সত্য প্রমাণের পরিসমাপ্তি – “ইতমাম আল হুজ্জাত্ব” ও কিছু কথা

ভূমিকা:

আজকের লিখাটিতে আমি যে তিনটি বিষয়ে আলোচনা করব তা হল ১) সুন্নাহ ও হাদিস, ২) ধর্মের বিষয়ে সত্য প্রমাণের পরিসমাপ্তি, ৩) অন্যায় কি এবং এর উৎপত্তি কোথা থেকে শুরু হয়?

সবাই যে সম্মত হবেন তা প্রত্যাশা করি না তবে সময় সাপেক্ষে পাঠ করে দেখতে পারেন হয়তবা ভাল লাগতে পারে।

১)
আল্লাহতালা  মানুষের  জীবন দর্শনের দিকনির্দেশনায় যে হেদায়েত  দিতে চেয়েছিলেন  সে বার্তা তাঁর শেষ নবী বা পয়গম্বর   মোহাম্মদ (স:) এর মারফৎ  সেই ৭প্তম শতাব্ধীতে পরিপূর্ণ করে মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। রাসুল (স:)এর মিশনের শেষ জীবনে এসে নবম হিজরিতে তাঁর প্রদত্ত বিদায় হজ্ঝের ভাষণে ইসলামের প্রকৃত মূল্যবোধ অনুযায়ী মুসলমানদের করণীয় সম্পর্কে  চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন আরাফাত ময়দানে হাজারো মানুষের সামনে।

ইসলাম ধর্ম সেই আদম (আ::)থেকে যে ধাপে ধাপে ও পর্যায়ক্রমে পূর্ণতা পেয়েছিলো, তারই চূড়ান্ত ঘোষণা ছিলো মুহাম্মাদ (স:) এর এই ভাষণে। এ কারণেই সেদিন ভাষণ প্রদানকালে আল্লাহতালা কুরআনের সূরা মায়িদাহ’র ৩ নম্বর আয়াত অবতীর্ণ করেছিলেন:

আজ আমি তোমাদের ধর্মকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহকারীকে সুসম্পন্ন করলাম, আর ইসলামকে তোমাদের ধর্ম হিসেবে মনোনীত করলাম।

এই ভাষণে ইসলাম ধর্মের মর্মবাণী সংক্ষেপে বর্ণিত হয়েছিলো। মুসলিম জাতির সাফল্যের ধারা বজায় রাখতে মুসলমানদের করণীয় সম্পর্কে আল্লাহর শেষ নবী মুহাম্মাদ (স:) চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। এই ঐতিহাসিক ভাষণ কেবল উপাসনামূলক অনুশাসন ছিলো না, বরং মানবসমাজের জন্য করণীয় বিষয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ভাষায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশও এতে ছিলো। আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, তার সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি,মানবজাতির ঐক্য,আধ্যাত্মিক ভ্রাতৃত্ব, সামাজিক স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক সাম্য ইত্যাদি সমাজ বিনির্মাণের অন্যতম সব বিষয়ই এই ভাষণের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। এই ভাষণে তাকওয়া বা দায়িত্বনিষ্ঠতার কথা গুরুত্ব দেয়া হয়েছিলো এবং পাপাচারের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারী দেয়া হয়েছিলো। আল্লাহর প্রতি দায়িত্ব বা হক্কুল্লাহ ও মানবসম্প্রদায়ের প্রতি দায়িত্ব বা হক্কুল ইবাদের মধ্যে সীমারেখা টেনে দেয়া হয়েছিলো। ঐতিহাসিক সুদীর্ঘ সে ভাষনের এক পর্যায়ে শেষ নবী মোহাম্মদ (স:) বলেছিলেন,

“আমি তোমাদের মাঝে এমন দুটি জিনিস রেখে গেলাম, তোমরা তা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরলে কখনো বিভ্রান্ত হবে না। তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব (পবিত্র কোরআন) ও তাঁর রাসুলের সুন্নাত(সুত্র)

তখন থেকে এমন কোন দিন যায়নি মুসলিমদের যে,তারা নামাজ বা সালাত কিভাবে পড়তে হয় না জানায় তা আদায় করতে পারেনি,এমন কোন বছর যায়নি যে মুসলিমরা হজ্জ কিভাবে করতে হয় তা না জানায় হ্জ আদায় করতে পারেনি। এমন কোন মাস যায়নি যে রমজানের হুকুম আসার পর কিভাবে রোজা রাখতে হয় তা না জানার কারণে রোজা রাখতে পারেনি।  মুসলিম সমাজে এসব কিছু  অঙ্গীভূতভাবে seamlessly চলে আসছিল রাসুলের সুন্নাহ অনুসরণ করে।

তবে সুন্নাহ ও হাদিসকে সমার্থক (synonymous) হিসাবে চিহ্নিত করার যে প্রচলিত ধারণা আছে সে সম্পর্কে আধুনিক ইসলামিক স্কলাররা ভিন্নমত পোষন করেন সে ব্যাখা এখানে পাবেন।

তাদের বক্তব্য হচ্ছে সুন্নাহ কি সে বিষয়ে মৌলিক কথা কোরআনের সুরা নাহল ১৬:১২৩সুরা শূরা ৪২:১৩ আয়াতে দেয়া হয়েছে। হাদিস সংগ্রহ করার (দুইশত বছর)আগেও মুসলিমরা ধর্মীয় এবাদতের কাজে সুন্নাহ অনুসরণ করতে পেরেছে সম্মিলিতভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্মের ঐতিহ্য হিসাবে।

তাই অনেকে মনে করেন আজ এ বিষয়টি বুঝতে না পারার কারণে কেউ কেউ হাদিস ও সুন্নাহর মাঝে তালগুল পাকিয়ে ফেলেন। হাদিস হচ্ছে রাসুলের ব্যক্তিগত আলোচনা বা উপদেশ তা কোন সাহাবীকে দিয়েছেন বিশেষ কোন পরিবেশে ও পরিপ্রেক্ষিতে। এখন যদি সে প্রেক্ষিত বিবেচনায় না নিয়ে সে কথার ভিত্তিতে পুরা মুসলিম সমাজের সর্বকালের জন্য তা “অনুসরণীয় ইসলামী নীতি নির্দেশ” বলে চাপিয়ে দেয়া হয় তা আসলে কি সঠিক হবে?

ইসলামের নিয়ম নীতি হচ্ছে কোরআন ও সুন্নাহ। কুরআন আল্লাহর কালাম এবং সুন্নাহ হচ্ছে ধর্মের বিষয়ের ব্যবহারিক বাস্তবায়নের উদাহরণ (practical implementation)বা এবাদতের আচার অনুষ্ঠান যা রাসুল সবাইকে নিয়ে পালন করেছেন।

আর হাদিসের কথাগুলো যেহেতু বিভিন্ন সাহাবীদের সাথে রাসুলের মোবারক কথোপকথন বা প্রাইভেট আলাপ ও উপদেশ ছিল তা জানার ইচ্ছা ও চাহিদা মুসলিম সমাজে সব সময় ছিল যা প্রথমে লিখিত আকারে ছিলনা পরে ২০০শ বছর পরে তা লিপিবদ্ধ হয়েছে। সে জন্য তখনকার সমাজের ইসলামী জ্ঞানী গুণীজন ও আমাদের শ্রদ্ধেয় প্রখ্যাত ইমামগন তা সংগ্রহ করেছেন এবং সে অনুসারে তাদের নিজস্ব অভিমতও দিয়েছেন যা ইসলামের ঐতিহ্যে হয়ে আছে ও থাকবে চিরদিন। এসব সংগ্রহে অনেক কিছু শিক্ষণীয় আছে যা অবশ্যই আমাদের এক বিরাট সম্পদ কিন্তু তা দিয়ে ফতুয়া দেয়ার ক্ষেত্রে যে সর্তকতার প্রয়োজন তা না করে আবেগ দিয়ে চললে সেটি হবে ধর্মান্ধতা। যেমন বলা হয় হাদিসে আছে যে রাসুল (স;) বলেছেন মহিলারা একাকি সফর না করতে:  কোন নারী নিজ মাহরাম সংগী ছাড়া একাকী সফর করবেনা।” এমনকি হজ করতেও যেতে পারবেনা একাকি।(সহীহ বুখারী, হাদীস নং- ৩০০৬।)

এ কথাটি রসুল (স:) মদিনায় যখন বলেছেন তখন কি পরিবেশ ছিল? তখন মদিনা থেকে মক্কার রাস্তা এখনকার মত ছিলনা যে কেউ ৪/৫ ঘণ্টায় পৌঁছে যাবে । সে যুগে দশ মাইল রাস্তা গেলেই রাত্রি হয়ে যেত,একজন মহিলা পক্ষে কিভাবে নিরাপদে একা সফর করা সম্ভব ছিল? স্বভাবতই একজন মাহরাম সঙ্গী ছাড়া সে সফর নিরাপদ হত না। রাসুল সে উদ্দেশ্যেই সে কথাটি  বলেছেন সেই পরিবেশের প্রেক্ষিতে। আজকাল মহিলারা একাকি সব কাজে যেতে পারছেন কিন্তু আল্লাহর ঘরে নিজ দায়িত্বে হজ করতে যেতে পারবেননা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা থাকলেও হাদিসের কারণে “মাহরাম ছাড়া” সেটা কতটুকু বাস্তবসম্মত সে প্রশ্ন আসতেই পারে!

নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এ পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার পর শুরু হয় তাঁর সে দ্বীনকে  পরবর্তী যুগের মানুষদের বুঝার যুগ। রাসুলের জীবনের উদাহরণ তাঁর সুন্নাহ তাদের সামনে ছিল বা জানা ছিল এর ভিত্তিতে  তখনকার মানুষের এক ধর্মীয় চিন্তা চেতনার তথা “রিলিজিয়াস থট”  প্রকাশ পায় যা মূলত মানুষের সৃষ্টির কর্ম বলা যায়।  এই কর্ম সাধনে যে অনেক  কল্যাণ বয়ে এনেছে ধর্ম বুঝার ব্যাপারে তা অস্বীকার করা যায় না। ইসলামের অতীত ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় সে কর্ম সাধনের ফলে বড় বড় অনেক ব্যক্তিত্বের নাম পাওয়া যাবে যাঁরা তাদের পুরোটা জীবন এ মিশনে  আত্মত্যাগ করেছেন। তারা ইসলামের ন্যায় নীতির আদর্শের পক্ষে মত প্রকাশ করতে গিয়ে অনেকে জালিম অত্যাচারী শাসকদের রোষানলের শিকার হয়েছিলেন সে জন্য জেল জুলুম খাটতে হয়েছে আবার কখনও দরবারী আলেম উলেমাদের কাছ থেকে “কাফের মুরতাদ” ফতোয়াও এসেছে সে তথ্য ইতিহাসে আছে। এরা কেউ কিন্তু সে সব কাজ নিজেদের  ব্যক্তিগত  স্বার্থসিদ্ধি বা সম্পদ  অর্জনের জন্য করেন নাই।

তবে মানুষের চিন্তাভাবনায় তার যুগের এক বিরাট প্রভাব যেমন থাকে তেমনি পরবর্তী যুগে মানব সমাজের যে পরিবর্তন আসবে বা আসতে পারে সে ধারণাও যেহেতু থাকেনা তাই কোন বিশেষ যুগের চিন্তাভাবনার সব কথাতে বা ব্যাখ্যার সব কাজ যে একেবারে ত্রুটিমুক্ত বলে প্রকাশ পাবে বা  প্রযোজ্য হবে সময়ের পরিক্রমায় সকল যুগের প্রেক্ষাপটে সকল মানুষের কাছে তা বলা কঠিন। সে জন্য প্রয়োজন হয় যুগে যুগে ধর্ম বিষয়ের অনেক কিছু বুঝতে নতুনভাবে চিন্তাভাবনার। প্রয়োজন হয় “ইজতিহাদের”।

এখন ইজতিহাদের জন্য উসূলে ফিকাহর জ্ঞান যেমন প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন বর্তমানকে বর্তমানের দৃষ্টিতে বুঝা এবং অতীতকে অতীতের দৃষ্টিতে দেখা এবং বর্তমানের সাথে তফাৎ কোথায় সে বাস্তবতা উপলব্ধী করা। অতীতকে বর্তমানে ফিরিয়ে আনা যায়না সেটি করতে চাইলে  জ্ঞান বন্দী হয়ে পড়ে কোন এক অতীতে, এবং সাথে সাথে সমাজেও নেমে আসে বন্ধ্যত্ব, জ্ঞান-বিজ্ঞানও পড়ে থাকে পিছনে।

গত কয়েক শতাব্দী ধরে পশ্চিমা বিশ্বের কাছে মুসলিম উম্মাহর রাজনৈতিক বিপর্যয় ও  সমাজ ব্যবস্থার পশ্চাত্পদতা লক্ষ্য করে আধুনিক ইসলামী বুদ্ধিজীবী মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে বর্তমান যুগে অতীতের মানসিকতায় ইসলামকে বোঝার ধারনা সঠিক কিনা? অতীতের জ্ঞানের নির্যাসটি কেবল নেওয়া যেতে পারে বর্তমানকে সমৃদ্ধ করতে কিন্তু অতীতে পড়ে থাকা যাবেনা ।

তাই প্রচলিত “রিলিজিয়াস থট” এর পুনর্গঠন ও সংশোধনের চিন্তাভাবনা জাগে অনেকের মনে। পাক-ভারতে সৈয়দ আহমেদ খানকে বলা যায় এই চিন্তার প্রবর্তক যার প্রভাবে ১৯৩০ সালের দিকে পাক-ভারতের বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ আল্লামা ইকবাল এর লিখিত “ইসলামে ধর্মীয় চিন্তার পুনর্গঠন ( The Reconstruction of Religious Thought in Islam) গ্রন্তটি ছিল এরকম এক প্রচেষ্টার উদাহরণ। তবে বিগত কয়েক দশকে মুসলিম বিশ্বে এক দিকে ধর্ম চেতনার নামে যে অজ্ঞতা,গোঁড়ামি ও উগ্রতা অন্যদিকে আধুনিকতার নামে যে নোংরামি ও অসাধুতা বিদ্যুৎ গতিতে বাড়ছে তা বন্ধ করতে যদি ইসলামকে ব্যবহার করতে হয় তা হলে আসতে হবে ইসলামের ধর্মীয় চিন্তার পুনর্গঠন।

ধর্ম নিয়ে আজ কাল সমস্যা কোথায় এবং কেন মানুষ ধর্ম বিমুখ হয়? এ ব্যাপারে বিভিন্ন অভিমত থাকতে পারে। তবে আধুনিক ইসলামি চিন্তাবিদ অনেকের অভিমত হচ্ছে তার প্রধান কারণ হল ধর্মকে আমরা কেবল পুরাণো ইতিহাস, ঐতিহ্য ও কিচ্ছা কাহিনীর বর্ণনায় বর্ণিত করে মানুষের কাছে প্রচারে লিপ্ত। তাই ধর্মের পথে আগ্রহী করার বা ঈমান আনার প্রচলিত যে এপ্রোচ সে দিকে না গিয়ে মুসলিম সমাজে ইসলামকে যদি জ্ঞান শিক্ষার একটি বিষয় হিসাবে উপস্থাপন করা যায় তখনই সেটি হবে সবচেয়ে শক্তিশালী সরঞ্জাম মানুষকে ধর্মমুখী করতে। বর্তমান যুগে ধর্ম প্রচারে সনাতনী বা প্রাচীন যে এপ্রোচ ও নেরেটিভ চলে আসছে তার পরিবর্তন অবশ্যই করতে হবে।

অন্য কথায় মানুষ বিজ্ঞান ও অংক ইত্যাদি জ্ঞান শাস্ত্র শিখতে যে এপ্রোচ ও যে পদ্ধতি অনুসরণ করে সেভাবে মানব সভ্যতার উন্নয়নে ইসলামকে জ্ঞানের আরেকটি উৎস বা বিষয় হিসাবে  প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এ বিষয়টি এভাবেই প্রকাশিত হতে হবে সাধারণ মানুষের কাছে। তখন হয় সে বুদ্ধিমান ধার্মিক হবে না হয় বোকা নাস্তিক হবে। অর্থাৎ আমাদেরকে বুঝাতে হবে নবী রাসুলের পথে চলার যুক্তি কি? সে জীবন দর্শনে তারা কি শিক্ষা দিয়েছেন এবং তা কিভাবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে কাজে লাগবে, সে নীতি, সে আদর্শ কি এবং কিভাবে তা মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে? সে দর্শন মানুষের আর্থ-সামাজিক কি কাজে লাগতে পারে? সেখানে মানুষের মানবাধিকার কিভাবে সমুন্নত থাকবে? অন্যায় অবিচার দূর করতে কি ভূমিকা রাখতে পারে এবং মানুষের আধ্যাত্মিক কি উপকার হবে?

২)
“ সত্য প্রমাণের পরিসমাপ্তি” তথা  “ইতমাম আল হুজ্জাত্ – Completion of Proof)  এটি একটি ইসলামী কনসেপ্ট বা ধারণা যা বোঝায় যে, আল্লাহ পক্ষর  থেকে যখন ধর্মীয় সত্যকে কোন জন গুষ্টির কাছে রাসুল দ্বারা সরাসরি তথা ধর্মের বিষয়কে জীবন্ত প্রকাশ (Live manifestation) করে সম্পূর্ণভাবে স্পষ্ট করে দেয়া হয়। অর্থাৎ যখন কোন একটি সম্প্রদায়ের  কাছে ধর্মের বিষয়টি উপলব্ধি করিয়ে দেয়া হয়েছে আল্লাহর রাসূলকে তাদের সামনে সশরীরে উপস্থিত করে, যা অস্বীকার করার কোন অজুহাত নেই।

“ইতমাম আল হুজ্জাত্ব” এর এ ধারণাকে উপলব্ধি করেই আধুনিক ইসলামী স্কলারদের অভিমত হল ধর্ম হিসাবে দ্বীন ইসলাম  সম্পূর্ণ পরিপূর্ণতা লাভ করে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিজয়ী হয়ে গিয়েছে সেই ৭তম শতাব্দীতেই রাসুলের জীবদ্দশায়।

তাছাড়া কোন জনপদে যখন রাসুল সশরীরে বিদ্যমান থাকেন এবং মিথ্যার বিপরীতে সত্য প্রকাশিত হয় তখন আল্লাহ সে অবিশ্বাসী জাতির উপর কখনও গায়েবী শাস্তি পাঠান কখনও তার রসুলদের অনুসারীদেরকে দিয়ে সেটি সম্পন্ন করেন এবং তার দ্বীনকে কামিয়াব করেন। সেটিই আল্লাহর সিদ্ধান্ত। যা অবিশ্বাসীদেরকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়  এর প্রমাণ শেষ নবী রাসুল (স:) সহ অন্যান্য রসুলদের বেলা যেমন নুহ,মুসা (আ:) থেকে আ’য়াদ সামুদ ইত্যাদি বিভিন্ন জাতির ব্যাপারে বাস্তবায়িত হয়েছে।

“হুওয়াল্লাযী আর্সালা রাসূলাহূ বিল্ হুদা ওয়া দীনিল্ হাকক্বি লিইয়ুজ্ হিরাহূ ‘আলাদ্দীনি কুল্লিহী ওলাও কারিহাল্ মুশরিকূন্।”

অর্থাৎ  তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি সকল দ্বীনের উপর তা বিজয়ী করে দেন। যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।” (সুরা ৬১.৯)” এবং সেটি আরবের বুকে বাস্তবে করাও হয়েছিল।

তাই রসুলদের সে যুগ পেরিয়ে ইসলাম নিয়ে এখন সশস্ত্র যুদ্ধ বা জেহাদ ও জঙ্গি-পনা ও মারামারি,গালাগালি করার কোন সুযোগ নাই ইসলামে। অতএব শিয়া সুন্নি মারামারি কিংবা ইসলাম নিয়ে হাদিসের ভিত্তিতে কারো ব্যাখ্যা কেউ মানতে না চাইলে বা ভিন্ন ব্যাখ্যা দিলে তাকে “কাফির ফতোয়া” দেয়া আইনত নিষিদ্ধ করা উচিত বলে অনেকে মনে করেন। যেহেতু নবী রসুলেরা সামনে নাই এবং আল্লাহও আর কাউকে ওহি দিবেন না তাই এ বিরোধের কোন সমাধান হবে না!

অবশ্য উপরোক্ত আলোচনায় যদি প্রশ্ন আসে, “তা হলে বর্তমানে মুসলিমদের উপর যে অত্যাচার চলছে তার প্রতিকারের জন্য কি জেহাদের প্রয়োজন নাই?”

উত্তর:  জেহাদের অর্থ যদি  হয় সর্বাত্মক অহিংস প্রচেষ্ট  তখন অবশ্যই তার প্রয়োজন আছে। আর জেহাদের অর্থ যদি কোন গুষ্টি বা দলের সমর্থক ব্যক্তিরা কাতাল বা যুদ্ধের জেহাদ করা সেটি হবে হারাম ও মারত্মক ভূল। তবে ইসলামী স্কলারদের অভিমত হচ্ছে কোথায়ও কোন দেশে গণ হত্যা ও অন্যায় চলতে দেখলে যদি অহিংস ও কূটনীতিক সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় তার সমাধান ব্যর্থ হয় কেবল তখনই রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সামরিক পদক্ষেপ নেয়া যুক্তি সংগত হবে যদি অপর পক্ষের সাথে শক্তির ভারসাম্যতার বিরাট ব্যবধান না থাকে এবং বিজয়ের সম্ভাবনা বা লক্ষন থাকে। তা না হলে সেটি হবে আত্মঘাতী যুদ্ধ। সে ক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করাটাই সমীচীন যেহেতু ধৈর্য ধারণ ন্যায্য হলে তখন আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে থাকেন। “ইন্নাল্লাহা মা ওয়াছ্ ছাবেরিন“।

তবে এক শ্রেণীর মুসলিমের উত্তর হবে “মুসলিমরা দ্বীন ইসলাম থেকে দূরে চলে গিয়েছে সে জন্য এই দুরবস্থা। সবই আল্লাহর ইচ্ছা! ইমাম মেহদী আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আর আল্লাহর নবী ঈসা (আ:) এসে তাঁর সাথে যুগ দিবেন।”  তবে এসব কথা অনেকের কাছে যুক্তিক সঠিক মনে হয় না কুরআনের ভিত্তিতে, সে প্রসঙ্গে এ লিখাটি পড়তে পারেন।

৩)
অন্যায় আসলে কি ?

সংক্ষেপে অন্যায় হচ্ছে এমন কাজ ও আচরণ যা মানুষ অন্যের সাথে করবে বা করতে চায় যা সে নিজের জন্য পছন্দ করবেনা বা কোন অবস্থাতে চাইবেনা যে সেটি তার উপর কেউ করবে। অন্যায়কারীই হয়ে যায় অবিচারি ও অত্যাচারি। সেটি হতে পারে ধর্মে, রাজনীতিতে, সামাজিক ও ব্যক্তিগত যে কোন পর্যায়ে। যেমন,  নিজের ধর্ম বা মতামতকে চিরসত্য ও সঠিক ভেবে অন্য ধর্মের মানুষের বা ভিন্নমতের কারো প্রতি এমন আচরণ ও ভাষা ব্যবহার করবে যা নিজের বেলা করলে পছন্দ করবে না। তেমনি কেউ যদি  রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসে তার প্রতিপক্ষের সাথে বা বিরোধী দলের সাথে যে ব্যবহার করে সেটি সে নিজে বিরুধী দলে থাকলে তার উপর নিতে চাইবেনা  সেটিই হচ্ছে অন্যায় ও অসৎকাজ এবং সে কাজ যে করবে তাকেই বলা হয় অত্যাচারী। অত্যাচারীর বন্ধু হয় সবসময় শয়তানেরা। তবে সে শয়তান শুধু ইবলিস নয় সেটি মানুষও হতে পারে। কেননা শয়তানি হচ্ছে  জীন এবং মানব জাতীর মাঝে  একটি কুপ্রবণতা যার উৎপত্তি হয় আল্লাহর হুকুম না মানার কারণে আর এ কুপ্রবৃত্তি যারা লালন করে তাদের পরিণতি হবে জাহান্নাম। এটি আল্লাহর কথা কুরআনেই আছে।

পরিশেষে বলা যায় ইসলামকে যারা জ্ঞানের উৎস হিসাবে অধ্যয়ন করতে বলেন তাদের কথাকে অবমূল্যায়ন না করে ইসলামকে আসলেই জ্ঞান শিক্ষার একটি বিষয় হিসাবে কিভাবে উপস্থাপন করা যায় আধুনিক বিশ্বের প্রেক্ষাপটে সে বিষয়ে গবেষণা ও প্রচেষ্টার দরকার।
পুরাণো ইতিহাস, ঐতিহ্য ও কিচ্ছা কাহিনীর বর্ণনায় আবেগ সৃষ্টি হয় যার ফলে ঐতিহাসিক চরিত্রের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়ানো যায় এবং মহিমান্বিত করা যায় তা ভাল তবে তাতে ধর্মের জ্ঞান বেড়ে যায় না।
একজন মানুষের জ্ঞান বেড়েছে তখনই বলা যায় যিনি ধর্ম বিষয়টিকে যুক্তি দিয়ে তার মর্ম নিজে বুঝে অন্যকে বুঝাতে সক্ষম হন, সেটি ভয়ভীতি দেখায়ে চাপিয়ে দিয়ে নয় বরং ধর্মের আদর্শ নিজের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা ও সেভাবে জীবন গড়া যার বহি:প্রকাশ ঘটবে সমাজে মানুষের সাথে তার ন্যায় নীতি সম্পন্ন  সঠিক আচর আচরণে। সে জন্য আজ আমাদের প্রয়োজন গভীরভাবে চিন্তা করার কুরআনকে কিভাবে আমাদের ইসলামী জ্ঞানের মূল কেন্দ্র বিন্দু হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায় এবং জ্ঞানের উদ্দেশ্যে অধ্যয়ন করা যায়।

কুরআনের বিশ্বজনীন বার্তা কি ছিল এবং তা নাজিল হওয়ার সময়ের শ্রোতা কারা ছিলেন এবং তাদের সমাজের কি অবস্থা ছিল,সে সমাজের কৃষ্টি কালচার কি ছিল, মহিলাদের কি অবস্থান ছিল এবং ধনী গরীবের কি সম্পর্ক ছিল, ধনী লোকদের ঘরে দাস ও দাসী প্রথা কেমন ছিল, যুদ্ধে বিজয়ীরা পরাজিতদের সাথে কি ধরণের ব্যবহার প্রচলিত ছিল, যুদ্ধবন্দীর স্ত্রী, কন্যা ও পরিবারের কি হত?  ইত্যাদি বিষয় সামনে রেখেই কারো মত বা পথকে আজ কিভাবে অনুসরন করা যায় দেখতে হবে।

সর্বোপরি মুহাম্মদ(স:)কে আল্লাহর শেষ নবী হিসাবে গ্রহণ না করার পিছনে ইহুদী ও খৃষ্টান ধর্মের অনুসারী সহ অবিশ্বাসী ও মুনাফিকদের এক বিরাট জন-গুষ্টির মনে যে বিরোধী বিদ্বেষ বিরাজ করত সেটি কি ছিল এবং কেন করত ইত্যাদি সামাজিক প্রেক্ষাপট সামনে রেখেই যে কুরআনের প্রতিটি বানী এসেছে সেখানে আজকের পরিবর্তিত সমাজ ব্যবস্থা সামনে ছিলনা। অতএব সেই পটভূমি সামনে রেখে কুরআনের উদ্দেশ্য তার মর্ম বুঝে কুরআন থেকে পাওয়া আদর্শ, সামাজিক সুবিচার, বিশ্বজনীন ন্যায় নীতি, মানব কল্যাণ এবং আল্লাহর একত্ববাদ  তৌহিদ, রিসালা, জীবনের উদ্দেশ্য, কেন আমরা পৃথিবীতে এসেছি ইত্যাদি বিষয় জানতে কুরআনকে অধ্যয়ন করতে হবে।

ইদানীং এ বিষয়ে আমি ইন্টারনেটে অনুসন্ধান করে দেখছি আধুনিক ইসলামী চিন্তাবিদ অনেকেই সে প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন কিন্তু তাদের স্থান হচ্ছেনা সেভাবে এখনও সনাতনী চিন্তাধারার মানুষের কাছে যারা অতীত নিয়ে পড়ে থাকতে চান।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে, সৈয়দ আহমেদ খান ও আল্লামা ইকবালের চিন্তাধারার উত্তসূরী হিসাবে বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের একজন অন্যতম মুসলিম চিন্তাবিদ ছিলেন ফজলুর রহমান (১৯১১-৮৮) যাকে বলা যায় পাক-ভারতের সম্ভবত সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী একজন আধুনিক ইসলামী চিন্তাবিদ। তার মতে “কোরআন যেমন কোন ‘অ্যাবস্ট্রাক্ট নীতিশাস্ত্রের তথা বিমূর্ত নীতি বই নয়, তেমনি সেটি কোন আইন শাস্ত্রও নয় যা মুসলিম আইনজীবীরা আইনি দলিল হিসাবে ব্যবহার করতে চান। কুরআন একটি নৈতিক উপদেশের গ্রন্থ এবং এটি আগা গোড়া একটি নৈতিক উপদেশের কাজ!” তাঁর বই ও রচনাগুলি পাকিস্তান,মালয়েশিয়া,ইন্দোনেশিয়া এবং তুরস্কের মতো দেশের আধুনিক ইসলামী বুদ্ধিজীবী মহলে ব্যাপক আগ্রহের সাথে আলোচিত হচ্ছে । কিন্তু তাঁকে “গোমরাহ” বলে অভিযোগ এসেছে অনেক সনাতনী বা পুরানো ধারনার উলেমাদের কাছ থেকে।

বর্তমানে জাভেদ আহমেদ গামিদীও সে ধরনের আধুনিক চিন্তার অন্যতম একজন ইসলামী বুদ্ধিজীবী যিনি পাকিস্তানি মিডিয়াতে ও যুব সমাজে বেশ জনপ্রিয় হলেও তাকে নিয়ে নেচিবাচক সমালোচনা আসছে সনাতনী মহল থেকে। নিরাপত্তার কারণে তাকেও পাকিস্তান ছাড়তে হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। এ সবই হল ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের কাছে ভিন্নমত সহ্য না করার উদাহরণ। আসলে ইসলামকে যখন জ্ঞানের আরেকটি উৎস হিসাবে অধ্যয়ন করা হবে তখন মুসলিম সমাজের ধর্মীয় ধর্ম মহলে একে অন্যের প্রতি কাদা ছুড়াছুড়িও বন্ধ হয়ে যাবে কেননা তখন আবেগ উত্তেজনা ছেড়ে জ্ঞান ও যুক্তিকে বেশী প্রধান্য দেয়া হবে এবং একটি পরিপক্ব পূর্ণবিকশিত বুদ্ধিজীবী আলেম সমাজ গড়ে উঠবে যারা সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা রাখবে।

আপনি কি কখনও দেখেছেন যে, এক জন বিজ্ঞানী অন্য বিজ্ঞানীর সাথে কোন বিষয়ে মতানৈক্য হলে তারা একে অন্যকে হে মিঞা তুমি বৈজ্ঞানিকই নও বলে চিৎকার দিতে? মুসলিমদের ধর্মীয় মহলের আলোচনায় ইসলাম বিষয়ে মতানৈক্য হলে একে অন্যকে মুসলিম বলেই মানতে রাজি নয়!

ধর্ম বা ধর্মীয় চর্চা এখন জ্ঞানের বিষয় নয় সেটি এখন আবেগ মিশ্রিত বাজারের পণ্য। “প্যকেইজড প্রডাক্ট”,“ইসলাম মেইড ইন অমুক ও মেইড ইন তমুক” এর ফেরী চলছে! এখন তাদের এক কথা, মাইওয়ে ওর হাইওয়ে!”

ক) Re-thinking Education in Islam: Reviving the Legacy of Muslim Scholars ~ Dr. Yasir Qadhi

খ) নবী (স:) এর জীবনের শেষ দিকের একটি ঘটনা যা হাদিসে জিব্রাইল (আঃ) হিসাবে আমরা আমরা জানতে পাই ইসলাম,ঈমান আসলে কি?

গ)  একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ধনী-গরীব গরীব নির্বিশেষে যে কোন নাগরিকের জন্য সাধারণ শিক্ষা পাওয়া তার মৌলিক মানবিক অধিকার যা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। সেটি ধনী গরীব ও এতিম সন্তান সবার জন্য সমান অধিকার।

এই প্রাথমিক সাধারণ শিক্ষা অর্জনের পরই কেবল তাকে অন্য কোন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ করতে যেমন মাদ্রাসা  কিংবা মন্দিরের  সিলেবাস পড়ানো যেতে পারে। সরকারকে আসলেই এ ব্যাপারে একটি দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

তাই বাংলাদেশের মক্তব মাদ্রাসা ও এতিম খানার প্রতিটি ছাত্রের জন্য প্রাথমিক ১২ বৎসর পাবলিক স্কুলের সিলেবাস বাধ্যতামূলক করতে হবে যাতে তারা মেট্রিক পাশ করতে পারে।  যার ফলে আগামী প্রজন্মের যে যুব-সমাজ আসছে তাদের মৌলিক শিক্ষা জ্ঞানের মান সবার  জন্য সমান থাকবে ।

ঘ) আসলে ধর্ম হয়ে গিয়েছে এক প্রতীকী জিনিস মিনার গম্বুজ লম্বা কোর্তা শুভ্র লম্বা দাড়ি কিংবা পায়জামা পাঞ্জাবী ইত্যাদি। অবশ্য মিনার গম্বুজ কিছুই ছিলনা নবীর যুগে। তবে অন্যগুলাকে আমরা কালীন সংস্কৃতি বলতে পারি। “কালীন” শব্দটি লক্ষণীয়। নবীর যুগে নবী কোন আলাদা ড্রেস বা ইউনিফর্ম পড়তেন না। আরবে সে যুগের সবার যে পোশাক ছিল তিনি সেটিই পড়তেন। সে সময় তার গোত্রের অন্যরা যেভাবে দাড়ী রাখতেন সে সময়ে তিনিও সেভাবে তা রাখতেন।

পুরানো যুগের ঐতিহ্য বা কালচার যখন ধর্মে বাসা বেঁধে ফেলে, তখন তা বাদ দেয়া কঠিন ভাবলেও প্রশ্ন থেকেই যায় যে এ সব প্রতীকী জিনিসকে ধর্মের মূল ভিত্তি করে নেয়াটা কী ধর্মের সঠিক অনুসরণ, না ধর্মের আদর্শ পালনটাই হচ্ছে আসল ধর্ম পালন?

Comments are closed.