয়।"

৩।"কোরান আর হাদিসে খুঁজলে ধর্ষণের পক্ষে অনেক আয়াত পাওয়া যাবে, কিন্তু ধর্ষণবিরোধী একটি আয়াতও নেই।"

আলোচনা শুরু আগে আমরা জেনে নেই জিনা আর ধর্ষণ কাকে বলে? 

জিনা হচ্ছে আইন বহির্ভুত ভাবে দুজন নর নারী যৌন মিলন। আর ধর্ষণ হচ্ছে আইন বহির্ভূত ভাবে নারীর ইচ্ছা বিরুদ্ধে তাকে ভয় দেখিয়ে কিংবা শক্তির বলে নারীর সাথে পুরুষের যৌনকর্ম চরিতার্থ করা।
আমরা জানিনা তারা আল কোরআনের কোন আয়াতে বা কোন হাদিসের এই ধরণের দলিল তারা পেয়েছে! আমাদের জানা মতে আল কোরআন এবং হাদিসে কোথাও এমন দলিল নেই। আমরা আল কোরানে যা পেয়েছি তা নিম্নে উল্লেখ করছি- 

[তোমাদের নারীদের মধ্যে থেকে যারা ব্যভিচার করে (ধর্ষণ নয়) তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকে চারজন সাক্ষী নিয়ে এসো৷ আর চার জন সাক্ষ্য দিয়ে যাবার পর তাদেরকে (নারীদের) গৃহে আবদ্ধ করে রাখো, যে পর্যন্ত না তাদের মৃত্যু এসে যায় অথবা আল্লাহ তাদের জন্য কোন পথ বের করে দেন ৷](৪:১৫)

[“আর যারা সতী-সাধ্বী নারীর ওপর অপবাদ (ধর্ষকের উপর অপবাদ নয়) লাগায়, তারপর চারজন সাক্ষী আনে না , তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করো এবং তাদের সাক্ষ কখনো গ্রহণ করো না ৷ তারা নিজেরাই ফাসেক” ৷] (২৪:৪)

উপরের আয়াত গুলোতে বলা হচ্ছে যে কোন নারীর উপর জিনার (ধর্ষণ নয়) অভিযোগ উপস্থাপন করতে হলে নারীকে জিনাকারী (ধর্ষণকারী নয়) প্রমাণিত করতে হলে চারজন পুরুষ স্বাক্ষীর প্রয়োজন হবে। যদি চারজন স্বাক্ষী দ্বারা জিনা প্রমাণ না করা যায় তাহলে অভিযোগকারীকে অপবাদ রটনার অপরাধে শাস্তি পেতে হবে। এই আয়াত কোন অবস্থায় ধর্ষণ ( কোন মহিলার ইচ্ছার বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ বা ভয় দেখিয়ে তার সাথে যৌনকার্য সম্পাদন) প্রমাণ করতে নির্দেশ দেয়নি। অতএব উপরের উল্লেখিত অপপ্রচার যে তাদের ইচ্ছাকৃত বিকৃতি তা প্রমাণিত হচ্ছে। 

তাদের ৩নং আভিযোগ- "কোরান আর হাদিসে খুঁজলে ধর্ষণের পক্ষে অনেক আয়াত পাওয়া যাবে, কিন্তু ধর্ষণবিরোধী একটি আয়াতও নেই।"
প্রাক ইসলামী সময়ে আরবে নারী পুরুষের চুড়ান্ত যৌন স্বাধীনতা ছিলো। পুরুষদের অসংখ্য বিয়ে করা স্ত্রী থাকার পরও তারা অন্য নারীদের সাথে যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ত। পতিতাবৃত্তি একটি প্রতিষ্ঠিত পেশা ছিলো। বিবাহিত মহিলাদেরও স্বামী ব্যতিত অন্য পুরুষের সাথে যৌন মিলনে কোন বাধা ছিলোনা। কারণ যুদ্ধে বিগ্রহে আরবের পুরুষ সংখ্যা কম থাকতো কাজেই নারী স্বেচ্ছায় অন্য কোন পুরুষের সাথে যৌন সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে থাকতো, এতে করে আরবদের মধ্যে পিতৃ পরিচয় নিয়ে মারাত্বক সামাজিক সংকট দেখা দিয়েছিলো, যার কারণে নারীদের সংখ্যা কমিয়ে রাখতে গিয়ে সে সময় আরবরা কন্য শিশুদেরকে জীবন্ত কবর দিত। সতী, সতীত্ব ইত্যাদি নামক মূল্যবোধের তেমন কোন সমাজে মূল্যায়িত ছিলোনা। ইসলাম ই প্রথম নারীদের সতীত্ব বজায় রাখার মূল্যবোধ রক্ষা কল্পে শরীয়াহ আইনের প্রচলন করেছিলো। 

উপরের ঐতিহাসিক চিত্র বলে দেয় তখনকার আরবে ধর্ষণের কোন দরকার ছিলোনা, কারণ রাস্তায় রাস্তায়, ঘরে বাইরে মুফতে দুধ পাওয়া গেলে কোন পাগল জোর করে অন্যের গাভীর দুধ পান করতে যাবে? কদাচিৎ এই ধরণের কোন ঘটনা ঘটে থাকলেও আজকের বিশ্বের মত তা মহামারী আকারে তা চর্চিত ছিলোনা। ঐ সময় সমাজে ধর্ষণ বলে কোন শব্দ তাদের মধ্যে স্বক্রিয় ছিলোনা। অতএব যে সমাজে ধর্ষণের মত অপরাধ ছিলোনা সে সময়ের নাজিল কৃত কোরানে ধর্ষণ আর ধর্ষণকারীর বিরুদ্ধে নির্দেশ কি ভাবে থাকতে পারে?
দেয়ালে কান লাগিয়ে বা গোয়েন্দাগিরি করে বা প্রতারণা করে কারো ব্যক্তিগত কথা বা ঘরের ভিতর গোপনে সংঘটিত বিষয়কে অন্য দ্বারা বাইরে প্রচার করতে ইসলাম বারণ করে। যদি এই ভাবে কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির গোপন কথা প্রকাশ করে তাহলে প্রকাশকারী শাস্তির যোগ্য অপরাধী বলে শনাক্ত হবেন।
আল কোরানএ শুধু মাত্র সেই সমস্ত ঘটনা গুলোর প্রতিবিধান উল্লেখিত আছে যেগুলো রাজপথে বা খোলা আম প্রকাশ্যে সংগঠিত হয়৷ ঘরের ভিতর, বন জঙ্গলে লোক চক্ষুর আড়ালে যেসব ছোটখাটো ঘটনা সৃষ্টি হয় সেগুলোর সমাধান দেয়া মোটেই আল কোরানের কাজ নয়। এ ধরনের ঘটনার সমাধান ইজতিহাদের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে ৷ ইজতিহাদের মাধ্যমে এগুলোর সমাধান নির্ণয় করতে হবে৷
অনেকে অমুসলিম ইসলাম বিদ্বেষীরা প্রচার করে থাকে যে, ইসলামে যুদ্ধকালিন সময়ে বিধর্মীদেরকে যুদ্ধে পরাস্ত করে তাদের নারীদেরকে ধরে ধরে ধর্ষণ করে থাকে। আসলে জ্ঞান কম থাকার কোন কোন মুসলিম বিভ্রান্ত হয়ে তাকে সত্য বলে বিশ্বাস করে নেয়। আসুন আসল সত্য কি তা আমরা জেনে নেই-
একঃ যে সমস্ত মেয়ে যুদ্ধে বন্দী হয়, তাদেরকে বন্দী করার সাথে সাথেই যে কোন সৈনিক তাদের সাথে সংগম করার অধিকার লাভ করে না৷ বরং ইসলামী আইন অনুযায়ী এই ধরনের মেয়েদেরকে সরকারের হাতে সোপর্দ করে দেয়া হবে৷ সরকার চাইলে তাদেরকে বিনা শর্তে মুক্ত করে দিতে পারে, তাদের থেকে মুক্তিপণ গ্রহণ করতে পারে, শত্রুর হাতে যেসব মুসলমান বন্দী হয়েছে তাদের সাথে এদের বিনিময়ও করতে পারে এবং চাইলে তাদেরকে সৈন্যদের মধ্যে বন্টন করে দিতেও পারে৷ এ ব্যাপারে সরকারের পূর্ণ ইখতিয়ার রয়েছে৷ একজন সৈনিক কেবলমাত্র সরকারের পক্ষ থেকে তাকে যে যুদ্ধ বন্দিনীটি দেয়া হয় তার সাথেই সংগম করতে পারে৷

দুইঃ যে মেয়েটিকে এভাবে কারো মালিকানায় দেয়া হয়, যতক্ষণ না তার একবার মাসিক ঋতুস্রাব হয় এবং এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হওয়া যায় যে, সে গর্ভবতী নয় ততক্ষণ তার সাথে সংগম করা যেতে পারে না৷ এর আগে তার সাথে সংগম করা হারাম৷ আর যদি সে গর্ভবতী হয়, তাহলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হবার আগেও তার সাথে সংগম করা অবৈধ৷

তিনঃ যুদ্ধ বন্দিনীদের সাথে সংগম করার ব্যাপারে তাদের অবশ্যি আহ্‌লি কিতাব হতে হবে এমন কোন শর্ত নেই৷ তাদের ধর্ম যাই হোক না কেন, যাদের মধ্যে তাদেরকে ভাগ করে দেয়া হবে তারা তাদের সাথে সংগম করতে পারবে৷
চারঃ যে মেয়েকে যার ভাগে দেয়া হবে একমাত্র সেই তার সাথে সংগম করতে পারবে৷ অন্য কারো তার গায়ে হাত দেবার অধিকার নেই৷ সেই মেয়ের গর্ভে যে সন্তান জন্মাবে সে তার মালিকের বৈধ সন্তান হিসেবে গণ্য হবে৷ শরীয়াতে আপন ঔরসজাত সন্তানের যে অধিকার নির্ধারিত হয়েছে এই সন্তানের আইনগত অধিকারও তাই হবে৷ সন্তানের জননী হয়ে যাবার পর এই মেয়েকে আর বিক্রি করা যাবে না এবং মালিক মরে যাওয়ার সাথে সাথেই সে মুক্ত হয়ে যাবে৷

পাঁচঃ যে মেয়েটি এভাবে কোন ব্যক্তির মালিকানাধীন হয়, তাকে তার মালিক যদি দ্বিতীয় কোন ব্যক্তির সাথে বিয়ে দিয়ে দেয় তাহলে মালিক তার থেকে অন্য সমস্ত খেদমত নিতে পারবে কিন্তু তার সাথে যৌন সম্পর্ক রাখার অধিকার তার থাকবে না৷

ছয়ঃ শরীয়াত স্ত্রীদের সংখ্যার ব্যাপারে যেমন চারজনের সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে, দাসীদের ব্যাপারে তেমন কোন সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়নি৷ ধনী লোকেরা বেশুমার বাদী কিনে কিনে মহল ভরে ফেলবে এবং বিলাসিতার সাগরে গা ভাসিয়ে দেবে, এটা শরীয়াতের উদ্দেশ্য ছিল ন৷ বরং আসলে যুদ্ধের অনিশ্চিত অবস্থাই ছিল এ ব্যাপারে সীমা নির্ধারণ না করার মূলীভূত কারন৷

সাতঃ সরকার আইনগতভাবে কোন ব্যক্তিকে যুদ্ধবন্দীদের ওপর যে মালিকানা অধিকার দান করেছে মালিকানার অন্যান্য অধিকারের ন্যায় এটিও স্থানান্তর যোগ্য৷

আটঃ বিয়ে এমন একটি আইনসংগত কাজ তেমনি সরকারের পক্ষ থেকে কাউকে যথারীতি মালিকানা অধিকার দান করাও একটি আইনসংগত কাজ৷ কাজেই যে ব্যক্তি বিয়ের মধ্যে কোন প্রকার অন্যায় ও অপ্রীতির ব্যাপার দেখে না, তার ক্রীতদাসীর সাথে সংগম করার মধ্যে খামাখা কোন অন্যায় ও অপ্রীতিকর বিষয় অনুভব করার পেছনে কোন ন্যায়সংগত কারণ নেই৷

নয়ঃ যুদ্ধবন্দীদের মধ্যে থেকে কোন মেয়েকে কারো মালিকানায় দিয়ে দেবার পর পূনর্বার সরকার তাকে ফেরতে নেবার অধিকার রাখে না, ঠিক যেমন কোন মেয়ের অভিভাবক তাকে কারো সাথে বিয়ে দেবার পর আবার তাকে ফিরিয়ে নেবার অধিকার হারিয়ে ফেলে৷

দশঃ কোন সেনাপতি যদি নিছক সাময়িকভাবে তার সৈন্যদেরকে বন্দিনী মেয়েদের মাধ্যমে নিজেদের যৌন তৃষ্ণা মিটাবার অনুমতি দেয় এবং তাদেরকে সৈনদ্যদের মধ্যে ভাগ করে দেয়,তাহলে ইসলামী আইনের দৃষ্টিতে এটা হবে সম্পূর্ণ একটি অবৈধ কাজ৷ জিনার সাথে এর কোন পার্থক্য নেই৷ আর জিনা ইসলামী আইন অনুযায়ী একটি অপরাধ৷

Loading

মুনিম সিদ্দিকী

About মুনিম সিদ্দিকী

ব্লগে দেখছি অন্য সহ ব্লগাররা তাদের আত্মপরিচয় তুলে ধরেছেন নিজ নিজ ব্লগে! কুঁজো লোকের যেমন চিৎ হয়ে শোয়ার ইচ্ছা জাগে তেমন করে আমারও ইচ্ছা জাগে আমি আমার আত্মপরিচয় তুলে ধরি! কিন্তু সত্য যে কথা তা হচ্ছে শুধু জন্মদাতা পিতা কর্তৃক আমার নাম আর পরিবারের পদবী ছাড়া আমার পরিচয় দেবার মত কিছু নেই! আমি এক বন্ধ্যা মাটি যেখানে কোন চাষবাস হয় নাই। যাক আমি একটি গান শুনিয়ে আত্মপ্রতারণা বর্ণনা শেষ করছি- কত শহর বন্দরও পেরিয়ে চলেছি অজানা পথে - কালেরও নিঠুর টানে- আমার চলার শেষ কোন সাগরে তা তো জানা নাই! ধন্যবাদ।

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *