মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর নিকট খোলা চিঠি

মান্যবর জনাব, সালাম ও শুভেচ্ছা। আমি আপনাদের রাজ্যের ক্ষুদ্র এক বাসিন্দা যার তিন তিনটি ছেলেমেয়ে স্কুল কলেজে পড়ে। তারা সবাই রাজধানীর সবচেয়ে সেরা স্কুল গুলোতে পড়ে এবং পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষন করলে তাদেকে আপনি ভালো ছাত্র/ছাত্রী না বলে পারবেন না। তারা এখনো ইয়াবা-ফেনসিডিল কিংবা অন্য কোন নেশায় আক্রান্ত হয়নি। কিন্তু তাদের আশেপাশে যে বিশাল নেশার সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে তাতে হতভাগ্য পিতা হিসেবে এক মুহুর্ত স্বস্তিতে থাকতে পারছি না। শুনেছি আপনার আব্বা কামেল লোক ছিলেন- আপনি নিজেও অসম্ভব সজ্জন এবং অতিশয় সৎ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেনীর সঙ্গে আপনার প্রানের সম্পর্ক আজন্ম-তাই তাদের নৈতিক ভিত্তি এবং মূল্যবোধ সম্পর্কে বেখবর নন। আর এই বিশ্বাসেই বহুৎ সাহস করে আপনায় পত্র লিখছি। মাননীয় মন্ত্রী আমার ভূল হলে অগ্রিম ক্ষমা চাই-কিন্তু দোহাই আল্লাহর আপনি ক্ষুব্দ হবেন না! কিংবা আমায় জেলে পাঠাবেন না।
আমি আপনার পরিচালনাধীন শিক্ষানীতি, শিক্ষা পদ্ধতি এবং শিক্ষার সর্ব নিকৃষ্ট মানের কারনে ব্যক্তিগত ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। আমার ভয় হচ্ছে- গত ৫/৬ বছরে যে পদ্ধতিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ছেলে মেয়েদেরকে পড়ানো হয়েছে এবং যে ভাবে তাদের হাতে বিনা পরিশ্রমে উন্নত পদ্ধতির নাম করে জিপিএ ৫ ও গোল্ডেন জিপিএ সম্বলিত সার্টিফিকেট তুলে দেয়া হয়েছে তাতে এ জাতি নিশ্চিত পতনের দ্বারপ্রান্তে পৌছে গেছে। আপনি শতভাগ নিশ্চিত থাকতে পারেন যে- আপনার জীবন সায়াহ্নের অন্তিম মুহুর্তে এসব ছেলে-মেয়েরা যখন দেশের নেতৃত্ব দিবে তখন পৃথিবীর ভয়াবহতম এবং নিকৃষ্টতম শাসন ব্যবস্থার কুফলের দূর্গন্ধ নিতে নিতে আপনি হয়তো জান্নাতুল ফেরদাউসের দিকে পা বাড়াবেন।
আপনি মাধ্যমিক স্তরের এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের কতোজন টিনএজ ছাত্র ছাত্রীদের ব্যক্তিগত কর্মকান্ড, চিন্তা চেতনা, ভাবনা এবং পারিবারিক সম্পর্ক-সম্পর্কে জানেন তা আমার জানা নেই। তবে এ ব্যপারে আমার কিছু অভিজ্ঞতার কথা বলি। ঢাকা কলেজের গোল্ডেন জিপিএ পাওয়া এক এইচ.এস.সি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রের সঙ্গে কথা হলো। জিজ্ঞাসা করলাম- বলতো বাবা! হযরত শাহজালাল (রহঃ) কে ছিলেন? ছাত্রটি কোন রকম জড়তা এবং দ্বিধা দ্বন্দ্ব দেখালোনা-ঝটপট উত্তর করলো-সম্ভবত তিনি কোন নবী বা রাসুল ছিলেন। আমি ছেলেটির মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম-সে আমার সঙ্গে মসকরা করছে নাতো! না সে মসকরা করেনি-অত্যন্ত সম্মান ও বিনয় নিয়েই আমার প্রশ্নের জবাব দিলো। আমি জিজ্ঞাসা করলাম চীনের রাজধানী কোথায়? সে বললো জানিনা। আদরের স্বরে বললাম – বাবা! টোকিও বা বেইজিং এর নাম শুনেছ কি? সে বললো-নাম দু’টো বেশ পরিচিত পরিচিত বলে মনে হচ্ছে। আমি মনে মনে কৌতুক বোধ করলাম এবং ধন্যবাদ দিতে থাকলাম তার শিক্ষক শিক্ষিকা, পিতামাতা এবং সর্বপরি আপনাকে। ছেলেটি ছিল অতি মাত্রায় বিনয়ী, স্পষ্টবাদী এবং নির্ভিক সত্যবাদী। তাকে বললাম আচ্ছা সোনা! তোমরা যখন বন্ধু বান্ধবরা একত্র হও তখন কি নিয়ে আলাপ করো? সে বললো-ফেইসবুক,গার্লফ্রেন্ড এবং আরো অনেক কিছু যা আপনাকে বলা যাবে না। তোমরা কি নিজেদের ভবিষ্যৎ এবং পিতা মাতার আয় রোজগার-হাল হকিকত নিয়ে আলোচনা করোনা! এবার সে আমার মুখের দিকে তাকালো এবং উন্নত শীরে বললো-আমাদের টাকা দরকার-আব্বা আম্মার নিকট চাই। না দিলে খারাপ ব্যবহার করি-কখনো সকনো বাসা থেকে চুরি করি। আবার বন্ধুদের কেউ কেউ জোর করে আদায় করে নেয়। কোন কোন বন্ধুর বাবা মা তো ভয়ে মাসের এক তারিখে হাত খরচের টাকা ছেলে মেয়েদের হাতে দিয়ে দেয়। আর এখন কেনো ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করবো!
মাননীয় মন্ত্রী- এবারের এইচ.এস. সি পরীক্ষার সময় দেখলাম-ছেলে মেয়েরা পরীক্ষার রাতে পড়াশুনা না করে ফেইস বুক চালাচ্ছে। সেখানে নাকি ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র পাওয়া যায়। অনেকে আবার প্রশ্ন পত্রের উত্তÍও আপলোড করে দিয়েছে। রক্ষনশীল পরিবার গুলোতে এসব নিয়ে মারামারি হাতহাতির মতো লঙ্কা কান্ড পর্যন্ত ঘটে গেছে। ছেলে মেয়েরা বইপত্র না পড়ে কেবল মোবাইল, আইপ্যাড, ল্যাপটপ ও কম্পিউটার সেটে প্রশ্ন পত্র বের করে ফেলে। কেউ কেউ নিকটস্থ ফটোকপির দোকানে গিয়ে কি যেনো সব নিয়ে আসে। এইসব প্রশ্ন পত্রের উত্তর যে বই ঘেটে বের করবে সেই পরিশ্রমটুকুও সোনামনিরা করতে নারাজ। তারা ফোন করে কোন বন্ধু বা হাউজ টিউটরদের নিকট থেকে উত্তরমালা সংগ্রহ করে এবং বীরদর্পে পরীক্ষার হলে চলে যায়।
প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে ত্রিমাত্রিক নাটক জমে উঠেছে এই বঙ্গদেশে। অর্থকড়ির লেনদেনকে যদি প্রথম মাত্রা ধরেন তবে দ্বিতীয় মাত্রা হবে ছেলেমেয়ের শিক্ষার মান নীচে নেমে যাওয়া। অন্যদিকে তৃতীয় মাত্রাটি হলো একেবারেই অভিনব। তরুন তরুনীদের প্রেম-ভালবাসা এবং অনৈতিক সম্পর্কের সেতু বন্ধন হিসেবে কাজ করছে ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্ন পত্র। বিষয়টি আগে আমি জানতাম না। এটি যে হতে পারে তাও কোনদিন ভাবিনি। আমার এক হতভাগ্য বন্ধু যখন ঘটনাটি বললো তখন আমি বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লাম। ঘটনাটি ঘটেছিলো আমার বন্ধুর মেয়েটিকে নিয়ে। রাজধানীর একটি নামকরা বালিকা বিদালয়ের ছাত্রী এবং বাবা মার বাধ্যগত সন্তান হিসেবেই মেয়েটির পরিচিতি ছিলো সর্বমহলে। হঠাৎ করেই কি যেনো হয়ে গেলো- একদম লেখাপড়া ছেড়ে দিলো। সারাদিন টিভি দেখে-খিলখিলিয়ে হাসে এবং মায়ের গলাধরে গভীর আত্ম বিশ্বাস ও প্রত্যয়ের সঙ্গে ঘোষনা দিতে থাকে যে, সে অবশ্যই গোল্ডেন জিপিএ পাবে। বন্ধু ও বন্ধুর স্ত্রী ভারী ভাবনায় পড়ে গেলো- একি করে সম্ভভ! লেখা নেই, পড়া নেই-অথচ গোল্ডেন জিপিএ! এস.এস.সি পরীক্ষার্থীনী গা গতরেও মেয়েটা বেশ বড় হয়েছে। ফলে বাবা মা ইচ্ছে থাকা সত্বেও মেয়েটিকে মারধোর করতে পারেনা- কেবল বকাঝকা করেই নিজেদের উদ্বেগ প্রকাশ করে। এরই মধ্যে মেয়েটি ৩ দিনের জন্য লাপাত্তা হয়ে গেলো। পুরো পরিবারটি পাগল হবার উপক্রম। লাজ লজ্জার ভয়ে ঘটনার কথা কাউকে বলতে পারলো না। পুলিশকেও কিছু বললো না। ৩ দিন পর মেয়েটি ফিরে এলো। তার সারা শরীর আর মনে তখন খুশির জোয়ার। সে প্রশ্নপত্র যোগাড় করে এনেছে। হতভাগ্য বাবা মা শোকে-দুঃখে-অপমানে কপাল চাপড়াতে লাগলো। একটু সুস্থ্য হবার পর জানলো আসল ঘটনা। একটি ছেলে মাস কয়েক আগে মেয়েটিকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় এই বলে-সে পরীক্ষার পূর্বে প্রশ্নপত্র যোগাড় করে দিতে পারবে। আর এতেই পটে যায় মেয়েটি।
হে রাজন, আপনি নিশ্চয়ই ইদানিংকালে ভিখারুন নিসা, অগ্রনী, উত্তরা মডেল কিংবা অন্য বালিকা বিদ্যালয়ের আশ পাশে ঘোরা ফিরা করতে যাননি। যদি যান তবে দেখবেন রং বে রংয়ের বখাটেরা দলবেঁধে সেখানে কিরূপ তান্ডব চালায়। আমার মেয়েটিকে স্কুলে দিয়ে আসতে কিংবা নিয়ে আসতে গিয়ে আমি প্রায়ই ওসব দৃশ্য দেখি। অসহায় পিতা হিসেবে বিধাতার নিকট প্রার্থনা করা ছাড়া আমার তেমন কিছু হয়তো করার নেই। কিন্তু মনের যন্ত্রনা দুর করতে না পেরে দিনকে দিন নিজের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে এক অসহায় প্রানীতে পরিনত হচ্ছি। প্রতিটি বিদ্যালয়ের আশে পাশের দোকান এবং ফুটপাতে বসা দোকান গুলো একেকটা অপরাধের ডিপো। এখানে বখাটেরা বসে থাকে এবং মেয়েদেরকে আকর্ষন করার নানা রকম ফন্দি ফিকির করতে থাকে। দোকানগুলোতে টাকার বিনিময়ে মোবাইল ভাড়া পাওয়া যায়। এসব ভাড়া মোবাইল দিয়ে ফোন, ইন্টারনেট চ্যাটিং, ফেইজবুক চালানো এবং নানা রকম অশ্লীল ভিডিও দেখানো হয়। অনেক মেয়েরা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ওসব দোকানে যায় এবং একসময় বখাটেদের খপ্পরে পড়ে।
আপনার জন্য আরো ভয়াবহ খবর হলো বড় বড় স্কুল কলেজের আশে পাশেই গড়ে উঠছে মাদক সাম্রাজ্য। গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা এবং হেরোইনের মতো মাদকের জন্য স্কুলগামী তরুন তরুনীদেরকে আর কষ্ট করে দুরে যেতে হয়না। দালালদের মাধ্যমে তারা অতি সহজেই এসব পেয়ে থাকে। উত্তরা, গুলশান, বনানী ও বারিধারার মতো অভিজাত এলাকার অনেক শিক্ষার্থী তরুন তরুনী মাদক দ্রব্যের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকে। ফলে ঐ এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট অভিভাবকদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। প্রতিটি পরিবারেই চলছে বোবা কান্না।
আপনি যদি কোন একদিন বিকেলে ধানমন্ডি লেকের পাড়ে যান তবে দেখতে পাবেন অসংখ্য তরুন তরুনী যাদের বয়স ১৩ বছর থেকে ২৫/২৬ বছরের মধ্যে, তারা পাশাপাশি বসে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা এবং নির্লজ্জতার প্রতিযোগীতা করছে। আপনি যদি আরো কিছুটা সময় অপেক্ষা করেন এবং সূর্য ডোবার পর পুনরায় লেকের পাড়ে চক্কর দিতে থাকেন তবে দেখতে পাবেন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দয়া করে লেক পাড়ের সব লাইটগুলো হয় বন্ধ করে দিয়েছে নয়তো নষ্ট করে রেখেছে অথবা বেশির ভাগ যায়গায় লাইটই স্থাপন করেনি। ফলে অন্ধকারের মধ্যে গুটিশুটি মেরে অভদ্র তরুন তরুনীরা যা শুরু করে তা দুনিয়ার অন্য কোথাও চলে না। আপনার সরকারের উদার পুলিশ বাহিনী কি কারনে যেনো লেক পাড়টিকে অশালীন কাজের উন্মুক্ত মঞ্চ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই মঞ্চে দিবারাত্র ২৪ ঘন্টা অশ্লীলতা, অনাচার, ব্যাভিচার আর নীতিহীন যৌনাচারের মহড়া চলে। এসব দৃশ্যের ৯৯ ভাগ পাত্র পাত্রীই আপনার অধীনস্ত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী। কাজেই ছেলে মেয়েদের এসব কর্মকান্ড দেখে আপনি সহসাই আপনার সফলতার স্বর্নপালক গুলো গুনতে পারবেন নির্দিধায়।
হে ধর্মাবতার! ধর্মের কল নাকি বাতাসে নড়ে। আপনার রাজ্যে ইদানিং ধর্ম কি আর কল কি- তা জানতে হলে যাদুঘরে যেতে হবে। ফলে ধর্মের কলের নড়া চড়াতো দুরের কথা-নাম গন্ধও শোনা যাচ্ছেনা। মসজিদে আজান হচ্ছে-মুসুল্লীও আগের চাইতে বেশী। মন্দিরের পুজারীদের ডাটফাট দেখলে মনে হয় এবছর পুজো জমবে বেশ। পাড়া মহল্লায় বড় বড় মসজিদ হচ্ছে-মন্দিরের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। কিন্তু কোথায় যেনো গলদ। মানুষের মন থেকে দিনকে দিন ধর্মবোধ ওঠে যাচ্ছে। ধর্মীয় শিক্ষা কোথায় যেনো বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আজ আর সকাল হলেই মসজিদ গুলো মক্তবে পরিনত হয়না। বাড়ীতে বাড়ীতে গৃহবধু এবং গৃহকর্তা সাত সকালে ঝুলে ঝুলে কোরআন পড়েনা। অবোধ শিশুরা দল বেঁধে আমপারার তালিম নেবার জন্য মসজিদে ছুটে যায়না। আরবী হরফ কিংবা বর্নমালা আজ আর মুসলিম পরিবার গুলোতে মর্যাদার সঙ্গে উচ্চারিত হয়না। সব কিছুর মধ্যেই রাষ্ট্রীয় মদদে তালেবান কিংবা জঙ্গি শব্দমালা এমন ভাবে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে যাতে ধর্মহীনতাই যেনো মর্যাদার প্রতীক বলে বিবেচিত হচ্ছে।
আপনার শিক্ষালয় গুলোতে এখন কি শিক্ষা দেয়া হচ্ছে তা কি একবারও হাতে কলমে খোঁজ নিয়ে দেখেছেন? আমার মাধ্যমিক স্তর কেটেছে অজো পাড়া গাঁয়ে। আমাদের সময় ছেলে মেয়েরা ৭/৮ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে আসতো। বেশির ভাগ ছাত্র ছাত্রীর পায়ে সেন্ডেল থাকতো না। সবার পোশাক আশাকই ছিলো মলিন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত ক্লাস। দুপুরের বিরতির সময় একটু টিউবওয়েলের পানি খেয়েই ছেলে মেয়েরা তৃপ্ত হতো। স্কুল ড্রেসের কথা তো কল্পনাই করা যেতো না। বিদ্যালয় গুলোতে বসার জন্য বেঞ্চ ছিলোনা। ছিলোনা কোন বেড়া। টিনের চালের ফুটো দিয়ে সূর্যের আলো এসে ছেলে মেয়েদের মুখ উজ্জল করতো এবং বর্ষাকালে করতো সিক্ত। এতো কিছুর পরও তখন আমরা পড়তাম এবং জানতাম দেশ বিদেশের অনেক কিছু। আমার স্পষ্ট মনে আছে- নবম শ্রেনীতে থাকতেই আমি পাবলো নেরুদার কবিতা এবং উইলিয়াম সমারসেট মমের লেখা পড়েছি। এ ছাড়া শেখ সাদী, নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় প্রমুখ নামকরা লেখকের ভালো ভালো গল্প গুলোও পড়ে ফেলেছিলাম। আজকের দিনের বাস্তবতা হলো-৯ম-দশম শ্রেনীর বেশির ভাগ ছেলে মেয়েই এসকল লেখকের লেখাতো দুরের কথা-তাদের নামই ঠিকমত জানেনা।
মাননীয় মন্ত্রী- আমি খুব ছোট মানুষ। আমার বিদ্যা বুদ্ধির দৌড় ও নিতান্ত সীমিত। তারপরও মনে হচ্ছে-আমরা বোধ হয় এক মহা ভুল করে ফেলেছি এবং সেই ভুলের পথ ধরে সগৌরবে পতনের দিকে ছুটে যাচ্ছি। শিক্ষা বলতে যদি বই বিতরন, নতুন নতুন ভবন নির্মান, শিক্ষা খাতে বাজেট বৃদ্ধি, নতুন শিক্ষানীতি প্রনয়ন এবং সেই নীতির সফলতা দেখানোর জন্য ঢালাও ভাবে পাশের হার বৃদ্ধিকে বোঝায় তাহলে অবশ্যই আপনি স্বার্থক। কিন্তু শিক্ষা বলতে যদি শিক্ষার্থীদের মানবিক গুনাবলীর উৎকর্ষতা এবং জ্ঞানভান্ডারের পূর্নতাকে বুঝায় তবে আপনি ব্যর্থ। আপনার শিক্ষার্থীরা আপনার মতো শিক্ষা গ্রহন করছেনা। আপনি যে ভাবে পিতা মাতা, পরিবার পরিজন এবং সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল-সেভাবে একালের শিক্ষার্থীরা নূন্যতম দায়িত্ববোধে অনুপ্রানিত হচ্ছে না। এদের দেশপ্রেম, মানবতাবোধ, দায়িত্ববোধ, কর্তব্যবোধ, সময়ানুবর্তিতা, পরিচ্ছন্নতার জ্ঞান, ময় মুরুব্বীগনকে ভক্তি শ্রদ্ধা করার মানসিকতা, জ্ঞান অর্জনের আকাংখা দিনকে দিন লোপ পেতে পেতে শূন্যের কোঠায় চলে যাচ্ছে। এর প্রধান কারন-তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কেবল জিপিএ-৫ প্রাপ্তির কৌশল এবং অপকৌশল ছাড়া আর কিছুই শিখছে না।
মাননীয় মন্ত্রী, শিক্ষার উন্নয়ন এবং এর বিকাশের রাজদন্ড আপনার হাতে। আপনি সফল হলে ১৭কোটি মানুষ সফল আর আপনি ব্যর্থ হলে পুরো জাতিই ব্যর্থ। কাজেই আপনাকে হতোদ্যম করলে আমাদেরই সমূহ ক্ষতি। আমরা চাই আপনি এমন কিছু করুন যাতে ছেলে মেয়েরা বইপত্রে মনোযোগী হয়ে ওঠে। তারা রাত বিরেতে ঘরের বাইরে থাকার চেয়ে শিক্ষালয়ে গমন এবং লেখা পড়াকেই বেশী উপভোগ্য মনে করে। তারা যেনো বড়কে শ্রদ্ধা এবং ছোটকে স্নেহ করতে শিখে। তাদের দুচোখে যেনো বড় মানুষ হবার স্বপ্নমালা জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকে। তারা যেনো পঠিত বিষয়ের মধ্যেই খুঁজে পায় দেশ প্রেম, পরিবার ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববান ও কর্তব্য পরায়ন হবার শিক্ষা। শিক্ষার্থীরা যেনো তাদেও শিক্ষক শিক্ষিকাকে পিতামাতার মতো শ্রদ্ধা করতে শিখে এবং পিতামাতাকে সব কিছুর উর্ধ্বে স্থান দেয়। অন্যদিকে তারা যদি-তাদের সৃষ্টি কর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও নির্ভরতা প্রকাশ করতে না শিখে তাহলে সকল শ্রমই একদিন পন্ড হয়ে যাবে প্রকৃতির অপার লীলা খেলায়।
পরিশেষে মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি- তিনি যেনো আপনাকে সুমতি দান করেন। মহান রব যেনো আপনার চেতনা শক্তিকে সদা জাগ্রত রাখেন এবং ভালো মন্দ বোঝার ক্ষমতা দান করেন। তিনি যেনো আপনার শক্তি ও সামর্থকে বাড়িয়ে দেন ভালো কাজ করার জন্য এবং মন্দ কাজ করার সকল পথ রুদ্ধ করে দেন। আপনার অন্তর যেনো জ্ঞানের আলোকে উদ্ভাসিত হয় এবং সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করার জন্য আপনার চিত্ত যেনো চঞ্চল হয়ে ওঠে এই দোয়া করে শেষ করছি । ইতি-

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *