বিজয় দিবসে আমার ভাবনা!

সকালে পুত্রধন ঘুম থেকে উঠিয়াই জাম্প করিল, আজকে বিজয় দিবস-মেলায় যাইবো- খেলনা কিনবো। তাহার ধান্দা খেলনা। আমার ধান্দা এই শীতের দিন বাহিরে না যাইয়া কাথা মুড়ি দিয়া ইন্টারনেট ব্রাউজ করা। কিন্ত সে ছাড়িবে না। সুন্দর করে সাজিয়া আসিলো- মাথার চুলে স্পাইক করিলো।
এমন সময় দূরে ডাক শুনিলাম, জয় বাংলা -জয় বঙ্গবন্ধু বলিয়া মিছিল আগাইতেছে। এই মিছিলটা আমার ভিন্ন মনে হইলো, গলার স্বরে মনে হইলো এইটা বাচ্চাদের মিছিল। ছেলে এই বার বাকিয়া বসিল- সবাই বাহিরে মিছিল করিতেছে তুমি ফেসবুকে বসিয়া আছো। সারা দিন মোবাইল মোবাইল মোবাইল।
এই বিপদে আমি আছি, সপ্তম বর্ষীয় বালিক তাহার মাতার সুরে কথা বলে।

তারপরে বলিল, ছেলে মেয়েদের ফেলে রেখে মোবাইলেই পরে থাকো। কিচ্ছু হবেনা, তোমাকে দিয়ে।
আমি মনে মনে কইলাম, তুমিতো হইছো ?:P
কিন্ত সেইটা মুখে বলার সাহস হইলো না।
তাহার অভিমান দেখিয়া আড়মোড়া ভাঙ্গিয়া উঠিলাম।
চলো, আমি রেডি হইতেছি।

কিন্ত আমার টেনশান যায় না।
এই বিজয় দিবস, এই রাষ্ট্র, এই নেশান স্টেট- এর মানে কি ? এর ভবিষ্যৎ কি ?

আমাকে কেন একটা নেশান স্টেট কেই ভালো বাসিতে হইবে ? কেন আমি কমিউনিস্টদের মত আন্তর্জাতিক প্রলাতারিয়েত ভাই ভাই কমিউন ভাবিতে পারিবো না, বা কেন আমি সাচ্চা মুসলমানের মত ইসলামী উম্মার কথা ভাবিতে পারিব না ?
একটা নেশন স্টেটের জন্ম হইছে বলে কেন আমাকে সেই বাউন্ডারির সীমানা এবং তাহার ভেতরের মানুষকেই ভালোবাসিতে হইবে ?

এই যে রাষ্ট্র নামক সংস্থা তার থেকে আসা জাতিয়তা, সেইটা থেকে আসা জাতীয়তাবাদ সেইটা আমাকে কি দেয় ? আমার সন্তান কে কি দেয় ? কেন এই ভালবাসার বাধ্যবাধকতা।

এমন মহান বিজয় দিবসের দিনে এই রাজাকারি চিন্তা আমার নিজেকেই বিভ্রান্ত করিলো।
ছি ছি জিয়া হাসান। এমন দিনে এমন চিন্তা ? লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রান দিছে, তোমার স্বাধীনতার জন্যে আর তুমি ভাবিতেছো , নেশান স্টেট কি দরকার ? শালা রাজাকার!!

নিজেই নিজেকে গালি দিয়া সুন্দর একটা স্মৃতি স্মরনে আসিলো।
একটা চমৎকার সোশাল ফেনোমেনা আমি ফেসবুকে আমেরিকান ডায়াসপোরাদের দেখে শিখছি। সেইটা আমাকে খুব অবাক করছে। সেইটা হইল অ্যামেরিকা প্রবাসি বাংলাদেশিদের অ্যামেরিকা প্রেম খুব হাই। এদেরকে নায়েল ভাই খুব সুন্দর করে ,ডাকে ব্রাউন সাহিব। মানে শ্যামলা সাহেব। মানে, উনাদের সাহেবিয়ানা সাহেবদের থেকে কম না।

এই যে মনে করেন, রিসেন্টলি এক বাংলাদেশি ভাই- বোমা মারছে ম্যনহাটনে। উনারা সর্ব স্বরে এইটার প্রতিবাদ করছে।
এইটাও না, আমি অনেক গুলো ক্ষেত্রে দেখছি, উনারা অ্যামেরিকা রাষ্ট্রকে অউন করে। ভালোবাসে- মাত্র ৫ থেকে ১০ বছরে বা কেউ কেউ বিশ বছরে- উনাদের সলিড অ্যামেরিকার প্রতি দেশ প্রেম জাগছে। এমন কি জাতির পিতার নাত্নি ও কয়েক দিন আগে ব্রিটেনে সেই স্বীকৃতি দিছেন, যে উনি বাংলাদেশি না ঊনি ব্রিটিশ।

আমি এইটা কোন মতেই খারাপ চোখে দেখি না।

কিন্ত আমার প্রশ্ন জাগে, এই পার্থক্য কেন ? আজকে স্বাধীনতার ৪০ বছরে আমি নিজের দেশপ্রেম নিয়া কনফিউজড , নিজেকে রাজাকার রাজাকার লাগে। আর ব্রাউন সাহিবরা মাত্র ১০ বছরে অ্যামেরিকা ব্রিটেনের প্রতি অন্তপ্রান হইয়া যায়। টিউলিপ বইন কয়া বসে, উনি বাংলাদেশি না।

ক্যেন? ক্যান ? ক্যান ?

এই প্রস্নের যে উত্তর পাই, সেইটা হইলো

আমাকে এই রাষ্ট্র গুম করে, খাবার বিষ দেয়, ফ্রি স্কুল দেয় না, চিকিৎসা দেয়না, চাকুরী সুযোগ দেয়না, রাস্তায় বাহির হইলেই গন্ধ, দুর্ঘটনার, মাস্তানদের চাঁদাবাজি, আমার ভোটের অধিকার নাই, ভাত দেয় না, কিন্ত প্রতি কেজি ভাতে তার চাঁদাবাজি এবং ট্যাক্সের বখেরা নিয়া যায়, ন্যনতম সোশাল সিকিউরিট নাই এবং – আমাদের ফ্রি যে এন্টারপ্রাইজ তার পথে এই রাষ্ট্র জাস্ট একটা বাধার মত দাড়ায় আছে-তখন আমার মনে প্রশ্ন জাগতেছে এই যে নেশান স্টেট হ্যা আমারে কি দিছে যে আমি তারে ভালোবাসবো ? তারে আমার কেন ভালোবাসতেই হবে। আমি কি দাস খত দিছি নাকি?

কিন্ত আম্রিকান যে ডায়াস্পরা যাদেরকে আমি ফেসবুকে অব্জারভ করছি বা টিউলিপ বোন ঝি (জাতির পিতার নাতি মানে আমার ভাতিজি হয়) হ্যা দেখতেছে- সে সেই দেশে পদার্পণের সাথে সাথে রাষ্ট্র তার জন্যে ,তার সন্তানের জন্যে আন লিমিটেড সুযোগ তইরি করছে। তার সন্তান চাইলেই খেটে খুটে হইতে পারে একজন স্টিভ জবস বা একজন বারাক ওবামা যার মাঝ খানের নাম হাসান।

সেই রাষ্ট্রে সে পরিশ্রম করলেই, তার সন্তানের চাকুরী নিশ্চিত, সুন্দর জীবন নিশ্চিত ।

কিন্ত আমি বা আমার সন্তান ? কুত্তার মত খাটলেও সৎ ভাবে, একটা সুন্দর জীবনের গ্যারানটি আমি আমার সন্তানকে দিতে পারবোনা। কাল্কেই হয়তো আমারে লাশ হয়ে ফিরতে হবে, হয় গুম হয়ে নয় দুর্ঘটনায় নয় খাবারের বিষ ক্রিয়ায়।

এই দেশ এমন একটা দেশে পরিনত হয়েছে এবং মাস্তান তন্ত্র , গুন্ডা তন্ত্র মাফিয়া তন্ত্র এমন ভাবে জেকে ধরছে এই দেশে যে রাজনৈতিক নেতা তার প্রতিটা লুটের সুযোগে লুট করছে, প্রতিটা রাস্তায় হকারদের কাছ থেকে চাদা নিছে, রাস্তা পাহাড় জমি দখল করছে , দেশের গুরুত্তপুরন স্থাপনায় তার নিজের গোষ্ঠীতন্ত্র এবং আঞ্ছলিকতাবাদ স্থাপন করে দেশের প্রগতি ঠেকায় রাখছে- তাকে নিয়া বড় ভালো লোক ছিলের মারসিয়া গিতি হয়।

এই খানে এক শহর থেকে আরেক শহরে গুড নিয়ে যেতে ৩০ জায়গায় চাদা দিতে হয়- যার ফলে, ৪ টাকার সব্জির দাম হয় ৪০ টাকা। এই রাষ্ট্রের ভ্যালুসিস্টেমের সম্পূর্ণ পতন ঘটেছে এবং এই রাষ্ট্রে আমি প্রতি মুহূর্ত ইন্সিকিউর এবং রাজনৈতিক প্রিভিলেজড পাণ্ডা বাদে সবাই চেষ্টা করতেছে -বের হয়ে বিদেশে মাইগ্রেট করতে।

এইটাই ব্রাউন সাহিবদের সাথে আমার পার্থক্য।

হ্যারা পাইছে পাইতেছে, যার নুন পাইতেছে- তার গুন গাইতেছে- সিম্পল গিভ এন টেক। কিন্ত আমি পাইতেছি না- তাই আমার এখন নেশান স্টেট নিয়া সন্ধ জাগে। ফেয়ার ডিল। বোথ সাইডেই।

গতকাল রাতেও ছোট কালের দোস্ত আসছিল। সে এখন ইউ এনে বড় পোস্টে আছে। তার পোস্টিং এখন আফ্রিকাতে। বললো দোস্ত, প্রতিবার দেশে আসি মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। রাস্তায় বের হইলেই এতো অনিয়ম, এতো দুর্গন্ধ, এতো জ্যাম, বর্ষা কালে একটু বৃষ্টিতেই পানি, কোন সিভিক সার্ভিস নাই – দোস্ত আমি আফ্রিকাতেও এই অবস্থা দেখি নাই। ওই খানে যেই গুলোতে যুদ্ধ চলতেছে সেই গুলো বাদে বাকি প্রতিটা দেশ আমাদের থেকে ভালো।
আমি দেশে ফিরে আসার কথা চিন্তাও করতে পারিনা। তার মধ্যেও দেখলাম, চেতনা কম।

তাইলে প্রবলেম না যে আমি রাজাকার। এবং প্রবলেম নেশান স্টেটের কন্সেপ্টেরও না। কিন নেশান স্টেটে আমরা গড়লাম, প্রবলেম তার। তারা ভালো নেশান স্টেট গড়ছে বলে আনুগত্য পাইতেছে, আমরাই গড়ি নাই বলে আমার মাথায় এবং আমার বন্ধুর মাথায় এই ধরনের রাষ্ট্র বিরোধী রাজাকারি চিন্তা আসতেছে।

তার কথায় চিন্তা কৈরা দেখলাম, একটা জিনিষ আমরা বুঝতে ভুল করতেছি সেইটা হইলো – আমরা নেশান হইছে, কিন্ত স্টেট হইনাই।

নেশান আর স্টেট এক জিনিষ না। নেশান স্টেট হইতে হইলে, অনেক গুলো প্রতিষ্ঠান ,নিয়ম আর সিস্টেম থাকতে হয়। আমাদের এই গুলা মিসিং।
আজকে তাই, একটা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমারা একটা নেশান পাইছি বটে ভালো। কিন্ত আমরা স্টেট পাই নাই।

তাইলে এই নেশানের যে চেতনা, মানে মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা- সেইটা একটা ইঙ্কমপ্লিট চেতনা। এই চেতনা একটা কমিউনিটিকে ইমেজিন করছে। দেশ হইছে, নেশান হইছে।
কিন্ত এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা স্টেটটাকে ইমেজিন করতে পারে নাই।

তাই, এখন একটা নতুন ইমেজিনেশান করতে হবে, একটা স্টেটের- যে ইমেজিনেশান এই স্টেটে কমিউনিটি কিভাবে থাকবে তার ধারনা দিবে। এবং যে স্টেট থেকে সবাইকে অ্যামেরিকা কানাডায় পালাইতে হবেনা। যাকে নিয়ে দেশবাসি গর্বিত হইতে পারবে এবং ওউন করতে পারবে।

জাস্ট নেশানের নামে ইমেজিন্ড কমিউনিটি এনাফ না।
এখন একটা ইমেজিন্ড স্টেট লাগবে।

আমরা এখনো এই স্টেটটা ইমাজিন করতে পারি নাই। এই স্টেটের করি বর্গা কেম্ন হবে, প্রতিষ্ঠান গুলো কেমন হবে , শাশন তান্ত্রিক কাঠামো কেমন হবে, মানুষের কি রাইটস থাকবে সেই গুলো আমরা এখনো ইমেজিন করতে পারি নাই । ছাড়া ছাড়া ভাবে করছি কিন্ত নেশানের ভেতরে যে কমিউনিটি তাদের মধ্যে এই ইমেজিনেশান নিয়ে কোন
মিনিমাম কন্সেন্সাস তৈরি হয় নাই।

এবং এই নেশান স্টেট পাইতে হইলে আমাদের বোধ হয় আর একটা যুদ্ধ করতে হবে। যে যুদ্ধে আমরা সেই ইমাজিন্ড স্টেটটা তৈরি করবো। সে যুদ্ধটা এখনো হয় নাই।

সেই যুদ্ধটা হইলেই শুধু মাত্র বাংলাদেশ নামের এই রাষ্ট্র নেশানস্টেট হইয়া উঠতে পারবে।

চিন্তা কৈরা ভালো লাগলো যে, আমার চেতনা কম না। বা আমার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নাই, সেইটা না।
আমি মনে করি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা একটা ইঙ্কমপ্লিট চেতনা যেইটা শুধু মাত্র নেশানকে ইমাজিন করছে, নেশান স্টেটকে ইমাজিন করে নাই।

আমি তাই, সেই চেতনাটা খুজে পেতে চাই, যেইটা নেশান স্টেটকে ইমাজিন করবে- যেই রাষ্ট্রে আমার আপনার সবার সন্তানের জন্যে সুযোগ আছে, ফেয়ার ডিল আছে, লেভেল প্লেইইং ফিল্ড আছে এবং সেই গুলো একজেকিউট করার জন্যে সঠিক প্রতিষ্ঠান আছে।

চিন্তা কৈরা ভালো লাগলো যে আমি রাজাকার না। আমার মনে জাস্ট যুদ্ধটা এখনো শেষ হয়নাই।

ইন্দোপাক ওয়ার মে ঃ হ্যাপি ভিজেয় দেভাস।

মন্তব্য ফেবুতে করতে পারেন।

জিয়া হাসান

About জিয়া হাসান

লেখক: প্রাবন্ধিক। প্রকাশিত গ্রন্থ : শাহবাগ থেকে হেফাজত: রাজসাক্ষীর জবানবন্দি -

Comments are closed.