বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গির পূর্ণ বর্ণালী

ভূমিকা

আমার যদি তাকাই বিশ্বে চলমান বিভিন্ন দেশের অস্থিরতা, সংঘর্ষ, যুদ্ধ বিগ্রহ বোমা বর্ষণ নিরীহ মানুষের হত্যা, ধংস লীলা যেমন ৭০ বছর ধরে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড জবর দখল করে হাজার হাজার নিরীহ মুসলমানের করুণভাবে হত্যা, পঙ্গু ও নির্যাতন চালিয়ে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা, ইরাক ও আফগানিস্তান আমেরিকার বোমা বর্ষণে হাজার হাজার হাজার মানুষ হত্যা, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু, ঘর বাড়ী ধ্বংস, লক্ষ, লক্ষ মানুষের গৃহহীন ও উদ্বাস্তু হওয়া এমন আরও কত কিছু ঘটতে দেখতে পাই। এই মৃত্যু, এ ধ্বংস ও করুণ ঘটনাবলী অতি ক্ষুদ্র কীট-পতঙ্গ ও বড় আকারের প্রাণী শ্রেণীতেও ঘটতে দেখা যায়। অনেক প্রাণী শ্রেণীর তো বিলীন হওয়ার ইতিহাসও রয়েছে। এই জগতে মৃত্যুর ঘটনা বড় আকারেও হয়, ছোট আকারেও। আপনার বেঁচে থাকার মূল্য ও অর্থ যত বৃহৎ হয়ে থাকবে, মৃত্যু আপনার কাছে ততবেশী করুণ হয়ে দেখা দেখা দিতে পারে। আপনি যদি পরকালে অবিশ্বাসী হন, তবে এই জগতের অনেক কিছু নিরর্থক ও হাহাকার হয়ে দেখা দিতে পারে।

দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টি মানুষকে দুই প্রান্তে নির্ধারণ করে। আর তা বিশ্বাসের ভিত্তিতে। পরকালের বিশ্বাস সংযুক্ত হলেই মহা কালকে অনন্ত ধারায় দেখা হয়। কখনো ৭০/৮০ বছরের জীন্দেগীর আওতা ঘিরে নয়।  আজকে যে প্রাণী মৃত্যু বরণ করল সে যদি অন্য অস্তিত্বে থাকার ধারণা পোষিত হয়, তবে তাতে মৃত্যুর এক ধরণের অর্থ হবে। কিন্তু মৃত্যুর পরে যদি কোনোও জীবনের ধারণা না থাকে, তবে অন্য ধরণের অর্থ এসে দেখা দেবে। জগতের ঘটনাবলীর সাথে এই বিশ্বাস যখন থাকে যে এ সবের নিয়ন্ত্রন আল্লাহর ইচ্ছায়  হচ্ছে, তিনিই কর্তৃত্বশীল, তবে তাতে অন্য ধরণের অর্থ সংযোজিত হয়ে আসবে।

আমরা বেশি দূরে না গিয়া এ কথা এখানেই বলতে পারি যে বিশ্বের ঘটনাবলী কেন্দ্রিক প্রধানত দুটি দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। একটি হচ্ছে বস্তুতান্ত্রিক -অর্থাৎ কোন অস্তিত্ব বস্তুর বাইরে নয় আর দ্বিতীয়টি বস্তু ও আত্মাসমন্বিত -অর্থাৎ এই জগতে কেবল বস্তুর অস্তিত্বই নয় বস্তুর ঊর্ধ্বে আত্মারও অস্তিত্ব রয়েছে। এই জগত আল্লাহর। কেবল তার দৃষ্টি সীমায়ই রয়েছে অনেক ঘটনাপ্রবাহের নির্গূঢ় রহস্য।

উপরে উল্লেখিত করুণ ঘটনাবলীর দিকে আবার দৃষ্টি দেয়া যাক। সেইসব ঘটনায়  যেখানে মানুষ নির্যাতিত, জুলুমের শিকার, হত্যার শিকার। এগুলো আল্লাহ কেন ঘটতে দিচ্ছেন? এই প্রশ্ন অনেকের কাছে। দার্শনিক ও বুদ্ধিজীবী মহল এ নিয়ে অনেক কথা বলেছেন, অনেক ধারণা দিয়েছেন। তবে সেই বস্তু ও আত্মার বিশ্বাসের নিরিখে। কারও দৃষ্টিভঙ্গি এসেছে এদিকে কারও সেদিকে। সেই প্রধান দুই ধারায়।

এ পৃথিবীতে কেন তবে মন্দ থাকবে বিপদ আসবে?

বস্তুবাদীদের মন্তব্য “ঈশ্বর বা আল্লাহ বলে যদি কেউ থেকেও থাকতেন যিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান, দয়ালু এবং সর্বোত্তম তাহলে বিশ্বে এরকম কোন অশুভ শক্তির অস্তিত্ব এবং মানুষের এরকম অশান্তি যন্ত্রণা ও কষ্টভোগ থাকার কথা নয়।” বস্তবাদীদের ধারণা যে এমন প্রশ্নতে বিশ্বাসীদের দুর্বল পয়েন্ট (Achilles heel) পাওয়া গিয়েছে! কিন্তু তা নয়। এটা পরে আলোচিত হবে।

বিশ্বাসের দর্শন সম্বলিত ক্লিয়ার কনশেপ্সন না থাকলে মানুষ সহজেই ফেতনায় পড়ে যেতে পারে। কিছু বিভ্রান্ত লোক রয়েছে যারা নিজেদেরকে বিশ্বাসী বলে উল্লেখ করে কিন্তু মূলের দিক দিয়ে ওরা বস্তুদর্শনের লোক। বস্তু-জগতের পাওয়া না-পাওয়ার সাথে তাদের বিশ্বাস নিপতীত। এখানে পেলে এক ধরণের বিশ্বাস আর না পেলে অন্য ধরণের বিশ্বাস। এদের অন্তরে ঈমান প্রবেশ করে নি। যেমন ধরুন কেউ দুঃখ, দুর্দশা, কষ্ট, নির্যাতন, মৃত্যু ইত্যাদি দেখলেই মনে করে এগুলো হচ্ছে আল্লাহর আযাব। আল্লাহ তার অভিভাকত্ব সরিয়ে নিয়েছেন। এরা বস্তুদর্শনে বিশ্বাসী -প্রকৃত বিশ্বাসী নয়। এদের বিশ্বাস আখেরাত মুখী নয়। সকল প্রতিফল তাদের কাছে ঘটনাকেন্দ্রিকই, বস্তু জগতের ঘটনাতেই সবকিছু নির্ধারিত। বাংলাদেশে বায়াজীদ পন্নী নামের এক ব্যক্তি ইসলামের নামে যে নতুন ধর্ম সৃষ্টি করেছে তার দর্শন এভাবেই। মুসলমান জাতির উপর অনেক বিপদ আপন যাচ্ছে, তাদের বস্তুভিত্তিক শক্তি ইউরোপ, আমেরিকার চাইতে কম, তারা ওদের সাথে পেরে উঠছে না, নির্যাতিত হচ্ছে। সুতরাং এইসব ঘটনার প্রতিফলন হচ্ছে তাদের উপর থেকে আল্লাহ অভিভাবকত্ব সরিয়ে নিয়েছেন।  এখন সেই অভিভাবকত্ব ফিরে পেতে হলে বায়াজীদকে এমামুজ্জান মেনে তার ঝাণ্ডার তলে যেতে হবে। সে নাকি মোজেমার মাধ্যমে এমাম। আল্লাহ নাকি তাকে এমাম বানিয়েছেন! কিন্তু কথা হচ্ছে তার দর্শন ঘটনা প্রবাহের সাথে সংযোজিত তার বস্তুবাদী ধারণা কেন্দ্রিক।

আজ একদিকে আছে স্পষ্ট বস্তবাদী অন্যদিকে আছে বিশ্বাসে আবরণের বস্তুবাদী। এর মধ্যে আছে আরও বৈচিত্র। সুতরাং আজ প্রয়োজন ইসলামী জীবন দর্শন দৃষ্টিভঙ্গির পূর্ণ বর্ণালী দেখার (Full spectrum outlook) যোগ্যতা অর্জন। আজকের আলোচনায় চেষ্টা করব কোরআন হদিসের আলোক ও বিভিন্ন ইসলামি স্কলারদের বক্তব্য সামনে রেখে এ বিষয়ে কিছু আলোকপাত করতে যদি আল্লাহ তৌফিক দেন।

প্রথম কথা

মুসলিমদের কাছে উপরে উল্লেখিত প্রশ্ন কেন খোদায় মন্দ কাজের সুযোগ দেন? কিন্তু নতুন কিছু নয়। যারা কোরআন পড়েছেন সবাই জানেন (সুরা বাকারা ২:৩০) ফেরেস্তারা একি ধরণের প্রশ্ন আল্লাহকে করেছিলেন।

وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلاَئِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الأَرْضِ خَلِيفَةً قَالُواْ أَتَجْعَلُ فِيهَا مَن يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاء وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ قَالَ إِنِّي أَعْلَمُ مَا لاَ تَعْلَمُونَ

“When your Lord told the angels, ‘I am putting a deputy on earth,’ they said, ‘How can you put someone there who will cause damage and bloodshed, when we celebrate Your praise and proclaim Your holiness?’ but he said, ‘I know what you know not.’” Qur’ān 2:30
“আর (স্মরন কর) যখন আপনার প্রভু ফেরেস্তাদেরকে বললেন,আমি পৃথীবিতে খলিফা সৃষ্টি করেছি , তারা বলল আপনি কি তথায় এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যারা অশান্তি ঘটাবে এবং রক্তপাত করবে ? অথচ আমরাইতো আপনার প্রসংশাসহ তাসবিহ ও পবিত্রতা ঘোষনা করি,তিনি বলেন নিশ্চয় আমি যা জানি তোমরা তা জাননা”
অন্য কথায় আলাহকে প্রশ্ন করা হয়েছিল কেন আপনি এই মানুষদেরকে অনুমতি দিবেন যারা পৃথিবীতে খারপ কাজ করবে ও অশান্তি ছড়াবে? উত্তর ছিল আমি যে জ্ঞানে তা করছি তোমরা তা জাননা।

বস্তুত এটাই হচ্ছে উপরে বর্ণিত প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত জবাব। এ কথা বুঝতে হবে, যে আল্লাহ যিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান, দয়ালু এবং সর্বোত্তম হ্ওয়ার সাথে তিনি বিশ্বের মন্দ কাজের অনুমতি দেয়ার মাঝে কোন যৌক্তিক দ্বন্দ্ব নাই। বিশ্বের অশান্তি যন্ত্রণা ও কষ্টভোগ তথা অশুভ শক্তির (evil force) যাকে ইসলামি পরিভাষায় তাগুতি শক্তি বলা হয়, এর অস্তিত্ব থাকার জবাবে বিশ্বাসীদের ধারণা সাথে অবশেষে খোলা মনের গবেষকরাও স্বীকার করেছেন। 
Stump and Murray make the following confession in their book, Philosophy of Religion: The Big Questions:
“The logical problem of evil has been severely criticized in recent years and is regarded in the contemporary literature on the subject as largely discredited. In brief, the problem with this argument is that it assumes something false. Specifically, it assumes that a good being would prevent every evil it can under any circumstances…Thus, at best, the logical problem of evil shows us that if God exists, the only evil that exists is evil for which there is some good reason.”
The rhetorical questions now change to inquisitive questions. Rather than blurting out, “How could God do that?! What kind of God does these things?!” the question now is “Why is the world this way and what wisdom lies in that?”

এক কথায় এখন “গড বা ইশ্বর কেন মন্দ কাজের সুযোগ দেন? সে প্রশ্ন না করে বরং প্রশ্ন হচ্ছে পৃথীবির এ অবস্থা কেন এবং এর পিছনে কি প্রজ্ঞা থাকতে পারে?

ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ

মুসলিমের জন্য ঈমানের তথা তার বিশ্বাসের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হচ্ছে “কদর”। আরবি শব্দ “কদর” হচ্ছে ডেস্টিনি বা নিয়তি তথা ভবিতব্য তা এসেছে মূল “ক্বাযা” আরবি শব্দ হতে যা ফরমান বা হুকুম অর্থে ব্যবহৃত হয়। মূলত, ডেস্টিনি হচ্ছে আল্লাহ যা লিখে রেখেছেন। আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির মধ্যে সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত. কিছুই তাঁর ইচ্ছা ছাড়া ঘটে নাই, ঘটেনা, ভবিষ্যতেও ঘটবেনা এবং কি ঘটবে সেটাও তার অজানা নয়। এটা স্পষ্ট করতে হবে যে নিয়তির কারণ ও প্রভাব (cause-and-effect) মানুষের পছন্দ ও অপছন্দ কারার সিদ্ধান্তের উপর কোন প্রভাব বিস্তার করে না। আল্লাহ মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি দিয়েছেন এবং ইচ্ছামত বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গী বেঁচে নিয়ে জীবন যাপনের স্বাধীনতাও দিয়েছেন। বিশ্বাস আসতে হয় মানুষের মন থেকে। এখানে জোর জবরদস্তি করার কিছু নাই এবং যারা তা করছে বলে মনে করেন তারা বিশ্বাসে নয় হয়তবা কোন শাসক বা জনগোষ্টির প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে করছে বা করাতে বাধ্য করা হয়। মানুষ তার জন্য কি বেঁচে নিবে তাও আল্লাহ ভালভাবে জানেন। কিন্তু মানুষকে সময় ও সুযোগ দেয়া হয় তা বাস্তবে তা বাস্তবায়িত করতে ।

জীবন একটি পরীক্ষা

অতএব একজন বিশ্বাসীর জন্য এ বিষয়টির রহস্য বোঝা এত সহজ হলেও প্রায়ই আমরা ব্যর্থ হই! জীবন একটি পরীক্ষা। মানুষকে এখানে সীমিত স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দেওয়া হয়েছে ভাল ও মন্দ কাজের যে কোন একটিকে বেছে নিতে। নিচের হাদিসটি লক্ষ্য করুন আল্লাহর রাসুল (স:) কি বলছেন?

“একজন বিশ্বাসীর জীবন সত্যিই আশ্চর্যজনক! তার জীবনে যা ঘটে সবই তার জন্য মঙ্গল। এটি একমাত্র সত্য শুধু বিশ্বাসীর বেলায় অন্য কারো ক্ষেত্রে নয়। যদি কোন কিছু আনন্দায়ক তার জীবনে আসে সে কৃতজ্ঞ হয় সেটি তার জন্য ভাল। আবার যখন কিছু খারাপ তাকে স্পর্শ করে সে ধৈর্য ধরে এবং সেটিও তার জন্য উত্তম” । (মুসলিম)

দুঃখ-কষ্ট জীবনের পরীক্ষার অংশ। আল্লাহ সব কিছুতে হস্তক্ষেপ করলে এবং ব্যক্তির প্রতিটি খারাপ জিনিস প্রতিরোধ করতে করা যেন কোন ছাত্রকে পরীক্ষা থেকে দূরে নিয়ে রাখার মত হবে।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে বিশ্বে বিদ্যমান মন্দ ও অত্যাচার এবং খারাপ কাজ ইত্যাদি সমর্থনযোগ্য বা প্রশংসনীয় বরং মুমিনদের সবসময় ভাল কাজের শিক্ষা দিতে, সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে, মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকতে এবং তার প্রতিরোধ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে , যা নিজেই আরেকটি পরীক্ষা।

দৃশ্যের অন্তরালে আত্মজ্ঞান

সংশয়বাদীরা সব কিছুতে নেতিবাচক দিকটির উপরই ফোকাস করতে চায় এবং দাবী করে যে সকল অশুভ ও দুর্ভোগ হচ্ছে জীবনের কুৎসিত ঘটনা কিন্তু বিশ্বাসীদের দৃষ্টি থাকে বৃহত্তর ছবিতে (bigger picture) এবং তারা এসবের অস্থিত্বের পিছনে ব্যাখা পেতে সক্ষম। এটি যেন দুজন ব্যক্তিকে লড়তে দেখে মনে করা যে উভয়েই দুষী অথচ এ কথা চিন্তা না করা যে এর মাঝে একজন হয়তো সত্য ও ন্যায়ের পথে লড়ছে। “ইভিল” তথা অশুভ বা মন্দ কাজ অনেক ক্ষেত্রে আপেক্ষিক (relative)। একটি মজাদার রসাক্ত হেমবার্গার ভাল হতে পারে যে ক্ষুধার্ত তার জন্য কিন্তু অবশ্যই এটি খারাপ সেই গরুর জন্য যাকে জবাই করা হয়েছে।

আল্লাহ বলেন,

“যুদ্ধের হুকুম তোমাদেরকে দেয়া হয়েছে যদিও তোমরা তা অপছন্দ কর । কোন কিছু তোমাদের অপছন্দের হলেও সেটা তোমাদের জন্য ভাল তেমনি কোন কিছু ভাল মনে হলেও সেটা তোমাদের জন্য খারাপ। আল্লাহ জানেন তোমরা জাননা (কোরআন ২: ২১৬)

বড় ছবি দেখার সক্ষমতা আমাদেরকে সাহায্য করে কোনটি সত্যি ভাল ও কোনটি খারাপ তা সঠিকভাবে বুঝতে । সামান্য দূরদর্শিতা দিয়ে কেউ দাবি করতে পারে যে ভ্যাকসিন দেয়ার তুলনায় হেরোইন ইনজেকশন একটি ভাল যা শরীরে তাত্ক্ষণিক রমরমা বাড়ে, ভ্যাকসিনে তো থাকে রোগের কিছুটা ট্রেস তাই এটি খারাপ। তার কাছে ভ্যাকসিনের ভবিষ্যত রোগ প্রতিরোধের গুরুত্বের চেয়ে শরির চাঙ্গা করাটাই বড়। কিন্তু হেরোইন যে তাকে ড্রাগ আসক্তি করতে পারে সে জ্ঞান তার নাই চিকিৎসা জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার অভাবের কারণে।

সুরা ক্বাহাফে মুসা (আ:) এর সাথে সেই এক ব্যক্তির সফরের মাধ্যামে আল্লাহ শিক্ষা দেন অদৃশ্য জ্ঞান কি তা বুঝতে। দেখতে পারেন সুরা ১৮: ৭১-৮২ আয়াত।

অশুভ বা দু:খ কষ্ট ও অশান্তির কিছু ভাল দিক

মানুষের জীবনে কখনও দু:খ কষ্ট ও অশান্তি আসার মাঝে কিছু ভালো দিকও আছে, যেমন:

১)   তা মানুষকে স্রষ্টার কাছে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।

দু:খ কষ্ট ও বিপর্যয় মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে যেমন আসে তেমনি সমষ্টিগত অর্থাৎ পুরা গোত্র বা জাতির উপরও আসতে হবে। জাতি যখন বিপদে পড়ে তখন কাণ্ডারির বা নেতার প্রয়োজন হয় তাদেরকে সে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে।তবে ভিন্ন পথের পথিক এসেও কোন জাতিকে বিপতগামী করতে পারে।

সুরা আনআমে আল্লাহ বলেন, “আর আমি তোমাদের পূর্বেকার জাতিসমূহের কাছে বহু রাসূল পাঠিয়েছি, আমি তাদের প্রতি ক্ষুধা, দারিদ্রতা ও রোগ ব্যাধি চাপিয়ে দিয়েছি, যেন তারা নম্রতা প্রকাশ করে আমার সামনে নতি স্বীকার করে।(৪২)
সুতরাং তারা কেন বিনীত হয়নি, যখন আমার আযাব তাদের কাছে আসল? কিন্তু তাদের হৃদয় নিষ্ঠুর হয়ে গিয়েছে। আর তারা যা করত, শয়তান তাদের জন্য তা শোভিত করেছে।”(৪৩)

মানুষ বিপদে পড়লে তা থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহর সাহায্য চায় এবং আল্লাহর রাস্তায় ফিরে যায় এমন অনেক উদাহরণ আছে।
প্রখ্যাত ব্রিটিশ গায়ক কেট স্টিভেন্স এর জীবন থেকে আমাদের শিখার আছে। তিনি বলেন,
“কয়েক বছরের আর্থিক সাফল্য ও বিলাসী জীবনের মাঝে আমি ভিষন অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং যক্ষা রোগে আক্রান্ত হই। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে আমি চিন্তা করতে লাগলাম জীবনের মানে বুঝতে, কি হতে যাচ্ছে আমার? আমি কি শুধু দেহ সর্বস্ব এক জন? জীবনের উদ্দেশ্য কি কেবল এই শরীরের সন্তুষ্টি? আমি পরে বুঝেছিলাম এই ক্লেশ বা বিপদ আমার জন্য একটি আশীর্বাদ ছিল।” আসলে তাঁর সে ভাবনা তাকে একসময় ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসে।

আমার নিজের জীবনেও এমন ঘটনা হয়েছে যার ফলে আমাকে দিনে রাত্রে আল্লাহর সাহায্য চাইতে হয়েছে। আমার পরিবারের আপনজন ছোট্ট এক অপারেশনের জন্য হাসপাতালে গিয়ে যেখানে তিনদিন পর ঘরে ফিরার কথা সেখানে থাকতে হয়েছে প্রায় দুই মাস যার মাঝে শুরুতে অবস্থা খুবই ক্রিটিকেল হয়ে যাওয়ায় ICU তে পর্যন্ত থাকতে  হয়েছে প্রায় এক সাপ্তাহ । কাজকর্ম ছেড়ে সেই সকালে হাসপাতালে যেতান আর রাত্রে ঘরে ফিরতাম। আমি যদি ফিরে থাকাই সে বিপদের দিনগুলোর দিকে মনে পড়ে আল্লাহর উপর ভরষা করা,  কান্নাকাটি করা ও যে মনবল পেয়ছিলাম তা ভাবতে ভাল লাগে। তাই আল্লাহর হাজারো শোকরিয়া যে তিনি সে বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন।

২) এটা ভাল এবং খারাপ মানুষের মধ্যে আলাদা করে।
সুরা আনকাবুতে আল্লাহ বলেন, “মানুষ কি মনে করে যে, তারা একথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে, আমরা বিশ্বাস করি এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না?” (২)
“আমি তাদেরকেও পরীক্ষা করেছি, যারা তাদের পূর্বে ছিল। আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন যারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যুকদেরকে।” (৩)

৩) দুঃখ-কষ্টের প্রয়োজন তার বিপরীত আনন্দ এবং কৃতিত্বের অনুভূতি অনুভব করতে।
আল্লাহ বলেন, কষ্টের সাথেই তো স্বস্তি আছে; অবশ্যই কষ্টের সাথে স্বস্তি আছে (সুরা: ৯৪: ৫-৬)

স্বচ্ছন্দ এবং আরাম আয়াসের উপলব্ধি শুধুমাত্র তখনই হতে পারে যদি দু:খ কষ্টের অনুভূতির অভিজ্ঞতা থাকে ।

শেষ কথা:
এটা সুস্পষ্ট হওয়া দরকার কোন কিছুর পিছনের জ্ঞান জানার অক্ষমতা সে জিনিসের সমালোচনার হাতিয়ার হওয়া উচিত নয়। তবে সব রহস্যের চূড়ান্ত বিশ্লেষণ অবশ্যই আল্লাহ ভাল জানেন। দিনের শেষে এ বিশ্বের সবকিছুর নিয়ন্ত্রন তার কাছেই বন্ধী।

নিচে যে ভিডিও লিংকটি দিলাম সময় করে দেখে নিবেন। তাহলে এ বিষয়ে আরো বেশী জানার ও বুঝার সুযোগ হবে।

রেফারেন্স:

http://mustafaumar.com/2013/01/why-does-allah-allow-bad-things-to-happen/

Comments are closed.