মার্কিন লেখিকার চোখে মায়ানমারের গণহত্যা

জেসিকা কাপলান: ঐতিহাসিক অনুপাতে মায়ানমার বর্তমানে চরম মানবিক সঙ্কটের কেন্দ্রস্থলে অবস্থান করছে। বছরের পর বছর ধরে দেশটির ক্রমবর্ধমান এই সঙ্কটকে আমেরিকান মিডিয়া উপেক্ষা করেছে। দুর্ভাগ্যবশত, সঙ্কটটি এখন এত বড় হয়ে উঠেছে যে তা আর কোন ভাবেই উপেক্ষা করা সম্ভব নয়।

রোহিঙ্গারা গত কয়েক শতাব্দী ধরে মায়ানমারে বসবাস করে আসছে। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের জাতিগত গোষ্ঠী হিসাবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এমনকি ১৯৮২ সালে একটি আইন পাস করে তাদের নাগরিকত্বকে অস্বীকার করা হয়। পরিবর্তে তাদেরকে বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে।

ফলস্বরূপ, গোষ্ঠীটির কোনো আইনি ডকুমেন্টেশন নেই। এই অবস্থা তাদেরকে রাষ্ট্রহীন করেছে এবং তারা সরকারি কোনো ধরনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তারা অত্যন্ত নোংরা ও দারিদ্র্য অবস্থায় বসবাস করতে বাধ্য হয়েছে। তাদের জন্য বিদ্যালয়ে প্রবেশাধিকার নেই, নেই পরিষ্কার পানির ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যসেবা। রাখাইন সরকার তাদের আন্তঃধর্মীয় বিয়ে নিষিদ্ধ করেছে।

রোহিঙ্গা পুরুষ কর্তৃক রাখাইন নারীকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে ২০১২ সালের মে মাসে সেখানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৩ সালের অক্টোবরে চরমপন্থী বৌদ্ধরা নিয়মিতভাবে রোহিঙ্গাদের উপর হামলা চালায় এবং রোহিঙ্গাদের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। রোহিঙ্গা-বিরোধী এই অপরাধের ঘটনাকে ‘গুরুতর জাতিগত নিধন’ ও ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ হিসাবে চিহ্নিত করে হিউম্যান রাইট ওয়াচ। সেসময় ১ লাখ ২৫ হাজার রোহিঙ্গাকে তাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের পর তাদের ক্যাম্পে যেতে বাধ্য করা হয়।

একই রকম প্রমাণ পাওয়া যায় ২০১৪ সালে নিউইয়র্ক টাইমসের একটি ভিডিওতে। ’২১ শতকের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প’ শিরোনামে ওই ভিডিওতে শরণার্থী ক্যাম্প এবং এর ভয়াবহ অবস্থার কথা বর্ণনা করা হয়। ক্যাম্পের অধিবাসীদের স্বাধীনতা এবং তাদের স্বাস্থ্যসেবার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়।


২০১৬ সালের অক্টোবরে মায়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে কয়েকটি হামলার ঘটনায় রাখাইন রাজ্যে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এই হামলার জন্য রাখাইন কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের দায়ী করে এবং রাজ্যে কঠোর সামরিক অভিযান শুরু করে। এর ফলে হাজার হাজার রোহিঙ্গা তাদের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়।

গত ২৫ আগস্ট উত্তর রাখাইনে কয়েকটি পুলিশ ফাঁড়ি ও সেনা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরসা’র হামলার অভিযোগে রাখাইনদের উপর জাতিগত ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু করে মায়ানমার সেনাবাহিনী। প্রায় অর্ধেক রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। কমপক্ষে পাঁচ হাজার রোহিঙ্গান নিহত হন। অসংখ্য রোহিঙ্গা নারী গণধর্ষণের শিকার হন। রোহিঙ্গাদের প্রায় তিন শতাধিক গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়।

অগণিত মৃত্যু, ধর্ষণ ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনায় বিশ্ব নেতারা অবশেষে সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার জেইদ রা’দ আল হুসাইন এই দমনপীড়নকে ‘জাতিগত নিধনের পাঠ্যপুস্তক উদাহরণ’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও তুর্কি প্রেসিডেন্ট ঘটনাটিকে ‘গণহত্যা’  বলে উল্লেখ করেছেন।

সূত্র: দ্য ব্রকনেলিয়ান ডটনেট

সৌজন্যে: আরটিএন

উড়ন্ত পাখি

About উড়ন্ত পাখি

আমি কোন লেখক বা সাংবাদিক নই। অর্ন্তজালে ঘুরে বেড়াই আর যখন যা ভাল লাগে তা সবার সাথে শেয়ার করতে চাই।

Comments are closed.