স্বাধীনতা দিবসের জন্মসনদ কোনটা? স্বাধীনতার ঘোষক কে? ৭ মার্চের বক্তৃতায় মুজিব বলেছেন, “এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।” সামান্য বিষয়টি বুঝতে এতো কষ্ট? ৯৯ ভাগ বাংলাদেশির মাথায় গোবর, বিশেষ করে বুদ্ধিজীবিদের। আজ আমি এই গোলক ধাঁ-ধাঁ থেকে জাতিকে মুক্ত করবো। সংগ্রামের অর্থ আন্দোলন। স্বাধীনতা ঘোষণার অর্থ, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রকে অস্বীকার করে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা। বিদ্রোহের উদ্দেশ্য নতুন করে স্বাধীনতা অথবা ক্ষমতাসীনদেরকে উৎখাত।
৭ মার্চে মুজিব বলেনি, স্বাধীনতার কথা। বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে, সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করে বিদ্রোহের অপরাধে হয়তো ফাঁসিও দিয়ে দিতো। সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে এটাই নিয়ম। সর্বশেষ দৃষ্টান্ত সৌদিতে ৫১ জন কোতল। তারা চেয়েচিলো সৌদি রাজতন্ত্র উৎখাত করতে।
সংগ্রামের ঘোষণা দেয়ার পর, ভূট্টো এবং ইয়াহিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন মুজিব। উদ্দেশ্য, ভূট্টো এবং মুজিবের মধ্যে ক্ষমতায় যাওয়ার বিষয়টি সুরাহা। কারণ ভূট্টো এবং মুজিব দুইজনেই নিজ নিজ জায়গায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায়, কে যাবে ক্ষমতায় সেটাই হয়েছিলো মূল সংঘর্ষ। আর আলোচনা চলাকালে মুজিব বলেছিলেন, কথা এগোচ্ছে, আরো আলোচনা চলবে। ভারতীয়দের হস্তক্ষেপে পরিস্তিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে, আলোচনার মাঝখানেই বোঝাপড়ার মাধ্যমেই মুজিব চলে গেলেন পশ্চিমে। উদ্দেশ্য, স্বাভাবিক পরিবেশে বিষয়টির সুরাহা। ২৬ মার্চ রাতে সম্পূর্ণ অরক্ষিত দেশ, গোলাগুলি শুরু হয়ে গেছে। সংগ্রাম রূপ নিলো স্বাধীনতায়। ঘোষণা ছাড়া বিভ্রান্ত দেশটাকে একটি জায়গায় আনতে যে ঘোষণাটি এলো, সেটাই শহীদ জিয়ার কণ্ঠে, স্বাধীনতার ঘোষণা। সামান্য বিষয়টি বুঝতে এতো কষ্ট?
2
রেসকোর্সের ময়দানে ভারতীয়দের কাছে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ বনাম ২৬ মার্চে শহীদ জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা। বিজয়ের মাস মানলে ভারতীয়দের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে পাকিস্তান। সুতরাং আমরা প্রত্যক্ষ অঙ্গরাজ্যের সমান। আর মার্চ মাস মানলে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস। কারণ ওই দিন একজন বাঙালি মেজরের কন্ঠে বিশ্বকে জানিয়ে দেয়া হলো, পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হতে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। পাকিস্তান আমলে ১৪ আগষ্ট ছিলো স্বাধীনতা দিবস, এ নিয়ে কোন বিতর্ক ছিলো না। এখন সংঘর্ষ ১৬ ডিসেম্বর বনাম ২৬ মার্চ। কতোগুলো স্বাধীনতা দিবস এবং মাস জুড়ে কেন স্বাধীনতা দিবস? আমাদেরকেই ঠিক করতে হবে, বিজয়ের মাসকে পুরোপুরি বিলুপ্ত করে পৃথিবীর সব দেশের মতো শুধুমাত্র একদিন স্বাধীনতা দিবস পালন করবো কিনা? আবারো বলছি, বিজয়ের মাস মানেই, আমরা ভারতের অঙ্গরাজ্য। সুতরাং বিজয়ের মাস বিলুপ্ত করার দাবি করছি। একইসঙ্গে জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতারও পরিবর্তন হওয়া উচিত। বিষয়টি নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত খালেদা-হাসিনার লড়াই চলবে। আর মরবে সাধারণ পাবলিক।