শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের অগ্রগতি শুরু হয় সেই ১৯৭১ সালে থেকে। আমার বি.কম. শেষ বর্ষের টেস্ট পরীক্ষার প্রথম দিন ছিল ১৯৭১ সনের ২৫ মার্চ। ইয়াহিয়া খানের ঘোষণা শুনে পরীক্ষা স্থগিত করে পরীক্ষার হল থেকে আমরা রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি। আর এখান থেকেই শুরু আমাদের মুক্তি যুদ্ধের শুভ যাত্রার শুভ উদ্বোধন। আমি তখন আমাদের কলেজ ছাত্র সংসদের ছাত্রলীগ থেকে মনোনীত নির্বাচিত সদস্য। আমাদের সময় বি.কম. (পাস) ছিল দুবছরের কোর্স। আমরা টেস্ট পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছিলাম দু’বছরের পুরো কোর্স শেষ করার পর। কিন্তু শুধু মুক্তি যুদ্ধের জন্য যুদ্ধের আগে আমাদের পক্ষে ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়নি। পরীক্ষা হয়েছিল যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ১৯৭২ সনের শুরুর দিকে। শেখ মুজিবুর রহমান তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। আর দেশের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল আওয়ামীলীগ প্রশাসন। যতদূর মনে পড়ে অধ্যাপক ইউসুফ আলী ছিলেন এই প্রশাসনের শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে। কার্যত আমরা ছিলাম সদ্যপ্রসূত বাংলাদেশের প্রথম পরীক্ষার প্রথম ব্যাচ। দীর্ঘ সংগ্রাম আর নয় মাসের যুদ্ধ শেষে আমরা পরীক্ষার টেবিলে বসেছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করলো আমাদেরকে কিছু ছাড় দেওয়া উচিত। ঘোষণা দেওয়া হল যে, সংক্ষিপ্ত শিক্ষা-সূচী অনুযায়ী আমাদের পরীক্ষা হবে। এই শিক্ষা-সূচী অনুযায়ী প্রথমত: পাঠ্যসূচী থেকে ৫০% বাদ দেওয়া হলও। দ্বিতীয়ত: প্রতি বিষয়ে পূর্ণ নাম্বার ১০০ (একশত) এর স্থলে প্রতি বিষয়ে পূর্ণ নাম্বার করা হল ৫০ (পঞ্চাশ)। অধিকন্তু পূর্বের পাঠ্যসূচী অনুযায়ী একাউন্টিং, অর্থনীতি, ও বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন এর প্রতি বিষয়ে তিনশত করে ন্যস্ত নাম্বার ছাড়াও অতিরিক্ত একটি বিষয় পড়তে হতো ১,০০০ (একহাজার) নাম্বার পুরো করার জন্য)। নূতন শিক্ষা-সূচী অনুযায়ী এই অতিরিক্ত বিষয়টিও বাদ দেওয়া হলও। অর্থাৎ আমাদেরকে পরীক্ষা দিতে হলও ৪৫০ (চারশত পঞ্চাশ) নাম্বারের। মাত্র ৪৫০ (চারশত পঞ্চাশ) নাম্বারের পরীক্ষা আমরা বি.কম. পাশ করেছি। দুনিয়ার সব দেশে তখন ব্যাচেলর ডিগ্রি ছিল চার বছরের। আর আমাদের ছিল দু’বছরের কোর্স। সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপশন অনুযায়ী আমাদের ব্যাচেলর ডিগ্রী কোর্সের শিক্ষা সময় হল এক বছরের চেয়েও কম। বলতে পারেন বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রী লাভের জন্য এই সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট কি কাজে লাগতে পারে? কিন্তু বিপদের এখানেই শেষ নয়। পরীক্ষার হলে সবাইকে বই দেখে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হলও এবং এটা নাকি করা হয়েছিল স্বাধীনতা যুদ্ধে ছাত্রদের অবদানের জন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ। কিন্তু তাতে সত্যিকার অর্থে লাভবান হয়েছিল কারা?
আমরা বি.কম. ক্লাসে ৬১ জন ছাত্র ছিলাম। তখন পাকিস্তান আমল। একদিন আমাদের একাউন্টিং এর অধ্যাপক রণজিৎ ঘোষ ক্লাসে বলেছিলেন যে এই ক্লাসে মাত্র তিনজন ছাত্র সেকেন্ড ডিভিশন পাবে। (তখন ফার্স্ট ডিভিশন এখনকার মতো মায়ের হাতের মোয়া ছিলনা)। এর মধ্যে তিনি শুধু আমার নাম প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু পরীক্ষার পর দেখা গেল একষট্টি জনের মধ্যে সবাই সেকেন্ড ডিভিশন পেয়েছে। তাই একদিন তিনি আমাকে ডেকে বললেন, “আমিতো বলেছিলাম তুমি তিন জনের একজন হবে; এখন হয়েছ একষট্টি জনের একজন। এটাই এখন তোমার স্ট্যান্ডার্ড।” রণজিৎ স্যারের এই স্ট্যান্ডার্ডের সত্যতা বুঝতে আমার বেশী সময় লাগেনি। যারা পাশ করার কথা ছিলনা কিন্তু এখন সার্টিফিকেট আছে, মামার জোরে তাদের অনেকেই ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে পেরেছিল; কিন্তু আমি পারিনি। চাকুরী পাওয়ার জন্যও শেষ পর্যন্ত আমাকে একজন মামা খুঁজে বের করতে হয়েছে। আইসিএমএ তে তখন ভর্তির জন্য নিম্নতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল ইন্টারমিডিয়েট। এজন্যই হয়তো আইসিএমএ টা পাশ করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু বিদেশে এসে প্রিরিকুইজিট সাবজেক্ট এর যন্ত্রণায় আর কোন ডিগ্রী নেওয়া সম্ভব হয়নি।
স্বাধীনতার শুরুতে পরীক্ষার্থীদের অবাধ নকল করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। এতে পাশের হার অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছিল বটে কিন্তু দুর্মুখদের মুখ বন্ধ করা যায়নি। ফলে দুর্মুখদের মুখ যেন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এজন্য পরীক্ষার্থীদের সাথে পরীক্ষকদেরকেও নকলের সাথে যুক্ত করে দেওয়া হলও। এতে দুর্মুখদের মুখের ধার কিছুটা কমলেও সমালোচনার ধার পুরোপুরি কমানো যায় নি। হয়তো এই বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্যই বর্তমানে শিক্ষাবোর্ড ও শিক্ষামন্ত্রনালয় একাকার করে দেওয়া হলও পাশের মহোৎসব তৈরি করার জন্য। ফলশ্রুতিতে ১৯৭২ ১৯৭৩ সালের মতো এখনো ঘোড়া গাধা একাকার করে দিয়ে তৈরি করা হলও হাজারে হাজার গোল্ডেন ফাইভ প্রডাকশনের ফ্যাক্টরি। আর ঘোড়দের সাথে অনেক গাধাকে উচ্চতর ডিগ্রি দিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। বলতে পারেন ইউনিভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে ২% ৫% পাশ করলেও কোন ডিপার্টমেন্টে কি প্রয়োজনীয় সংখ্যক ছাত্রের এডিশন দেওয়া বন্ধ থাকে? যদি এডিশন দেওয়া হয়ে থাকে তাহলে কারা সেই সৌভাগ্যবান যারা ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে? সম্ভবত: গত বছর খবরের কাগজে দেখলাম প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে ১৫ জন ছাত্রের মধ্যে ১৪ জন ছাত্র ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে। (নয়াদিগন্ত ২২/৫/২০১২)। সাধারণ নিয়মে এটা অবিশ্বাস্য ফলাফল। কিন্তু দেশের অতীত ও বর্তমান শিক্ষানীতি অনুযায়ী এটাই স্বাভাবিক। এবং শুরু থেকে বরাবরই এমনটা স্বাভাবিক ছিল বাংলাদেশের শিক্ষানীতি। মাঝে মধ্যে বিভিন্ন সরকারের আমলে এই স্বাভাবিকতার কিছুটা ছন্দপতন হয়েছিল বৈকি কিন্তু আওয়ামী লীগ আমল গুলোতে এর ব্যত্যয় ঘটতে দেখা যায়নি। শুরুতে মনে করেছিলাম, রাস্তায় স্লোগান দিয়ে যারা মন্ত্রী হয় তাদের মতো এমন অপদার্থ নীতি নির্ধারকের হাতে পড়েই হয়তো এমনটা হয়েছে। বিশেষ করে বাহাত্তর সালের পরীক্ষা পদ্ধতি সম্বন্ধে আমার একটা ধারনা ছিল যে এটা কোন শিক্ষা বিশেষজ্ঞ অপদার্থের কাজ না হয়ে পারে না। কিন্তু আওয়ামী শাসন আমলের সকল শিক্ষামন্ত্রীরাই যে অপদার্থ ছিল তা কি করে হয়? আসলে যারা মন্ত্রী হয় তারা কখনো অপদার্থ হতে পারে না। এরা হয়তো ভাল পদার্থ হয় না হয় খারাপ পদার্থ হয় কিন্তু কখনো অপদার্থ হয় না। যে শিক্ষানীতি আমাদেরকে প্রায় একশত ভাগ পাশের নিশ্চয়তা দিয়েছে তা কোন অপদার্থ মন্ত্রীর কাজ ছিলনা। মোগল, ব্রিটিশ, রাজারাজড়া, আর জমিদার জোদ্দাররা আমাদের দেশে স্কুল কলেজ তৈরি করেনি। বর্তমান কালেও অনেক চ্যায়ানম্যান এমপি আছেন তারা চাননা যে তাদের এলাকায় স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হোক। কারণ লেখাপড়া করলে মানুষের বুদ্ধির বিকাশ ঘটে; মানুষ ভালমন্দ বুঝতে শিখে; বুঝতে পারে অতি বুদ্ধিমান মতলববাজদের কুট-কৌশল আর চুরি-জোচ্চুরির কথা। কিন্তু যেহেতু স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা বন্ধ করে রাখার সুযোগ এখন আর নেই; তাই এমন ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন হলও যাতে লেখাপড়া শিখেও মানুষ শিক্ষিত না হতে পারে। শয়তান বিভ্রান্ত করার জন্য মানুষের ওপর বল প্রয়োগ করে না। যে মানুষ যে কাজ করতে বেশী পছন্দ করে তার প্রেক্ষিত (Perspective) দ্বারাই শয়তান মানুষকে বিভ্রান্ত করে থাকে। কেহ কোর’আন তেলাওয়াত করতে ভালবাসলে তাকে এর মধ্যে এমন মশগুল করে দেওয়া যেন সে ঠিক সময় নামাজ পড়তে ভুলে যায়। আওয়ামী লীগ সরকারের লক্ষ্য রাজা রাজড়াদের মতো একদলীয় শাসন। একদলীয় শাসন চালাতে হলে প্রজাতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ সকল স্থানে মনের মতো মানুষ থাকতে হয়। যাদের পদ থাকবে পদবী থাকবে কিন্তু পদাধিকারের যোগ্যতা থাকবে না। কিন্তু একাজটি রাজতন্ত্রের ক্ষেত্রে সহজ হলেও প্রজাতন্ত্রের ক্ষেত্রে কঠিন কাজ। আর এই কঠিন কাজটি সহজ করার সহজ উপায় হলও অপদার্থদেরকে পদার্থ বলে চালিয়ে দিয়ে পদার্থকে অপদার্থ বানিয়ে দেওয়া। কিন্তু চোখ খোলা রেখে আর কয়জন লোক দিয়ে কালোকে সাদা আর সাদাকে কালো বলানো যায়? এজন্য চোখে ঠুলি পরাতে হয়। আর চোখে ঠুলি পরাতে পরালে অসত্যকেও সত্য বলে চালিয়ে দেওয়া যায়। পরীক্ষায় গণহারে পাশ আমাদের জন্য এরকম একটি বড় ঠুলি। অপদার্থের যদি পদার্থের সমান কোয়ালিফিকেশন থাকে তাহলে কে বলবে যে অপদার্থকে পদায়ন করা হয়েছে। আসলে আমাদের শিক্ষানীতি কোন অপদার্থের মস্তিষ্ক থেকে বের হয়নি। এটা অপদার্থদেরকে পদার্থ বানিয়ে পদার্থকে অপদার্থের তাবেদার করে দিয়ে তাবেদার প্রশাসন গড়ে তোলার একটি কূটকৌশল। আর এই কৌশলকে ষোল কলা পূর্ণ করে একে আরো অধিক টেকসই করার জন্য এখন পঞ্চম শ্রেণী থেকে সার্টিফিকেট পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বলুন-দেখি, পঞ্চম শ্রেণীর পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, অবাধ টোকাটুকির সুবিধা, এসব কিসের আলামত? এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকেই ভালমন্দ সমান করা হচ্ছে এবং কোমল মতি শিশুদের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে অপরাধ প্রবণতার বিষাক্ত বিষ। কারণ অপদার্থতার দেওয়া গেলেই তৈরি করা সম্ভব হয় একটি সেবাদাস আজ্ঞাবহ প্রশাসন।
কিন্তু পদার্থকে আস্তাকুঁড়ে ঠেলে দিয়ে অপদার্থকে পদার্থ বানানোর প্রক্রিয়া এখানেই শেষ নয়। গত অনেক বছর থেকে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে সংসদ ইলেকশন হচ্ছেনা। ফলে গুণী ও মেধাবী ছাত্রদের পক্ষে প্রমাণ করা সম্ভব হচ্ছেনা যে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে রাজনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেও তারা সমান তালে বিচরণ করার ক্ষমতা রাখে। কলেজ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে আমি কি একটা নেতৃস্থানীয় জায়গা থেকে গলা উঁচু করে এতগুলো কথা বলতে পারতাম? ছাত্র রাজনীতি এখন ছাত্রদের হাতে নেই। ছাত্র রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব এখন দলীয় মাস্তানদের হাতে। এরা ছাত্রদের সুবিধা অসুবিধা না দেখে দলীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করে থাকে। আর দল এদেরকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে থাকে ছাত্রদেরকে দিয়ে দলের জন্য মাস্তানি করার কাজে। বর্তমানে ছাত্রদেরকে ভর্তি হওয়ার জন্য মাস্তানদের অনুগ্রহ পেতে হয়। হলে সিট পেতে হলে মাস্তানদের পিছনে হাটতে হয়। এমন কি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য পরীক্ষার হলে যেতে পারা না পারা ও ভাল রেজাল্ট করা না করার নিশ্চয়তা পাওয়ার জন্যও ছাত্রদেরকে সবসময় থাকতে হয় মাস্তানদের নেক নজরে। এভাবে মাস্তান নেতদেরকে সম্মান দিতে গিয়ে সাধারণ ছাত্রদের মতো ভাল ছাত্ররাও বুঝে ওঠার আগেই একদিন মানসিক কৃতদাস হয়ে যায় মাস্তান নেতৃত্বের হাতে। এটা পদার্থকে অপদার্থ বানিয়ে অপদার্থকে পদার্থ বানানোর দ্বিতীয় প্রক্রিয়া। কিন্তু আমাদের সময় এমনটা ছিলনা। তখন দল ছাত্রদের পিছনে হাট-তো, ছাত্ররা দলের পিছনে হাট-তো না। ফলে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন ছাত্র যদি কারো হাতে অপদস্থ হতো, সাথে সাথে প্রতিকার না পাওয়া পর্যন্ত সারা দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতো। অথচ সেদিন দেখলাম, এক নার্সিং স্কুলের ছাত্রীদেরকে পুলিশ সর্ব সম্মুখে রাস্তায় ফেলে যে অত্যাচার করলো এর জন্য দেশের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কোন প্রতিবাদ উঠতে দেখা গেলনা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে সংসদ নির্বাচন হলে ছাত্ররাজনীতির এমন করুন অবস্থা হতো না। তখন ছাত্রদের রাজনীতি ছাত্রদের হাতে থাকতো এবং মেধাবী ছাত্ররা জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশের সুযোগ পেতো ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে।
এবার বলা যাক ছাত্রদের কর্মজীবনের কথা। আগে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মধ্যদিয়ে ভাল ছাত্রদের সম্মান জনক কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ ছিল। বর্তমানে তার পুরোটাই রাজনীতিকরন হয়ে গেছে। দেশে রাজনীতির আনাস-কানাসের মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলোও এখন চলে গেছে মতলববাজদের দখলে। আর এই কাজটা সর্বসাধারণের জন্য সহজলভ্য করে দেওয়া হয়েছে ভাল ছাত্রদের মতো সকল ছাত্রকে ভাল ছাত্র বানিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে। আগেই বলেছি আগেকারদিনে লেখাপড়ার সুযোগ দেওয়া হতো না। কিন্তু এখন সুযোগ বন্ধ করার সুযোগ নেই। তাই বুদ্ধি করে এই সুযোগের সুযোগ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। দেশে এখন আর তাই কোন খারাপ ছাত্র নেই। বলতে পারেন, ভাল-খারাপ সকল ছাত্রেরই যদি ফার্স্টক্লাস সার্টিফিকেট থাকে তাহলে কারো কি বলার উপায় থাকে যে খারাপকে ভাল চাকুরী দেওয়া হয়েছে? ভাল ছাত্রদেরকে পদদলিত করার প্রক্রিয়া কিন্তু এখানেই শেষ নয়। বর্তমানে চাকুরী পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় গ্রাম পর্যায়ের প্রতিনিধিত্বকারীদের মাধ্যমে। আর রাজনৈতিক দলগুলোর সকল স্তরের প্রায় সকল নেতানেত্রীর মতো গ্রাম বা ওয়ার্ড পর্যায়ের প্রায় সকল নেতা নেত্রীরাই অর্ধশিক্তি অশিক্ষিত অসৎ ও দুর্নীতি পরায়ণ। আপনি হয়তো ভাল ছাত্র লেখাপড়া করে ফাস্ট ডিভিশন পেয়েছেন; কিন্তু তাতে কি হয়েছে? গ্রাম বা ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের রিকমান্ডেশন না ফেলে আপনার চাকুরীর দরখাস্ত সামনে এগুবে না। তাই আপনাকে বাধ্য হয়ে সেকান্দর, কাসু, হাসুদের ছেলের কাছে যেতে হবে। তাদেরকে সালাম দিতে হবে, হাতজোড় করে মিনতি করতে হবে, আনুগত্যের প্রতিশ্র“তি দিতে হবে; সর্বোপরি ভিটেমাটি বিক্রয় বা বন্ধক দিতে হবে যে দস্তখত করতে জানেনা তার দস্তখতের মূল্য দেওয়ার জন্য। এতে আপনাকে যে শুধু মানসিক ভাবে গ্রাঊন্ডেড হলও তা’ই নয়, আর্থিক ভাবেও আপনাকে আটকিয়ে দেওয়া হলও অভাব অনটন আর অনৈতিকতার অন্ধকারে।