ধর্মের কল বাতাসে নড়ে

ණ☛ বছর-দেড় বছর আগে আমেরিকায় বসে, তৎকালীন টেলিযোগাযোগমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী কিছু আক্রমণাত্মক কথা বলেছিলেন। আক্রমণের ল্যবস্তু ছিল দু’টি। যথা ইসলাম ধর্ম এবং প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে যা বলা হয়েছিল তার দুনিয়াবি বিচার আপাতত আংশিক হয়েছে। জয়ের বিরুদ্ধে তিনি যা বলেছিলেন সেটা প্রকাশ্যে অধিক আলোচিত এবং প্রচারিত হয়নি (হতে দেয়া হয়নি)।

ණ☛ যত দিন এই সরকার ক্ষমতায় আছে, তত দিন আলোচিত ও প্রচারিত হবে না, এটা নিশ্চিত। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হলো, আমাদের শোনামতে, কেউই লতিফ সিদ্দিকীকে আহ্বান জানায়নি বা উৎসাহিত করেনি ওই কথাগুলো বলতে। জনাব সিদ্দিকী হঠাৎই কথাগুলো বলে ফেলেছিলেন রাগের মাথায় বা আবেগবশত। অর্থাৎ ধর্মের কল বাতাসে নড়েছিল। এবার আসুন-বর্তমান প্রধান বিচারপতি কর্তৃক উচ্চারিত কথা প্রসঙ্গে। তিনি বিচারপতিরা অবসরে যাওয়ার পর রায় লেখা প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন। ওই মন্তব্য নিবিড়ভাবে আলোচিত হয়েছে; এই মুহূর্তে আলোচনা বন্ধ; আমরাও এই মুহূর্তে আলোচনা করব না। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হলো, প্রধান বিচারপতি স্বপ্রণোদিত হয়ে কথাগুলো ওয়েবসাইটে দিয়েছিলেন অর্থাৎ, ধর্মের কল বাতাসে নড়েছিল। তিনি কথাগুলো ওয়েবসাইটে দেয়ায়, দেশ ও জাতি উপকৃত হয়েছে।

ණ☛ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা প্রখ্যাত সাংবাদিক মাহফুজ আনাম। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক হচ্ছে ডেইলি স্টার। ২৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ায়, পত্রিকাটি সুবর্ণজয়ন্তী পালন করেছে, গঠন মূলকভাবে এবং জাঁকজমকের সাথে। সব কিছু ঠিকই ছিল। হঠাৎ সমস্যার সৃষ্টি হলো, টেলিভিশন টকশোতে মাহফুজ আনামের একটি উক্তি নিয়ে। যে কথাটি মাহফুজ আনাম বলেছিলেন, সেটি বলার জন্য প্রত্যভাবে তাকে আহ্বান জানানো হয়নি; তাকে আলোচনার সময় প্ররোচিত করা হয়েছে। ওয়ান-ইলেভেন সরকারের শুরুর দিকে কোনো একসময় তার পত্রিকায় একটি রাজনৈতিক সংবাদ ছাপানো হয়েছিল (যেমনটি আরো অনেক পত্রিকায় ছাপানো হয়েছিল)।

ණ☛ মাহফুজ আনাম বলেন, ওই সংবাদটি ছাপানোর আগে ‘ইনডিপেনডেন্টলি ভেরিফাই’ বা স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করা হয়নি; ওই কাজটি মাহফুজ আনামের মতে সম্পাদকীয় সিদ্ধান্তের ভুল ছিল। মাহফুজ আনাম দুঃখ প্রকাশ করেন। মাহফুজ আনামের কথাটির পরে, একাধিক টেলিভিশন চ্যানেলের একাধিক টকশোতে এবং একাধিক পত্রিকার বিভিন্ন কলাম বা সংবাদে প্রসঙ্গটি চুলচেরা আলোচিত হয়েছে। বাংলাদেশের পার্লামেন্টের একাধিক সদস্য এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে প্রত্য বক্তব্য রেখেছেন। বিরোধীদলীয় একাধিক নেতা মন্তব্য করেছেন। এই আলোচনা হয়তোবা হতোই না, যদি মাহফুজ আনাম ওই উক্তিটি না করতেন। অর্থাৎ ধর্মের কল বাতাসে নড়েছিল।

[ওয়ান-ইলেভেন ও অন্যান্য ষড়যন্ত্র]

এখনো কেউ বলেনি, কিন্তু অসম্ভব নয় যে, কোনো-না-কোনো দিন, কেউ-না-কেউ হঠাৎই ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্র“য়ারির পিলখানা হত্যাকাণ্ড সম্বন্ধে, কোনো-না-কোনো স্পর্শকাতর সত্য-তথ্য প্রকাশ করে ফেলবে। আমার কাছে দালিলিক প্রমাণ নেই, কিন্তু মনের ভেতরে একটি ধারণা ঘনীভূত হয়ে আছে যে, দেশী-বিদেশী যৌথ মারাত্মক ধরনের ষড়যন্ত্রের ফলেই ওয়ান-ইলেভেন এসেছিল এবং সেই ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনার মেয়াদ অন্ততপে ভবিষ্যতের আরো দুই বা তিন দশকব্যাপী বিস্তীর্ণ। আমার অনুভূতি হচ্ছে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কোনো মতেই পৃথিবীর একটি মাত্র কোনা থেকে বা পৃথিবীর একটি মাত্র রাজনৈতিক-বিন্দু থেকে বা একটি মাত্র বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা থেকে উৎসারিত হয় না। বাংলাদেশের সম্পদ বা ব্যবসাবাণিজ্য বা ভূখণ্ড ব্যবহার ইত্যাদি নিয়ে, বিভিন্ন প্রকৃতির স্বার্থের কারণে, বিভিন্ন দেশ বা সরকার বা বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা বা এনজিও বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতেই পারে। ষড়যন্ত্র কেউ বেশি করে আবার কেউ কম করে। কেউ করার জন্য বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে আছে আবার কেউ দুর্বল অবস্থানে আছে।

ණ☛ ষড়যন্ত্রকারীদের কারো কারো নাম বা কথা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিডিয়ায় বেশি আসে আবার কারো নাম কম আসে। সুতরাং আমাদের সাবধানী চোখ উত্তর-দণি-পূর্ব-পশ্চিম-ঊর্ধ্ব-অধঃ সবদিকেই প্রসারিত রাখতে হবে। এই রাখার কাজে, পরিস্থিতিগত কারণে এই মুহূর্তের জাতীয়তাবাদী ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সম্মিলিত শক্তিকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। পারিবারিক বিপদ-আপদ, দলীয় বিপদ-আপদ ইত্যাদি সব কিছুকে মেনে নিয়েই দেশ বাঁচানোর জন্য চিন্তা করতে হবে।

[আমার পক্ষ থেকে আহ্বান]

লাখ লাখ পরিবার নিয়ে একটি দেশ। দেশে থাকে কোটি কোটি মানুষ। কিন্তু ১০ বা ১২ বা ১৫ কোটি মানুষের মধ্যে সবাই সবাইকে চেনেন না। চেনার কথাও নয়। পরিবেশ-পরিস্থিতিগত কারণে কিছু লোককে পুরো দেশবাসী চেনে বা অনেক লোকেই চেনে; তাদের কাছ থেকে দেশবাসী কিছু আশা করে। পরিবারে যেমন প্রতি সদস্য কোনো না কোনো কাজ ভাগ করে নেয়, তেমনি দেশেও জনকল্যাণমূলক কাজ বা কাজের নেতৃত্ব বিভিন্ন পেশাজীবীকে ভাগ করে নিতে হয়। সাংবাদিকেরা একটি পেশার অন্তর্ভুক্ত। পত্রিকায় যারা কলাম লেখেন তারাও এই পেশার ছায়ায় শীতলতা পান। রাজনীতিবিদেরা একটি পেশার সদস্য। ব্যক্তিজীবনে আমি একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা; রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা; নিবিড়ভাবে প্রণোদিত কলাম লেখক, আগ্রহী টেলিভিশন আলোচক এবং একজন রাজনৈতিক কর্মী। আমাদের রাজনৈতিক দলের নাম ‘বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি’; আমাদের দলের মটো বা নীতিবাক্য হচ্ছে ‘পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি’। যদি আমাদের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন না আসে, তাহলে নতুনভাবে যেসব চ্যালেঞ্জ বা সমস্যা বাংলাদেশের সামনে উপস্থাপিত হচ্ছে, সেগুলো মোকাবেলা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। এই মার্চ মাসে, তথা স্বাধীনতার মাসে বন্ধ চোখ খোলার আহ্বান জানাচ্ছি, চিন্তার দরজা খুলে দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

লেখক, কলামিস্ট ও চেয়ারম্যান বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি।

Loading

Comments are closed.