বাংলাদেশ স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে শেখ মুজিবুর রহমান ও জুলফিকার আলী ভুট্টোর চিন্তা ভাবনা কি ছিল –এর উপর কুলদীপ নায়র তার নতুন বই থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি দিয়ে সে সময়ের আভ্যন্তরীণ অবস্থার চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করেন।
১৯৭০ দশকের যেসব কনসুলেট দলীল-দস্তাবেজ যুক্ত রাষ্ট্র উন্মোচন (বা প্রকাশ) করে তাতে দেখা যায় যে একাত্তরে স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশ পাকিস্তানের সাথে একটি ফেডারেশন (বা রাষ্ট্র-সংঘ ব্যবস্থা) তৈরি করতে ইচ্ছে করে। ঢাকাস্থ আমেরিকান কনসোল (যুক্ত রাষ্ট্রের) স্টেট ডিপার্টমেন্টে যে প্রতিবেদন পাঠিয়েছিল এই উন্মোচনটি সেই তথ্যের উপর সাজানো ছিল।
প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে, (যিনি তখনও পাকিস্তানের বন্দি ছিলেন), যে আলোচনা করেন সেই আলোচনাকে কেন্দ্র করে আমেরিকান কনসুলেটের উপপাদ্য (thesis) স্থাপিত হয়। আমেরিকান কনসুলেটের প্রতিপাদ্যটি মূলত ভুল ছিল।
প্রতিবেদনটি সেদিনের ছড়িয়ে-পড়া কান-কথা ও গুজবের উপর ভিত্তি করে (এমন ধরনের সম্ভাবনা) উপস্থাপন করা হয়েছিল । প্রকৃত ঘটনা ছিল ভিন্ন। জেনারেল ইয়াহিয়া, যিনি পূর্ব পাকিস্তানের পতনের জন্য দায়ী, তার কাছ থেকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব গ্রহণ করার পর, ভুট্টো প্রথমে যে কাজটি করেন তা হল শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনা। শেখ মুজিবকে হেলিকপ্টার যোগে রাওয়ালপিন্ডির নিকটস্থ ডাক-বাঙলায় নেয়া হয়, যেখানে রাষ্ট্রপতি-ভবনে ভুট্টো বাস করতেন।
ভুট্টো পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে কোনরূপ একটা সম্পর্ক স্থাপনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু শেখ মুজিব বলেন যে তিনি কোন কিছুতে প্রতিশ্রুতি দিতে পারবেন না যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি বাংলাদেশ সফর করেছেন এবং তার দলের লোকদের সাথে আলোচনা করেছেন।
বাংলাদেশ-যুদ্ধ দিল্লি ও ইসলামাবাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল। তাই পাকিস্তানে যেতে হলে সুইস দূতাবাসের মাধ্যমে যেতে হত। আমি (সেই সূত্রে) ভুট্টোর সাথে সাক্ষাতের অনুরোধ পাঠাই। ভুট্টোর সাথে আগে আমার কয়েক দফা সাক্ষাত হয়েছিল। আমার ভিসা খুব দ্রুতই অনুমোদিত হয়েছিল। আমি সেখানে গিয়ে প্রথমে ভুট্টোর সাথে দেখা করি। এই হল [নিম্নে দেয়া] সেই (সাক্ষাতের) আলোচনা যা আমি টেপ রেকর্ডারে ধারণ করি।
ভুট্টোঃ ২৩ ডিসেম্বর আমরা (আমি ও শেখ মুজিবুর রহমান) প্রথমবার বৈঠকে বসি। মুজিব কোরান শরিফ বের করে বললেন, ‘আমি একজন খাটি মুসলমান। আমি এখনো চাই যে প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক বিষয় ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উভয়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় বিষয় হিসেবে থাকবে।’ তবে ২৭ ডিসেম্বর যখন আমরা দ্বিতীয়বার বসি তখন তার অবস্থান ছিল অনিশ্চিত। তিনি বললেন, ‘আমি বলতে পারব না কয়টা বিষয় কেন্দ্রে রাখা যাবে এবং কোন ধরণের বিষয়াদি। তবে আমি চাই সম্পর্কাদি বজায় থাকুক।’ আমি সংশয়পূর্ণ ছিলাম। আমি মুজিবকে বললাম, ‘আপনি বুঝতে পারছেন, আপনি এখানে বসে এমন কথা বলতে পারছেন আর আমি আপনার কথাকে গ্রহণ করে যাচ্ছি, কিন্তু আপনি যখন সেখানে যাবেন, তখন সেখানকার [পরিবর্তিত] অবস্থা দেখবেন, আপনি দেখবেন রাইফেল হাতে যুবকদের দল আপনার চতুঃপার্শ্ব ঘিরে আছে। আপনি নির্ঘাত এক মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে গিয়ে এটা করতে পারবেন না [অর্থাৎ সংযোগ রাখতে পারবেননা]।. তবে আপনি যদি কোন ধরণের কাল্পনিক সম্পর্কও রাখতে পারেন, আমি তাতেই খুশী হব।’
তিনি দৃঢ় নিশ্চিত ছিলেন। ‘না, না’, তিনি বললেন। ‘আমি নেতা –মে লিডার হো, মে ঠিক কার দুউঙ্গা –আমি লিডার, আমি এগুলো ঠিক-টাক করে দেব। এধরণের আলোচনাই হয়। তবে আমি তাকে পছন্দ করি। ব্যাপার হল এই, তখন সমস্যা অনেক। কিন্তু তিনি সেগুলোর অর্ধাংশের আলোচনায়ই যাননি।
আমি [ইন্টারভিউয়ার] শেখ মুজিবুর রহমানের ইন্টারভিউ ভুট্টোর পরে রেকর্ড করি -তার বক্তব্য ভিন্ন ছিল।
‘আমি আমার জেইলরের কাছ থেকে, যিনি একজন পরহেজ লোক ছিলেন, জানতে পারি, যে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গিয়েছে। সুতরাং যখন আমাকে জেল থেকে মুক্তি দেয়া হয় তখন আমি অনুমান করি যে আলোচনার উদ্দেশ্যেই এটা করা হয়েছিল। আমি মনে মনে স্থির করি যে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার খবরটি আমি জেনে ফেলেছি –এমন কোন ইঙ্গিত দেব না।
আমি ডাক-বাঙলায় আসার কয়েক দিনের মধ্যে একদিন ভুট্টো এসে হাজির হলেন। তিনি বললেন, ‘আমি এখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট।’ আমি হাসতে শুরু করলাম। “আপনি ভুট্টো, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট! এই পদটি তো আমার। আপনি জানেন আমি পাকিস্তানের ন্যাশনাল এসেম্বলির সর্বাধিক সিট লাভ করেছি।” তিনি যেন আমাকে ভয় দেখাতে চেয়েছিলেন। তিনি বললেন, তিনি চিফ মার্শাল লো এডমিনিস্ট্রেটরও বটে। উত্তরে আমি বললাম, আমি কোন কথা বলতে যাব না যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি বলেন যে আমি মুক্ত। তিনি বললেন, আপনি মুক্ত। তারপর আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়।
তখন যা কিছু ঘটে গিয়েছে তার জন্য ভুট্টো ইয়াহিয়াকে দায়ী করলেন, যদিও আমি জানি যে তিনিই ছিলেন সব কিছুর পিছনে। তিনি চেয়েছিলেন পূর্ব পাকিস্তান যেন সরে যায় -যাতে করে তিনি অবশিষ্ট পাকিস্তানের প্রধান মন্ত্রী হতে পারেন। তারপর তিনি সরাসরি আসল কথায় আসেন।
তিনি চেয়েছিলেন পররাষ্ট্র বিষয়, প্রতিরক্ষা ও যোগাযোগ -এই তিনটি বিষয় বাংলাদেশ ও পাকিস্তান যেন যৌথভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আর আমি যেন তাতে রাজি হই। আমি বললাম এটা সম্ভব নয়। কিন্তু তিনি যখন পীড়া-পিড়ি শুরু করলেন তখন আমি বললাম, আমার লোকজনের সাথে আলোচনা ছাড়া কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারব না।
তারপর আরেক দফা বৈঠক হয়। এটাই ছিল আমাদের শেষ বৈঠক। তিনি সেই একই বিষয়ে পীড়া করতে থাকেন এবং আমার সকল চেষ্টা নিয়োগ করতে অনুরোধ করেন। আমি বললাম, দেখা যাক কি করতে পারি।’
ভুট্টো আমাকে [ইন্টারভিউয়ার] যা বলেছিলেন, বিশেষ করে মুজিবের কোরান নিয়ে শপথ যে তিনি কিছু বিষয় যৌথ নিয়ন্ত্রণে রাখবেন, আমি তা মুজিবকে বললাম। মুজিব বললেন:
‘ভুট্টো একজন মিথ্যাবাদী। তবে আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ যে তিনি আমার জীবন বাঁচিয়েছিলেন। কিন্তু এ কাজটি তাকে মিথ্যাচার করার অধিকার দেয়না।’
উভয়ের ভাষ্য তেমনি ভিন্ন ছিল যেমনি ভিন্ন ছিলেন এই ব্যক্তিত্ব। ভুট্টো ছিলেন বর্ণাঢ্য, সচেতন অস্পষ্ট, মুজিব ছিলেন সংযত, সরল, স্পষ্টভাষী। প্রথমজন একই অভিব্যক্তিতে দোদুল্যমান, স্ববিরোধী আর দ্বিতীয়জন আস্থাবান ও সুদৃঢ়।
উভয়ের কথা থেকে অন্তত একটি জিনিস বেরিয়ে আসে। মুজিবকে ৮ জানুয়ারি, ১৯৭২ নিঃশর্ত ভাবে মুক্তি দেয়া। তাকে প্রথমে কোন আরব দেশ হয়ে ঢাকায়, অথবা দিল্লী হয়ে অথবা অন্য কোন দেশ হয়ে ঢাকা যাওয়ার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। তিনি প্রথমে লন্ডনে যেতে পছন্দ পছন্দ করেন। তারপর দিল্লি হয়ে ঢাকায়।
মুজিব-ভুট্টোর আলোচনার পর, ভুট্টো ও কামাল হোসেন, যিনি পরবর্তীতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী হবেন, এর মধ্যে একটি সম্পূরক সংলাপের কথা প্রকাশিত হয়। মুজিবকে ছেড়ে দেয়ার পর তাকেও পশ্চিম পাকিস্তানের জেল থেকে মুক্তি দেয়া হয়। কামাল হোসেন পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সংযোগ রক্ষার ব্যাপারে মুজিবের জন্য একটি খবর বহন করছেন –এমন কথা প্রচারিত হয়। এ খবরটি ইসলামাবাদ প্রচার করে। কিন্তু আমি যখন মুজিবের সাথে ঢাকায় দেখা করি তিনি বলেন এটি সত্য নয়।
মুজিবকে ছেড়ে দেয়ার ভুট্টোর উদ্দেশ্য ছিল, তিনি আমাকে যেভাবে বললেন, ‘আমি প্রয়োজন ছাড়াই একটি নাইটিনঙগল (পাখি) কে চলে যেতে দেই’, যাতে করে আন্তর্জাতিক সমাজের চোখে পাকিস্তানের ভাবমূর্তির সামান্য হলেও ফিরে পায় যা আত্মসমর্পণের পূর্বে ইসলামাবাদ সেনারা শত শত বুদ্ধিজীবী হত্যা করে চুরমার করেছিল।
মুজিবকে ছেড়ে দেয়ার তিন মাস পরে ভুট্টো আমাকে বললেন, তিনি মুজিবকে ভারতের প্রতি সদিচ্ছামূলক ইঙ্গিত হিসেবে ছেড়ে দেন; আবার তিনি জানতেন মুজিব ব্যতীত বাংলাদেশের অবস্থা কঠিন হবে।
মুজিবের মুক্তি পাকিস্তানের বাংলাদেশ পলিসিতে কোন পরিবর্তন আনে নি। ইসলামাবাদ এভাবেই বিষয়টি চালিয়ে যেতে থাকে যে সেখানে না ছিল কোন যুদ্ধ আর না ছিল বাংলাদেশের কোন স্বাধীনতা। ভুট্টো ইয়াহিয়ার ভাষায় কথা বলে যান। তিনি তার প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল বক্তৃতায় (২০ ডিসেম্বর ১৯৭১) বলেন, ‘আমরা পাকিস্তানের ঐক্য-সংহতি ও মর্যাদার জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাব। পূর্ব পাকিস্তান হচ্ছে পাকিস্তানের এক অবিভাজ্য ও অবিচ্ছেদ্য অংশ।’
তাছাড়া পাকিস্তান রেডিও এই ঔপন্যাসিক গল্পকে চালিয়ে যাচ্ছিল। তারা দৈনন্দিন সম্প্রচারে শুধু পশ্চিম পাকিস্তানের সময়সূচী দিয়েই শুরু করত না বরং ‘পূর্ব পাকিস্তানের’ সময়-সূচীও ঘোষণা দিত। পশ্চিম পাকিস্তানের যেসব খবরের কাগজ ঢাকায় প্রকাশিত হত সেগুলো তাদের মাস্তুল শীর্ষে (প্রথম পাতায়) সর্বদা দাবি করত পূর্ব পাকিস্তানের প্রকাশনার কথা।
রাওয়ালপিন্ডি যখনই পাকিস্তানের জাতীয় অধিবেশনের বৈঠক নিয়ে কথা বলত, তখন কষ্ট-মষ্ট করে উল্লেখ করত, ‘পূর্ব পাকিস্তানের সদস্যবৃন্দ’ উপস্থিতদের মধ্যে ছিলেন। প্রধান মন্ত্রী মিসেস গান্ধী ও ভুট্টোর মধ্যে সিমলা সম্মেলনের পরেই পাকিস্তান এগুলো পরিবর্তন করে।
কুলদীপ নায়র একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক। এই বিশেষ এবং চাঞ্চল্যকর নির্যাসটি তার অত্যন্ত সাম্প্রতিক পুস্তক ‘স্কুপ! ইনসাইড স্টরিজ ফ্রম দ্যা পার্টিশন টু দ্যা প্রেজেন্ট’ (প্রকাশনায় হার্পার কলিন্স, ২০০৬) থেকে গৃহীত। http://www.thedailystar.net/forum/2006/december/bhuttonmujib.htm
কৃতজ্ঞতা স্বীকারে, এম_আহমদ
অনেক ধন্যবাদ মুনিম কে ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ অংশটি তুলে ধরার জন্য।
“৭১ তে পাকিস্তান রাষ্ট্রের কপালে যা ঘটেছে তার জন্য সম্পুর্ন দায়ী ভুট্টো এবং ইয়াহিয়া খান তাদের জন্যই লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ হরিয়েছে।”
Reply ↓
thanks
এ ক্ষেত্রে মাওলানা ভাসানী হলে ফল ভালো পাওয়া যেত। ধন্যবাদ
ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ।
পড়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
অতীত কে ভুলে থাকতে চাই, শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ
আপানাকেও ধন্যবাদ ভাই।
কুলদীপ নায়র লেখাটি incontrovertible evidence হিসেবে থাকবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে। পাকিস্তানের ভাঙনের জন্য তার অনেকাংশ দায়ী ভুট্টো এবং জেনারেল ইয়াহিয়া খান।পাকিস্তানের সামরিক শাসকরা যখন ক্ষমতা অস্বীকৃতি জানাল, তখনই নিজেদের অজান্তে জেনারেল ইয়াহিয়া এবং তার দলবল বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্র জন্ম দেবার প্রক্রিয়া শুরু করে দেয়।
ঠিক বলেছেন। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
অনেক ধন্যবাদ মুনিম ভাই ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ অংশটি তুলে ধরার জন্য। মহিউদ্দিন ভাইয়ের সাথে একমত।
“৭১তে পাকিস্তান রাষ্ট্রের কপালে যা ঘটেছে তার জন্য সম্পুর্ন দায়ী ভুট্টো এবং তার জন্যই লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ হরিয়েছে।”
সহমত। ধন্যবাদ।
স্বায়ত্তশাসনের বাইরে শেখ মুজিবের অন্য কোন চিন্তা ছিল না। নায়রের ইন্টার্ভিউ লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে তার গ্রেফতারের প্রাক্কালে মুজিব যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যাননি সেই আন্দাজ উভয়ের কথাবার্তাতেই স্পষ্ট। আমুতে এব্যাপারে ছোট্ট একটা ব্লগ দিয়েছিলাম মনে থাকতে পারে। তবে এসবের অর্থ এই নয় যে বাংলার ইতিহাসে মুজিবের রাজনীতি ম্লান হল। ছয় দফাতেই তার রাজনৈতিক চিন্তার উন্মেষ অধিক হয়েছে। এবিষয় নিয়েও বিভিন্ন মন্তব্য আপনার (এবং অন্যদের) সাথে আমুতে হয়েছে। ১৯৫৪ সালে যখন পূর্বপাকিস্তানে জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ করা হয় তখন পশ্চিম পাকিস্তানের জমিদারি প্রথার বড় বড় টাইকুনরা যাদের অনেকের জমিদারি ছিল শহরকা শহর তাদের টনক নড়ে। গণতন্ত্র জমিদারী সমাজ ব্যবস্থায় ঠিকমত গড়ে ওঠতে পারে না। ১৯৭০ সালে আ’লীগ বিজয়ী হলে পশ্চিম পাকিস্তানের জমিদার শ্রেণীতে তা যে ত্রাসের সঞ্চার করবে –এটাই স্বাভাবিক। মুজিব যে রাজনৈতিক নেতাদের এককালের শিষ্য সেই রাজনৈতিক স্কুলের দর্শনে এই জমিদারী প্রথা সমস্যাবহুল। পূর্বপাকিস্তান আলাদা হয়ে যাক –এটা হয়ত জমিদারদের কাছেও অভিপ্রেত বিষয় ছিল। বাংলাদেশ স্বাধীনতার বিষয়টির সাথে অনেক সুতোর গিট রয়েছে। সুতোর এক অংশকে ধরলে দেখা যাবে আরো অনেক অংশের জোড়াতালি রয়েছে।
ভাল পয়েন্ট উল্লেখ করেছেন। এই কথা অনেকে উল্লেখ করতে চান না। ধন্যবাদ।
স্বায়ত্তশাসনের চিন্তাও একবারে নতুন কিছু ছিল না। ১৮৮৫ সালে আইনের মাধ্যমে জমিদারদের (ভদ্রলোক/বাবু) ক্ষমতা সীমিত হলে fat-cat-দের খাজনার আয়ে কমতি আসে এবং তারা অসন্তুষ্ট হয়। জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশদের বেকায়দায় ফেলতে গেলে শাসকরা ভারতীয় শাসন ব্যবস্থার উপর একটা স্টাডি প্রণয়ন করে। প্রথম মহাযুদ্ধের পরে অর্থাৎ ১৯১৯ সালে মন্টেগু ও চেমসফোর্ড প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব করেন এবং ১৯২৯ সালে তা বিবেচনা করে ১৯৩২ সালে ‘রোয়েদাদ’ নামে প্রবর্তিত হয়। এতে প্রাদেশিক পরিষদে বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসীদের সংখ্যার অনুপাতে representation আসে এবং এতে বেঙ্গল প্রেসিডিয়েন্সীতে মুসলমানদের ক্ষমতা চাক্ষুষ হয়ে ওঠে। মুজিবের স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব অবিকল না হলেও এর নজির ভারত, আমেরিকা ও অন্যান্য স্থানে ছিল। এটা সাফল্য লাভ করতে পারলে মুসলিম বিশ্বের ছিন্নভিন্ন দেশগুলো ইউরোপের মত একটা ঐক্যের সূত্রপাত করতে পারত।
সংযোজনের জন্য ধন্যবাদ।
চলতি প্রসঙ্গে আজ ‘আমাদের সময়ে’ একটা লেখা প্রকাশিত হয়েছে। শিরোনাম, ‘মুজিব মেমোয়ার্স –হামিদ মিরের বলিষ্ঠ লেখনী’। লিঙ্ক http://www.amadershomoy2.com/content/2012/11/28/news0191.htm
তবে অরিজিন এখানে http://www.thenews.com.pk/Todays-News-9-144840-Mujibs-memoirs
৭১তে পাকিস্তান রাষ্ট্রের কপালে যা ঘটেছে তার জন্য সম্পুর্ন দায়ী ভুট্টো এবং তার জন্যই লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ হরিয়েছে।
কুলদীপ নায়র লিখেছেন, “….. ভুট্টো ছিলেন বর্ণাঢ্য, সচেতন অস্পষ্ট, মুজিব ছিলেন সংযত, সরল, স্পষ্টভাষী। প্রথমজন একই অভিব্যক্তিতে দোদুল্যমান, স্ববিরোধী আর দ্বিতীয়জন আস্থাবান ও সুদৃঢ়।”
একেবারে সঠিক কথা।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
আসল কথা “Bhutto wanted to be the president of Pakistan even if it is reduced to a village” Times.
ভুট্টো কি বলেছিল একটু শুনেন।
http://www.youtube.com/watch?feature=player_detailpage&v=jo5a5mR6SZY
http://www.youtube.com/watch?v=jo5a5mR6SZY#t=0s
আমাদের এখানে স্পীড নাই তাই দেখা হয় নাই। ধন্যবাদ।
Read. Interesting and rich in facts. Thanks to Munim Siddiqi.
আপনাকে ধ্ন্যবাদ হারুন ভাই আপনি যে ব্লগে এসে পড়ে কমেন্ট করেছেন।