ইসলাম অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র হতে চায় যুক্তরাজ্য।

পুঁজিবাদী শোষণের হাতিয়ার সুদ ভিত্তিক বিশ্ব অর্থব্যবস্থা থেকে মুক্তি পেতে  ইসলামী শরিয়াহ সম্মত অর্থব্যবস্থার বিকল্প নাই। শুভ সংবাদ হল বিশ্বের কায়েমী স্বার্থবদী মহলের অপপ্রচার ও বাধা বিপত্তির মাঝেও ইসলামী ব্যাংকিং আজ এগিয়ে চলছে। বিশ্বে বর্তমানে ইসলামী পুঁজির পরিমাণ ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার। তবে প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের চেয়ে দ্রুতহারে বাড়ছে ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থা। ইসলামি অর্থনীতিতে সুদ নিষিদ্ধ। প্রকৃত সম্পদের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয় ইসলামি পুঁজি। বহুজাতিক পেশাদারীত্ব সেবা প্রতিষ্ঠান, বিখ্যাত কোম্পানি  আর্নেস্ট অ্যান্ড ইয়ং এর তথ্য অনুযায়ী ২০১৪ সালে ইসলামী ব্যংকিং ২ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর পূর্বাভাস দিচ্ছে।

শরিয়াহ সম্মত ভাবে অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য ২০০৬ সালে মালয়েশিয়ায় ওয়াইআইইএফ প্রতিষ্ঠিত হয়।  ব্রিটেন বিশ্বের প্রথম অমুসলিম রাষ্ট্র যেখানে ওয়াইআইইএফের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ব্রিটিশ সিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধিকারী প্রিন্স চার্লস সম্মেলনে আগত অতিথিদের জন্য এক আড়ম্বরপূর্ণ নৈশভোজের আয়োজন করেন। বিশ্বের প্রথম অমুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাজ্য শরিয়াহ সম্মত সরকারি বন্ড ‘শুকুক’ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।  ইসলাম অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র হতে চায় যুক্তরাজ্য। দেশটির আশা এর মাধ্যমে তার দ্রুত বিকাশমান ইসলামী পুঁজির কেন্দ্রবিন্দু পরিণত হতে পারবে। খবর আল জাজিরা’র।

 লন্ডনে আয়োজিত বিশ্ব ইসলামী অর্থনৈতিক ফোরামের (ওয়াইআইইএফ) বার্ষিক সভায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এই আকাঙ্খার কথা প্রকাশ করেন। ওয়াইআইইএফ সম্মেলনে মুসলিম বিশ্বের রাজনৈতিক নেতা, প্রধান নির্বাহী ও প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

সভায় ক্যামেরন বলেন, ‘মুসলিম বিশ্বের বাইরে লন্ডন ইতোমধ্যেই ইসলামি পুঁজির বৃহত্তম কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আজ আমাদের লক্ষ্য আরো এগিয়ে যাওয়া। আমি চাই- বিশ্বের অন্যান্য শহরকে ছাড়িয়ে দুবাই ও কুয়ালালামপুরের মতই লন্ডনকে বিশ্বের ইসলামি পুঁজির মহান রাজধানীতে পরিণত করতে।’ লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে চলতি সপ্তাহেই চালু হচ্ছে ইসলামিক মার্কেট ইন-ডেস্ক।

অর্থনীতি পর্যবেক্ষকদের মতে মুসলিম বিশ্বের বেশ কিছু দেশে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে একটি ভোক্তা বান্ধব ব্যাংকিং সিস্টেম (consumer-friendly banking system) প্রচলনে প্রাধান্য দিয়ে বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক সঙ্কটের কঠোর প্রভাব এড়ানো সম্ভব হয়েছে। বস্তুত এ সব দেশের  বিগত  ৮0 বছরের তাদের অর্থনীতির নিম্নমুখী খারাপ অবস্থা থেকে  উত্তরণের জন্য ইসলামী ব্যাংকিং বিরাট ভূমিকা রেখেছে। অনেক অর্থনীতিবিদ পণ্ডিতদের অভিমত, ইসলামী অর্থব্যবস্থা তার বলিষ্ঠতা প্রমাণিত করে যে সমস্ত বিশ্বের স্বীকৃতি লাভের মাধ্যমে এটি একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের  সূচনা করবে।

মালয়েশিয়া, ইসলামী অর্থব্যবস্থা ইতিমধ্যে মোট ব্যাংকিং খাতে ২০ শতাংশ, প্রাথমিক ঋণ মূলধন বাজারের ৭০-৮০ শতাংশ, মোট বকেয়া কর্পোরেট বন্ড ৬0 শতাংশ বেশি, তালিকাভুক্ত স্টক ৮৮ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ হচ্ছে সম্পদ ব্যবস্থাপনা শিল্পে। “এই বাজারে শেয়ার আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আরও বৃদ্ধি করার জন্য প্রত্যাশা করা হচ্ছে” বলেছেন, বদীসাহ আব্দুল গনি,  ইসলামী ব্যাংক বেরহাদ এর  সিইও।

ইসলামী ব্যাংক কেবল বাণিজ্যিক ও খুচরা ব্যাংকিং মধ্যে  সীমাবদ্ধ নয় । “S & P” ইনডেক্স  অনুযায়ী ইসলামী ব্যাংক এখন শরিয়া-অনুবর্তী তহবিল পরিচালনার মাধ্যমে সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রসারিত হয়েছে. শীর্ষ পাঁচশত ইসলামী ব্যাংকের সম্পদের  পরিমাণ ২০০৮ সালের  ৬৩৯ বিলিয়ন ডলারের তুলনায়  ২০০৯ সালে ২৮.৬ শতাংশ বৃদ্ধি হয়ে ৮২২ বিলিয়ন ডলারে পৌছায়।

বৃহত্তম ইসলামী ব্যাংকের বাজার সৌদি আরব দ্বারা পরিচালিত হয়। তবে মধ্যপ্রাচ্যের পরে, মালয়েশিয়া তার প্রতিষ্ঠান ও দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ইসলামী ব্যাংকিং সিস্টেমে নেতৃস্থানীয় জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। মালয়েশিয়া এশিয়ার ইসলামী আর্থিক বজারের কেন্দ্রস্থল হিসাবে স্বীকৃত।

২০০৯ সালে মালয়েশিয়ার ইসলামী ব্যাংকিং সম্পদের পরিমাণ ছিল  ৩৫.২ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশেও ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা শত বাধা বিপত্তির মাঝে এগিয়ে চলছে যেমন বাংলাদেশ ইসলামী ব্যংক । তবে বামপন্থি, সেকুলার ও পৌত্তলিকতার অনুসারীরা ইসলামী ব্যাংকের ভীষণ বিরোধী। এই মহলের পরিচালিত শাহবাগের “গণজাগরণের”মঞ্চের অনেকে ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে দেখা যায়।

ইসলামী ব্যাংকিং প্রচলিত ব্যাংকের মতই কার্যক্রম পরিচালিত করে তবে তফাৎ হল ইসলামী ব্যাংকে সুদকে পরিহার করা হয়। আল্লাহ সুদকে হারাম করেছেন আর ব্যবসাকে করেছন হলাল। ইসলামী ব্যঙ্কের কথা বলতে অনেকে মনে করেন ইসলামী ব্যাংক মানে হতে হবে খয়রাতি ব্যাংক অর্থাৎ এ সব ব্যাংক ব্যবসা করে লাভ করতে যাবে কেন? কিন্তু ব্যবসা করতে গেলে লাভ করা কি হারাম?  এ কথা বলা যেতে পারে যে বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকগুলার সেবার মান ও ব্যবস্থাপনা হয়তবা সন্তোষজনক বা ক্রেতা-বান্ধব না। তবে যে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিদ্বন্দ্বী একাধিক  প্রতিষ্ঠানের জন্ম নিলে অধিক ক্রেতা ভিড়াবার তাগিদে সেবার মান বাড়াতে ও মূল্য কমাতে বাধ্য হয়। আশা করা যায় বাংলাদেশে ইসলামপন্তি কোন সরকার ক্ষমতায় আসলে এ সমস্যার সমাধান হবে।

[youtube=http://www.youtube.com/watch?v=gs_JsuGN74Y]

ইসলামী ব্যাংকের নামে মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে নিয়ে যাতে কেউ অপব্যবহার করতে না পারে সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

[youtube=http://www.youtube.com/watch?v=fToAyVUbRFA]

[youtube=http://www.youtube.com/watch?v=vnV7EBrKGfY]

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *