দৃষ্টির অন্তরাল বিশ্বাসে বিশৃঙ্খলা

ভূমিকা:

আমরা অনেকেই জানতে চাই না যে দৃষ্টির অন্তরাল থেকে দুষিত উপাদানগুলো কত সুক্ষ্মপথ দিয়ে এসে আমাদের বিশ্বাসকে বিশৃঙ্খল করে দিচ্ছে। আমরা অনেকেই প্রভাবিত হচ্ছি প্রতিদিন,আবার নিজেরাই নিজেদের ঈমান নষ্ট করছি স্বতঃস্ফূর্তভাবে। কিছু মুসলমান আল্লাহতে বিশ্বাস করেন আবার অবলীলায় আল্লাহকে অমান্যও করে থাকেন।  রসূল (সা:) এর জন্য আমরা অনেকেই জীবন বাজী রাখতে প্রস্তুত। কিন্তু রসূলের আদর্শ বা সুন্নাহ্ আমাদের অনেকের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যায়না। মোহাম্মদ (স:) মুসলমানদেরকে অনেক বিষয়ে সতর্ক করে গিয়েছিলেন। আর এই উম্মতের কিছু  মতলববাজ যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে জাহান্নামের পথ বেঁচে নিবে তার ভবিষ্যৎবাণীও করা হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য এখানে যে এই উম্মাহর একটি অংশ কোরআন সুন্নাহর অনুসরণ থেকে অনেক দূরে থেকে যাচ্ছে। অনেক দল ও ফিরকা হচ্ছে।

আমাদের মধ্যে অনেককে দেখা যায় মোস্তাহাব, এমন কি বেদাত সংরক্ষণ করতে যুদ্ধে লিপ্ত । আবার  অনেককে দেখা যায় ফরজ ত্যাগ করার জন্য একে অন্যকে সাহায্য করতে। সুন্নত, নফল, মোস্তাহাব এবাদত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গিয়ে ফরজ এবাদত হয়ে গিয়েছে অনেকটাই গুরুত্বহীন। তবে এমনটা যে হবে আল্লাহর রসূল (সা:) আগেই বলে গিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা সতর্ক থেকে এরকম মসিবত হতে রক্ষা পাওয়ার পরিবর্তে রাসূলাল্লাহ্ (স:) এর ভবিষ্যৎবাণী বাস্তবায়িত করতে যেন ব্যস্ত হয়ে পড়েছি।

দজ্জালের অস্তিত্ব মুসলমানদের জন্য একটি বিরাট প্রতিকুল অধ্যায়। রাসূলাল্লাহ্ (সা:) সর্বকালের সকল মুসলমানদেরকে দজ্জালের ফেতনা থেকে হেফাজত থাকতে বলে গিয়েছিলেন। আল্লাহর রসূলের এই ভবিষ্যৎবাণীর গুরুত্ব, হেদায়েত মেনে চলার ক্ষেত্রে, অপরিসীম ও সুদূর প্রসারী। দজ্জালের বিভ্রান্ত করার বহুবিধ সীমটমের মধ্যে একটি হলো এই যে, দজ্জাল মানুষদেরকে আল্লাহর পরিবর্তে ওপরের উপর ঈমান আনতে সরাসরিভাবে প্রলুব্ধ করে থাকে। এই দজ্জাল সম্বন্ধেই আমি আজকের লিখায় কিছু আলোচনা করবো।

দজ্জালের আগ্রাসন

মুসলমানদের সকল হেদায়েত ধারণ করে থাকে তার ইমানে। ইমান নষ্ট হয়ে গেলে আর কোন এবাদতই সঠিক থাকে না। তাই ইমান রক্ষার স্বার্থে দজ্জালের আগ্রাসন থেকে নিরাপদ থাকার প্রচেষ্টা হওয়া উচিত মুসলমানদের প্রতি মুহূর্তের কসরত। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে আমরা নিজেরাই দজ্জালকে মদদ দিয়ে যাচ্ছি আমাদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য। দজ্জালকে সহজে চিনতে পারার জন্য প্রদত্ত অনেকগুলো নিদর্শনের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন হলো যে, দজ্জালের একটি মাত্র চোখ থাকবে এবং এ চোখটি থাকবে কপালের ওপর।
আপনারা অনেকেই হয়তো আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের এক ডলারের কাগজের নোটটি দেখে থাকবেন। এর একদিকে জর্জ ওয়াশিংটন এর ছবি এবং অপরদিকে রয়েছে ছোট্ট একটি পিরামিড। এই পিরামিডের সর্বোচ্চ চুড়ার ঠিক নিচে একটি বৃহদাকার চোখ রয়েছে। এটাকে বলা হয় ‘অল সিইং ওয়ান আই’। আবার একই দিক থেকে দেখলে জর্জ ওয়াশিংটনের একটি মাত্র চোখই দৃষ্টিগোচর হয়। তাই বর্তমান বিশ্বে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রকে অনেকেই বলেন নেতৃস্থানীয় ফ্রি-মেসন (Fremason) রাষ্ট্র। পর্দার আড়াল থেকে একটি গোপন প্রভাবশালী গোষ্ঠী দ্বারা রাষ্ট্রটি পরিচালিত হয়ে থাকে। ফ্রি-মেসন না হলে নাকি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়া যায়না। ফ্রি-মেশনদের প্রতীক এক চোখ। এই প্রতীক নেওয়া হয়েছে ফেরাউন এর প্রতীক ’কাবালা’ থেকে। ফ্রি-মেসনদের মন্ত্র ’ওয়ান ওয়ার্ল্ড অর্ডার’। একে ’নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার’ও বলা হয়ে থাকে। সারা দুনিয়াতে এই গোষ্ঠী অত্যন্ত সক্রিয় এবং প্রবলভাবে প্রতাপশালী। প্রায় সকল দেশের সকল রাষ্ট্র প্রধান সেনাপ্রধান তথা পুরো প্রশাসনে ডাইরেকটলী এবং ইন্ডাইরেকটলী এই গোষ্ঠীর প্রভাবে প্রভাবিত।

এদের নীতি এরকম যে, সকল কাজ এদের প্রভাবে সম্পাদন করা হয়ে থাকলেও, যিনি কাজটি সম্পাদন করেন, তিনি কখনও মনে করেন না যে, কাজটি তিনি অন্যের পুতুল হয়ে করছেন; বরং মনে করে থাকেন কাজটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে তিনি নিজেই করেছেন। সমসাময়িক বিশ্বের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সকল কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে এদের অদৃশ্য হাত দিয়ে, অত্যন্ত কাছাকাছি থেকে। কিন্তু নিয়ন্ত্রিত ব্যক্তি মনে করে থাকেন যে তার সকল কাজ সে নিজের ইচ্ছাতেই করছে ।

এদের রয়েছে অনেকগুলো সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য।

(১) সারা দুনিয়ায় একটি পার্লামেন্ট থাকবে
(২) প্রচলিত থাকবে এক রকমের বিধি-বিধান, আর
(৩) সর্বত্র সকল মানুষের জন্য থাকবে একটি মাত্র ধর্ম। আর সে ধর্ম মূলত শয়তানের ধর্ম – ’রিলিজিয়ন অব ডেভিল

এই ‘ডেভিলরাই’ দুনিয়াতে ‘এনডিওর ফ্রিডম‘  এর প্রবক্তা। এরা মানুষের জন্য রোগ-ব্যাধি, সমস্যা সৃষ্টি করে, আবার নিরাময় করার ক্ষমতাও রাখে তারাই। কথিত দজ্জালেরও এই একই রকম ক্ষমতা থাকবে।

দজ্জাল মানুষকে বেহেস্ত দোযখ প্রদর্শন করবে। মানুষ তা সচক্ষে দেখতে পাবে। দজ্জাল বৃষ্টি চাইলে বলা মাত্রই বৃষ্টি পড়া শুরু হবে এবং বেশীরভাগ মানুষ তা সত্য বলে মেনে নেবে। এটা হলো বহুলভাবে কথিত দজ্জাল, যে ঈসা (আ:) এর পুনরাবির্ভাবের সময়ে আবির্ভূত হবে, তার কথা। এই দজ্জালের কপালে বড় একটি চোখ থাকবে। ঈমানদরগণ তা দেখেই দজ্জালকে চিনতে পারবে। ঈসা (আ:) এর সময়কার দজ্জালের কর্মকাণ্ড হবে দজ্জালি কর্মকাণ্ডের পরিপূর্ণতার বা পারফেকশনের সময়। কিন্তু বর্তমান যুগে, ঈশা (আঃ) এর সময়কার দজ্জালের যারা উত্তরসূরি (ফোররানারস্) তারাই হচ্ছে ‘ফ্রি-মেসন’। এদের প্রতীক এক চোখ। অনেকে বলেন বর্তমান বিশ্বের প্রভাবশালী বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিশ্বের ব্যাংকিং ব্যবস্থা ইত্যাদি  এই গোষ্ঠীর অন্যতম হাতিয়ার । এদের কথা না শুনলে এরা যেকোন দেশকে তাৎক্ষনিকভাবে কলাপ্স করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। আবার শুনলেও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে যায়।

দজ্জালের ফেতনা

বেশির ভাগ মুসলমান মনে করে থাকেন যে, ঈসা (আ:) এর পুনরাগমনের সময়ে আবির্ভূত দজ্জালই কথিত একমাত্র দজ্জাল। এবং এই দজ্জাল নিধনের জন্য অনেকেই আমরা ঈসা (আ:) এর আগমনের অপেক্ষা করছি প্রতিনিয়ত। কিন্তু অবলীলায় ভুলে বসে আছি যে, হাদিসে প্রত্যেক মুসলমানকেই দজ্জালের ফেতনা থেকে নিরাপদ থাকতে বলা হয়েছে । ফলে এটা বুঝার অপেক্ষা রাখেন যে, দজ্জাল আগেও ছিল এখনও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। আর ঈসা (আ:) এর সময়ে আবির্ভূত দজ্জাল হবে সর্বোচ্চ সামর্থবান দজ্জাল। মোহাম্মদ (স:) সকল যুগের সকল দজ্জালকে চিনে নেওয়ার সুবিধার জন্যই নিদর্শণ হিসাবে ‘দজ্জালের এক চোখ থাকার নিদর্শনটির’ কথা বলে দিয়েছেন। তাই সর্বোচ্চ দজ্জালের যারা উত্তরসূরি হবে, সঙ্গত কারণেই তাদের প্রতীক হবে এক চোখ’। আর এই এক চোখ যাদের প্রতীক তাদের অস্তিত্ব শুরু থেকেই ছিল, এখনও আছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে এরা পরিচিত থাকলেও, বর্তমানে যে সম্প্রদায়ের প্রতীক এক চোখ তাদের নাম ’ফ্রি-মেশন’। সারা বিশ্বে সর্বময় আধিপত্য লাভ এদের এক মাত্র লক্ষ্য। বর্তমান বিশ্ব বস্তুত: এই ফ্রি-মেসনরাই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। সারা বিশ্বে ‘ওয়ান ওয়ার্ল্ড অর্ডার প্রতিষ্ঠা’ এদের একমাত্র লক্ষ্য। এই লক্ষ্য অর্জনে পরিপূর্ণতা বা পারফেকশনে পৌঁছবে, রাসূলুল্লাহ্ (সা:) এর কথিত, ঈসা (আ:) এর সময়ে আবির্ভূত দজ্জালের মাধ্যমে, যার কপালে থাকবে একটি চোখ। দুর্ভাগ্যবশত আমরা (মুসলিম বিশ্ব) ঈসা (আ:) এর সময় আবির্ভূত দজ্জালের অপেক্ষা করছি কিন্তু অবলীলায় বেখেয়াল হয়ে রয়েছি আমাদের সময়ের দজ্জালের কথা।

মুসলিম অনৈক্য

মুসলমানগন আজ বহুধা বিভক্ত। ছোট খাট বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে যুদ্ধের মত ফ্যাসাদ সৃষ্টি হতে দেখা যায় অনবরত । কেহ কেহ আবার কোর’আন-সুন্নাহ্ অনুসরণ না করে কোর’আন আধুনিকি করনের কথা ভাবছে। আসলে শয়তান যেমন বেহেস্তে একটি সূক্ষ্ম পথ ধরে আদম হাওয়াকে বিভ্রান্ত করেছিল, এই ’ফ্রি-মেশনদের’ হাতে পড়ে মুসলিম বিশ্ব আজ একই ভাবে দিশেহারা। আমরা আজ কেহ আধুনিক, কেহ ফান্ডামেন্টালিষ্ট, কেহ প্রগতিশীল। আমাদের এই বিভক্তির সুযোগ নিয়ে, কোরআন আধুনিকি করন সম্ভব না হলেও, বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত কোরআনে অনেক তথাকথিত আধুনিকতা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন বাংলা ইংরেজি তর্জমার মধ্যে এতটাই ফারাক যে, কোন কোন তর্জমা পড়ে যে কোন সুস্থ মানুষ ইসলাম বিদ্বেষী হয়ে যেতে বাধ্য। এরকম অনুবাদ বিভ্রাট ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রায় সর্বত্র সকল ভাষার সকল তাফসির তর্জমার মধ্যে। আর এই অনুবাদ বিভ্রাটে বিভ্রান্ত হয়ে অনেক মুসলমান ভুলেই গেছে যে শুধু নামাজ রোজা নয়, দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজের মধ্যে লুকিয়ে আছে জান্নাত লাভের নিয়ামক ।

ইসলামই একমাত্র সমস্যা

বর্তমান বিশ্বে ‘ওয়ান ওয়ার্ল্ড অর্ডার’ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ইসলাম সব চেয়ে বড় বাধা। তাই মুসলমানদেরকে যত বেশী ইসলাম বিদ্বেষী করা সম্ভব হবে, ফ্রি-মেশনদের লক্ষ্যে পৌঁছা হবে তত সহজ। এই লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যেই আজ ’আমাদের’ আর ’তোমাদের’ (With us or with the enemies) মধ্যে যুদ্ধ হচ্ছে সর্বত্র। যুদ্ধ শুরুর কারণ না থাকলেও কারণ তৈরি করা হচ্ছে। ইরাকে কথিত নিউক্লিয়ার বোমা পাওয়া যায়নি, তাতে কিন্তু মুসলিম দেশগুলোর বিশ্বাসও নষ্ট হতে দেখা যায়নি মিথ্যাবাদীদের প্রতি। ব্যাপারটা যেন আমাদের অনেকেরই ছোটকালে পড়া একটি কবিতার এই পঙক্তিটি মতো, ‘ভূত যদি না থাকে তবে কোত্থেকে হয় ভূতের ভয়’। যেমন আল-কায়দার মতো তথাকথিত বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংস্থার নাম যখন মিডিয়ায় আসে সেটা বাস্তবে থাকুক আর না থাকুক যেহেতু বলা হচ্ছে, তাই অবশ্যই আছে, এটা অনেক মুসলমানেরই এখন একান্ত বিশ্বাস । দজ্জাল এভাবেই মুসলমানদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করছে প্রতিনিয়ত। নাইন-এলে-ভেনের পর উত্তরমেরুর কাছাকাছি কানাডার এক টেরিটরি (প্রভিন্স) ‘নুনাবুটের’ একটি ছোট্ট শহর ’রেঙ্কিন ইনলেট’এ চাকুরী করতে গিয়েছিলাম। সেখানের একমাত্র সুপারমার্কেট ‘নর্দার্ন ষ্টোর’ থেকে বের হচ্ছিলাম, এমন সময় আট-নয় বছরের একটি ছেলে হঠাৎ আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল ’ডু ইউ নো ওসামা বিন্ লাদিন।’ আমি হতভম্বের মতো তার দিকে তাকালাম। আমার বিশ্বয়ের ঘোর না কাটতেই সে আবার জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘ইজ হি রিয়েল’। দুনিয়ার সকল সভ্যতা থেকে বিচ্ছিন্ন দুর্গম একটি জনপদের আট-নয় বছরের একটি বালকের মধ্যে ’বিন্ লাদিন’ বাস্তবে আছে কিনা এমন প্রশ্নের উদয় হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত একজন মুসলমানকেও আমি এরকম প্রশ্ন করতে দেখিনি। ’আল-কায়দা’ সত্যই বাস্তব, না কোন ইম্যাজিনরী সংগঠন এ প্রশ্ন অবশ্যই মুসলমানদের মনে উদিত হতো যদি না আমরা ঈশা (আঃ) এর সময় আবির্ভূত দজ্জালের জন্য অপেক্ষা না করে, ভাবতে পারতাম যে মোহাম্মদ (সাঃ) আমাদেরকে আমাদের সময়ের দজ্জালের হাত থেকেও সতর্ক থাকতে বলেছেন। ওসামা বিন্ লাদিন যখন আমেরিকার পক্ষে আফগানিস্তানে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল তখন আল-কায়দার নাম শুনা যায়নি। নাইন-এলেভেন এর আগে ‘আল-কায়দা’ নামে কোন টেরোরিস্ট সংগঠন ছিল বলে আমার জানা ছিল না।

নাম না থাকলেও নামের বোঝা মুসলমানদেরকে বহন করতে হয়

আরবিতে ‘আল-কায়দা’ অর্থ বিশেষ পরিকল্পনা (দি প্লেন)। কোর’আনের সুরা ‘আল-ফিল’ এ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে ‘কা’বা’ আক্রমণকারী ‘আব্রাহার’ পরিকল্পনা বর্ণনা করার জন্য। অপরদিকে ৯১১ (নাইন-এলেবেন) নর্থ-আমেরিকার একটি বিশেষ কোড নাম্বার। বিশেষ জরুরী কিছু বুঝার জন্য এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়। নাইন-এলেভেন (৯/১১), প্রকারান্তে নাইন-ওয়ান-ওয়ান (৯১১) নর্থ-আমেরিকায় বহুল ব্যবহৃত একটি কোড নাম্বার। বিশেষ জরুরি (ইমাজেন্সি) বুঝাতে এই কোডটি ব্যবহার করা হয়। ‌’আল-কায়দা’ অর্থ ‘দি প্লেন’ অর্থাৎ বিশেষ পরিকল্পনা। নাইন-এলেভেন এই বিশেষ পরিকল্পনারই একটি অংশ কিনা মুসলমানদের ভেবে দেখা উচিত । দজ্জাল সম্পর্কিত আল্লাহর রসূলের (সা:) ভবিষ্যৎ বাণীটি ভুলে না গেলে এই মহা পরিকল্পনার গুড়োতত্ব বুঝতে মুসলমানদের কষ্ট হওয়ার কথা ছিল না।

আগেই বলা হয়েছে ’ওয়ান ওয়ার্ল্ড অর্ডার’ প্রতিষ্ঠা ফ্রি-মেশন, যাদের প্রতীক এক চোখ, তাদের বিজয়ের চূড়ান্ত লক্ষ্য। অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে বর্তমানে এই গুষ্টি তাদের লক্ষ্য অর্জনে চূড়ান্ত বিজয়ের প্রায় কাছাকাছি। তাদের বিজয়ের পথে সর্বশেষ বড় বাধা ইসলাম। যুদ্ধ করার জন্য একটি শক্র পক্ষ দরকার। হলফ করে বলতে পরবেন। আগেই বলা হয়েছে, ফ্রি-মেশনদের নীতি হলো এমন যে, মানুষ তাদের অনুপ্রেরণায় কাজ করবে, কিন্তু এমন ভাবে অনুপ্রাণিত (ইনফ্লুয়েন্স) হবে যে, তাদের মনে হবে কাজটি যেন তারা নিজের ইচ্ছাতেই করছে। আল-কায়দা নামটির মাহাত্বও হয়তো এই একই রকম। পরিকল্পনা ফ্রি-মেশনদের, কিন্তু নামের বোঝা বয়ে বেড়াতে হয় তাদেরকে, যাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পনা করা হয়।

ভারতেও এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল সেই ব্রিটিশদের শাসন প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে।

ব্রিটিশদের ভারতে যে কায়দায় মসজিদ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠা করেছিল তার পিছনে ছিল দজ্জালেরই সুদূর প্রসারী মহা পরিকল্পনার একটি দীর্ঘ পদক্ষেপ।

ব্রিটিশ রাজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইসলাম রক্ষার স্বার্থে মুসলমানদের জন্য মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছিল এবং তা দেখে মুসলমানগন মহাখুশি হয়ে গিয়েছিল। সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশরা এতে মুসলমানদের কাছে রাতা-রাতি জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছিল। বিজিত ব্রিটিশ রাজ মুহূর্তে হয়ে গিয়েছিল পরাজিতদের একান্ত বন্ধু। কিন্তু উদাসীন মুসলমানগন আজও বুঝতে পারেনি যে এর ভিতর দিয়ে ইসলামের কত বড় ক্ষতি করে ফেলা হয়েছে। ইসলাম একটি সম্পূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। এই সম্পূর্ণ একটি জীবন ব্যবস্থাকে দু’টি ব্যবস্থায় বিভক্ত করে ফেলা হয়েছে এই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। ধর্মীয় কাজ নাম দিয়ে কালেমা, নামাজ, রোজা, যাকাত, হজ্জ ইসলামের এই পাঁচটি স্তম্ভকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে মাদ্রাসা-মসজিদের ভিতর। আর ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকুরী-বাকুরী, সমাজ-রাষ্ট্র পরিচালনা ইত্যাদি রেখে দেওয়া হয়েছে মাদ্রাসা-মসজিদের বাইরে। বলা হলো, এগুলো দুনিয়ার কাজ; তাই মন্দ কাজ। এবং মন্দ কাজ বলে কাজগুলো তা করার দায়িত্বভার রেখে দেওয়া হলো সরকারের নিজের হাতে। আর একাজে সহায়তার জন্য তৈরি করা হয়েছে স্কুল, কলেজ,ইউনিভার্সিটি। ফলে একদিকে মাদ্রাসায় শিক্ষিতদের অধিকাংশরাই কথিত দুনিয়াবি কাজে অকেজো হয়ে থাকলো; আর স্কুল-কলেজে শিক্ষা প্রাপ্তদের কাছে ধর্ম হয়ে থাকলো একটি অচেনা জগত।

কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো একই পরিবারে এক ভাইয়ের গায়ে লম্বা কোর্তা তুলে দিয়ে বলা হল সে খাটি মুসলমান আর অন্য ভাইয়ের গায়ে সার্ট পেন্ট  তুলে দিলো বলা হলো সেও নাকি ঠিক আছে। আর মাঝ খান থেকে একই পরিবারের দুই ভাইয়ের এক জনকে করে দেওয়া হলো অন্য জনের চিন্তাভাবনার তথা দৃষ্টিভঙ্গির শত্রু । ইসলামের আমল আকিদার মধ্যেও এভাবে তৈরি করা হলো নানা রকম বিভক্তি। মুসলমানগন গুনাক্ষরেও বুঝতে পারলোনা যে, কি সুকৌশলে ইসলামের স্তম্ভগুলো থেকে চাল-বেড়া সরিয়ে ফেলে স্তম্ভগুলোকে অরক্ষিত করে ফেলা হলো; এবং চাল-বেড়া কে করে ফেলা হলো অবহেলিত ও অকেজো। আর সময়ের বিবর্তনে ইসলামের অরক্ষিত স্তম্ভগুলিতে এক সময়ে পচন ধরেছে, আর আজকে তাতে পোকা পড়ে অনেকের কাছে তা অপাংতেয় হয়ে গেছে। একই ধারাবাহিকতার প্রতিফলন রয়েছে বিভিন্ন ফিরকাহবাজি দল উপদল তৈরির মধ্যমেও । এভাবেই দজ্জাল মুসলমানদেরকে সঠিক ইসলামী আকিদা থেকে সুনিপুনভাবে দুরে সরিয়ে দিয়ে নিজের আধিপত্যের পরিধি বিস্তৃত করছে প্রতিদিন। কিন্তু মনে রাখবেন, ইসলাম একটি সম্পূর্ণ জীবন ব্যবস্থা এবং আল্লাহ্ মানুষের সকল কাজের বিচার করবেন। তাই কেহ যদি জীবনের একটি ছোট কাজও আল্লাহ্’র আইন না মেনে সম্পাদন করে তাহলে ইবলিশের মতো ঐ ছোট্ট কাজটিও জাহান্নামের জন্য যথেষ্ট হয়ে যেতে পারে।

তথাকথিত আধুনিক মুসলিম

মুসলমানদের মধ্যে অনেকেই আজ কাল নিজদেরকে আধুনিক মুসলিম বলে পরিচয় দিয়ে থাকে। অনেককে আবার নিজদেরকে প্রগতিশীল আধুনিক হিসাবে উপস্থাপন করে আত্মতৃপ্ত পেতে দেখা যায়। প্রগতিশীল আধুনিক হওয়ার সহজ উপায় হিসাবে বেঁচে নেওয়া হয় ইসলাম বিদ্বেষ! সততা, শালীনতা এরকম গুনগুলোকে আজ-কাল মধ্যযুগীয় মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ বলে ধরে নেওয়া হয়। আর হয়তো এজন্যই ‘জাম্বিয়া সুগারে’ আমার এক ব্রিটিশ সহকর্মী আমাকে আমার রিজিউমে থেকে ‌‌‌‌‌’অনেস্টি’ (সততা) শব্দটি বাদ দিয়ে দেওয়ার উপদেশ দিয়েছিলেন। আজকাল যে নারী শরীর থেকে যত বেশী কাপড় চোপড় নিষ্কাসন করে ফেলতে পারে তাকেই তত বেশী আধুনিক মনে করা হয়। আগে মিথ্যা বলাকে মহা পাপ কাজ বলে ধরে নেওয়া হতো। আর আজ কাল যে যত বেশী কায়দা করে মিথ্যা বলে ফায়দা লুটতে পারে তাকে ধরে নেওয়া হয় তত বেশী বুদ্ধিমান চৌকশ (স্মার্ট)। আর এই খেতাব প্রাপ্তির প্রতিযোগিতায় অনেক মুসলমানকেই অনেক ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। এতে দুনিয়া কিছুটা অর্জিত হয় হয়তো, কিন্তু হেদায়েত না মেনে চলার কারণে আখেরাতের পাথেয় অর্জিত হয় না। কিন্তু দুনিয়াটাই যে মানব জীবনের সমাপ্তি নয়; ডাইরেক্টলী হোক বা ইনডাইরেক্টলী হোক, দুনিয়ার প্রত্যেকটি লোক তা বিশ্বাস করে থাকে। আর প্রকৃত পক্ষেও তাই, পৃথিবীটা মানুষের অনন্ত জীবন পথের একটি ক্ষুদ্রাংশ মাত্র।

উপসংহার

দুনিয়াতে বেঁচে থাকার জন্য যেমন খাদ্যের প্রয়োজন হয়, তেমনি ভাবে, সামনে চলার জন্যও প্রয়োজন হয় পর্যাপ্ত রসদ পত্র। ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় রসদ পত্র অর্জনের মাধ্যমকে ধর্মীয় পরিভাষায় এবাদত বলা হয়। এবাদতের সুযোগ উন্মুক্ত থাকে শুধু মৃত্যু পর্যন্ত। আর এজন্যই কোরআনে, সম্মুখের অনাগত অফুরন্ত পথ চলার সামগ্রী এখনই উপার্জন করে সামনের দিকে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। (সূরা  হাশর-৫৯/১৮)।
মনে রাখবেন, সামনে যা পাওয়া যায় তার থেকে খারাপ দিক গুলোকে আঁকড়িয়ে ধরা আধুনিকতা নয়; অধুনিকতা হলো অতীত অভিজ্ঞতা ও বর্তমান উদ্যোগের (ইনিশিয়েটিভ) সমন্বিত মানবিক সংস্করণ। কিন্তু ‘ফ্রি-মেশন’ সংস্করণের নামে মানবতা সংরক্ষণের যে সমাধানের কথা বলে তা কোন পরিক্ষিত সমাধান নয়। কোর’আন-সুন্নাহ্ অধ্যয়ন করুন, দেখবেন মানবতা সংরক্ষণের জন্য এর চেয়ে আধুনিক এবং উৎকৃষ্ট আর কোন সংস্করণ নেই।

********************************************************************

রেফারেন্স:
Masonic Webs:
1. The Masonic New World Order: http://www.theforbiddenknowledge.com/hardtruth/masonic_nwo.htm
2. How Freemasons Work: http://science.howstuffworks.com/
3. History of Freemasonry & New World Order – Knowledge of Today: http://www.knowledgeoftoday.org/2012/02/history-of-freemasonry-new-world-order.html
4. FreeMasons New World Order Part 1/7: https://www.youtube.com/watch?v=J4DzFSTuXkw
5. What’s Behind The New World Order: How It Will Affect You!

About ওয়াহিদুর রহমান

লেখক একজন কষ্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট একাউন্ট্যান্ট। ইসলামের মৌলিক বিধি-বিধানের উপর গবেষনা মূলক চিন্তা ভাবনা করে থাকেন। কম্পারেটিভ ধর্ম চর্চা লেখকের একটি পুরনো অভ্যাস। লেখকের গবেষনা মুলক গ্রন্থ ‘ইসলাম ও আমাদের দৈনন্দিন জীবন’ সমাপ্তির পথে। বইটি টরন্টস্থ বাংলা সাপ্তাহিক ‘দেশের আলো’ পত্রিকায় অনেকদিন থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। লেখক টরন্টস্থ ’বৃহত্তর নোয়াখালী এসোসিয়েশন ওন্টারিও’ এর বর্তমান প্রেসিডেন্ট।

Comments are closed.