শহীদদের অপমান কারা করছে?

আসুন বিতর্ক করি শহীদের সংখ্যা নিয়ে। আমার ব্যক্তিগত গবেষণা যদি উপলব্ধি করেন, উল্টা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হবে ফাঙ্গাস সরকারের বিরুদ্ধে। অংকে নোবেল আমি মুজিবকেই দেবো। কারণ, লক্ষ আর মিলিয়নের গন্ডগোলটা বাঁধিয়ে দেশের মধ্যে শিয়া-সুন্নির যুদ্ধ লাগিয়ে রেখেছেন। জীবিত অবস্থায় যদি মিলিয়ন আর লক্ষের ভুলটা স্বীকার করতেন, দেশে আজ স্টালিনের পরিস্তিতি সৃষ্টি হতো না। মুজিব নিজেও যেমন মিথ্যার অংক থেকে বের হতে পারেননি, ভাইরাস দলটি এখন অংকে নোবেল পাওয়ার উপযুক্ত। এই দেশে শিয়া এবং সুন্নি সৃষ্টির পেছনে তার মিলিয়ন বনাম লক্ষ বিভ্রাট। লন্ডন ফেরত মুজিব বলতে চেয়েছিলেন ৩ লক্ষ। তার এই বক্তব্যের বহু সাক্ষি। আনুষ্ঠানিকভাবে নোবেল না পেলেও তার জন্য অংকের নোবেলটা সময়ের দাবি।

হবে না কেন! মুক্তিযুদ্ধ তার জন্য কল্পনা মাত্র। ৯ মাস বিদেশে ভুট্টোর সঙ্গে ক্ষমতা হস্তান্তর দেনদরবারে ব্যস্ত। ৯ মাসের কোন খবরই তাকে দেয়া হয়নি। ওই ৯ মাস কি ঘটছিলো, ন্যূনতম ধারনা ছিলো না। ৭০এর নির্বাচনে মুজিবের মতোই ভুট্টোও পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়েছিলেন। সুতরাং দুইজনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জটিলতা অযৌক্তিক নয়। গোটা ৯ মাস তারা কিভাবে অখন্ড পাকিস্তানকে অখন্ড রাখা যায়, সেই ফর্মূলা নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। তারেক রহমান একজন বাচ্চা, ভান্ডারে ইন্টেলিজেন্স তথ্য নেই। মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি আমরা। আমি নিজেও রিফিউজি, প্রায় ১০ হাজারের অধিক সংখ্যালঘুর প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন আমার পিতা। ক্যাম্পে রিফিউজি জীবন, পথে-ঘাটে শেলিং-এ মৃত্যু, থিয়েটার রোডে প্রবাসী সরকারের সার্কাস, অখন্ড পাকিস্তানকে খন্ডিত করতে ডেসপারেট ইন্দিরার কার্যক্রম ১৪টি দেশ সফর করে ইন্দো-পাক যুদ্ধের পক্ষে লবি, ভারত জুড়ে শরণার্থিদের জন্য সবরকম ব্যবস্থা, পুরো ৯ মাস শরণার্থিদের সংখ্যা বাড়ার ঘটনা… নিজ চোখে দেখা। সুতরাং ৩ না ৩০ লক্ষ বিতর্ক তোলার জন্য দায়ী শেখ মুজিব। না দেখে, না শুনে মন্তব্য করলে যা হয়। রিজভী বলেছেন, দেখে নয় তিনি শুনেই জাতির পিতা। বিষয়টি তাই। নিজেকে এতো বেশি ঈশ্বরতুল্য ভাবতেন, মানুষ কি ভাবলো, কখনোই গ্রাহ্য করেননি। লারকানার জেল থেকে বের হওয়ার পর, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আগে, ৩০ লক্ষ বলাটা খালেদা জিয়া নয় বরং তার জন্য অপরাধের সামিল। শহীদের সংখ্যাকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় পরিণত করার কেস্টবেটা তিনি। সুতরাং মামলা হলে তার বিরুদ্ধেই মণোরত্তর মামলা হওয়া প্রয়োজন। আন্দাজে লটারির নম্বর দেয়া যায়, লেগে গেলে কোটিপতি। কিন্তু শহীদের সংখ্যা লেগে যাওয়ার মতো বিষয় নয় বরং ফ্যাক্ট।

৩০ লক্ষ শহীদ হলে ১৯৭১এর জনসংখ্যা হতে হতো ন্যূনতম ৫০ কোটি। কারণ, ৩০ লক্ষ লাশ যা-তা নয়। জনসংখ্যা ৩০ লক্ষ নয়, পৃথিবীতে এমন দেশের সংখ্যা বহু। কাতার, মালদ্বীপের জনসংখ্যা কয় লক্ষ? সুতরাং ২৫ জনে ১ জন শহীদ হলে, ৭১এ জনসংখ্যা সাড়ে ৭ কোটি। বাঙালির ঘরে, গড়ে ১০ জন হলে, ৭১এ ৩ ঘর মিলে ৩০ জন। বলেন, এতো লাশ কোথায় গেলো? পাকিস্তানীরা কি যাওয়ার সময় সঙ্গে নিয়ে গেছে? ভারতীয়রা নিয়ে গেছে? নাকি বঙ্গোপসাগরে ফেলে দিয়েছে?

বাস্তবতা এই, প্রতিটি শহীদই হিরো। তাদের নামে মিথ্যা বললে দোযখে যাবে। তখন ২৫ জনে ১ জন শহীদ হলে প্রতিটি শহরে কাড়ি কাড়ি লাশ। লাশের দুর্গন্ধে মানুষ শহরে থাকতে পারবে না। পচা লাশ থেকে রোগ-বালাই বাড়বে হু-হু করে। এতো অল্প জায়াগায় এতো লাশের কারণে মানব দুর্যোগ বাড়বে হু-হু করে। সৎকারের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৩০ লক্ষ শহীদ হলে সেই পরিমাণ গণকবরের পরিসংখ্যান থাকবে। ৪৪ বছর ধরেই কোথাও না কোথাও গণকবর আবিষ্কার হবে, যেমন হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে। ১০০ বছর পরেও আর্মেনিয়ানদের গণকবর আবিষ্কারের ঘটনা ঘটছে। মধ্যপ্রাচ্যে হামেশাই শতশত মানুষের গণকবর মিলছে। এসব তো টেলিভিশনেই প্রচার হচ্ছে। সুতরাং শতশত দূরে থাক, ১০/১৫ জনের গণকবর আবিষ্কার হয়েছে কিনা, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা বাদ দিয়ে ফাঙ্গাসদের উচিত নিজের চরকায় তেল দেওয়া। ৩০ লক্ষ লাশ আর ৩০ লক্ষ মন গাজা এক পাল্লায় তোলা যাবে না। এতে শহীদদের অপমান হবে। ৩০ লক্ষ শহীদ হলে ৭১এ কেউ ঘরে ফিরতে পারতো না। ৭১এ ঘরে ফিরতে হলে, ৩০ লক্ষ লাশ সৎকারের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজন হতো। বিপর্যয় সামাল দিতে অন্তত ২ থেকে ৩ মাস সময় লাগতো। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পক্ষে ৩০ লক্ষ মরদেহ দাফন এক বিশাল কর্মযজ্ঞ, যা ৭১এর পরিপ্রেক্ষিতে অসম্ভব। প্রতি ২৫ জনে ১ জন শহীদ হলে, হাসিনা-খালেদা-এরশাদের পরিমণ্ডলে কয়জন শহীদ, নাম জানতে চাই।

Loading

Comments are closed.