তাঁর মুখ বন্ধ করতে হবে?

ডা. জাকির আব্দুল করীম নায়েক ইসলাম ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের উপর বর্তমান বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম গবেষক ও বাগ্মীদের অন্যতম। অনন্যসাধারণ প্রতিভাধর ‘দাঈ ইলাল্লাহ’ (আল্লাহর পথের একজন প্রচারক) হিসাবে তিনি সারাবিশ্বে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছেন। গত শতকের মধ্যভাগে ভারতীয় বংশোদ্ভূত দক্ষিণ আফ্রিকান নাগরিক শায়খ আহমাদ দীদাত (১৯১৮-২০০৫) বিভিন্ন ধর্ম ও বস্ত্তগত বিজ্ঞানের সাথে তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ইসলাম প্রচারের এক নতুন ধারার প্রয়াস শুরু করেন। ডা. জাকির নায়েক এই ধারার সফল পরিণতিই কেবল দান করেন নি বরং মুসলিম সমাজে প্রচলিত নানাবিধ কুসংস্কার ও নবাবিষ্কৃত আচার-আচরণ তথা শিরক-বিদ‘আতের বিরুদ্ধেও একটি ধারার সূচনা করেছেন। অতি অল্প সময়ে তিনি ‘পীস টিভি’র অনুষ্টানের মাধ্যমে ব্যাপক পরিচিতি পান।

 আজকের লিখার উদ্দেশ্য বর্তমানে মিডিয়ায় বিশেষকরে ভারত ও বাংলাদেশের একটি গোষ্ঠী ও ইসলাম বিদ্বেষী মহল তাঁকে সম্প্রতি ঢাকার গুলশানে  আর্টিসান রেঁস্তোরার সন্ত্রাসী হামলার সাথে যেভাবে জড়াতে চাচ্ছে সে বিষয়ে কিছু আলোচনা করা।

আসলে একজন মুসলিম হিসাবে কারো বিরুদ্ধে অপপ্রচার হচ্ছে দেখে নীরব থাকা অবশ্যই কোন মুসলিমের সুস্থ মানসিকতার লক্ষণ নয়। শুধু মুসলিম কেন যে কোন বিবেকবান মানুষের পক্ষে নীরব থাকা সম্ভব নয়।

বলা হচ্ছে “পিস টিভির উদ্যোক্তা জাকির নায়েকের বিতর্কিত কথায় তরুণরা জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ছে” কিন্তু “বিতর্কিত কোন কথা”? সেটা কেউ বলতে চায় না! কিংবা সে কথাটাইবা কি ছিল? তা মিডিয়া প্রকাশ করছে না!

তাছাড়া বলা হচ্ছে “ইতিমধ্যে মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য ও কানাডায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে পীস টিভি’র সম্প্রচার” এ খবরটাও সম্পূর্ন সঠিক কি না তা জানার দরকার আছে বলে কারো গরজ নাই!

আমি যতটুকু জানি কয়েক বছর আগে কানাডায় এক সম্মেলনে আসতে জাকির নায়েক ভিসা পাননি একইভাবে যুক্তরাজ্য তাঁর ভিসা বাতিল করে চিঠি দিয়েছিল তবে পিস টিভি নিষিদ্ধ হওয়ার কোন খবর আমরা শুনি নাই। মালয়েশিয়ায় তিনি নিষিদ্ধ হন নি। আমি সামাজিক মিডিয়ার এমন তথ্যের উল্টোটাই দেখেছি। ফেইস বুকের এক পোষ্টে এই তথ্যের  অস্বীকৃতি এখানে দেখা যাচ্ছে।

ডাক্তার  জাকির নায়েক তাঁর ডাক্তারি পেশা ত্যাগ করে ইসলাম প্রচারে যেভাবে নিজের জীবন, সময় আর অর্থ ব্যয় করেন, তার প্রতি একজন মুসলিম হিসাবে আমার শ্রদ্ধাবোধ জাগে।  লাখ লাখ মুসলিম যেহেতু জাকির নায়েককে একজন ইসলাম প্রচারক হিসাবে জানেন এবং তাঁর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেন, এমনকি ইসলাম বিষয়ে তাঁর উপস্থাপনা ও বক্তব্য শুনে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অমুসলিম জনসম্মুখে নিজেদেরকে মুসলিম হওয়ার বাসনা প্রকাশ করছেন এবং  ডাক্তার  জাকির নায়েক তাদেরকে শাহাদতের কলেমা পড়াতেও পিস টিভিতে দেখা যায়।। আধুনিক বস্তুতান্ত্রিক বিশ্ব ব্যবস্থায় ইসলামের প্রচারে নিবেদিত এরকম একজন ব্যক্তিত্বকে অবজ্ঞা করা কোন ন্যায্য কাজ হতে পারে না। কারো মত ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু ভিন্নতা সৌন্দর্য সংযোগ করে। ইসলামেও তাই। হাদিসে ভিন্ন মতকে রহমত বলেও উল্লেখ হয়েছে।

জাকির নায়েক সাহেবের কাজের সফলতা বিশ্ব-জোড়া। কেবল ভারতে বর্ণবাদী বিদ্বেষ ও সামাজিক প্রবঞ্চনায় যারা যুগ যুগ ধরে নিষ্পেষিত এমন হাজার হাজার লোক তাঁর দাওয়াতে সাড়া দিয়ে,  ইসলামের ছায়াতলে এসে, নিগ্রহ থেকে মুক্তি পাচ্ছেন। ভারতে এবং গোটা বিশ্বে জাকির নায়েক সাহেবের শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় প্রচারণার সফলতা দেখে ইসলাম বিদ্বেষী মহলগুলো দারুণভাবে ক্ষুব্ধ, ভিতরে ভিতরে জ্বলে পুড়ে ছাই হচ্ছে। তাই যেকোনোভাবে তার মুখ বদ্ধ করতে চলছে তাদের পায়তারা।

ধীশক্তি সম্পন্ন যেকোনো লোকের পক্ষে এটা উপলব্ধি করা সম্ভব যে আইসিস নামের সন্ত্রাসী দলকে বিভিন্ন দেশে সৃষ্টি করা হয় বহুমুখী ষড়যন্ত্রের বীজ বপনের উদ্দেশ্যে। এসবের মধ্যে ঔপনিবেশবাদী উদ্দেশ্য অন্যতম। সন্ত্রাসবাদ একটি বাস্তবতা এবং এই ঘুড়ির সুতো তাদেরই হাতে। ঔপনিবেশিক উদ্দেশ্যের সাথেই সংযুক্ত সন্ত্রাসের বাস্তবতা কিন্তু এটিকে ইসলামের সাথে সংযুক্ত করে চালাতে লালিত হয় এক শ্রেণীর মিডিয়া। এরা নিবেদিত প্রাণ। এরা খুটে খুটে মুসলিম জাতিকে সন্ত্রাসী দেখাতে চায় এবং এই সন্ত্রাস দমনে তাদের উপস্থিতি ও প্রয়োজন দেখাতে চায়। এটা চলছে সর্বত্র।

লক্ষ্য করা যাবে যে যখনই কোন দেশে অপরাধীরা সন্ত্রাসী কাণ্ড ঘটায় সাথে সাথে আইসিস কোথাও থেকে সেই জঘন্য কর্মের দায়িত্ব নিতে এগিয়ে আসে! আর মিডিয়া এসব খবরকে এমনভাবে প্রচার করে যাতে মুসলিম এবং ইসলামকে ভূতে ধরেছে বলে বিশ্বজুড়ে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানো যায়। মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অজুহাত তৈরি হয়, তাদের দেশ দখল করা যায়, তাদের উপর বোমা ফেলা যায়। তাছাড়া, পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীর বিশেষ একটি মহল ও যুদ্ধ ব্যবসায়ীরা তাদের অস্ত্র শিল্পের মুনাফা অর্জনে মুসলিম দেশগুলোর স্বৈরাচারী শাসকদের সঙ্গে বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারে।

 অন্যদিকে, তৃতীয় বিশ্বের অত্যাচারী শাসকদের বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে, সময় বুঝে  covert operations বা ফল্স ফ্ল্যাগ অপারেশন ঘটানো হয়। তারপর এগুলো এমনভাবে অর্কেস্ট্রেইট করা হয় যাতে সাধারণ মানুষের কাছে মূল পরিকল্পনাকারী অদৃশ্য থাকে, এবং সর্বসাধারণ এটিকে কোনো বিশেষ গ্রুপের কাজ বলে মনে করে নেয়।

জাকির নায়েকের কোন বক্তব্য সন্ত্রাসবাদকে উসকে দেয় বলে কোন প্রমাণ নেই। কিন্তু তাতে কিছুই যায় আসে না। মিডিয়া তাকে সন্ত্রাসী-সংযুক্তিতে প্রচার করতে পারাটাই সার্থকতা।  ইদানীং ঔপনিবেশপুষ্ট মিডিয়াচক্র তাই করছে।

বাংলাদেশে  ডাক্তার  জাকির নায়েকের  ভক্ত প্রচুর যা ভারতীয় বর্ণ হিন্দুরা  ভালভাবেই জানে। তা’ই ভারতে পিস টিভি নিষিদ্ধ হল। শীঘ্র তা বাংলাদেশে হয়ে যেতে পারে। কারণ বন্ধুপ্রতীম দেশের ইচ্ছা এবং বিশেষ করে বন্ধুরাষ্ট্র যখন আমাদেরই নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কিছু করতে চায়, তখন তা তো ফেলে দেয়া যায় না! তবে বাংলাদেশে জাকির নায়েক নিষিদ্ধ হলে দেশের ভিতরের ধর্ম ব্যবসায়ী, বিশেষ করে মাজার পূজারী,পীর পূজারী ও ইসলাম বিদ্বেষী মহল খুশি হবে –একথাও আমাদের জানা।

Peace TV

মূল কথা হল গুলশান ট্রাজেডিকে হাতিয়ার বানিয়ে আজ যা করা হচ্ছে তা খুবই উদ্বেগের বিষয়। আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীনদের অনেকেই হয়তবা এতে খুশী নন কিন্তু কিছু করার উপায় নাই। কারণ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার যে রাস্তা ক্ষমতাসীনরা বেছে নিয়েছেন তার প্রকৃতি তারাই ভাল জানেন। একটি স্বাধীন দেশের রাজনৈতিক অবস্থান এমন হওয়া উচিত যাতে জনগণের আস্থাই হবে মুখ্য হবে– কোনো বিদেশী শক্তির আস্থা নয়। কিন্তু অবস্থা আজ এলোমেলো। তাই বলতে হচ্ছে, উপায় নাই গোলাম হোসেন!

শেষ কথা

চিন্তা করুন, মক্কার প্রাথমিক যুগে শক্তিশালী কুরাইশ মুশরিকগণ কিভাবে ইসলামের অগ্র যাত্রা স্তব্ধ করতে চেয়েছিল? দৈহিক মানুষিক সামাজিক বয়কট সহ এমন কোন অত্যাচার বাকী ছিলনা যা মুসলিমদের উপর প্রয়োগ করা হয় নাই তখন। এক পর্যায়ে দুর্বল মুসলিমদেরকে বাধ্য হয়ে জন্মভূমি ত্যাগ করতে হয়ে ছিল। আল্লাহর নবীও তার জন্ম স্থান মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করতে বাধ্য হয়েছিলেন। তবে এই সবই পরবর্তীতে এক সময় মুসলিম উম্মাহর জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেয়।

সেদিন আমার এক তুরস্কের বন্ধুর সঙ্গে সামাজিক মিডিয়ায় উপরে বর্ণিত বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলাপ হচ্ছিল। তিনি বললেন আজ বাংলাদেশে যে অবস্থা চলছে তা হুবহু তুর্কির মুসলিমরা পেরিয়ে এসেছেন। অবস্থা নাকি এমন ছিল যে সেনাবাহিনীতে কার স্ত্রী সর্ট স্কার্ট না পরে লম্বা জামাকাপড় পড়ত তা দেখে পদোন্নতি হত। রমজানের সময় কার ঘরে শেষরাতে বাতি জ্বলে তা রেকর্ড করার দায়িত্ব ছিল পুলিশের। এক কথায় মুসলিম হিসাবে জীবন যাপনে সীমাহীন দুর্ভোগ ও কষ্ট স্বীকার করতে হত তাদেরকে। সেই  তুরষ্কের অবস্থা এখন কত তফাৎ। আর এ সবই সম্ভব হয়েছিল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পরিবর্তনের মাধ্যামে। সন্ত্রাসী হামলা তুরস্কেও হয়েছে কিন্তু তাই বলে তারা ইসলামী টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দেয় নাই। আজ মুসলিমদের সবচেয়ে বড় কাজ হল নিজেদের মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং নিজেদের মাঝের মুনাফিকদের চেহারা উন্মোচন করা। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক পার্থক্যের সুযোগ নিয়ে যেসব মুসলিমরা বা মুসলিম দেশের শাসকেরা আজ  ইসলাম ও মুসলিম বিদ্ধেষীদের  গাড়ীতে (wagon)  চড়ে বসেছেন তা থেকে নেমে আসার চেষ্টা না করলে তারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনছেন একথা বুঝাতে হবে।

আজ ফেবুতে এক ভদ্রলোক লিখেছেন, “জাকির নায়েকের ইসলাম প্রচারের কর্মপদ্ধতির অবদান ও প্রভাব বুঝতে হলে ফিক্বহের কিতাব নয়; অমুসলিমদের দাওয়াত, নাস্তিক্যবাদ, ইসলামের সৌন্দর্য এসব বিষয় নিয়ে পড়তে হবে। একজন তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের ছাত্র তাঁর অবদান যতটা অনুভব করতে পারবে, সেটা আর কেউ পারবে না। সবচেয়ে বড় কথা, ভুল ও শুদ্ধ মিলিয়েই মানুষ। দুনিয়ার সব দাঈর দাওয়াহ পদ্ধতি আমার মানদণ্ড অনুযায়ী হতে হবে, এমনটি জরুরি নয়। আজ এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার বড় বেশি প্রয়োজন বিশেষ করে বর্তমান বিশ্বের ইসলাম ও মুসলিম বিদ্ধেষীদের যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিজয়ী হতে হলে।”

বাংলাদেশে জাকির নায়েক ভক্তদের পরিচালিত একটি ফেবু পেইজ

Dr. Zakir Naik’s official Facebook FB Zakir

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *