ধৈর্যশীলতা

গত সাপ্তাহের জুম্মার খুতবায় ইমাম সাহেবের কিছু কথা শুনে আজকের ব্লগটি লিখার ইচ্ছা জাগল।

ভুমিকা :

আমরা নিজেরাই যদি সমস্যার একটা অংশ হয়ে যাই এবং সে অবস্থায়ই থাকতে চাই তাহলে কিভাবে সমস্যার সমাধান আশা করতে পারি? একজন মুসলিম হিসাবে এ মুহূর্তে কোথায় দাঁড়িয়ে আছি জানতে শুধু নিচের প্রশ্নগুলাই যথেষ্ট মনে করি।

•     আপনার আকস্মিক খেয়াল খুশী ও চাওয়া পাওয়ার বাসনা কি আপনার প্রভুর স্থান নিয়েছে?

•     আপনার কালচার বা ঐতিহ্যকে ধর্মের আগে প্রাধান্য দেন?

•     আপনি স্রষ্টার চেয়ে সৃষ্টিকে প্রাধান্য দেন?

এ প্রশ্নগুলার উত্তর যদি “হাঁ” হয় কারো ক্ষেত্রে তা হলে তিনি নিজেই সমস্যার একটা অংশ! এর থেকে বাহির হতে কিসের প্রয়োজন তা নিয়ে আজকের আলোচনা।

বিখ্যাত ইসলামী স্কলার ইমাম ইবনে তাইয়েমা (র:) এর  ছাত্র ইমাম ইবনে আল কায়ইয়াম  (Imâm Ibn Qayyim al-Jawziyyah) বলেন মানুষের আকস্মিক খেয়াল খুশী (whims) ও চাওয়া পাওয়ার লাগামহীন বাসনাকে (desire) বশে আনতে ধৈর্য ধারণের ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে হবে।

মানুষ হিসাবে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় এক সময় কোন ব্যপারে সবাইকে ধৈর্য ধরতেই হয়। এক জন উন্নত চরিত্রের মানুষ আর একজন সাধারণ মূর্খ  মানুষের  ধৈর্য ধারণের প্রকৃতি কিন্তু এক নয়।

উন্নতচরিত্র ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ধৈর্য শক্তিকে ব্যবহার করেন কারণ তিনি জানেন এর সুফল কি হবে এবং তাঁর বিশ্বাস এ  ধৈর্যের জন্য তাকে পুরস্কৃত করা হবে মহান আল্লাহর তরফ থেকে।  উন্নতচরিত্র ব্যক্তি কোন কিছুতে বিচলিত হননা কারণ তিনি যথাসময়ে ধৈর্যহারা হয়ে  ধৈর্য ধারণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে চান না। তার বিশ্বাস যা ঘটেছে তা ” ক্বাদা ‘ওয়া কদর” ঘটছে যা আটকানো যাবে না অতএব ঘটনার সময়ই তাকে ধৈর্য ধরতে হবে পরে নয়।  ধৈর্যকেই তিনি তার উপর হঠাৎ আসা মুসিবত,বিপদ আপদের পরীক্ষা উত্তরণের সোপান মনে করেন।   তিনি এ সত্য ভালভাবেই জানেন যে অধৈর্য এবং বিচলিত ও ভীতু বিহ্বল  মনোভাব আসলে ক্ষতি ঘটায়। তাই দুরবস্থায় পতিত হলে একজন  উন্নতচরিত্র ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ধৈর্য শক্তিকে ব্যবহার করেন কারণ তিনি জানেন এর সুফল কি হবে এবং তার এ ধৈর্যের জন্য তাকে পুরস্কৃত করা হবে মহান আল্লাহর তরফ থেকে।

বিজ্ঞজনেরা বলেন, “উন্নতচরিত্রের বিচক্ষন ব্যক্তি যত তাড়াতাড়ি ধৈর্য্য ধারন করতে সম্ভব তার তুলনায় একজন মূর্খ লোকের পক্ষে এক মাস পরেও ধৈর্য্য ধারন সম্ভব হয় না।”  মূর্খ লোকের ধৈর্য্য ধারন করা হচ্ছে বাধ্য হয়ে অর্থাৎ যখন ধৈর্য্য ধরা ছাড়া কোন উপায় থাকেনা।

উন্নতচরিত্র  ব্যক্তির ধৈর্য হয় আল্লাহর নির্দেশ অনুসরণ করতে।  আর মূর্খ লোকের ধৈর্য হয় শয়তানকে খুশী করতে।  মূর্খ লোকেরা  তাদের নিজস্ব  whims এবং  প্রবৃত্তির  অনুসরণে শয়তানকে অনুসরণ করতে  প্রচুর ধৈর্য ধারণ করতে সক্ষম হলেও আল্লাহর পথে এক পয়সা বা এক পেনি দান করার ধৈর্য থাকে না। শয়তানের চরিত্র হচ্ছে সে জানে যে আল্লাহ আছেন ও সে নাস্তিক নয় কিন্তু আল্লাহর হুকুম পালন করতে তার আপত্তি  এবং সে ধৈর্য তার নাই। শয়তানের অনুসারীরা  তাদের ভ্রান্ত পথে চলার  জন্য যাবতীয় কষ্ট ,দুর্ভোগ, কুৎসা ও প্রতিবাদ সহ্য করতে রাজি কিন্তু আল্লাহর নির্দেশ মত চলার পথে কোন প্রকার কষ্ট ও যাতনা সহ্য করতে চায়না। এই ধরনের মানুষ সমাজে ভাল কাজের নির্দেশ ও মন্দ কাজের প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে চায়না। এই চরিত্রের  মানুষ আল্লাহর কাছে কখনই উন্নতচরিত্রের মানুষ হিসাবে গণ্য হবে না,এবং কেয়ামতের দিন তারা আভিজাত্য এবং শালীনতা বজায় রাখে যে সব মানুষ তাদের সঙ্গে পুনরুত্থিত হবে না।

ধৈর্য শক্তি বৃদ্ধি করণের উপায়।

ইমাম ইবনে আল কায়ইয়ামার মতে ধৈর্য ধারণ হচ্ছে একটি বাধ্যতামূলক বা ফরজ কাজ।  ধৈর্য দুটি উপাদান নিয়ে গঠিত: জ্ঞান এবং কর্ম, এবং এই দুটি উপাদান থেকে উদ্ভূত হয় আধ্যাত্মিক এবং শারীরিক সব যন্ত্রণার জন্য প্রতিকার। জ্ঞান ও কর্ম উভয় এক সাথে থাকা সবসময়ই অপরিহার্য।

জ্ঞান:

জ্ঞানের প্রয়োজন আল্লাহর হুকুম পালনের কল্যাণ উপলব্ধি করতে এবং তা পালনের সুখ অনুভূতি ও পূর্ণতা (fulfillment) উপলব্ধি করতে।  জ্ঞানই তাকে এটা বুঝতে সহজ করে দিবে যে আল্লাহর নির্দেশের সীমানা (হুদুদ) অতিক্রম করার বা তাঁর নিষিদ্ধ জিনিস  কি  ক্ষতি,অসম্পূর্ণতা ও অকল্যাণ নিয়ে আসতে পারে। আর যখন এক ব্যক্তি সেটা সঠিকভাবে বুঝতে সক্ষম হয় তখন  তার ইচ্ছাশক্তি প্রবল হয় এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ে।  আধ্যাত্মিক কৃতিত্ব অর্জনের সদিচ্ছা এবং একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসাবে (পশু জীবনের বিপরীত) উন্নতচরিত্র গড়ে উঠে। একমাত্র তখনই ধৈর্য ধারণের তিক্ততা বা ব্যথা তার কাছে মধুর লাগবে এবং সে কষ্ট তাকে আনন্দ দিবে।

কর্ম:

আমরা ইতিমধ্যে দেখলাম ধৈর্য্য যেহেতু প্রতিনিয়ত সংগ্রামে লিপ্ত একদিকে  যুক্তি ও ধর্মের  উদ্দেশ্য নিয়ে অন্যদিকে মানুষের  খেয়াল খুশী ও চাওয়া পাওয়ার বাসনাকে নিয়ে। যদি কোন মানুষ যুক্তি ও ধর্মের উদ্দেশ্য তার খেয়াল খুশী (whims) ও চাওয়া পাওয়ার বাসনাকে অতিক্রম করতে চায় তাহলে তাকে প্রথম উল্লেখিত উদ্দেশ্যকে দ্বিতীয়টা থেকে শক্তিশালী করতে হবে ঠিক যেমন সুস্বাস্থ্য সচেতনতার প্রসার ঘটিয়ে রুগমুক্ত থাকার প্রচেষ্টা।

ধৈর্য শক্তি কীভাবে শক্তিশালী করা যায় এবিষয়ে ইমাম ইবনে আল কায়ইয়াম খুবই গুরুত্বপূর্ন কিছু বক্তব্য রেখেছেন যা এখানে পড়তে  পারেন। (লিংক)

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *