শামাস(পর্ব -১)

অর্থহীন অনেক বস্তুই অনেক সময় মানব জীবনে চরম অর্থপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।যেমন এই কুঁচকে যাওয়া হলুদ পার্চমেন্ট গুলো। কয়েক বছর আগে যখন এগুলো কে   নিয়ে এসেছিলেন ডঃ রহমানভ  তখন তার কাছে এদেরকে মনে হয়েছিল  প্রাচীন কিছু   অর্থহীন প্রলাপ।

আজকে অবশ্য তেমনটা ভাবেন না তিনি। তার জীবনের অনেক কাল পরে এসে যদিও আজকে তার মনে হচ্ছে জীবনের ব্যাপারে কতটাই না অজ্ঞ ছিলেন তিনি

“আসলে আমরা নিজেরা প্রজাপতির মত একটা দিনকেই মহাকাল ভেবে বসে আছি অথচ সুবিশাল মহাবিশ্ব আমাদের সামনে অজানাই থেকে যায়”স্বগোতক্তি করলেন তিনি

আজকে থেকে চব্বিশ বছর আগে তিনি ইরান গিয়েছিলেন গবেষণার জন্য। একজন খ্রিষ্টান এর জন্য তখন একটু কঠিনই ছিল সেখানে যাওয়া তবে তার জন্য সেটা বাধা হয়ে উঠতে পারেনি প্রাচীন এলাম সভ্যতার অজানা রহস্য ভেদ করার জন্য তিনি যাত্রা করেছিলেন সেখানে অনেক রহস্যে ঘেরা পারস্য ভূমিতে যেখানে থাকতে থাকতে মনের অজান্তেই ভালবেসে ফেলেছিলেন সেখানকার উশর মরু প্রান্তর আর দিগন্ত বিস্তৃত নীল আকাশের নীচে জেগে থাকা প্রাচীন সব শহর গুলোকে । প্রাচ্যের রহস্যপুরি এই পারস্য থেকে আজ তিনি অনেক দূরে।

আজ তাকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ।

কি জন্য? জিজ্ঞেস করলেন তিনি? কি তার অপরাধ ছিল তার? শুধু সত্য কে প্রকাশ করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি এটাই?  আজকাল অধ্যাপকের থেকে তাকে নিজেকে ফেরারি আসামী বলে বেশী মনে হয়-

তবে প্রথম দিকে অনেক ভাবালেও আজকাল আর এটা তেমন ভাবায় না তাকে। “যাই হোক” বলে চেয়ার টাকে টেবিলের এক প্রান্তে সরিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। একহারা দীর্ঘকায় গড়ন তার উচ্চতা ছয়ফুটের মত হবে বয়স ষাট হতে চললেও বোঝা দায়

আজ পাঁচ সপ্তাহ ধরে তিনি আছেন এই শহরে, যেটা এক অদ্ভুত শহর বলে মনে হয় তার নিজের কাছে।

হেঁটে গিয়ে রুমের এক পাশের কাঁচের জানালা টা সরিয়ে দিয়ে তাকালেন তিনি নিচের দিকে। বহু মানুষ হেঁটে যাচ্ছে নিচের রাজপথ ধরে। একে বারেই স্বাভাবিক দৃশ্য প্রত্যেক বড় শহরের জন্য তবে তার কাছে একটু অন্য রকম মনে হয়  এই দেশ এই শহরের অধিকাংশ মানুষের জীবনেই যেন তাদের নিজের কোন নিয়ন্ত্রন নেই সবাই যেন কোন এক অদৃশ্য টানে ছুটে চলেছে নিজের গন্তব্যে যেন নিজেরই কারাগারে বন্দি তাদের জীবন।

তবে এই দেশে আসার পরে তার জন্য একটা লাভ হয়েছে সেটা হচ্ছে এখানে তাকে কারো খুজে পাবার সম্ভাবনা খুবই কম। এর কারণ দুইটা ,এদের মধ্যে প্রথম কারনটা হচ্ছে এইদেশে মানুষের সংখ্যা খুব বেশী আর দ্বিতীয় কারণ একে চেনে খুবই কম লোক   যে এর নাম বাংলাদেশ।

এর আগে তিনি ছিলেন চীনে সেখানে তার খোঁজ পেয়ে গিয়েছিল ‘তারা’ এজন্য রহমানভ এর পক্ষে সেখানে থাকতে পারাটা ছিল খুবই কঠিন এজন্য আর কোন উপায় ছিলনা তার জন্য।

তিনি বেইজিং থেকে সোজা বেরিয়ে পড়েন যখন তখন বাজছিল রাত তিনটা কনকনে শীতের রাত ছিল সেটা।তার বিশ্বস্ত  গাইড হারুন দাঁড়িয়ে ছিল রাস্তার পাশে তাকে ট্রাকে তুলে দেবার জন্য

তার আজও মনে পড়ে হারুন এর সেই কোমল মুখটা সেদিনের পরে আর তার  দেখা হয়নি  কে জানে সে কেমন আছে আজকে?

সে আদৌ বেঁচে আছে নাকি নেই সেটাও জানা হয়নি প্রফেসর এর তবে তার মন বলে যে হারুন আজও বেঁচে আছে

কে জানে হয়ত এটা শুধুই তার উইশফুল থিঙ্কিং!

বাইরে বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন প্রফেসর।

একবার ভালো মত চোখ বুলালেন চারিদিকে আসার পর থেকে চারিদিকটা ভালো মত দেখাও হয়নি তার

বিল্ডিংটা দোতলা লাল ইটের তৈরি সামনে একটু বাগান,তার মধ্যে দিয়ে চলে গেছে সমান্তরাল একটা পথ সামনের বড় রাস্তার দিকে।

সামনের বাগানে বেশ কয়েকটা চেয়ার ছড়ানো ছিটানো আছে বিক্ষিপ্ত ভঙ্গিতে। বেশ বড় জায়গার উপরে বাড়িটা এই দেশের হিসেবে এটা প্রায় বিলাসিতা

পড়ন্ত বিকেলের রোদে ঝিকিয়ে উঠেছে রেলিং গুলা বাড়িটা বেশ বিলাসবহুল তবে ছিমছাম তিনি একাই থাকেন এখানে তবে বাইরের টিনের ঘরটাতে একটা কেয়ার টেকার  কাম বাবুর্চি থাকে  নাম আমজাদ, তার বন্ধুর ঠিক করে দেয়া, প্রায়  বুড়ো  হয়ে আসা লোকটা কে দেখে কেমন করুনা বোধ হয় তার । চারপাশের ঘিঞ্জি আর ব্যাস্ততার মধ্যেও বাড়িটার পরিবেশ বেশ খোলা মেলা

তবে  এর মধ্যেও নিজেকে কেমন বন্দি বন্দি মনে হচ্ছে তার সারাক্ষণ মনে হয় যেন কে চোখ রাখছে তার উপরে-

যদিও বন্দি হলেও কিছুই বলার নেই তার তবে একটা ভয় আছে শুধু নিজের ভিতরে

সিক্রেট টা যদি কেউ জেনে ফেলে!

এই বাড়িটা তার এক পাগলাটে বাঙালি বন্ধুর  নাম  কামাল আহমেদ  তার বন্ধু কম শিস্য বেশী ছিল সে ,তবে এখানে থাকেনা ঢাকাতে আরেক জায়গায় আরেকটা ফ্ল্যাটে থাকে সে তার পরিবার নিয়ে। কোন এক কারনে প্রফেসর কে নিজের বাসায় রাখেনি

তবে প্রতিদিন একবার করে এসে দেখে যায় প্রফেসরকে সে

কেন জানি রহমানভ এর মনে হয় তিনি মৃত্যুর হাত থেকে বাচার চেষ্টা করতে গিয়ে আরও বেশী মৃত্যুর মধ্যে জড়িয়ে নিচ্ছেন নিজেকে।

তবে মৃত্যু জিনিসটা তার কাছে  আজকাল খারাপ লাগেনা অন্তত নিজের জীবনের চারপাশের জীবন্মৃত মানুষ গুলোকে দেখে। এতটা কষ্টে থাকার পরেও যদি কেউ হাসতে পারে তবে তার মনে হয় তিনি মৃত্যুর মধ্যেও হাসতে পারবেন যদিও তিনি জানেন না যে মৃত্যু ঠিক  তার কত কাছে আছে। তবে একটাই ভয় যে তার আবিস্কার যেন কোন ভুলহাতে না পড়ে

থ্যাচ!!!করে তীব্র টায়ারের শব্দে সম্বিত ফিরে এল তার।

কামালের গাড়ির শব্দ ওটা প্রতিদিনের মত আজকেও তার আসার সময়ে কোন হেরফের হয়নি। আমজাদ ছুটে গেল তার গেট খুলতে

 

Loading


Comments

শামাস(পর্ব -১) — 3 Comments

  1. ইমরান ভাই আপনাকে সংলাপে দেখে খুশি হলাম। ব্লগ
    নতুন হবার কারণে পাঠক পাবেন না। তারপরও আশা করি ব্লগে থাকবেন। আর আপনার ফেসবুক বন্ধুদেরকে অনুরোধ করবেন তারা যেন
    ব্লগে আসেন। লেখার কথা কি আর বলব! নতুনত্ব কিছু পাচ্ছি সেইটি বুঝতে পারছি।
    ধন্যবাদ।

  2. সংলাপব্লগে স্বাগতম!
    সুন্দর একটি গল্প দিয়ে শুরু করেছেন সেজন্য অশেষ ধন্যবাদ আর এমন জায়গায় এসে থেমে গেলেন তাই পরবর্তী অংশ পড়ার আগ্রহ আরো বেড়ে গেল! কবে আসছে পরবর্তী অংশ?

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *