মুসলিম বিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির মুখোশ খুলে গেল


প্রসংগঃ
টরন্টোর মসজিদে আজান বন্ধের দাবী জানিয়ে, মেয়রের কাছে দরখাস্থ করলো বাংলাদেশী – কানাডা- হিন্দু  কালচারাল সোসাইটি ও বাংলাদেশ কানাডা হিন্দু মন্দির। উল্লেখ্য যে, করোনা সময়ে লকডাউন থাকায় রমজান মাসে মুসলমানরা, মসজিদে- যেতে পারছেন না । মুসলমানদের এই অনুভূতির কথা, বিবেচনা করে সিটি অব টরন্টো, আগামী ২৩ মে পর্যন্ত কটি মসজিদে মাগরিবের আজান, লাউড স্পিকারে, দেওয়ার অনুমতি দেয়।

মুলতঃ  পবিত্র মাসকে সম্মান জানিয়ে এটা একটা প্রতীকি ,শ্রদ্ধাও বলা যায় কারন লকডাউনে, মানুষ ঘরের ভিতরে বন্দী, গাড়ীর ভিতরে বন্দী ,আজান শুনার, ফুরসত ও নাই। তারপরও মুসল্মানরা এতে বেজায় খুশী। উল্লেখ্য যে, আমেরিকা ইউরোপের অনেক শহরে সারা বছরই আজান দেওয়া হয়ে থাকে। এই অনুমতির পর প্রথমেই ব্রাম্পটনবাসী, একজন ভারতীয় কু-মন্তব্য করে টুইট করেন । তার এই সাম্প্রদায়িক মন্তব্যের জন্য তাকে চাকূরী থেকে বরখাস্থ করা হয়, স্কুলের ম্যানেজমেন্ট কমিটি থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় অনেকেই ভারতীয় ব্যক্তির আচরনে কষ্ট পান আবার অনেকেও বলেন এটা ্তো তাদের উত্তরাধীকার সুত্রে প্রাপ্ত –সুতরাং এ আর নতুন কি । কিন্তু ক দিন পরই থলের বিড়াল বের হয়ে যায়। বাংলাদেশী কমিউনিটির ভিতরে ঘাপটি মেরে থাকা চরম মুসলিম বিদ্ধেষী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির মুখোশ খুলে যায়। ১২ই মে টরন্টোর মেয়র জন টরির কাছে বাংলাদেশ-কানাডা হিন্দু কালচারাল সোসাইটি ও বাংলাদেশ কানাডা হিন্দু মন্দির এর সভাপতি একটি দীর্ঘ ইমেইল প্রেরন করেন। এই ইমেল এ শব্দ দুষন ছাড়াও আরো অনেক কারন উল্লেখ করে আজান দেওয়া বন্ধের দাবী জানান, তার ভাষায় “We are deeply concerned, shocked and frustrated by this decision of the City of Toronto.” “Why only for one special religious group are receiving the special privilege” তিনি আরো বলেন This noise is creating nuisance and making us worried like back home where the same group of people repeatedly persecuted us and tortured years after years. Finally, they made us bound to leave our country. হে, মিঃ সভাপতি সিটির যে কোন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তার দ্বিমত করার অধিকার রয়েছে। বাক স্বাধীনতার দেশে আছি আমরা সুতরাং লেজ উচু করে বাক বাকুম করাতে কোন অসুবিধা নেই। উনি মেয়রকে জানিয়ে দিয়েছেন যে বাংলাদেশেও এই আজান তাকে দুশ্চিন্তায় ফেলতো এবং সেই একই মানুষ ( মুসল্মানরা) বছরের পর বছর তাদেরকে হত্যা নির্যাতন করতো সেই জন্য তিনিরা বাংলাদেশ ছেড়ে চলে এসেছেন। এবং বুজাতে চেয়েছেন যে এখন এখানেও এটা আরম্ভ হয়েছে। তিনি মেয়রকে ধ্মক দিতেও ছাড়েন নাই। সভাপতির ইমেইল পড়ে আমি Shocked but not surprise. ইমেইল এর বিষয় বস্থুকে আমরা ৩ টি ভাগে ভাগ করতে পারি । ১। বাংলাদেশী একটি ব্যানার ব্যবহার করে আজান বন্ধের দাবী জানিয়ে বিশ্ব মুসলিমদের বিরুদ্ধে স্ট্যান্ড করা ২। আজানের সাথে সংস্লিষ্টতা দেখিয়ে বাংলাদেশী-কানাডিয়ান মুসল্মানদেরকে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অপবাদ দেওয়া ৩। চরম রেসিস্ট মুসলিম বিদ্ধেষী একটি গ্রূপ তাদের গোপন মিশন চালিয়ে যাওয়া । এক ঃ কানাডিয় চার্টার রাইট যেমন বাক্স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিয়েছে তেমনি সিটিজেন কে অবাধে তার ধর্ম পালনের স্বীকৃতি ও দিয়েছে-কিছু বাধ্যবাদকতা রয়েছে। কানাডাতে সবচেয়ে বেশি ধর্মাবলম্বী খৃষ্টান –তার পরই মুসলমানরা রয়েছে। ২০১১ সালের সেন্সাস অনুযায়ী ১ মিলিয়ন মুসলিম, বর্তমানে হয়ত তা দেড় মিলিয়নের কাছা কাছি হবে। যে গ্রূপে মানুষ যত বেশী হবে তার কন্ট্রিবিউশন ও বেশি হবে –এটাই স্বাভাবিক । এখানে গীর্জায় ঘন্টা বাজানো হয়, হাজার হাজার শিখরা রাস্থায় নেমে এসে তাদের ধর্মীয় প্রসেসন করে , গে-লেসবিয়ানরা পুরো সিটি বন্ধ করে দিয়ে প্যারেড করে , মন্দিরে বারো মাসে তের পুজা হয় কর্তাল ঢোল বাজিয়ে , রথ যাত্রা হয়। ২য় বৃহত্তম সংখ্যাগুরু হিসাবে মুসলমানরা কোনদিনও এর বিরুদ্ধে কথা বলে না – অন্যের ধর্মকে শ্রদ্ধায় কোন খাদ দেখা যায় না । মাত্র এক মাসের জন্য সিটি তার ২য় বৃহত্তম সংখ্যা গুরু মুসল্মান্দেরকে সীমিত আকারে আজানের অনুমতি দেওয়াতে কোন খৃস্টানরা প্রতিবাদ করে নাই। করতে হয়েছে বাংলাদেশ থেকে আসা সংখ্যালঘুদের একটি সংগঠন। এই মন্দিরের সাথে ১৫শ বাংলাদেশী ফ্যামেলি রয়েছে, এই বাংলাদেশী ১৫শ হিন্দু ফ্যামিলি এবং মুসল্মান্দের মধ্যে রয়েছে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং নিবিড় আথিয়তার দেশীয় বন্ধন। জাতীয় দুর্যোগ, প্রবাসে দুর্যোগ সব বিপদে কাধে কাধ মিলিয়ে আমরা একসাথে কাজ করতে দেখি, একে অন্যের সাহায্যে এগিয়ে আসতে কার্পন্য করতে দেখা যায় না । তারপরও বিশ্ব মুসলিমদের বিরুদ্ধে স্ট্যান্ড নিয়ে সভাপতির ইমেইল করার পেছনে কারনটা কি ? ১৫শ বাংলাদেশি হিন্দু ফ্যামিলিকে ব্লেক মেইল করে গুটি কয়েক মুস্লিম বিদ্ধেষীদের এটা এক গভির চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়। ১.৯ বিলিয়ন মুসলমান আর কানাডীয় মুসলমান্দের কাছে “হিন্দু বা মন্দির” শব্দ দুটি মুখ্য নয়। এখানে মুখ্য হচ্ছে “বাংলাদেশী সংগঠন” আজানের প্রতিবাদ করেছে। বিশ্বের অন্যতম মুসলিম অধ্যুষিত দেশকে বিশ্বের মুসলিমদের কাছে আর পশিমা সমাজে বিতর্কিত করে তোলার কোন নিল নকশা নয়তো? এই চেস্টা কিন্তু এই প্রথম বার হয় নাই । ২০০৪ সালে এই টরন্টোতে বাংলাদেশী একটি সংখ্যালঘূ সংগঠন তাদের প্রধান বক্তা হিসাবে বিশ্বের সবচেয়ে রেসিস্ট – মুসলিম বিদ্বেষের আর্কিটেক্ট ড্যানিয়েল পাইপ কে নিয়ে আসে । কম্যুনিটি ফুসে ঊঠে। সেই চক্রান্তের কথা অনেকেই এখন ও ভুলে নাই ( আমার লিখা কানাডা আমেরিকায় কম্যুনিটি ভাবনা গ্রন্থে তা বিস্তারিত উল্লেখ আছে) । বিশ্বের ২য় বৃহত্তম ধর্মাবল্ম্বীদের বিরুদ্ধে সভাপতি গং দের চ্যালেঞ্জ যে সকল বাংলাদেশিদের জন্য শুভ নয় তা কি বলে দিতে হবে । সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পরাশক্তির যথেচ্ছাচার রুখতে-Balance of Power এর প্রয়োজন হয়, প্রতিবাদী কন্ঠকে টেরোরিস্ট বানিয়ে মিডিয়াতে ছেড়ে দেওয়া হয় । কিন্তু সত্যের জয় তো হবেই । ২০৫০ সালে ইউরোপের মেজোরিটি সিটিজেন হয়ে যাবে মুস্লিম। পাকিস্থানী বাবার মুসল্মান ছেলে সাদিক খান আজ লন্ডন সিটির মেয়র , কাল যদি বাংলাদেশী বাবার আসিক খান টরন্টো সিটির মেয়র হয়ে যায় তখন মিঃ সভাপতি যাবেন কোথায়? আমি বাংলাদেশ থেকে আগত হিন্দু মুসলিম সবাইকে এক সাথে মিলে এখনই এর মুলোতপাঠন করার আবেদন করছি । অন্ততঃ কেউ যেন আমাদের সংখ্যালঘুদের ব্যানার, বাংলাদেশের ব্যানার ব্ল্যাক মেইল করতে না পারে সে ব্যাবস্থা এখনি করতে হবে । দুইঃ বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন চলে তা নতুন কোন খবর নয়। আর এটাও সত্য এই নির্যাতন বন্ধে বাংলাদেশী সংখ্যাগুরু জান প্রান দিয়ে চেষ্টা করে। তাই বলে বাংলাদেশের সকল মুস্লমানরা হত্যা আর নির্যাতন করে বলে যে অপবাদ দেওয়া হয়েছে তা মুসলিম বিদ্দ্বেষ ছাড়া আর কিছুও নয়। সভাপতি বলেছেন এই নির্যাতনের জন্য দেশ ছেড়ে এখানে এসেছেন। পেটের কারনে এসেছেন বলতে লজ্জ্বা হওয়ার কথা নয়। কানাডার সরকার বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের খবর খুব ভাল করেই জানে কিন্তু এটা জানে না যে নিরীহ সংখ্যালঘুরা এখান পর্যন্ত আসতে পারে না- সংখ্যালঘুর নাম ব্ল্যাক মেইল করে এখানে এসে মিথ্যা রিফুজি কেস করে- মুসল্মান্দের বিরদ্ধে বিষোদগার করে , দেশের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে থাকার ব্যবস্থা হয়। কই , কোন মুসলমান তো কোনদিন এর প্রতিবাদ করে না, সাহায্য সহযোগিতা করে মিলে মিশে সবাই এখানে বাস করে । যে যে ভাবেই এখানে স্থায়ী হতে পারে সে ভাবে একে অন্যকে প্রান দিয়ে সাহায্য করে । সুতরাং সভাপতির এই বিষোদ্গার এর উত্তর দিতে বাংলাদেশি মুসল্মান্দের প্রয়োজন হবে না , বাংলাদেশী সংখ্যালঘুরা ই এর জবাব দেবে এ আমার বিশ্বাস। তিনঃ আমি আমার অনেক লিখাতে উল্লেখ করেছি । আমাদের কম্যুনিটির ভিতরে বিদ্ধেষ ছড়িয়ে দিয়ে একটি ছোট্ট গোষ্টী ভাংগনের খেলা খেলছে । এদের সবাইকে আমরা চিনি, এরা সাধু সেজে আমাদের কাছ থেকে নিজেদের ব্যবসা-স্বার্থ হাসিল করে, আড়াল হলেই দিন রাত বিদ্ধেষ ছড়িয়ে ক্ম্যুনিটির ক্ষতির কাজ করে চলে , ওরা দিনরাত দেশের বিরুদ্ধ্বে ষড়যন্ত্র করে । এই ইমেইল ভাইরাল হওয়ার পর আমাদের সংখ্যালঘুদেরও টনক নড়েছে, কারা নিজেদের মধ্যে থেকে বিদ্ধেষ ছড়াচ্ছে আজ তা খোলাসা হয়ে গেছে। কেঊ কেউ ঘটনাকে আড়াল করতে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেস্টা করছেন । সমস্যা কিন্তু অনেক গভীরে। এই হিংসা, বিদ্ধেষ চিরতরে নির্মুল না করতে পারলে সবাইকে একদিন আফসোস করতে হবে ।

প্রসংগঃ টরন্টোর মসজিদে আজান বন্ধের দাবী জানিয়ে মেয়রের কাছে দরখাস্থ করলো বাংলাদেশী কানাডা হিন্দু কালচারাল সোসাইটি ও…

Posted by Fayzul Haque Ccp on Saturday, May 16, 2020

ফয়জুল হক

About ফয়জুল হক

লেখক কানাডা প্রবাসী এবং ক্যানাডাবিডিনিউজ ডটকম’র সম্পাদক।

Comments are closed.