বাংলাদেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থার উপযোগিতা

একটা তত্ত্বকে ঘিরে বাংলাদেশে রাজনীতি মাঠ উত্তপ্ত এবং আলোচিত-তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পুনর্বহাল।তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায়ে দুই জোটের পরস্পর বিরোধী অবস্থান কাঁপাচ্ছে অনেকে তথা কাঁপছে পুরো বাংলাদেশ।নতুন নতুন বাক্য বিশ্লেষণ হাজির হচ্ছে প্রতিদিন।রাজনৈতিক হুমক্‌ ধুমকি,অস্থিরতা, সংঘাতের যাঁতাকলে পিষ্ট বাংলাদেশ।উল্লেখ্য ৩০ জুন ২০১১ তারিখে সংবিধান পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যবস্থাটিকে সংবিধান থেকে বিয়োজন করা হয়।তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বাতিল বিষয়ে উচ্চ আদালতের রায়কে সামনে তুলে আনা হয়েছিল।যদিও উচ্চ আদালত রায়ে আরও দুইটি মেয়াদ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা যাবে বলে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল।লক্ষণীয় বিষয় যে,উচ্চ আদালতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বাতিল সংক্রান্ত শুনানি চলাকালে এমিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) বেশীর ভাগই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থানটি বহাল রাখার সপক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছিলেন।এখন প্রশ্ন-তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় বাতিলে কি জনগণের মতামত প্রতিফলতি হয়েছে?কিংবা নির্বাচনের জন্য আস্থাশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে কি?অনিবার্য পরিণতি হিসেবে তত্ত্বাবধায়কে সরকার ব্যবস্থাকে বাতিলে কারাগারে নিক্ষেপ করা বাংলাদেশের গণতন্ত্র জন্য অনুকূল নয় বৈকি বরং,সেটা বাংলাদেশের শিশু গণতন্ত্রের ভিতকে যে দুর্বল করবে,তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

 

গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা জনআকাঙ্গার প্রতিফলন সরকার গঠনের জন্য যেমন জরুরী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা,আস্থা,বিশ্বাস।তেমনি জরুরী সুষ্ঠু,অবাধ ও নিরেপক্ষ নির্বাচন কমিশন,জনপ্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।কিন্তু বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনে, জনপ্রশাসনে,এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে এসব উপাধানের বড়ই অভাব।ক্রমবর্ধমান দলীয়করণ জন্য পেশাদারিত্ব হীন,নীতি-হীন,দুর্নীতিবাজ,এবং দলই অনুগত কর্মকর্তা,-কর্মচারী দল সৃষ্টি হয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানে।এমন অবস্থায়ে কতটুকু সুষ্ঠু,অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেটা এখন বিবেচ্য বিষয়।সুষ্ট,অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অপরিহার্যতা অতিসম্প্রতি প্রথম আলোর উদ্যোগে পেশাদার জরিপ পরিচালনাকারী সংস্থা ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড পরিচালিত সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে।জরিপে দেখা গেছে, দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ নির্দলীয় অথবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন চায়। এই দাবির পক্ষে মানুষের সংখ্যা এখন ৯০ শতাংশ। ২০১১ ও ২০১২ সালের জনমত জরিপেও মানুষের এ আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আগের জরিপের প্রায় অর্থবছরের ব্যবধানে এর পক্ষে যথেষ্ট হারে জনমত বেড়েছে।প্রথম আলো।আবার, অনেকে ধারনা যে,তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাংলাদেশে প্রচলিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সাথে সাংঘসিক।যেখান,গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং সংস্থা বিদ্যামান সেখানে,অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক হুমকি মুখে ফেলে দেবে।আসলে কি তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ব্যবস্থা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক হুমকি স্বরূপ কিংবা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক কাঠামো অবাধ, সুষ্ঠ এবং নিরেপক্ষে নির্বাচন আয়োজনের জন্য সক্ষমতা অর্জন করেছে?এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর খোঁজা চেষ্টা করবো আমরা বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থার কাঠামো দিকে লক্ষ্য রেখে। 

 

 কেনও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যেখানে নির্বাচন কমিশন?

 গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচন কমিশনকে রাষ্ট্রের চতুর্থ এবং সাংবিধানিক সংস্থা হিসেবে বিবেচিত করা হয়। বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনতা এবং ক্ষমতা সংবিধান থেকে উদ্ভূত।বাংলাদেশের সংবিধান সেই একই সুর পরিলক্ষিত হয়।

১. নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন এবং কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হইবেন।[অনুচ্ছেদ-১১৮(৪)]

২.সংসদ কর্তৃক প্রণীত যে কোন আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে নির্বাচন কমিশনারদের কর্মের শর্তাবলী রাষ্ট্রপতি আদেশের দ্বারা যেরূপ নির্ধারণ করিবেন, সেইরূপ হইবে:

তবে শর্ত থাকে যে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক যেরূপ পদ্ধতি ও কারণে অপসারিত হইতে পারেন, সেইরূপ পদ্ধতি ও কারণ ব্যতীত কোন নির্বাচন কমিশনার অপসারিত হইবেন না।[অনুচ্ছেদ-১১৮(৫)]

৩. রাষ্ট্রপতি পদের ও সংসদের নির্বাচনের জন্য ভোটার-তালিকা প্রস্তুতকরণের তত্ত্বাবধান, নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণ এবং অনুরূপ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যস্ত থাকিবে এবং নির্বাচন কমিশন এই সংবিধান ও আইনানুযায়ী

 

(ক) রাষ্ট্রপতি পদের নির্বাচন অনুষ্ঠান করিবেন;

(খ) সংসদ-সদস্যদের নির্বাচন অনুষ্ঠান করিবেন;

(গ) সংসদে নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ করিবেন; এবং

(ঘ) রাষ্ট্রপতির পদের এবং সংসদের নির্বাচনের জন্য ভোটার-তালিকা প্রস্তুত করিবেন।

(২) উপরি-উক্ত দফাসমূহে নির্ধারিত দায়িত্বসমূহের অতিরিক্ত যেরূপ দায়িত্ব এই সংবিধান বা অন্য কোন আইনের দ্বারা নির্ধারিত হইবে, নির্বাচন কমিশন সেইরূপ দায়িত্ব পালন করিবেন।[অনুচ্ছেদ-১১৯]

৪. এই ভাগের অধীন নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালনের জন্য যেরূপ কর্মচারীর প্রয়োজন হইবে, নির্বাচন কমিশন অনুরোধ করিলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনকে সেইরূপ কর্মচারী প্রদানের ব্যবস্থা করিবেন।[অনুচ্ছেদ-১২০]

৫. নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হইবে। [অনুচ্ছেদ-১২৬]

সংবিধান এই অণুচ্ছেদ গুলো নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা ও ক্ষমতার উৎস হিসেবে চিহ্নিত ও বিবেচনা করা হয়।কিন্তু বাংলাদেশে বিভিন্ন আইন দ্বারা তথা বিভিন্ন নিয়ম নীতি নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা হয় সেগুলো স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন হওয়ার পথের কাঁটা হিসেবে দাঁড়িয়েছে।

প্রথমত: রুলস অফ বিজনেস ১৯৯৬ অনুযায়ী বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সরাসরি এবং সামষ্টিকভাবে দায়বদ্ধ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের কাছে।ফলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের যাবতীয় কর্মকাণ্ড ও ভূমিকার উপর প্রধান নির্বাচন কমিশনার ক্ষমতার চর্চার প্রয়োগ করা হয় না বলে চলে। 

দ্বিতীয়ত: সংবিধানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাথে পরামর্শ করে বাকি নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ করা বলা হয়েছে।কিন্তু নিয়োগে জন্য কি কি শর্ত বা নীতিমালা প্রয়োজন তা সম্পর্কে সংবিধানে বা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নিয়মপত্রে উল্লেখ করা হয়নি।

তৃতীয়ত: সংবিধানে ১১৯ অণুচ্ছেদে বলা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের একক ভাবে স্থানীয় এবং জাতীয় নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনার কথা ব্যক্ত করা হয়েছে।কিন্তু রি প্রেজেন্টেশন অফ দা পিপল অর্ডার ১৯৭২ ধারা ৩৯ তে নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যাবলী তথা জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা ক্ষমতা রিটার্নিং অফিসার(ডেপুটি কমিশনার হিসেবে বিভিন্ন জেলায়ে কর্মরত)হাতে অর্পণ করা হয়েছে।ফলাফল হিসেবে খুব সহজে এসব রিটার্নিং অফিসারগন সরকারে অজ্ঞাবহ(dictated) হিসেবে কাজ করা প্রবণতা থাকে।এবং এসব রিটার্নিং অফিসারগন যদি তাদের নিজেদের পছন্দই কোন প্রার্থীকে জয়ী ঘোষণা করেন সেখানে নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ ও শাস্তির বিধান রাখা হয়নি।

চতুর্থয়: প্রত্যেক জেলাতে নির্বাচন কমিশনের অধীনস্থ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আছেনকিন্তু  ভিন্ন আইনের কার্যকারিতা এবং প্রতিবন্ধকতার মাধ্যমে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের ক্ষমতা ও কর্মকাণ্ডকে সীমিত পরিসরে মধ্যে চর্চা করা বিধান রাখা হয়েছে।জাতীয় এবং স্থানীয় নির্বাচনে নির্বাচনী লজিস্টিক এবং ম্যাজিষ্ট্রেট ক্ষমতা প্রয়োগ এবং চর্চা নিয়ন্ত্রণ একমাত্র জেলা  ডিসি করে থাকেন।এছাড়া জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার পদমর্যাদা একজন থানা নির্বাহী কর্মকর্তা চেয়ে নিচে অবস্থান।

পঞ্চম: ১৯৭২ রিপ্রেজেন্টেশন অফ দা পিপুল অর্ডার অধীনে নির্বাচনী আচরণবধী ও আইনলঙ্ঘনে ভঙ্গের জন্য নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের সম্মুখীন(envisaged) হওয়ার বিধান রাখার হয়েছে।এই ট্রাইব্যুনাল শুধু নির্বাচনী সংক্রান্ত প্রশ্নের মীমাংসা করে থাকেন।কিন্তু ট্রাইব্যুনালের গড়িমসি মনোভাব,(procrastination)দীর্ঘসূত্রিতা কারণে ট্রাইব্যুনালের উদ্দেশ্য এবং কার্যকারিতা ব্যাহত হচ্ছে।ট্রাইব্যুনালের অধিকাংশ মামলা রায় হয় না সংসদের মেয়াদ থাকাকালীন কিংবা মেয়াদাদ শেষ হওয়ার পরও। 

 

    বাংলাদেশে রাজনীতির আলোকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রয়োজনীয়তা

 উপরে নির্বাচন কমিশনের দুর্বলতার ও কার্যকারিতা আলোকে কেন বাংলাদেশে বাংলাদেশ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্ব আলোচনা করেছি।এই অংশে বাংলাদেশে রাজনীতি আলোকে একটি  অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করা জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রয়োজন কেন তা তুলে ধরা চেষ্টা করবো।

 

প্রথমত:  বাংলাদেশের দলই  সরকারে অধীনে সাধারণ নির্বাচনের অনুষ্ঠানের খুব খারাপ এবং জঘন্য অভিজ্ঞতা  ইতিহাস বেশ সুখকর নয়। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়,সে নির্বাচনে বর্তমান সরকারের পূর্বসূরি বিরুদ্ধে অনিয়ম কেন্দ্র দখল,ব্যাপক বিস্তার অভিযোগ  এবং ব্যালট বাক্সে ছিনতাই,পোলিং স্টেশন পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া মত গুরুতর অভিযোগ উঠে ছিল।তা সত্ত্বেও, তৎকালীন সরকার(সরকারের পূর্বসূরিরা) কোন বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত সম্পন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, এবং দোষীদের বিরোধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থায় গ্রহণ করা হয়নি।বর্তমানে সেই একই দল ক্ষমতায়ে এবং তাদের সেই একই আচরণ এবং মনোভাবের কোন পরিবর্তন হয়নি আজও। এবং অনুরূপ অভিযোগ রয়েছে দলীয় সরকারে অধীনে অন্যান্য সাধারণ নির্বাচন গুলোতে।Abdul Mannan Khan V Government of Bangladesh [2012] মামলাতে,বিচারপতি আব্দুল ওয়াব মিয়া বলেন,দলই সরকার অধীনে অনুষ্ঠিত ১৯৭৩,১৯৭৯,১৯৮৬,১৯৮৮,এবং ১০৯৬ জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতি এবং কারচুপি ঘটনা ঘটে।

 

দ্বিতীয়তঃ স্বাধীনতার ৪১ বছর পরে বাংলাদেশে দলীয় সরকারে অধীনে মোট পাঁচটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।এবং সেসব জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতি,কারচুপি অভিযোগ উঠে।বাংলাদেশে নির্বাচনে ইতিহাস এবং আনুসাঙ্গিক প্রমানাধি সাক্ষ্য দেয় যে,ক্ষমতাসীনরা পূর্ববর্তী নির্বাচনে ব্যাপক পেশীশক্তি এবং ভীতিপ্রদর্শন (intimidation) মাধ্যমে জয় লাভ করেছে।অন্যদিকে  জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মতে,১৯৯১,১৯৯৬,২০০১,২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার অধীনে জাতীয় নির্বাচন গুলো অবাধ ও বিশ্বাসযোগ্য প্রক্রিয়া মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে।এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে,ভোটাররা(সাংবিধানিকভাবে সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ অনুচ্ছেদ -৭)তাদের সাংবিধানিক অধিকার সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ প্রয়োগে সুযোগ পায়।

 

তৃতীয়:সরকার,বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর প্রায়ই,তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে ডঃ ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে কুখ্যাত ১/১১ সরকারের উদাহরণ দিয়ে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী প্রায় তার বক্তৃতার মধ্যে বলেন যে,” তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা আসলে কেউ রেহাই পাবে না “এবং তিনি আরো বলেন,”সবাই জেলে যেতে হবে.” আসলে, ১/১১ সরকার সংবিধান বিবেচনায়ে(envisaged) তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল না।বরঞ্চ,এটি সামরিক বাহিনীর দ্বারা ব্যাকেডে অস্বাভাবিক এবং অসাংবিধানিক একটি অদ্ভুত জরুরী ব্যবস্থা ছিল।অতএব,এই বিশেষ জরুরী সরকার সফলভাবে তিনটি পরপর নির্বাচন আয়োজন করা, প্রাক্তন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না।বস্তুত,তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ ছিল। কিন্তু দাম্ভিকতা,এবং স্বার্থপরতা মনোভাব নেতৃস্থানীয় রাজনীতিবিদদের, কারণে কুখ্যাত ১/১১ এসেছিল এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাংলাদেশে রাজনীতিবিদের জন্য দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছিল।বিচারপতি মুহাম্মদ ইমাম আলী মতে “বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বেশ অনন্য ছিল এবং সময় ভাল উদ্দেশ্য ছিল সে সময়,রাজনৈতিক ম্যানিপুলেশন কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আজ কুখ্যাতি(bad reputation)অর্জন করেছে।

 

 চতুর্থ: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিদারুণভাবে এবং তীব্র ভাবে ১৯৯০ সালে  তত্ত্বাবধায়ক সরকার পক্ষে প্রচেষ্টা চালিয়ে ছিল।১৯৮৩ সালে প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ জামাত ইসলামি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রস্তাবনা দেয়।এবং ১৯৯০ সালের প্রথম দিকে জামাত,আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন শুরু করে এবং জাতীয় পাটির  এক ভগ্নাংশ সেই আন্দোলনের সঙ্গে যোগদান করে।যার ফলাফল হিসেবে ১৯৯১-১৯৯৬ বিএনপি সরকারের মেয়াদ অধিকাংশ সময় দেশ আন্দোলন বিপর্যস্ত ছিল,এবং বাংলাদেশে রেকর্ড পরিমাণ অর্থাৎ তারা ১৭৩ হরতাল পালন করে। বিএনপি প্রথমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে ছিল না।কিন্তু জামাত,আওয়ামী লীগ জোট থেকে ভীষণ চাপ এবং অব্যাহত আন্দোলন কারণে,বিএনপি চতুর্দশ সংশোধনী মাধ্যমে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে ১৯৯৬ সালে ফেব্রুয়ারীতে নির্বাচনের করতে বাধ্য হয়।নেহা মেহেতা,বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন “এর ফেলো তার মতে “The current political stance of the Awami League and the BNP, however, is diametrically opposite to when the caretaker system was introduced constitutionally, with the Awami League pressing for the system while the BNP being reluctant to concede to such a demand. It was primarily an outcome of lack of trust amongst the political parties as well as the belief that the incumbent government could not hold an election without meddling with the political process which would lead to electoral fraud”

 

পঞ্চম: সুপ্রিম কোটের,বিজ্ঞ বিচারপতিদের দক্ষতা, জ্ঞান এবং আত্মজ্ঞান সম্পর্কে কোন সন্দেহ নেই। হাইকোর্ট বিভাগ বৃহত্তর বেঞ্চের তিন বিচারপতি মধ্যে (তাদের একজন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়) একজন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে ছিলেন। এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের তিনজন বিচারপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা থাকার পক্ষে মতামত দিয়েছিলেন।আপিল বিভাগের বিচারপতিদের (সাত জনের মধ্যে তিনজনের)রায় বিবেচনা যদিও সেটা সংখ্যালঘু ছিল,তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে ছিল।এবং শুধু তাই নয় এই আপীল মামলায়ে সহায়তা করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দ্বারা নিযুক্ত করা আদালতের বন্ধু (amicus curie),সবাই শুধু এক জন ব্যতীত,তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে তাদের মতামত ব্যক্ত করেছিলেন।অতএব,তত্ত্বাবধায়ক সরকার ধারণা বাংলাদেশী প্রেক্ষাপটে শক্তিশালী আইনগত ভিত্তি আছে সেটাই প্রমাণিত হয়।সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের তিন বিচারপতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে তাদের রায় দিয়েছেন যদিও তা ছিল সংখ্যালঘু রায়,কিন্তু ইতিহাস কখনও কখনও সংখ্যালঘু বিচারপতি রায় সঠিক হতে প্রমাণিত হয়েছে।উদাহরণস্বরূপ,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে লর্ড Atkins তার রায়ে যদিও তার রায় ছিল সংখ্যা অনুপাতে সংখ্যালঘু রায় (১৯৪২ এসি ২০৬) বিট্রিশ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এক জার্মান নাগরিককে আটকাদেশ বেআইনি ঘোষণা দিয়েছিলেন ।এবং সেটা চল্লিশ বছর পর তা প্রমাণিত হয়,তিনি যে,সঠিক ছিলেন।একইভাবে, ভবিষ্যতের ইতিহাস সম্ভবত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংখ্যালঘু তিন বিচারপতিদের রায় সঠিক ছিল তা প্রমাণ হবে।

 

 ষষ্ঠ: সরকার সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী,নেতৃত্বে সংবিধান সংশোধন জন্য ১৫ সদস্যরে শক্তিশালী প্যানেলের একটি বিশেষ সংসদীয় কমিটি গঠন করে।এই বিশেষ কমিটি অবসরপ্রাপ্ত বিচারক এবং বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, সুশীল সমাজের সদস্য ও জাতীয় পত্রিকা সম্পাদকদের,নেতৃস্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতামত বিনিময় করেন।প্রায় সব অংশগ্রহণকারীরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাখার প্রস্তাব করেন।কিন্তু হঠাৎ কমিটি,প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে তাদের মন পরিবর্তন করে এবং অজানা কারণে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা রদ জন্য সুপারিশ করে।ফলে এই বিষয়টি খারাপ ও রাজনৈতিক অনিশ্চত পরিবেশ তৈরি করে বাংলাদেশে রাজনীতিতে। 

 

তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক নীতির সঙ্গে অসঙ্গতি ছুতোয় অসাংবিধানিক হতে পারে না,কারণ (ক)এটি জাতীয় ঐক্যমত্য ভিত্তিতে সংবিধানে বিধিবদ্ধ করা হয়েছে (খ) এটি,বাংলাদেশ গণতন্ত্রেরভিত্তিকে শক্তিশালী  এবং সহযোগিতা করা জন্য প্রণয়ন করা হয়েছিল এবং (গ) সুষ্ঠু ও নিরেপক্ষে এবং অবাধ নির্বাচনের নিশ্চিত করা জন্য প্রণয়ন করা হয়েছিল।বাংলাদেশে গণতন্ত্র বর্তমানে শিশু কাল অতিকান্ত করতেছে,আর এই শিশু গণতন্ত্রকে দাঁড়ানো হাঁটা বা চলমান রাখার জন্য প্রয়োজন সাপোর্ট এবং এর অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত(boosting) করা। 

তথ্য আহরণঃ the need for non-party caretaker government in Bangladesh by Barrister Nazir Ahmed

Constitution, constitutional, Law and politics: Bangladesh perspective by Md. Abdul halim

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *