শামাস পর্ব-২

(https://songlapblog.com/1323পর্ব ১

কামাল এর গাড়ি ওটা দেখলেই বোঝা যায়।

ধুসর কালারের একটা ফিয়াট গাড়ি

গাড়ি থেকে নামলো কামাল চোখে সানগ্লাস আর পরনে ধূসর টুইডের স্যুট।

কিছুক্ষণ পরে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ পেলেন প্রফেসর, নিচে নেমে এলেন তিনি দরজার কড়া টা খুলে ভেতরে আসতে বললেন কামালকে। তাঁর এক সময়ের প্রিয়বন্ধু কাম শিষ্য এই কামাল। আরকিওলজির একজন জিনিয়াস ছিল সে, প্রাচীন ন্যাভাজো আর ল্যাকোটা দের বিভিন্ন  অ্যামুলেট খুঁজে বের করার কাজে তার থেকে সিদ্ধহস্ত আর কাউকে দেখেননি তিনি। কানাডা থেকে পি এইচ ডি করার পরে থেকে আর কোন খোঁজই তার আরকিওলজির ক্ষেত্রে নাই। যেন বেমালুম গায়েব হয়ে গিয়েছিল সে…

তবে মাসখানেক আগে আবার তাঁর সাথে যোগাযোগ করেছিল কামাল। তিনি যখন চীনের উইঘর থেকে প্রাণভয়ে পালাচ্ছিলেন বিভিন্ন এলাকাতে  বাচার জন্য

তার নিজের গবেষণাই কাল হয়ে গেছিল তার কাছে।

কামাল কে ভিতরে নিয়ে আসলেন প্রফেসর। ড্রইংরুমে কাউচে এসে বসলেন দুইজনে

“আপনাকে একটু চিন্তিত লাগছে প্রফেসর”

প্রফেসর এর চেহারায় তেমন কোন ভাবান্তর হল না।

“একটা কাজে আপনার কাছে এসেছি”

কি কাজ ?

আপনি যখন মিডল ইস্টে ছিলেন তখন নাবাতেয়ান দের সভ্যতা এর উপরে একটা রিসার্চ করেছিলেন আমার সেটা মনে আছে।

হ্যা

আপনি বলেছিলেন যে নাবাতেয়ান দের বিলুপ্তি এর পিছনে যে কারন টা আছে তা অবোধ্য,

অনেকটা তাই , বললেন রহমানভ এরা অনেক বড় একটা রহস্য, এরা হিট্টাইট দের কাছ থেকে পালিয়ে আসার পরে আরব এর লোহিত সাগর এর তীরবর্তী একটা অঞ্চলে বসবাস করতে শুরু করে, এরা জর্ডান এর আদি নিবাসী বলে ধারণা করা হয়। এদের সাথে প্রাক-ইসলামিক আরব দের অনেক মিল আছে। তবে এরা হঠাৎই যেন সোদম আর গোমোরা এর মানুষ দের মত বিলুপ্ত হয়ে যায়। নাবায়েতিয়ান দের এই বিলুপ্তির পিছনে আরেকটা বড় বিস্ময় এর কারন হচ্ছে এরা সোদম অথবা গোমোরা  এর মত প্রলয়েও বিলুপ্ত হয়নি যেন হাওয়ার সাথে মিশে গেছিল এরা।

অনেকে ধারণা করে যে এরা চারশ সন এর দিকে তাদের রাজধানি পেত্রা থেকে চলে গিয়েছিল কিন্ত এরপরেএদের কোন ট্রেস খুজে পাওয়া যায়নি। এরা কেনই বা পেত্রা কে ছেড়ে দিয়ে বাইরে চলে গিয়েছিল বা ঠিক কেনই বা পেত্রা তে আর ফিরে আসেনি সেটা কেউ  জানে না।

এরা অনেক বড় একটা রহস্য পৃথিবীর কাছে।

মাদায়েন সালেহ তে এদের একটা শহর ছিল যেটা এখনও আছে। সৌদি আরবে।

এদের প্রধান দেবতা ছিল আল লাত যার নাম অয়াহিদি তার কিতাব আল আনসাম এ সবথেকে প্রথমে উল্লেখ করেন।

দাঁড়ান দাঁড়ান হাত তুলল কামাল, আমি তো জানতাম যে মক্কার প্যাগান দের উপাস্য ছিল আল লাত

আসলে দুটোই মক্কার প্যাগান রা আল  লাত কে এই নাবায়েতিয়ান দের কাছে থেকেই নিয়ে আসেন।

ওহ আই সি ! আচ্ছা বাদ দেন সেই কথা

আপনি তো তাদের পেত্রা টেম্পল কমপ্লেক্স এর ভিতরেও গবেষণা চালিয়েছিলেন।

হুম তাদের এই মন্দির আর শহর টা পৃথিবীর অন্যতম আশ্চর্য বর্তমানে। এর  অভ্যন্তরে বহু বছর এর ইতিহাস লুকিয়ে আছে।

মানে ?

মানে হচ্ছে এই যে এই জাতি ৫৮৬ খ্রিষ্টপূর্বের দিকে জর্ডান এ বসত গাড়ে। কিন্ত এর আগে এখানে ছিল কিংডম অব জুডাহ এর একটা অংশ, নেবুচাদনেজার তাদের কে আক্রমণ করে ব্যাবিলনে ধরে নিয়ে যাওয়ার পরেই এখানে একটা অসভ্য যাযাবর জাতি বসবাস করতে আসে। এরাই পরে নাবাতিয়ান এর রুপ লাভ করে, সবার ধারণা এই যে পেত্রা আসলে নাবাতিয়ান দের বানানো কিন্ত আমার লেটেসট গবেষণা তে আমি জানতে পেরেছিলাম যে এর স্থাপত্য এর ভিত্তি অনেক নিচ পর্যন্ত আছে।

তাহলে এটা নাবাতেয়ান এর তৈরি না ?

নাহ! এর স্থাপত্য কৌশল অনেকটাই জুডায়িক। তবে আমার মনে হয় –

কি মনে হয় ?? উত্তেজিত হয়ে পড়েছে কামাল। এটা একটু অদ্ভুত লাগল  প্রফেসর এর কাছে।

এটা তো আসলে তোমার ফিল্ড না কামাল তো তুমি এর উপরে এত আগ্রহী কেন ??

না মানে ইয়ে আপনি এত দিন ধরে কিসের জন্য বিভিন্ন দেশে দেশে ঘুরছেন। এটা আমার জানা দরকার ছিল। এর পরে ইরানে এলামিয় দের উপরে গবেষণা চালাতে গিয়ে হঠাৎ আপনি এই অখ্যাত সভ্যতা কে নিয়ে এত আগ্রহী কেন হয়ে পড়েছিলেন সেটাও আমার কাছে পরিস্কার না।

প্রফেসর তার তীক্ষ দৃষ্টি মেলে তাকালেন কামাল এর দিকে, এর একটা অনেক বড় কারন আছে।

কি কারনপ্রফেসর ???

মুন গড সিন এর কাল্ট

ভুরু কুঁচকে গেল কামাল এর কি বললেন আপনি ?? আমি বুঝলাম না ………

Loading


Comments

শামাস পর্ব-২ — 2 Comments

  1. এর আগের পর্ব টা পড়েন তাহলে বুঝতে পারবেন :mrgreen:

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *