ধর্ম নিয়ে রাজনীতি

আজ কাল “তাৎক্ষণিক যোগাযোগ” (instant communication) এর  যুগে  কোন কিছু বিস্তারিত ভাবে জানতে বা বুঝতে মানুষের আর ধৈর্য নাই । মানুষ চায় দু তিন লাইনের কথায় সব জেনে ফেলতে!

বর্তমান যুগকে বলা হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তির যুগ অর্থাৎ এখানে তথ্য আছে সাথে প্রযুক্তিও আছে কিন্তু তাই বলে সব তথ্যই যে সঠিক তা বলা যায় না এবং  এই “দ্রুত বুঝে নেয়ার” প্রবণতা আজ মানুষের অনুসন্ধানী চিন্তা শক্তি হারিয়ে দিচ্ছে যার ফলে মানুষের পক্ষে সত্য ও মিথ্যার তফাৎ বুঝা দিন দিন কঠিন থেকে কঠিনতর হতে যাচ্ছে। অন্য দিকে সমাজে জ্ঞানীর সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।

এটা এ জন্য যে শুধু তথ্য দিয়েই জ্ঞান অর্জন হয়না। তথ্যকে সঠিকভাবে বুঝার জন্য জ্ঞানের প্রয়োজন। আর জ্ঞান অর্জন করেত দরকার মানসিক প্রস্তুতি, নিবেদিত  প্রাণ, একাগ্রতা, আন্তরিকতা, ধৈর্যশীলতা এবং বুদ্ধি ভিত্তিক প্রতিভার অনুশীলনে খোলা মন।

মিডিয়ার মাধ্যামে ও পলিটিশিয়্যানদের বক্তব্যে একটি বার্তা আমরা প্রায়ই পাই তা হচ্ছে রাজনীতিতে ধর্ম টানা ঠিক নয়  কিন্তু যারা এ সব মন্তব্য করেন তাদেরকেই আবার দেখা যায় রাজনীতিকেই তারা তাদের এক ধর্মে রূপান্তরিত করতে। তাই রাজনীতি করতে গিয়ে তারা নিজেকে শিরকে লিপ্ত করতে কোন দুষ মনে করেন না।
একজন মুসলিম হিসাবে আমরা জানি শিরক হচ্ছে মহান আল্লাহর এবাদতে কাউকে শরিক করা। আল্লাহর এবাদত মানে কি? উত্তর হচ্ছে আল্লার হুকুম মানা। অর্থাৎ আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকা এবং যা করতে বলেছেন তা করা। তাই নয় কি? যদি তাই হয় তা হলে আজ আমরা রাজনীতি করেত গিয়ে আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা কি করছিনা?  তার মানে কি হল? আমরা আল্লাহকে মানার পরিবর্তে আমার দলের অন্যায় স্বার্থটাকেই বড় মনে করে, তা করে যাচ্ছি! এটা কি শিরকের পর্যায়ে পড়ে না?

শিরক্ সম্বন্ধে লিখতে গিয়ে ইসলামী স্কলাররা ব্যাখ্যা করেন রব ও ইলাহ হিসাবে আল্লাহর সহিত আর কাউকে শরীক সাব্যস্ত করার নামই শিরক।  অধিকাংশ ক্ষেত্রে উলুহিয়াত তথা ইলাহ হিসাবে আল্লাহর সাথে শরীক করা হয়৷ যেমন আল্লাহকে ডাকার মত অন্যকে ডাকা,আল্লাহকে ভয় করার মত অন্যকে ভয় করা,তাঁর কাছে কামনা করা হয়,অন্যের কাছে তা কামনা করা। তাঁকে ভালোবাসার মত অন্যকেও ভালোবাসা।

মহান আল্লাহ পাক বলেন, “মানুষের মধ্যে এমন একদল লোক আছে যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে শরীক বানিয়েছে এবং তাদেরকে এমনভাবে ভালবাসে যেমন আল্লাহকে ভালোবাসা উচিত, আর যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহকেই সর্বাধিক ভালবাসে”। (সূরা আল বাকারা: ১৬৫)

শিরকের ভয়াবহ পরিণাম :
শিরকের মাধ্যমে সৃষ্টিকে স্রষ্টার আসনে বসানো হয়,যা মহা অপরাধ এবং রীতি মত অবিচার। আল্লাহ বলেন: “নিশ্চয়ই শিরক একটি মস্ত বড় অন্যায়” (সুরা লোকমান: ১৩) আল্লাহ তা’আলা শিরকের গুনাহ তওবা ছাড়া ক্ষমা করবেন না।

আজ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থার দিকে নজর দিলে দেখা যায় রাজনীতিতে নিজেদের দলের পক্ষপাতিত্ব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে দলের পক্ষে থাকা বা সমর্থন করা তাদের কাছে ধর্ম সমতুল্য দায়িত্ব মনে হয়। ফলে নিজের দলের কোন অন্যায় দেখেও তারা না দেখার ভান করেন। নানা যুক্তি দিয়ে অন্যায় ও অবিচারকে গ্রহণ যোগ্যতা দেয়ার চেষ্টা করেন।
এ কথাগুলা ফেইস বুকে লিখায়  দারা মনসুর নামের এক ফেবু বন্ধু  মন্তব্য করেন,”ভাই যারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি না করার কথা বলেন,তারাই সর্বাগ্রে সেই কাজ করে থাকেন। “ধর্ম নিয়ে রাজনীতি” -এই কথাটির অর্থ না বুঝার কারণেই এমন হয়। আবার যারা রাজনীতি করি না বলেন, তারাও নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান বুঝতে ব্যর্থ হন বলেই সেটা বলেন।”  তবে অজ্ঞতাকে হয়তবা দুষ দেয়া যেতে পারে আবার এটাও বলা যেতে পারে যে,আমাদের রাজনীতিবিদরা  ধর্মকে রাজনীতিতে আনতে চান না কারণ  তাতে তারা নন মুসলিমদের সমর্থন পাবেনা এই ভয়ে। কিন্তু  আমার কাছে  বিষয়টা এত সহজ মনে হয়না।

মুসলিম প্রধান দেশে ধর্মকে রাজনীতিতে আনার উদ্দেশ্য এটা নয় যে সব অমুসলিমকে মুসলিম বানাতে বাধ্য করতে হবে বা তাদেরকে তাদের ধর্ম পালন করতে দেয়া হবে না। এখানে সামাজিক ন্যায় বিচার, মানবাধিকার, সকলের জন্য সমান অধিকার,সত্যের পক্ষে থাকার, মানুষের হক সঠিকভাবে পালনের তথা  ন্যায় অন্যায়ের কথা আসবে, আইনের দৃষ্টিতে নিরপেক্ষতা, সততা, দায়বদ্ধতা, গণতন্ত্র, ইত্যাদি বিশ্বজনীন সার্বিক মূল্যবোধের সঠিক বাস্তবায়নের কথা আসে এবং এসব আসবে ধর্মীয় অনুশাসনের বা নৈতিক অনুভূতির দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে। এখানে ধোকাবাজির স্থান পাবার কথা নয়।

তবে মুসলিম দেশের কায়েমি স্বার্থবাদী গুষ্টি  রাজনীতিতে ঐশ্বরিক ধর্মকে বিসর্জন দিয়ে সুকৌশলে যে কাজটি করতে সক্ষম হয়েছে তা হল দেশ শাসনের নামে শোষনকে বৈধতা দিতে, অন্যায়কে ন্যায় করতে, ব্যক্তি পূজাকে দেশ প্রেম মনে করতে অসংখ্য দাস ও এক শ্রেণীর বিবেক শূন্য মানসিক প্রতিবন্ধী চরিত্রের  অনুসারী তৈরি করতে পেরেছে যারা অর্থের লোভে দিনরাত সে অশুভ শক্তির সেবায় কর্মরত। তাই তো আমরা শুনতে পাই রাজনীতিতে চূড়ান্ত কিছু নাই! গদির লোভে যখন যা প্রয়োজন তা করতে দুষ নেই হউকনা তাতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব  বিসর্জন, হউক না তাতে দেশ দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তের অভয়ারণ্য।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে  রাজনীতিতে ধর্মকে আনা যদি এত ভাল হয় তা হলে অধিকাংশ মানুষ কেন তা গ্রহণ করছে না?
আমি মনে করি এর কারন আছে। প্রথমত, আমরা এ দায়িত্ব  দিতে চাই যারা সমাজের বাস্তবতা ও বৈষয়িক বিষয়ে অজ্ঞ এবং  ধর্মীয় অঙ্গনেও আংশিক বিষয়ের যেমন আনুষ্ঠানিক ধর্মোপাসনা ও আচার অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব আছেন এমন লোকদের কাছে।
দ্বিতীয়ত  রাজনীতিতে ধর্মীয় মুল্যবোধ  আনতে যারা চাচ্ছেন তাদের পক্ষে এখনও সমাজের সর্ব স্থরে সঠিক তথ্য দেয়া সম্ভব হচ্ছে না হয়তবা তাদের দূর্বলতার কারণে কিংবা ভুলের কারণে।
আমি মনে করি এখানেই হচ্ছে সবচেয়ে বড় সমস্যা।

এ সমস্যার উত্তরণের উপায় কি?
আজ জাতি হিসাবের আমাদেরকে একটা বিষয়ে পরিষ্কার হতে হবে যে আমরা যখন আলোর ভুবনে থাকতে শিখব তখন সব কিছু আমাদেরকে অনুসরণ করবে, কিন্তু অন্ধকারে নিমজ্জিত হলে নিজের ছায়াও আমাদেরকে পরিত্যাগ করবে। বাংলাদেশকে যারা দু:শাসনের অন্ধকারে নিয়ে যেতে চায় তারা নিজেদেরকে  অনেক শক্তিশালী মনে করলেও যদি এদেশের মানুষকে বিশেষকরে নতুন প্রজন্মকে সঠিক তথ্য দিয়ে জ্ঞান অর্জনে উদ্ধোদ্ধ করা যায় তখন তারা  যে আলোর সন্ধান পাবে তা দিয়ে অত্যাচারীকে পরাজিত করা খুবই সহজ। বিজ্ঞজনেরা বলেন “সাফল্যের সব থেকে বড় বাঁধা ব্যর্থতার ভয় তাই যখন ভয় দরজায় হাজির হবে, সাহসকে পাঠাও  দরজা খুলতে, দেখবে সাফল্য অপেক্ষা করছে।” তবে একথা ঠিক এ কাজ এত সহজ নয় এর জন্য প্রয়োজন ত্যাগ, একাগ্রতা, আন্তরিকতা, ধৈর্যশীলতা এবং বুদ্ধি ভিত্তিক প্রচেষ্টার সহিত অক্লান্ত পরিশ্রম। সুখবর হল বেশ কিছু মহল থেকে সুস্থ সমাজ গড়ার আন্দোলন শুরু হয়ে গিয়েছে। এমনি এক লক্ষ্যের  দিকে  দেশের তরুন সমাজকে  উদ্বুদ্ধ করতে বক্তব্য রেখেছেন মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ রণাঙ্গনে অংশ প্রহণকারী এক সাহসী প্রাক্তন সামরিক অফিসার। তাঁর সে  ভিডিওটা এখানে পাঠকের জন্য সংযোজন করলাম।

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *