|| স্তন ও মাথা অনাবৃত দাসীদের পরিবেশ||

ভূমিকা

ইসলামি শরিয়া মোতাবেক দাসীর আওরাত হল নাভি থেকে পায়ের হাঁটু পর্যন্ত (عورتها من السُّرَّة إلى الرُّكبة), যেমনটি পুরুষের আওরাত। একজন দাসী তার নাভি থেকে হাঁটু ঢাকবে এবং এতটুকু বস্ত্র পরে সে নামাজও আদায় করতে পারবে। হিজাব হচ্ছে স্বাধীন সম্ভ্রান্ত নারীদের জন্য। এই প্রথাই ইসলামি শরিয়ার প্রথা এবং এটিই প্রচলিত ছিল মুসলিম বিশ্বে।

ঈমাম তাইমিয়্যাহ কি বলেন? দাসীর আওরতের ব্যাপারে ইবন তাইমিয়্যাহ বলেন, “হিজাব প্রবর্তিত হয় নারীর মুখ ও হাত না দেখার জন্য। এই বিধান শুধু স্বাধীন-সম্ভ্রান্ত নারীদের জন্য, দাসীদের জন্য নয়। মুমিনদের জন্য এই প্রথাই ছিল রাসূলের সময় ও তার খলিফাদের সময় –স্বাধীন সম্ভ্রান্ত নারীরা হিজাব পরত এবং দাসীরা পরত না। (মাজমু আল ফাতাওয়া -ইবন তাইমিয়্যাহ)।

তাইমিয়্যার ভাষ্যের আরবি ট্যাক্সট: وَإِنَّمَا ضُرِبَ الْحِجَابُ عَلَى النِّسَاءِ لِئَلَّا تُرَى وُجُوهُهُنَّ وَأَيْدِيهِنَّ . وَالْحِجَابُ مُخْتَصٌّ بِالْحَرَائِرِ دُونَ الْإِمَاءِ كَمَا كَانَتْ سُنَّةُ الْمُؤْمِنِينَ فِي زَمَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَخُلَفَائِهِ أَنَّ الْحُرَّةَ تَحْتَجِبُ وَالْأَمَةُ تَبْرُزُ ” انتهى من ” مجموع الفتاوى

সাহাবিদের যুগ: প্রথম বর্ণনা। আনাস বিন মালিক বর্ণনা করেন। ‘একবার ওমর (রা) আমাদের একটি দাসীকে শরীর-ঢাকা কাপড় (হিজাব) পরতে দেখেন। অতঃপর তিনি তাকে মারলেন, এবং বললেন, ‘তুমি স্বাধীন নারীদের বেশ ধারণ কর না।’’ (গ্রন্থ: আবু শাইবাহর মুসনাদ, ইসনাদ সহিহ)।

প্রথম বর্ণনার আরবি ট্যাক্সট: رأى عمرُ أمةً لنا مُقنّعةً فضربَها وقال لا تَشبَّهينَ بالحرائرِ

(الراوي : أنس بن مالك، خلاصة حكم المحدث، إسناده صحيح | التخريج :أخرجه ابن أبي شيبة في المصنف)

أن عمر قال لأمة رآها مقعنعة اكشفي رأسك

দ্বিতীয় বর্ণনা: ইবন মুনযির বলেন, ‘এটা সঠিক যে ওমর এক দাসীকে আবৃত শরীরে দেখে বললেন, তোমার মাথা খুলো, (অনাবৃত করো), তুমি স্বাধীন-সম্ভ্রান্ত নারীদের বেশ ধারণ করো না, এবং তিনি তাকে বেত্রাঘাত করলেন। ’ নাসির উদ্দিন আলবানি, ইরওয়াউল গালিল (১/৩৫৫), ইবন আবি শাইবাহ (২/২৮/১), বাইহাকি (২/২২৬) আল-খাতিব (১০/৩০৩) উল্লেখ করেন।

দ্বিতীয় বর্ণনার আরবি ট্যাক্সট: قال ابن المنذر: ثبت أن عمر قال لأمة رآها متقنعة اكشفي رأسك، ولا تشبهي بالحرائر، وضربها بالدرة. الألباني، ((إرواء الغليل (1/355) وأخرجه ابن أبي شيبة (2/28/1) والبيهقي (2/226) وذكره الخطيب (10/303)).

তৃতীয় বর্ণনা: আনাস বিন মালিক বর্ণনা করেন। ‘ওমরের (রা) দাসীগণ অনাবৃত মাথায়, খোলা চুলে, আমাদের সেবা করত (পানীয়/খাবারাদি পরিবেশ করত), তাদের স্তনগুলো দুলদুল করত (এই বাক্যাংশটি কেউ কেউ অন্যভাবে বুঝে নিতে চান এবং সেটির অনুবাদ হবে এভাবে: তাদের চুলগুলো (মুক্ত) স্তনের উপর সঞ্চালিত হত]’ (নাসির উদ্দিন আলবানি, গ্রন্থ: ইরওয়াউল গালিল, উত্তম ইসনাদ)।

তৃতীয় বর্ণনার আরবি ট্যাক্সট: عن أنسِ بنِ مالكٍ قال كنَّ إماءَ عمرَ رضيَ اللهُ عنهُ يَخدِمْنَنا كاشفاتٍ عن شعورهن تضطربُ ثُديهنَ. الراوي : أنس بن مالك | المحدث : الألباني | المصدر : إرواء الغليل، خلاصة حكم المحدث، إسناده جيد

চতুর্থ বর্ণনা: ইবন ওমরের (রা) মাওলা (তত্ত্বাবধানে থাকা) নাফি বর্ণনা করেন। ‘ইবন ওমর যখন কোন দাসী কিনতেন তখন তিনি তার পা উন্মোচন করতেন এবং তার স্তনদ্বয়ের মধ্যে হাত দিতেন এবং নিতম্বেও এমনভাবে হাত দিতেন যেন কাপড়ের ভিতর থেকে হত।’ (নাসির উদ্দিন আলবানি, গ্রন্থ: ইরওয়াউল গালিল, ইসনাদ সহিস)।

চতুর্থ বর্ণনার আরবি ট্যাক্সট: – عنِ ابنِ عمرَ أنه كان إذا اشترى جاريةً كشفَ عن ساقِها ووضع يدَه بين ثدْيَيها وعلى عجُزِها وكأنه كان يضعُها عليها من وراءِ الثِّيابِ

الراوي : نافع مولى ابن عمر | المحدث : الألباني | المصدر : إرواء الغليل، خلاصة حكم المحدث : إسناده صحيح

মন্তব্য: শরিয়ার এই নিয়মই সেদিন মুসলিম সমাজে প্রবর্তিত ছিল। ইউরোপে উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে দাস প্রথা রহিত ও বেআইনি হয়, তাই এই প্রথাও উঠে যায়, কিন্তু ইসলামি শরিয়ায় তা রহিত হয় নি, কেননা কোরান হাদিস যাকিছু নিষেধ করে বা অনুমোদন দেয় তা কেউ রহিত করতে পারে না। তবে, এখন যেহেতু দাস-দাসীর বিকি-কিনি নাই, তাই প্রথাটি কালের ধারায় অনুপস্থিত – এই যা। আবারও, কোথাও সঠিকভাবে ইসলামি খেলাফত কায়েম হলে, এই প্রথাও হয়ত ফিরে আসতে পারে, কেননা বাজারে কোন বৈধ বস্তুর ডিমান্ড থাকলে, সাপ্লাই যেকোনো স্থান থেকেই আসতে পারে।

এ ব্যাপারে যারা আরও পড়তে ইচ্ছুক, তারা এন্টারনেট থেকে এই বইখানি পড়ে দেখতে পারেন: The Slave Girls of Bagdad by F. Matthew Caswell.

দাসত্ব ও ধর্মতত্ত্ব

প্রথম হাদিস: জারির থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “যদি কোন দাস/দাসী পলায়ন করে তবে তার নামাজ (আল্লাহর কাছে) গ্রহণীয় হবে না। সে যদি মারা যায়, তবে কাফির অবস্থায় মারা যাবে।” জারিরের একজন দাস পলায়ন করেছিল তিনি তাকে ধরে এনে হত্যা করেন। (নাসায়ি শরিফ, হাদিস সহিহ)।

প্রথম হাদিসের আরবি টেক্সট: كَانَ جَرِيرٌ يُحَدِّثُ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ إِذَا أَبَقَ الْعَبْدُ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ وَإِنْ مَاتَ مَاتَ كَافِرًا ‏”‏ ‏.‏ وَأَبَقَ غُلاَمٌ لِجَرِيرٍ فَأَخَذَهُ فَضَرَبَ عُنُقَهُ ‏.‏

দ্বিতীয় হাদিস: জারির থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “যদি কোন দাস/দাসী পলায়ন করে তবে তার নামাজ (আল্লাহর কাছে) গ্রহণীয় হবে না।” অন্য বর্ণনায়, “সে কুফুরি করেছে (বা কাফির হয়ে গিয়েছে)।” (মুসলিম শরিফ)।

দ্বিতীয় হাদিসের আরবি টেক্সট: وعنه عن النبي صلى الله عليه وسلم ‏:‏ ‏”‏إذا أبق العبد، لم تقبل له صلاة ‏”‏ ‏(‏‏(‏رواه مسلم‏)‏‏)‏ ‏.‏ وفي رواية‏:‏ ‏”‏فقد كفر ‏”‏ ‏.‏

তৃতীয় হাদিস: হযরত আলী বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “মুমিনদের রক্ত কেবল তাদের নিজেদের মধ্যেই সমতুল্য। তাদের সর্বনিম্ন (মুমিন) লোকও তাদের নিরাপত্তায় সচেষ্ট হবে এবং তাদের দূরবর্তী (মুমিন) লোকও সেটা করবে। তারা সবাই যারা মুসলিম নয় তাদের মোকাবেলায় এক জোট থাকবে (এক হস্তের ন্যায়)। কোন মুসলিমকে অমুসলিম হত্যার জন্য হত্যা করা যাবে না। (কোন মুসলিম) যার সাথে (কোন অমুসলিমের) সন্ধি রয়েছে তার জন্যও নয়।” (ইমাম আহমদ, আবু দাউদ, নাসায়ি, হাদিস সহিহ)।

তৃতীয় হাদিসের আরবি টেক্সট: عَنْ عَلِيٍّ وَقَالَ فِيهِ: { اَلْمُؤْمِنُونَ تَتَكَافَأُ دِمَاؤُهُمْ, وَيَسْعَى بِذِمَّتِهِمْ أَدْنَاهُمْ, وَهُمْ يَدٌ عَلَى مَنْ سِوَاهُمْ, وَلَا يُقْتَلُ مُؤْمِنٌ بِكَافِرٍ, وَلَا ذُو عَهْدٍ فِي عَهْدِهِ } .‏ وَصَحَّحَهُ اَلْحَاكِمُ 1‏ .‏

‏1 ‏- صحيح.‏ رواه أحمد (122)‏، وأبو داود (4530)‏، والنسائي (89 ‏- 20)‏ وزادوا جميعا: “ومن أحدث حدثا أو آوى محدثا، فعليه لعنة الله والملائكة والناس أجمعين”.‏

দাস দাসী মুক্ত করা সওয়াবের কাজ, তবে মুক্ত না করে আত্মীয় -স্বজনকে দান করাতে অধিক সওয়াব

চতুর্থ হাদিস: ইবন আব্বাসের মাওলা (তত্ত্বাবধানে আশ্রিত) কুরাইব বর্ণনা করেন। মাইমুনা বিনত আল-হারিস (নবীর স্ত্রী), নবীকে জানালেন যে তিনি তার দাসীকে মুক্ত করে দিয়েছেন, কিন্তু এজন্য নবীর অনুমতি নেন নি। অতঃপর যখন তার সাথে থাকার পালার দিন এল, তখন তিনি বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনি কী বুঝতে পেরেছেন যে আমি আমার দাসীকে মুক্ত করে দিয়েছি? তিনি বললেন, ‘তুমি কি তাই করেছ?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’। তিনি বললেন, ‘তুমি যদি তোমার খালাদেরকে দান করে দিতে তবে তোমার সওয়াব অধিক হত।’ (সহিহ বোখারি)।

চতুর্থ হাদিসের আরবি ট্যাক্সট: عَنْ كُرَيْبٍ، مَوْلَى ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ مَيْمُونَةَ بِنْتَ الْحَارِثِ ـ رضى الله عنها ـ أَخْبَرَتْهُ أَنَّهَا، أَعْتَقَتْ وَلِيدَةً وَلَمْ تَسْتَأْذِنِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، فَلَمَّا كَانَ يَوْمُهَا الَّذِي يَدُورُ عَلَيْهَا فِيهِ قَالَتْ أَشَعَرْتَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنِّي أَعْتَقْتُ وَلِيدَتِي قَالَ ‏”‏ أَوَفَعَلْتِ ‏”‏‏.‏ قَالَتْ نَعَمْ‏.‏ قَالَ ‏”‏ أَمَا إِنَّكِ لَوْ أَعْطَيْتِيهَا أَخْوَالَكِ كَانَ أَعْظَمَ لأَجْرِكِ ‏”‏‏.

সারাংশ: অনেক বিষয় আছে যেখানে কেউ কেউ সারাংশ টানতে পারেন, আর কেউ কেউ হয়ত টানতে পারেন না। আজকের বিশ্বের মানবাধিকার, সাম্য, স্বাধীনতা, সুবিচার ইত্যাদির আলোকে ধর্মীয় কথা বলা অনেক সময় কঠিন। ঝগড়ায়, বিতণ্ডায় যেসব সত্য প্রতিষ্ঠিত সেখানে উদ্ধৃতি দিয়ে চলে যাওয়াই ভাল। যার যার সারাংশ যার যার মত টেনে নেবে।

Loading

About এম_আহমদ

প্রাবন্ধিক, গবেষক (সমাজ বিজ্ঞান), ভাষাতত্ত্ব, ধর্ম, দর্শন ও ইতিহাসের পাঠক।

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *