বিধবার অধিকার

সমাজে বিধবাদের প্রতি বাঁকা দৃষ্টি নিক্ষেপের প্রবণতা আগেকার তুলনায় অনেক কমে এলেও এখনো কিছুটা আছে বৈকি। আর বিধবা কম বয়সী হলে তো কথাই নেই। তার সাথে আশপাশের অনেকেই ভিন গ্রহের কোন এক আজব প্রাণীর মত আচরণ করতে শুরু করেন। কথায় কথায় ‘অপয়া’ বিশেষণটি তার নামের সাথে জুড়ে দিতেও পিছপা হননা। কিন্তু যেকোন মূহুর্তে বিধবাদের প্রতি বাঁকা দৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তিদের মা, বোন, কন্যা, এমনকি তারা নিজেরাও যে এই পরিস্থিতির স্বীকার হতে পারেন- তা হয়ত তারা বেমালুম ভুলে বসেন।

বিধবাদের স্বার্থ সংরক্ষণের ব্রত নিয়ে এখন থেকে প্রতিবছর ২৩ জুন ‘আন্তর্জাতিক বিধবা দিবস’ পালনের জন্য জাতিসংঘে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। এ উপলক্ষে প্রতি বছরই মানবাধিকার সংস্থার পক্ষ থেকে সভা-সেমিনারের আয়োজন করা হয়ে থাকে। সেখানে বিধবাদের পক্ষ থেকে বক্তারা সমাজে বিধবাদের নানা-মুখি সমস্যার কথা তুলে ধরেন। কুসংস্কার, অজ্ঞতা ও সচেতনতার অভাবে যে তাদেরকে প্রতিনিয়ত বিরূপ অবস্থার মধ্য দিয়ে দিন কাটাতে হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ অবস্থার জন্য মূলত সঠিক শিক্ষা, ধর্মীয় জ্ঞানের অভাব ও হীনমন্যতাই দায়ী। মূলত এরই সুযোগে কতিপয় ধর্মান্ধ, জ্ঞানপাপী ও ছদ্মবেশী স্বার্থবাদী ব্যক্তিরা এর পেছনে মদদ দিয়ে তাদের অশুভ কর্তৃত্ব ফলানোর অপপ্রয়াসে ব্যস্ত। ফলে মূল বিধান সম্পর্কে অজ্ঞতা ও ধর্ম সম্পর্কে ভুল ধারনা সৃষ্টি হওয়ার কারণে অনেকে না বুঝেই শাশ্বত ধর্ম ইসলামের কটাক্ষ করতে নেমে পড়েন।

   

স্বামীর মৃত্যুর কারণে কোন নারী তার স্বকীয়তা ও স্বাধিকার থেকে বঞ্চিত হন না, বরং সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবন যাপনের অধিকার রাখেন। বিশেষ করে ইসলামি সমাজ ব্যবস্থায় বিধবাদের জন্য বৈধব্য বেশভূষা পরিধান করার ও অন্ধকার কুঠরিতে প্রদীপ জ্বালিয়ে স্বতন্ত্রভাবে জীবন কাটানোর কোন রীতি নেই। বরং সংগত কারণেই একটি নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষার পর অন্য নারীদের মত বিধবারাও সম্পূর্ণ স্বাধীন সত্তা হিসেবে জীবন কাটাতে পারেন। এমনকি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মন চাইলে বিধিমত বিয়ে করে আবার নুতুন জীবন শুরু করার অধিকারও ইসলামে অনেক আগেই তাদেরকে দেয়া হয়েছে।

এতকাল পর জাতিসংঘ বিধবাদের স্বার্থ সংরক্ষণের কথা ভাববার প্রয়োজন অনুভব করছে। অথচ মহান স্রষ্টা আল্লাহতায়ালা তার প্রেরিত কিতাব আল-কোরআনে সেই ১৪৫০ বছর পূর্বেই তাদের অধিকার রক্ষার কথা ব্যক্ত করেছেন। স্বামী হারা নারীরা যেন সমাজে হেয় প্রতিপন্ন না হন সেইজন্য স্রষ্টার পক্ষ থেকে সর্বযুগের উপযোগী বিধান দেয়া হয়েছে। যা সঠিকভাবে জানা, অপরকে জানানো ও মানার মধ্যেই তো সর্বাঙ্গীন কল্যাণ নিহিত। বিশেষ করে নারীদেরকে এ বিষয়টি ভালভাবে জানতে হবে এবং প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করার জন্য সচেষ্ট হতে হবে। তাহলেই প্রকৃত অধিকার ও  মুক্তি মিলবে, নচেৎ নয়।

আল-কোরআন- সূরা বাকারা

(০২:২৩৪) তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মৃত্যুবরণ করবে, তাদের স্ত্রীদের কর্তব্য হলো চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা। অতঃপর যখন ইদ্দত (চার মাস দশ দিন) পূর্ণ করে নেবে, তখন তারা নিজেদের ব্যাপারে বিধিমত ব্যবস্থা নিলে তাতে কোন পাপ নেই। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ্ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবগত আছেন।

আল-কোরআনে স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীদেরকে (ইদ্দত পালনের) চার মাস দশ দিন অপেক্ষা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কার মৃত্যু কখন ঘটবে তা নিশ্চিতভাবে বলা মুশকিল। সুতরাং বিধবাদের ক্ষেত্রে অন্তর্কলহ জনিত বিচ্ছেদ নয়, বরং স্বামীর মৃত্যু জনিত বিরহের কারণে হঠাৎ কোরে মানসিক চাপ পড়াটাই স্বাভাবিক। তাই বিধবাদের বেলায় ইদ্দত পালনের সময় সীমাকে কিছুটা বাড়িয়ে অবশ্য পালনীয় হিসেবে কমপক্ষে চার মাস দশ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। ইসলামে পিতৃ পরিচয় গোপন করা অপরাধ। তাই এই সময়ের মধ্যে বিধবা নারীটি তার মৃত স্বামী কর্তৃক অন্তঃসত্ত্বা কিনা তা বুঝে নেয়া সম্ভব হয়। তাছাড়া তিনি মানসিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে সামলে নেয়ার পাশাপাশি নিজের উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠা করারও সুযোগ পান। আসল খবর মহান আল্লাহতায়ালাই ভাল জানেন। ইদ্দতের এই সময় অতিবাহিত হবার পর বাকি জীবন কিভাবে কাটাবেন সে ব্যাপারে সেই নারীরা বিধি অনুযায়ী সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার রাখেন।

আল-কোরআন- সূরা বাকারা

(০২:২৩৫) আর যদি তোমরা আভাসে- ইঙ্গিতে সেই নারীদেরকে বিয়ের প্রস্তাব কর, কিংবা নিজেদের মনে তা গোপন রাখ, তবে তাতে তোমাদের কোন দোষ হবে না। আল্লাহ জানেন যে, তোমরা অবশ্যই তাদের কথা আলোচনা করবে। কিন্তু বিধিমত কথাবার্তা ছাড়া গোপনে তাদের কাছে কোন অঙ্গীকার করবে না; আর নির্ধারিত ইদ্দত সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে করার সংকল্প করো না। আর একথা জেনে রেখো যে, আল্লাহ তোমাদের মনের কথা জানেন। কাজেই তাঁকে ভয় কর। আর জেনে রেখো যে, আল্লাহ ক্ষমাশীল ও ধৈর্য্যশীল।

অনুচ্ছেদ- ৯: বিয়ের জন্য বিধবাদের মৌখিক স্বীকৃতি দিতে হবে এবং কুমারী মেয়েদের মৌন স্বীকৃতিই যথেষ্ট হবে। পৃষ্ঠা-৩৪

সহীহ মুসলিম: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ৩৩৩৭ – আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : বিধবা স্ত্রীলোকের পরামর্শ ও প্রকাশ্য অনুমতি গ্রহণ ছাড়া তাকে বিয়ে দেয়া যাবে না এবং কুমারী স্ত্রীলোককে তার অনুমতি ছাড়া বিয়ে দেয়া যাবে না। সবাই জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, তার (কুমারী) অনুমতি কিভাবে নেয়া যাবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: নীরব থাকাই তার অনুমতি।

সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, অধ্যায়ঃ ৬৭/ বিয়েঃ ৫১৩৬/ ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৭৬০আবূ সালামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তাদের কাছে বর্ণনা করেন যে, নাবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন, কোন বিধবা নারীকে তার সম্মতি ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না এবং কুমারী মহিলাকে তার অনুমতি ছাড়া বিয়ে দিতে পারবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! কেমন করে তার অনুমতি নেয়া হবে। তিনি বললেন, তার চুপ থাকাটাই হচ্ছে তার অনুমতি।

    সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, অধ্যায়ঃ ৬৭/ বিয়েঃ ৫১৩৮/ ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৭৬২খান্সা বিনতে খিযাম আল আনসারিয়্যাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন যে, যখন তিনি অকুমারী ছিলেন তখন তার পিতা তাকে বিয়ে দেন। বিয়ে তিনি অপছন্দ করলেন। এরপর তিনি রাসূলুল্লাহ্সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর কাছে আসলেন। রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএ বিয়ে বাতিল করে দিলেন।

[সূত্র- http://hadithbd.com/show.php?pageNum_RsHadith=7&BookID=12&SectionID=312]

সৃষ্টি গত ভাবেই সবার মন মানসিকতা এক রকম নাও হতে পারে। এ কারনেই ইদ্দত পালনের পর বিয়ে করবেন কি করবেন না সে ব্যাপারে সেই নারীরা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। যাদের সাথে বিয়ে বৈধ এমন পুরুষেরা এসময় তাদেরকে বিয়ে করার ইচ্ছা পোষণ করতেও আদবের সাথে প্রস্তাব পাঠাতে পারবেন। কোন বিধবা নারী যদি আপাতত বিয়েনা করার বা বাকি জীবনটা বিয়ে না করেই কাটিয়ে দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন, সেক্ষেত্রে এ ব্যপারে তার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। তাদের অমতে বিয়ের জন্য কখনই জোর-জবর্দোস্তি করা যাবেনা। চারমাস দশদিন অপেক্ষার সময় (ইদ্দত) পার করার পর তারা চাইলে বিয়ের সংকল্প বা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আর এক্ষেত্রে কোন গোপনীয়তা নয়, বরং প্রকাশ্য আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিয়ের নির্ধারিত বিধান অনুসারেই তা সম্পন্ন করতে হবে। তাদের দুর্বলতার সুযোগে কোনরূপ গোপন অঙ্গীকার করা বা অবৈধপন্থা অবলম্বনে তাদেরকে বাধ্য করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।

আল-কোরআন- সূরা বাকারা

(০২:২৪০) আর তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মারা যায়, তারা তাদের স্ত্রীদের জন্য এই ‘অসিয়ৎ’ করবে যে, তাদেরকে যেন এক বছর পর্যন্ত ভরণপোষণ দেয়া হয় এবং গৃহ থেকে বের করে দেয়া না হয়। কিন্তু যদি তারা নিজে থেকে বেরিয়ে যায়, তবে নিয়মমত নিজেদের ব্যাপারে যে উত্তম ব্যবস্থা গ্রহণ করবে তাতে তোমাদের কোন পাপ নেই। আর আল্লাহ হচ্ছেন পরাক্রমশালী বিজ্ঞতা সম্পন্ন।

এছাড়াও স্বামীর মৃত্যুর পর তারা কমপক্ষে এক বছর পর্যন্ত ভরণ পোষণ পাবার অধিকার রাখেন। স্ব-ইচ্ছায় অনত্র যেতে না চাইলে শ্বশুর বাড়ির লোকজন যেন তাদের বাড়ি থেকে জোর করে বের করে না দেন সেই নির্দেশও দেয়া হয়েছে। তবে ইদ্দত পালনের পর তারা যদি নিয়মতান্ত্রিকভাবে অন্য কোথাও যেতে চান (যেমন প্রাপ্য সমস্ত সম্পত্তি নিয়ে সন্তান অথবা বাবার বাড়িতে থাকতে চান বা ব্যাবসা কিংবা চাকরি করে স্বাধীনভাবে জীবন কাটাতে চান) বা বিধিমত অন্য কাউকে বিয়ে করতে চান তবে তাতে কোন দোষ নেই। এক্ষেত্রে তাদের বাধা দেয়া যাবেনা।

অনেকে দাবি করেন, (০২:২৩৪) নং আয়াতের কারণে (০২:২৪০) নং আয়াতের এই নির্দেশটি- //তাদেরকে যেন এক বছর পর্যন্ত ভরণপোষণ দেয়া হয় এবং গৃহ থেকে বের করে দেয়া না হয়। // মানসুখ অর্থাৎ বাতিল হয়ে গেছে। প্রকৃতপক্ষে (০২:২৩৪) নং আয়াতে স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর জন্য ইদ্দত পালনের সময়সীমা বেধে দেয়া হয়েছে অর্থাৎ চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অন্যত্র বিয়ে না করে অপেক্ষা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং যা অবশ্য পালনীয়। কিন্তু (০২:২৪০) নং আয়াতে বিধবা স্ত্রীকে কমপক্ষে এক বছর পর্যন্ত ভরণপোষণ দেয়ার জন্য ওসিয়ৎ করা সম্পর্কিত যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা মৃত্যু পথযাত্রী স্বামীর দায়িত্ব এবং পরিবারের অন্যান্যদের জন্যে তা মানা কর্তব্য বিধায় সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রসঙ্গ। এর মাধ্যমে স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা স্ত্রীকে হঠাৎ ঘর থেকে বের করে পথে নামানোর পথটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে ইদ্দতের চার মাস দশ দিন সময় পূর্ণ করার পর অন্তঃসত্ত্বা নন প্রমাণিত হলে বিধবা স্ত্রী স্বেচ্ছায় বিধিমত ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার রাখেন। এক্ষেত্রে চাইলে তিনি স্বামীর ঘরে অবস্থান করতে পারেন কিংবা অন্যত্র চলে যেতে পারেন। তাকে যেমন স্বামীর পরিবারের সাথে থাকার জন্য বাধ্য করা যাবেনা। তেমনি চলে যেতে চাইলে তাকে বাঁধা দেয়া যাবেনা এবং সেই সিদ্ধান্তের ভাল-মন্দের দায়-দায়িত্ব তারই। সুতরাং এই দুটি আয়াতের মধ্যে একটিতে মৃত্যুপথযাত্রী স্বামীর দায়িত্ব এবং আরেকটিতে স্ত্রীর কর্তব্য সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাই একটি আয়াতের নির্দেশ আরেকটি আয়াতের নির্দেশকে বাতিল করে দেয় না, বরং প্রেক্ষাপট বিবেচনায় দুটি আয়াতের নির্দেশ পালন করার মধ্যেই শান্তি ও কল্যাণ নিহিত। অথচ ভুল বোঝার কারণে কিংবা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের আধিপত্যের কারণে পুরুষদের জন্য নির্ধারিত দায়িত্বটি উপেক্ষা করার মতলবে কোন এক সময় থেকে বিধবা স্ত্রীর জন্য এক বছর ভরণপোষণ দেয়ার নির্দেশটি মানসুখ অর্থাৎ বাতিল করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। যা বান্দার হক বিনষ্টকারী মহাপাপ এবং অমানবিকও বটে।

আল-কোরআন- সূরা নিসা

(০৪:১৯) হে ঈমাণদারগণ! বলপূর্বক নারীদেরকে উত্তরাধিকারের পণ্য হিসেবে গ্রহণ করা তোমাদের জন্যে বৈধ নয় এবং তোমরা তাদেরকে যা প্রদান করেছ তার কোন অংশ তাদের কাছ থেকে নিয়ে নেবার জন্য তাদেরকে আটকে রেখো না; যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তাদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর, এমন কি তোমরা যদি তাদেরকে পছন্দ নাও কর, এমনও তো হতে পারে যা তোমরা অপছন্দ কর, তাতেই আল্লাহ অনেক কল্যাণ নিহিত রেখেছেন।

বিয়ের সময় স্বামীর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত মোহরানা, স্বামীর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার হিসেবে প্রাপ্ত সম্পত্তি এবং পিতার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত যে সম্পদ নারীরা পান তা একান্তভাবেই তাদের। তাদের প্রাপ্য সম্পদ জোর করে ভোগ করার মতলবে তাদেরকে আটকে রাখার বা তা নিয়ে নেবার অধিকার কারো নেই। সরাসরি কোন অশ্লীল কাজে লিপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তাদের সাথে সদ্ভাব রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নারী ও পুরুষ কেউই ইসলামের বিধানের বাহিরে নয়। শালীনতা বজায় রাখা প্রতিটি মুসলিমের ইমানী দায়িত্ব। তাই অন্য সব নারী ও পুরুষের মত বিধবাদেরও প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকা উচিত। অশ্লীলতায় জড়িয়ে পড়লে অন্যান্যদের মত তাদের উপরেও তিরস্কার ও শাস্তি প্রযোজ্য হবে। অনেক সময় দেখা যায় স্বামীর মৃত্যু পর পরিবারের কেউ কেউ তাদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। তা মোটেই উচিত নয়। বরং পরিবারের অন্য সবার মত তাদের সাথেও সদ্ভাব ও সৌহার্দমূলক সম্পর্ক বজায় রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভাল-মন্দ মিলিয়েই তো মানুষ। দুর্বলতার সুযোগে শুধুমাত্র তাদের অপছন্দের দিকগুলোকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বের করে কথায় কথায় কটাক্ষ ও খারাপ আচরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। তুচ্ছ কারনে কাউকে অপছন্দ হলেও তার মাঝে স্রষ্টা প্রদত্ত অনেক ভাল গুণও থাকতে পারে, যা পরিবারের জন্য প্রভূত কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। মহান আল্লাহতায়ালা যা জানেন আমরা তা জানিনা।

সুতরাং এ থেকে বোঝা যায় যে, কোন বিধবাকে সারা জীবন বৈধব্য বেশ ধারন কিংবা অবিবাহিত অবস্থায় একাকিত্ব জীবন কাটানোর কোনরূপ বাধ্যবাধকতা ইসলামে নেই। বরং অন্য আর দশজন মুসলিম নারীর মত স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্যই উৎসাহিত করা হয়েছে এবং তিনি কি করবেন সেই সিদ্ধান্ত নেবার সম্পূর্ণ স্বাধীনতাও তাকে দেয়া হয়েছে।

ইসলামে বিধবাদের জন্য কোনরূপ বৈষম্য মূলক নীতি নেই। কিন্তু তারপরও কেন যেন এ দেশের মুসলিম সমাজ অনেক ক্ষেত্রেই বিধবাদের প্রতি অন্য ধর্মের আচরণ-বিধি আরোপের মনোভাব পোষণ করা থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারছে না। কিছু ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়। তারপরও অশিক্ষিত এমনকি শিক্ষিত  পরিবারেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অজ্ঞতা বশত বিধবাদেরকে বিজাতীয় বৈধব্যের বেশ পরিয়ে বশে রাখার এবং বাঁকা চোখে দেখার প্রবণতা রয়েই গেছে। ইসলামের বিধান পালন করা সধবা, বিধবা ও স্বাধীন নারীদের বেলায় সমানভাবে প্রযোজ্য। স্বামীর মৃত্যুর কারনে ধর্মের নামে নারীর উপর দমন পীড়ন চালানো বা বাকী জীবন সাদা শাড়ি পরিয়ে একঘরে করে রাখার কথা কখনই ইসলাম বলে না। মূল বিধান সম্পর্কে অজ্ঞতা ও ধর্ম সম্পর্কে ভুল ধারনা সৃষ্টি হওয়ার কারনে অনেকে না বুঝেই ইসলামের বিষোদগারে নেমে পড়েন। অথচ সমাজে বিধবাদেরও যে আর দশজন মানুষের মত বাঁচার অধিকার আছে সেই সুসংবাদই মহান স্রষ্টা আল-কোরআনে জানিয়ে দিয়েছেন। মুসলিম হয়ে আল্লাহর বিধানের প্রতি অবজ্ঞা করা মোটেই উচিত নয়। কারন তাতে অশান্তিই মেলে। নানা মুনির নানা মত ও পথের অনুকরণ নয়, বরং মুসলিমদের মৌল বিধান আল-কোরআন ও সেই অনুসারে রাসূলের (সাঃ) সুন্নাহর সঠিক বাস্তবায়নই আমাদেরকে সকল কুসংস্কার ও হীনমতির হাত থেকে রক্ষা করতে ও শান্তি দিতে পারে।

 

Comments are closed.