“সাত বার মিথ্যা বললে, মিথ্যাও সত্য মনে হয়।”

৭ বছরের অধিক সময় ধরে ‘সন্ত্রাসীর’ তকমাটি বিনা হিসাবেই নয়। গোয়েবলসের উক্তি, “সাত বার মিথ্যা বললে, মিথ্যাও সত্য মনে হয়।” বিষয়টি খেয়াল করুন। ইনুরা আর ২০ দল না বলে, বলে- সন্ত্রাসী দল। অবৈধ সরকারের ভাষায় বিএনপি একটি সন্ত্রাসী জোট। খালেদার নাম, সন্ত্রাসের রাণী। আন্তর্জাতিক মহলের কাছে সন্ত্রাস প্রচারে মরিয়া ঢাকা-দিল্লি। অদৃশ্য শেকলে বন্দি বলেই স্বাভাবিক বাঙালির চরিত্র ত্যাগ করতে বাধ্য ৯০এর আওয়ামী লীগ। আমরা আমাদের মা-বোনদের মায়া-মমতা জানি। কখনোই তারা এই মাত্রায় অসহিষ্ণু নয়। পাওয়ার লোভে সন্তানের রক্ত কখনোই হাতে মাখাবে না কিন্তু সেটাই করে ছাড়লো লীগ। মুজিব থাকলে, ট্রাইবুন্যালের প্রেসক্রিশন, নাকচ হতো। যেমন হয়েছিলো, বাংলাদেশে ভারতের সেনাঘাঁটি বানাতে ইন্দিরার অনুরোধ। গণহত্যার পরেও ১৯৭৪ সনে ভূট্টোকে তিনিই দাওয়াত দিয়ে এনে, ঢাকার বিমানবন্দরে শুধু বুকেই জড়িয়ে ধরেননি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও লালগালিচা সম্বর্ধনা। ভূট্টোর গাড়িতে পাকিস্থান্তবাংলাদেশের পতাকাসহ জাতিয়সৌধে নিয়ে তরুণ তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে পুস্পস্তবক অর্পণের ভিডিও ইউটিউবে (২৭ জুন ১৯৭৪, ভুট্টোর পাশে তোফায়েল ভাইয়ের মাথা ভরা কালো চুল)। ওআইসি সম্মেলনেও পাকিস্থানে দুই নেতার ভ্রাতৃসুলভ বহু ছবি ইন্টারনেটে। ৭১এর মুসোলিনি টিক্কা খানের সঙ্গে হ্যান্ডশেক? ক্ষমার এই দৃষ্টান্ত, বাংলাদেশিদের মৌলিক চরিত্র। গণহত্যা সত্ত্বেও ভূট্টোকে ঢাকায় আনার মধ্যে মুজিবের সূক্ষ্ম বার্তা, অতীত না ভুললে সামনে যাওয়া যাবে না। যুদ্ধ পরবর্তী জার্মানিতে মুসোলিনিকে জার্মানির চ্যান্সেলরের দাওয়াতের অবাস্তব ঘটনাই বাস্তব করলেন মুজিব। আদালতেও নিজামীর বক্তব্য, গণহত্যা করেছে ভূট্টো। সুতরাং তোফায়েলদের ইউটার্নের জন্য দায়ী কি সত্যিই আওয়ামী লীগ, নাকি ফিউশন লীগ?

হোটেল সোনারগাঁয়ে জোটের ১০ ট্রাক অস্ত্র নিয়ে মোদির প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি খালেদা। বিচ্ছিন্নবাদিদের আশ্রয় প্রশ্নেও, বিভ্রান্ত খালেদা। এসব খবর পত্রিকায়। সন্ত্রাস প্রশ্নে জিরো টলারেন্স মোদি যখন ১০ ট্রাক অস্ত্র নিয়ে খালেদার উপর এতো অসন্তুষ্ট, মামলার অন্যতম আসামী নিজামীদের ফাঁসি না চাইলেও হতে বাধ্য। এবার গুজব আমলে নিতে হবে। মিডিয়ার প্রকাশ, জামায়েতকে নিষিদ্ধ দেখতে চায় ভারত। সুতরাং সন্ত্রাসী তকমা কপালে ২য়, ৩য়, ৪র্থ… সব শ্রেণিরই ফাঁসি হবে। ১০০ ভাগ প্রস্থতি ট্রাইবুন্যাল এবং নির্বাহীর বডিল্যাংগুয়েজে। আমরা ৭৩-৭৪এর মতো কোন দলকেই গর্তে দেখতে চাই না, কিন্তু খবর, আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাচ্ছে জামায়েত। এই দেশে শিয়া-সুন্নির পরিসি’তি সৃষ্টি করতে পারলে লাভ ভারতের।

যেহেতু সবকিছুই ইন্টারনেটে, ব্লেমগেইম থেকে বের হয়ে আসাটা আওয়ামী লীগের জন্য সবচে’ জরুরি। তথ্য-উপাত্ত বলছে, ৯ মাস মুজিব পরিবার ঢাকাতেই ছিলেন এবং পাকিস্থানীদের নিরাপত্তাতেই ছিলেন। রাও ফরমান আলীর ইতিবাচক আচরণ ছাড়া হাসিনার জন্য সিএমএইচএ সুস্থ সন্তান প্রসব একেবারেই অসম্ভব। যেখানে সকলেই দৌঁড়ের উপরে, মাইরের উপরে, ৭১এ মুজিবের মাকে টুঙ্গিপাড়া থেকে হেলিকপ্টারে এনে পিজিতে চিকিৎসার সৌভাগ্য তখন আর কোন বাঙালির? ৩২ নম্বর থেকে বের হয়ে ভারতীয়দের জিপে চড়লেন ১৭ ডিসেম্বর (সাক্ষাতকারগুলো ইউটিউবে)। ৩২ নম্বরের প্রতি ফরমান আলীদের এই মাপের মানবিকতা নিয়ে বহু প্রশ্ন।

অস্তিত্ব এবং অধিকার সংকটে জর্জরিত ভিকটিম দলগুলোর হাইকমান্ডের অনেক কিছুই আমলে নেয়া উচিত ছিলো। তাদের সামনে জীবনমৃত্যু প্রশ্ন। মোদিকে লিখিত অভিযোগ করার সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। কোন দল নিষিদ্ধ হবে, ভোটে কে জিতবে, সিদ্ধান্ত অবশ্যই দিল্লির নয়। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই জুডিশিয়াল কিলিং সমর্থন করে না বরং মনে করে পরিকল্পনা অন্য কোথাও, তথ্য-উপাত্তসহ অবিলম্বে জানিয়ে দেয়া উচিত। মানুষ যতেই ঘুমাবে, খুঁটি ততোই গভীরে যাবে।

যদি সন্তানের মৃত্যুর পর আবিষ্কার করেন, ডাক্তারের ফার্মেসী ব্যবসা এবং অতিরিক্ত ওষুধ বিক্রির কারণেই পুত্রের মৃত্যু, তখন? রায় লেখা বিচারকই যদি দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে খোলামেলা এক্টিভিজমে নামে, জুরিসপ্রুডেন্সে শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট।

ইমরান সরকারের জন্ম ১৪ অক্টোবর ১৯৮৩, কিন্তু হাবভাবে ৭১এর বীরশ্রেষ্ঠ। পাকিস্থানের বিরুদ্ধে স্বরব কিন্তু ‘স্টার জলসায়’ আপত্তি নেই। তালেবানিদের মতোই আত্মঘাতির ভাষায় হুমকি, ঝুকি নিয়ে হলেও পাকিস্থান দূতাবাস ঘেরাও করবে। প্রতিটি ফাঁসির রায়ের আগে এবং পরে মহামারী আকার ধারন করে সর্দারের ক্ষমতা। আওয়ামী লীগের মাসিক বরাদ্দ কয়েক লক্ষ টাকা। তার জন্য না হলে, কাদের মোল্লা জীবিত থাকতো। প্রশ্ন, এই আদম কি সত্যিই বাংলাদেশে তৈরি? ধরে নিচ্ছি ক্ষমতা এখন একাধিক সরকারের হাতে। প্রশ্ন সেটা নয় বরং সর্দার এবং মুরগিচোরার সঙ্গে রাজপথে কৃষ্ণকায় ব্যক্তিটি কে?

শহীদের সংখ্যা নিয়ে বক্তব্য দেয়ায়, খালেদার বাড়ি ঘেরাও কর্মসূচিতে দুই ফাঁসির রায় টিমের অন্যতম বিচারক মানিক? ২০১৩ সনে ইকোনোমিস্ট পত্রিকার দাবি, ৩০ লক্ষ শহীদ হলে জনসংখ্যা অনুযায়ী, ২৫ জনে ১ জন। শর্মিলা বসুসহ অনেকেই সংখ্যার ব্যাখ্যা করায় সরকার নাখোশ। ২৫ জনে ১ জন শহীদ হলে, সংখ্যা করা কি কঠিন? বড়জোর ৩ বাড়ি মিলে ২৫ সদস্য। তাহলে তালিকা না করে, খালেদার লেজে আগুন দিলো কেন? আসলে ৭১এর ষড়যন্ত্র অন্ধকারে রেখে, গুজবের ফসল ঘরে তুলছে ফিউশন লীগ। অথচ ৬৪টি জেলায় ৬৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিলেই ১ মাসে শহীদের সংখ্যা সম্ভব। গাঁটের টাকায় নিজ জেলায় সংখ্যা করেছি অতি সহজে। আসছি মূল কথায়। জুডিশিয়াল কিলিং বিষয়ে নিয়ে পাবলিকের সন্দেহ মিথ্যা হলে, রায় লেখা বিচারপতিকে কেন এক্টিভিস্টের ভূমিকায় দেখতে হলো? ঘাদানি এবং ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলন করার পরেও ২০ দলের বিরুদ্ধে কোন আইনে বক্তব্য দিতে পারেন বিচারপতি মানিক? খালেদার বাড়ি ঘেরাউয়ের পর টকশোতে দলীয় এমপির মতোই বক্তব্য কি সরাসরি জুডিশিয়াল কিলিং-এর মতো নয়? সুতরাং আমজনতার দীর্ঘদিনের সন্দেহ দূর করার জন্য বিচারপতি মানিককে অসংখ্য ধন্যবাদ। তিনি এক্টিভিস্ট এবং আইনের লোকেদের কাজ অনেক সহজ করে দিলেন।

বিচারক কখনোই নিজের এজলাসে ব্যক্তিগত মক্কেলের বিচার করতে পারে না। জুরিসপ্রুডেন্সে সেটা কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট। খবর, “সাপ এবং ওঝার চরিত্রে এবার সেই বিচারপতি মানিক। …সদ্য অবসরে যাওয়া আপীল বিভাগের বহুল বিতর্কিত বিচারপতি সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক তার আগের চরিত্রে ফিরেছেন। ঘাদানি কর্মসূচীতে আবারো সক্রিয়… ২৬ নভেম্বর ঘাদানির সভায় শাহারিয়ার কবিরসহ অন্যান্য নেতাদের সাথে বিচারপতি মানিক স্টেজেই ছিলেন। …রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সাংবিধানিক শপথ লংঘন করেছেন। …বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার পেছনে বড় ভূমিকা ঘাদানিকের। …যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিচারক ছিলেন সামসুদ্দিন, ওই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি বহাল রেখেছিলেন, একই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টির কর্মসূচিতেও মানিকই আবার স্বশরীরে হাজিরা যেন সাপ হয়ে কামড়ানো আর ওঝা হয়ে ঝাড়ো… আপীল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ে আব্দুল কাদের মোল্লা ও কামরুজ্জামানকে যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া এবং কার্যকরও হয়েছে, সেই দুটি রায়দানকারী বিচাপতিদের অন্যতম সামসুদ্দিন মানিক… এই অবস্থায় বিচারবিভাগীয় তদন্তের প্রয়োজন দাঁড়িয়েছে যে, বিচারের নামে ঘাদানির কর্মসূচি হিসেবে পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে বিরোধি নেতাদের ফাঁসি দিয়েছেন কিনা… খালেদার বাড়ির সামনে জয়বাংলা বলে শ্লোগান দিয়ে তার বিরুদ্ধে বক্তৃতা করেন… ওই সময় তার পাশে ছিলো শাহারিয়ার কবির, ব্যরিষ্টার তুরিন আফরোজ, ফেরদৌসী প্রিয়ভাসিনী, নাসিউদ্দিন ইউসুফ, শ্যামলী নাসরিন… বিচারপতি মানিকের চিঠি থেকে জানা গেছে অবসরের যাওয়ার পর তিনি আর কোন রায় লিখতে পারবেন না বলে প্রধানবিচারপতি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো…।”

জামায়েত না জাপা নিষিদ্ধ হবে, সিদ্ধান্ত বাংলাদেশিদের। স্বাইপ কেলেংকারির পর, বিচারপতি মানিকের এক্টিভিস্ট হওয়ার মধ্যে দিয়ে জুডিশিয়াল কিলিং-এর মোটিভ পুরোপুরি উন্মোচন হলো। খালেদাকেও মোদির ১০ ট্রাক অস্ত্র নিয়ে প্রশ্নের মধ্যে দিয়ে ২০ দলের পতন ফাইনাল। ফিউশন আওয়ামী লীগ নিজেই অস্তিত্ব সংকটে। দিল্লি এখন তাদের গলার কাটা। না পারে গিলতে, না পারে উগরোতে। সম্মিলিতভাবে ভারত ঠেকানোর এখনই সময়। মানবাধিকারের পত্র হাতে রাজপথে দাঁড়ালে ১ কোটি মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবহারের মতো যথেষ্ট বুলেট আর পুলিশ সরকারের নেই। অচলাবস্থা অবসানে একমাত্র উপায়- রাজপথে অন্তত ১ কোটি মানুষের শান্তিপূর্ণ অবস্থান।

সারমর্ম:- “আওয়ামী লীগকেই বেছে নিতে হয় ভারতকে” – প্রাক্তন পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে গোমড় ফাঁসের জন্য অনেক ধন্যবাদ। তবে ২০০ বছর দেরিতে হলেও কুঠিবাড়ির ষড়যন্ত্রকারী দিল্লির বিচার হবেই।

– মিনা ফারাহ।
ইমেইল: [email protected]

Loading

Comments are closed.