মানব হত্যার বিনিময়ে সিদ্ধি লাভ! নাকি মহাপাপ?

অজ্ঞতা প্রসূত ধর্মান্ধতা কিংবা শয়তানের বশবর্তী হয়ে কোন মানুষ যে পশুর চেয়েও অধম হয়ে যেতে পারে, নিচের ঘটনাগুলো তারই সাক্ষ্য বহন করছে-

I ate children’s hearts, ex-rebel says.  (By Jonathan Paye-Layleh, BBC News, Monrovia.)

Milton Blahyi, a former feared rebel commander in Liberia’s brutal civil war, has admitted to taking part in human sacrifices as part of traditional ceremonies intended to ensure victory in battle.

He said the sacrifices “included the killing of an innocent child and plucking out the heart, which was divided into pieces for us to eat.”

লাইবেরিয়ার নিষ্ঠুরতম সাম্প্রদায়িক যুদ্ধে বিদ্রোহী দলের একজন বর্বর অধিনায়কের নাম মিল্টন ব্লাহাই (Milton Blahyi)। যুদ্ধে জয়লাভ করার উন্মত্ত বাসনায় সে মানব বলি দেবার মত ভয়ঙ্কর ও অমানবিক খেলায় মেতে উঠেছিল। মানুষ হয়েও তাদের এই পৈশাচিকতা যেন পশুকেও হার মানায়। নিষ্পাপ কোমলমতি শিশুরাই ছিল তাদের এই বর্বর খেলার খেলনা। মানব বলি খেলার এই নৃশংস নেশায় তারা শিশুদের খুন করে তারপর সেই মৃত শিশুর বুক ফেড়ে হৃদপিন্ড বের করে তা টুকরো টুকরো করে কেটে চিবিয়ে চিবিয়ে খেত।

Indian cult kills children for goddess. (http://www.theguardian.com)

Ten days ago Sumitra and her two sons crept to their neighbour’s home and abducted three-year-old Aakash Singh as he slept. They dragged him into their home and the eldest son performed a puja ceremony, reciting a mantra and waving incense. Sumitra smeared sandalwood paste and globules of ghee over the terrified child’s body. The two men then used a knife to slice off the child’s nose, ears and hands before laying him, bleeding, in front of Kali’s image.

All three are now in prison, having escaped lynch mob justice. The tantrik has yet to be found.

ভারতের উত্তর প্রদেশের খুরজা গ্রামে সংঘটিত ২০০৬ এর একটি বর্বরচিত ঘটনা। সুমিত্রা ও তার দুই ছেলে সাতবির ও সঞ্জয়ের ধর্মান্ধতায় উন্মত্ত বাসনার স্বীকার হলো তিন বছরের একটি কচি বাচ্চা। সুমিত্রা প্রায়ই হিন্দুদের দেবি কালিকে স্বপ্নে দেখত। এটিকে সে তার পরিবারের জন্য অমঙ্গলের ভাবতে শুরু করে। একপর্যায়ে দুঃস্বপ্নের হাত থেকে রেহাই পাবার জন্য তান্ত্রিকের কুবুদ্ধিতে মেতে তাদেরই প্রতিবেশির এই ঘুমন্ত শিশু আকাশ সিংকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে তার উপর চালানো হলো এক জঘন্যতম নির্যাতন। শিশুটিকে টেনে হেঁচড়ে তাদের একটি ঘরে নিয়ে আসে। তারপর সুমিত্রার বড় ছেলে তান্ত্রিকের শিখিয়ে দেয়া মন্ত্র জপতে থাকে, আর সুমিত্রা ভীত-সন্ত্রস্ত শিশুটির সর্ব শরীরে চন্দন কাঠের তেল ও ঘি ঢেলে দেয়। এরপর শুরু হয় তাদের পৈশাচিক পর্বটি। দুই ভাই মিলে একে একে শিশুটির নাক, কান ও হাত-পা কেটে কেটে তার রক্ত কালির মূর্তির সামনে পরিবেশন করতে থাকে। এরপর শিশুটির দেহ তাদের বাড়ির পাশে ছুড়ে ফেলে দেয়া হয়। সুমিত্রার এলোমেলো কথায় গ্রামবাসীরা বুঝতে পেরে তাদের ধরে ফেলে ও বেদম প্রহার করে। পরবর্তীতে পুলিশের কাছে এই পাপের কথা স্বীকার করায় তাদের গ্রেফতার করা হয়।

Police in Khurja say dozens of sacrifices have been made over the past six months. Last month, in a village near Barha, a woman hacked her neighbour’s three-year-old to death after a tantrik promised unlimited riches. In another case, a couple desperate for a son had a six-year-old kidnapped and then, as the tantrik chanted mantras, mutilated the child. The woman completed the ritual by washing in the child’s blood.

According to an unofficial tally by the local newspaper, there have been 28 human sacrifices in western Uttar Pradesh in the last four months.

আরেক পিশাচীনি ধনী হবার নেশায় তান্ত্রিকের বুদ্ধি শুনে প্রতিবেশির তিন বছরের শিশুকে খুন করে। আবার এক দম্পতি পুত্র সন্তান লাভের বাসনায় উন্মত্ত হয়ে তান্ত্রিকের বুদ্ধিতে ছয় বছরের এক বালককে অপহরন করে। তান্ত্রিক শিশুটির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাটতে থাকে এবং সেই স্বার্থান্ধ মহিলাটি শিশুটির রক্তে তার দেহ ধৌত করে ধর্মের নামে ধর্মান্ধ প্রথাগত অনুষ্ঠান সমাধা করে।

পশ্চিম উত্তর প্রদেশের পুলিশ কম পক্ষে আরও ডজন খানেক এবং বেসরকারি সংবাদ মাধ্যম আরও ২৮ টি এ ধরনের মানব বলির ঘটনার কথা জানিয়েছে। এ ব্যাপারে চার জন তান্ত্রিককে জেলে ঢোকানো হয়েছে এবং বাকিরা পালিয়ে গেছে।

Disaster would not leave Chile alone. – Attempting to placate the gods they held responsible for the continuing quakes in southern Chile, Mapuche Indians last week beat a six-year-old boy to death with sticks, tore out his heart and offered it to the sea. When police arrested two of the Indians, they explained: “We were asking for calm in the sea and on the earth.”

এছাড়া ভূমিকম্পের হাত থেকে রক্ষার জন্য ছয় বছরের শিশুকে অপহরণ করে বুক চিড়ে তার হৃদপিন্ড বের করে নদীতে বিসর্জন দেয়ার ঘটনাও ঘটছে।

সত্যি কি ভয়ঙ্কর ও অদ্ভুত এই মানুষ নামের অমানুষগুলোর মনোবাসনা! শুধু ইহকালেই নয়, পরকালেও এই নরখাদকদের উচিত সাজা চাই।

নিরাপরাধ কোন মানব সন্তানকে অযথা কষ্ট দেয়া অন্যায় আর হত্যা করা তো নিঃসন্দেহে মহাপাপ।

আল-কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন-

সূরা আল মায়েদাহ (মদীনায় অবতীর্ণ)

(০৫:৩২) অর্থ- এ কারণেই আমি বনী-ইসলাঈলের প্রতি বিধান দিয়েছি যে, যে কেউ কারো প্রাণ হরণ করেপ্রাণের বিনিময় অথবা পৃথিবীতে ফাসাদ (ধ্বংস, ক্ষতি) সৃষ্টি করা ছাড়াই, সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করল; এবং যে কেউ তাকে বাঁচিয়ে রাখে, সে যেন সবার জীবন রক্ষা করল। নিশ্চয় তাদের কাছে আমার পয়গম্বরগণ প্রকাশ্য নিদর্শনাবলী নিয়ে এসেছিল, কিন্তু এরপরও তাদের মধ্যে অনেকই পৃথিবীতে সীমাতিক্রম করে।

ইসলামের নবী হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তার পুত্রকে উৎসর্গ করার জন্য যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, অনেকে না বুঝেই এসব অমানবিক নিষ্ঠুর ঘটনার সাথে তার উদাহরণ টেনে আনার মত ভুল করে বসেন।

এখানে উল্লেখ্য যে, আল্লাহর জন্য সবচেয়ে প্রিয় বস্তু ত্যাগ করার স্বপ্ন দেখেই যে ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর প্রাণপ্রিয় পুত্রকে কুরবানী করার মত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তা ঠিক। কিন্তু তাই বলে এই সিদ্ধান্তকে ভুল বলার বা ভাবার কোন অবকাশ নেই। নবীদের ক্ষেত্রে স্বপ্নে প্রাপ্ত ইংগিতের মহত্ব একমাত্র নবীরাই বোঝেন। স্রষ্টা মহান আল্লাহ সরাসরি পুত্রকে কোরবানী করার নির্দেশ দেন নাই ঠিকই। কিন্তু যেহেতু প্রিয় বস্তু উৎসর্গ করার ইংগিত দেয়া হয়েছিল এবং স্বপ্নে প্রাপ্ত এ ধরনের প্রত্যাদেশ কিভাবে বাস্তবায়ন করতে হয়, পূর্ববর্তী তেমন কোন বিধান নবী ইব্রাহীম (আঃ) এর জানা ছিল না। কাজেই এরূপ অবস্থায় আল্লাহর প্রতি একজন নবীর ভক্তি ও ভালবাসার নিদর্শন হিসেবে স্রষ্টারই দান করা প্রাণপ্রিয় পুত্রকে উৎসর্গ করার কথা বিবেচনা করাই তো স্বাভাবিক ছিল। তিনি যে পুত্র সন্তানটির পিতা হয়েছেন তা যে আল্লাহরই ফয়সালা ও দান এবং সেই পুত্রই যে ঐ মুহূর্তে তার সবচেয়ে আপন ও প্রিয় সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই বিষয়টি অতি কষ্টের হলেও তাঁর মত নবীর ক্ষেত্রে অন্যরূপ ভাবলেই তো বরং তা বেমানান হত। মহান স্রষ্টার উপর অগাধ বিশ্বাস ছিল বলেই তাঁর পক্ষে এই চরম সত্যকে এড়িয়ে যাওয়া মোটেই সম্ভব ছিল না। তাছাড়া এই সিদ্ধান্ত তিনি পুত্রের উপরে জোর করে চাপিয়ে দিতে চান নাই। সিদ্ধান্তহীনতা নয়, তবে এই পরিস্থিতিটা তিনি কিভাবে বাস্তবায়ন করবেন ও সামলাবেন সে কথা ভেবে কুল পাচ্ছিলেন না। পিতাকে চিন্তিত দেখে পুত্র তাঁর মনোকষ্টের কারন জানতে চান। বিষয়টি পুত্রের কাছে খুলে বললে নবীর পুত্র ও ভবিষ্যৎ নবী বালক ইসমাইল (আঃ) অসম্মতি তো নয়ই বরং স্রষ্টার প্রতি অগাধ বিশ্বাসে ভরা অন্তরে একবাক্যে সম্মতি সূচক উপযুক্ত সিদ্ধান্তই জানিয়েছিলেন। সাধারন মানুষ হিসেবে অনেকের চোখে তা ভুল ঠেকলেও নবী হিসিবে ইব্রাহীম (আঃ) ও তাঁর পুত্র মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশ পালন করার তাগিদেই এরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। একদিকে পিতা-পুত্রের মাঝে রক্ত ও অন্তরের প্রেমময় বন্ধন, অপরদিকে স্রষ্টার প্রতি পরম বিশ্বাস, ভক্তি ও নিঃস্বার্থ প্রেম। এই প্রেমময় ক্ষণটিকে পরম দায়ালু আল্লাহ বৃথা হতে দেন নাই। নিজ হাতে প্রাণপ্রিয় পুত্রকে জবেহ করার মত হৃদয়বিদারক চরম পরীক্ষাটি কার্যকর করার আগেই স্রষ্টার প্রতি পিতা-পুত্রের অগাধ বিশ্বাসের ফলশ্রুতি স্বরূপ মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে তাদের নিখাদ নিয়তকে কবুল করার ফয়সালা জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। নবীর ক্ষেত্রে পুত্রকে নিজ হাতে জবেহ করার বিধান কার্যকর হলে পরবর্তীদের জন্য তা অনুসরণ করার নিয়ম চালু হয়ে যেত। কিন্তু মহান স্রষ্টা তাঁর নবীর ক্ষেত্রে যেমন এটি কার্যকর হতে দেন নাই, তেমনি তাঁর সাধারন বান্দাদের উপরেও এত কঠিন পরীক্ষার বোঝা চাপিয়ে রাখা পছন্দ করেন নাই। তাই নবীর ক্ষেত্রেও যেমন পশু কোরবানীর ব্যবস্থা করে তার খাঁটি নিয়তকে কবুল করেছেন। তেমনি ঈদুল আযহার সময় পরবর্তীদের জন্যও একইভাবে সেই মহান কোরবানীকে স্মরণ করার ব্যবস্থা করেছেন। আল্লাহর রাস্তায় প্রয়োজনে আমরা যেন আমাদের প্রিয় জিনিস উৎসর্গ করতে কুন্ঠিত না হই, মূলত সেই শিক্ষাই এখানে দেয়া হয়েছে।

মানবজাতির নেতা ও খলিলুল্লাহ হিসেবে মনোনীত নবী ইব্রাহীম (আঃ) এর ক্ষেত্রে সত্য স্বপ্ন বাস্তবায়নে আপন পুত্রকে জবেহ করার বিধান কার্যকর করা হয় নাই। বরং এ ধরনের স্বপ্ন দেখলে কিভাবে তা বাস্তবায়ন করতে হবে তার নমুনা স্বয়ং স্রষ্টাই শিখিয়ে দিয়েছেন। কোন ব্যক্তি যতই আল্লাহভীরু হোক বা না হোক, ধর্মীয় উৎসর্গ বা আপন স্বার্থ সিদ্ধির অযুহাতে নিজ বা অন্য কোন মানব সন্তানকে খুন বা জখম করে দেয়ার মত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার কোনই অবকাশ নেই। বরং কেউ চাইলে এক্ষেত্রে আল্লাহর শিখিয়ে দেয়া বিধান মতে পশু কোরবানী করে তার গোশত ও চামড়া অনাহারি ও গরীবদের মাঝে বিলিয়ে দেয়ার মাধ্যমেই এর হক আদায় করা যেতে পারে। সুতরাং এই বিধান জানিয়ে দেয়ার পর বর্তমানে ও ভবিষ্যতেও কোন ব্যাক্তি সে যেই হোক না কেন, নিজ বা অন্য কোন মানব সন্তান জবেহ করার স্বপ্ন দেখলে তা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সত্যি সত্যি কোন মানব সন্তানকে জবাই করে দেবার প্রশ্নই আসে না। উদ্ভট খেয়ালের বশবর্তী হয়ে কেউ এ ধরনের কাজ করে বসলে তা আল্লাহতায়ালার বিধানের পরিপন্থি হিসেবে গণ্য হবে এবং ইহকাল ও পরকালে মানব হত্যার অপরাধে তাকে অবশ্যই কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।

আল-কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন-

সূরা আল-ফুরকান (মক্কায় অবতীর্ণ)

(২৫:৬৩) অর্থ- রহমান-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মুর্খরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে, সালাম-

(২৫:৬৮) অর্থ- এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের এবাদত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন, সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা একাজ করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে।

সূরা আল বাক্বারাহ (মদীনায় অবতীর্ণ)

(০২:১৭৮) অর্থূ- হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের প্রতি হত্যার ক্ষেত্রে প্রতিশোধ গ্রহণের ব্যাপারে ‘কেসাসের’ বিধান দেয়া হয়েছে- স্বাধীন ব্যক্তির ক্ষেত্রে স্বাধীন ব্যক্তির উপরে, দাসের ক্ষেত্রে দাসের উপরে এবং নারীর ক্ষেত্রে নারীর উপরে। অতঃপর তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে যদি কাউকে কিছুটা মাফ করে দেয়া হয়, তবে প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করবে এবং ভালভাবে তাকে তা প্রদান করতে হবে। এটা তোমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে সহজ এবং বিশেষ অনুগ্রহ। এরপরও যে ব্যাক্তি বাড়াবাড়ি করে, তার জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।

অতএব, কোন স্বাধীন ব্যাক্তি কাউকে হত্যা করলে তার উপরেই শাস্তি আরোপিত হবে, দাস হত্যা করলে তার উপরে এবং নারী হত্যা করলে তার উপরেই শাস্তি আরোপিত হবে। কোন স্বাধীন ব্যক্তি কাউকে হত্যা করলে তার বদলে টাকা পয়সা দিয়ে রাজি করিয়ে নিরপরাধ দরিদ্র কোন দাস অর্থাৎ মানুষকে কিংবা দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে নিরপরাধ কোন নারীকে শাস্তি দেয়ার অপশন নেই। যে হত্যা করবে তাকেই শাস্তি পেতে হবে।

স্রষ্টা বিধান জানিয়ে দিয়েছন। এই বিধান অনুসারে পৃথিবীতে প্রেরিত প্রতিনিধি হিসেবে বিচারক অপরাধীর বিচার করবেন ও শাস্তি দেবেন- এটাই নিয়ম। স্রষ্টা স্বৈরাচারী নন। তাই পার্থিব এই নিয়মে তিনি নিজেও যেমন নাক গলান না, তেমনি অন্য কারো নাক গলানো পছন্দও করেন না। তবে এটাই সব নয়, পরকালের শাস্তি কার জন্য কতটা কঠিন হবে হবে সেটা স্রষ্টাই ভাল জানেন। কিন্তু পার্থিব ক্ষমতা ও বিচারের ভার যাদের উপরে অর্পিত হয়েছে তারা কোনরূপ পাশ কাটিয়ে গেলে, পরকালে তাদেরও নিস্তার নেই। হোক তারা অবিশ্বাসী কিংবা বিশ্বাসী- তাদের লোকদেখানো মানবতাবাদ, ধন-দৌলত, নামাজ, রোজা, যাকাত, হজ্জ তখন কোনই কাজে লাগবে না। এসব কোন কিছুই জাহান্নামের অগ্নি থেকে তাদেরকেও বাঁচাতে পারবে না।

ঠিক তেমনি আত্মঘাতি বোমারূ সেজে নিজে মরা এবং অন্য আর দশজন নিরাপরাধ মানুষকে মারার মাধ্যমে কখনো সিদ্ধি লাভ করা সম্ভব নয়। বিশ্বাসী হওয়া সত্বেও ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, সঠিক বুঝ ও বোধের অভাবে এবং জিঘাংসা চরিতার্থ করার জন্য মানুষ আত্মঘাতি পথ বেছে নিলে তাতে মুক্তি নয় বরং এরূপ আত্মহনন যে অন্যায়, মুসলিম হিসেবে তা মানতেই হবে।

তবে শত্রুপক্ষ আক্রমণ করলে প্রয়োজনে বৃহত্তর স্বার্থে বুকে বোমা বেধে ট্যাঙ্কের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ার কিংবা নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও অস্ত্র হাতে শত্রুর বুহ্য ভেদ করে সামনা সামনি যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে শত্রুর বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়ে নিজের জীবন দেয়ার প্রয়োজন হতেই পারে। এটি অন্যায় নয় বরং সাহসিক কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে। কোন মুসলিম এভাবে জীবন দিলে তিনি শহীদ হিসেবে জান্নাতুল ফেরদৌসের অধিকারী হবেন বলে আল্লাহতায়ালা অঙ্গিকার করেছেন।

কিন্তু তাই বলে বিদ্যাপিঠ, হাসপাতাল, উপাসনালয়, বসতবাড়িতে ড্রোন হামলা করে নিরপরাধ সাধারণ মানুষ খুন করা যুদ্ধপরাধ এবং ভীষণ অন্যায়। অপরদিকে অস্ত্র হাতে নিরপরাধ নিরস্ত্র মানুষকে আবদ্ধ স্থানে জীম্মি বানিয়ে তাদের বুকে বুলেট মেরে বা গলায় ছুরি চালিয়ে কিংবা কোমড়ে বোমা গুঁজে বা বোমা ভর্তি ট্রাক চালিয়ে নিয়ে যুদ্ধের সাথে যাদের কোন সম্পর্ক নেই সেরূপ সাধারণ জনতার মাঝে আচমকা তা ফাটিয়ে নিজে মরা এবং অন্যদের মারা নিশ্চয় অনেক বড় অপরাধ। এটি আত্মহত্যা করার সাথে সাথে অপরকে খুন করার মত অর্থাৎ একসাথে দুইটি অপরাধ করার সামিল। এটি কখনই বীরত্বের কাজ নয়। কেউ এমনটি করলে তাকে উন্মাদ কিংবা ধর্মান্ধ বললে কমই বলা হবে, বরং তাকে কাপুরুষ ও পাষণ্ড ছাড়া আর কিইবা বলার থাকে। সুতরাং সাবধান! মুসলিম মাত্রই বুঝে শুনে পা ফেলা চাই। পা পিছলে এরূপ জঘন্য কর্মে জড়িয়ে পড়লে পরিণতিতে ইহকালে বঞ্ছনা এবং পরকালে জাহান্নামের শাস্তি অপেক্ষা করছে।


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *