রিয়েল এস্টেট ফ্যাসিলিটি এবং ব্রোকার সার্ভিসের শীর্ষ একজন একজিকিউটিভের সাথে আলাপ হচ্ছিল। তিনি বললেন, চেন্নাইয়ে বছরে, ৪০ লক্ষ স্কয়ার ফিট নতুন অফিস স্পেস হয়, বড় কর্পোরেট এবং নতুন বিজনেসের জন্যে । ২০০৭ এ যখন ইন্ডিয়ার গ্রোথ খুব ভাল ছিল, তখন চেন্নাই করেছে ৬৫ লাখ স্কয়ার ফিট। আবার ২০১১ এ যখন রিসেসান যাচ্ছে তখন করেছে মাত্র ১৭ লাখ।
তার মানে তাদের ডাটা একটা ধারাবাহিকতা আছে।
আমি সব সময়ে, রিয়েল ইনডিকেটর খুজি। মনে হচ্ছিল, তার কাছে ভাল কিছু জানা যাবে। প্রশ্ন করে আরো জানলাম, এখন সব চেয়ে বেশী গ্রোথ বেঙ্গালোরে – তারা বছরে সৃষ্টি করছে প্রায় ৭০ লাখ স্কয়ার ফিট। এই ভাবে মেজর সিটি গুলো ৩০ লাখ থেকে ৫০ লাখ স্কয়ার ফিট নতুন অফিস স্পেস বানাচ্ছে, অনেক জায়গায় যার প্রায় ৫০% এই কোম্পানিটা ফেসিলিটি ম্যানেজ করে এবং ব্রোকার করে দেয় এমএনসিদেরকে ।
এই ডাটাটা আমার কাছে সত্যি ইন্টেরেস্টিং লেগেছে। কারন জিডিপি গ্রোথের হিসাব থেকে অনেক কিছু ধরা যায় না এবং সেই খানে অনেক ফাকি থাকে। কিন্তু, এই ডাটাটা থেকে অনেক রিয়েল ইন্ডিকেটর বোঝা যায় এবং জিডিপি ডাটার ফাকি বোঝা যায় । এবং, বাংলাদেশের বড় শহরগুলোতে এই ডাটাটা আছে কিনা এবং থাকলে সেইটা কি জানার খুব ইচ্ছা আছে।
আসেন, আমরা চেন্নাইয়ের ডাটাটাকে ইন্টেরপ্রেট করি।
আমরা জেনেছি, চেন্নাইয়ে বছরে ৪০ লাখ স্কয়ার ফিট নতুন অফিস স্পেস হচ্ছে। আধুনিক অফিস স্পেসে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত একটা স্ট্যান্ডার্ড হলো, একজন অফিস একজিকিউটিভের জন্যে এভারেজ ৩০ স্কয়ার ফিট জায়গা লাগে( ব্যবহৃত এবং অব্যবহৃত মিলিয়ে)।
ফলে, আমরা দেখতে পাই প্রতি বছর ৪০ লাখ ভাগ ৩০ স্কয়ার ফিট= ১.৩ লক্ষ নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয় চেন্নাই শহরে শুধু মাত্র ব্লু কলার এমপ্লয়িদের জন্যে। (আইটির জন্যে আরো কম স্পেস লাগবে, তবুও আমি এইটা এভারেজ ধরলাম)। ই ভাবে ভারতের বড় শহর গুলো হিসেব করলে দেখবেন, তারা বছরে প্রায় ৫০ লক্ষ সরাসরি নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করছে।
এবং ৪০ লক্ষ স্কয়ার ফিটকে যদি অন্য ভাবে দেখি, তাতে আমরা দেখি একটা বড় বিল্ডিংকে যদি ৪০ হাজার স্কয়ার ফিট ধরি তবে, ১০০ টা বিশাল বড় আকারের এভারেজ ৪০,০০০ স্কয়ার ফিটের চার তলা বিল্ডিং গড়ে উঠছে চেন্নাই শহরে প্রতি বছর।
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এই ডাটাটাকে বোঝার জন্যে, বাংলাদেশের ঢাকা বা চিটাগান কত গুলো নতুন অফিস স্পেক এবং কত লক্ষ স্কয়ার ফিট যোগ হয়েছে এইটা জানার ইচ্ছা আছে।
কিন্ত, তবুও যদি নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে ধরি আমরা দেখতে পারি ঢাকা বা চট্টগ্রাম শহরে এই ধরনের গড়ে ৪০ হাজার স্কয়ার ফিটের বড় অফিস স্পেস, মতিঝিল, গুলশান, ধানমন্ডি এবং মিরপুর এলাকা সহ বাকি এলাকা গুলোতে বিগত পাচ বছরে, খুব বেশি হলে ৪০ থেকে ৫০ টা হয়েছে। আপনি নাম ধরে বলে দিতে পারবেন।
আমি অনেক রাফ হিসাব করছি। এবং শুধু ঢাকা শহরের কথা বলছি, ফরমাল লোকাল এবং এমএনসি কর্পোরেট সেক্টরের কথা বলছি। সঠিক ডাটা থাকলে, এইটা আরো ক্লিয়ার হতো। আবার এইটাও ঠিক, ঢাকা, চিটাগং বাদে বাংলাদেশের ফরমাল কর্পোরেট সেক্টর নাই বললেই চলে। কারন, বাংলাদেশের সকল ব্যবসার কেন্দ্র ঢাকা মুখি।
তাহলে কি দেখা যাচ্ছে, ঢাকা শহরে বছর বেশি হলে ৪ লাখ স্কোয়ার ফিটের বেশি নতুন স্পেস হচ্ছেনা। এবং তাতে কর্পোরেট ফরমাল সেক্টরে ৪ লাখ ভাগ ৩০ স্কয়ার ফিট=১৩ হাজারের বেশি নতুন জব সৃষ্টি হচ্ছেনা। ভয়াবহ!!! ডাটাকে দেখলেই মনে হয় ভুল। কিন্তু, অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, অবস্থা এর থেকে বেশি ভালো না।
সাবধান। আমি এইটা দেশের পুরো বেকারত্বকে ইন্ডিকেট করছিনা। এইটা শুধু মাত্র ঢাকা কেন্দ্রিক লোকাল এবং মাল্টি ন্যাশনাল কর্পোরেট জবের কথা বলছি, যারা সাধারনত নতুন বড় বিল্ডিং গুলো অকুপাই করে। আপনি বলতে পারেন, সেইটা একটা ক্ষুদ্র সেক্টর কিন্তু, সেইটাও যে একটা একটা গুরুত্তপুরন ইন্ডিকেটর, সেইটা আপনি চেন্নাইয়ের ৪ লাখ আর ঢাকার ১৩ হাজারের সাথে তুলনা করলে বুঝতে পারবেন।
প্রস্ন রয়ে যায়, ঢাকায় ফরমাল কর্পোরেটরা, ১৩ হাজার নতুন জব সৃষ্টি করলে, পুরো দেশের ইকনমি কতগুলো নতুন জব সৃষ্টি করেছে। এই দুইটার লিঙ্ক টা কি। ইন্ডিয়ার রেশিও কি, বাংলাদেশের রেশিও কি। তাইলে ধরা খাবে, আমাদের ৫% বেকারত্বের হাস্যকর সরকারি ডাটাশাক।
এখন আমরা চলে যাই, গতকালের এইচএসসির রেজাল্টে ।
ফেসবুকের সবাক নিরবাক www.facebook.com/ftaiyeb ভাইয়ের এক্সেলেন্ট একটা নোট http://goo.gl/rjZdOy থেকে আমরা জানতে পারি। এই বছরে,এইচএসসি, আলিম , কারিগরি মিলে ১১ লক্ষ শিক্ষার্থী পরিক্ষা দিয়েছে।এদের মধ্যে পাশ করেছে ৬,৯৯,৯৬৮ জন এবং তাদের মধ্যে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাবে ২,১৯,২২৯। যাদের মধ্যে, ধরে নেই ৭০% মানে বেশী হলে ১.৫ লাখ গ্রাজুয়েশান করে বের হবে। আমরা আরো জানি, প্রতি বছর প্রায় ১৪ লক্ষ ছাত্র এসএসসি পরিক্ষা দেয়।
তার মানে, বিগত বছর গুলোতেও সমপরিমান শিক্ষার্থী পরিক্ষা দিয়ে, প্রতি বছর এভারেজে ১.৫ লাখ গ্রাজুয়েট চাকরির বাজারে ঢুকছে। এইটা ধরে নেয়া যায়।
অন্য দিকে, আমরা দেখি তামিলনাড়ু স্টেটে প্রায় ৮.৫ লক্ষ ছাত্র এইচএসসি পরিক্ষা দেয়। এবং সারা ভারতে বছরে ৫০ লক্ষ নতুন গ্রাজুয়েট পাস করে প্রতি বছর। যার মধ্যে ৬ লাখ আইটি গ্রাজুয়েট। (তামিলনাড়ুর ডাটাটা পেলাম না)
এই ডাটা গুলো থেকে, অনেক কিছু ইন্টারপ্রেট করার আছে।
১। প্রতি বছর ১৪ লক্ষ এসএসসি মানের ছাত্র চাকরির বাজারে আসে, যাদের মধ্যে ১০ লক্ষ এইছএসএসি কোয়ালিফাই করা এবং ১.৫ লক্ষ গ্রাজুয়েট কোয়ালফাই করা। এইটা একটা ভয়াবহ ব্যাপার যে, বাংলাদেশের ১৪ লক্ষ এসএসসি পাশ করার ছাত্রের মাত্র ১০% গ্রাজুয়েশান করে।
২। ভারতের শুধু মাত্র চেন্নাই শহরে, ৮.৫ লক্ষ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর জন্যে ৪ লক্ষ ব্লু কলার চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয় শুধু মাত্র চেন্নাইয়ে, (যারা পুরো তামিলনাড়ু থেকেই আসে বটে, কিন্তু চেন্নাই বাদেও তামিল নাড়ুতে আর বড় বড় শহর আছে যেখানে একই ধরনের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে)। বাংলাদেশে প্রতি বছর মাত্র ১০ লক্ষ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর জন্যে, গ্রাজুয়েশান শেষ করে ১৩০০০ চাকরি সুযোগ হয় ঢাকায়।(দেশের অন্য জায়গাতেও হয়)। এই গ্যাপটা দেখতে পেয়ে এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার না থাকার কারনে, ১০ লক্ষের মধ্যে মাত্র ১.৫ লক্ষ গ্রাজুয়েশান শেষ করে।
ফলে যারা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ব আইটি ইন্ডাস্ট্রির বড় টার্গেট তারা ভুল করবেন। আমাদের দেশে বিগত দশ বছরে, বেশী হইলে ১৫ লক্ষ গ্রাজুয়েট সৃষ্টি হইছে। এবং আমাদের হায়ার এডুকেশান শুধু মাত্র কোয়ালিটির দিক থেকে না কোয়ান্টিটির দিকেও ভয়াবহ পিছিয়ে।
৩। চেন্নাইয়ের সাউথে, গাড়ি নিয়ে এক ঘণ্টা আগালে দেখবেন, প্রচুর বিশাল বিশাল নতুন বিল্ডিং হচ্ছে এবং তার সামনে হাজার হাজার স্কুটার বাইক। লক্ষ লক্ষ মানুষ ঢুকছে বের হচ্ছে। ফলে, ডাটার সাথে বাস্তবতার একটা দৃশ্যমান মিল দেখতে পাবেন। কিন্তু, আমাদের দেশে নাকি সরকারি হিসেবে বেকারত্ব ৫% । অথছ, মাত্র ১.৫ লক্ষ গ্রাজুয়েটের জন্যে যে ইনফ্রাস্ট্রাকচার হওয়ার কথা প্রতি বছর সেইটা আমরা গড়ে উঠতে দেখি না। ফলে, আমাদের এই ৫% বেকারত্বের ডাটাতে একটা ব্যাপক ডাটাশাক রান্না করা হইছে।
৪। আমরা এক দিকে যেমন মান সম্মত গ্রাজুয়েট তৈরি করছিনা, আরেক দিকে যথেষ্ট গ্রাজুয়েট তৈরি করছিনা কারন সেই ইনফ্রাস্ট্রাকচার আমাদের নাই। এবং এই কারনে, গ্লোবাল আইটি ইন্ডাস্ট্রির কাছে আমাদের তেমন কোন গুরুত্ত নাই। আমাদের না আছে যথেষ্ট প্রগামার, না আছে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠী, না আছে বিপিও ইন্ডাস্ট্রিকে স্কেল করার মত যথেষ্ট গ্রাজুয়েট।
৫। একটু তুলনা করলেই দেখা যায় ভারত( চায়না,ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন এই সব বাদ দিলাম) যে গতিতে আগাচ্ছে, তার সাথে আমাদের কোন তুলনাই হয়না। আমাদের কোন আইডিয়া নাই, আমরা কোথায় পড়ে আছি। এবং রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে বিভোর হয়ে, আমরা আমাদের সকল সম্ভাবনাকে ধ্বংস করছি।
৬। আমাদের দেশের নতুন চাকরির গ্রোথ ভয়াবহ। এইটা সরকার ডাটা শাক দিয়ে, রান্না করে ঢেকে রাখছে। অথছ সরকারের ইকনমিক পলিসির প্রধান ইস্যু হওয়ার কথা হলো নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি এবং পুরাতন চাকরির ধারাবাহিকতা। বাকি সব ফাও।
কিন্তু, শুধু মাত্র ৫% বেকারে বাকি সবাই শান্তি সুখে আছে দাবী করে, সরকার আমাদের দৃষ্টি বিভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে রেখেছে।
৭। এই দেশকে রিসেট করে,নতুন করে স্টার্ট করতে হবে। এডুকেশানে বিনিয়োগ করতে হবে। এডুকেশান ইনফ্রাস্টরাকচার করতে হবে। ক্যাপাসিটি কোয়ালিটি দুইটাই বাড়াতে হবে। এই জন্যে দূর শিক্ষনের জন্যে আইটি এনাবল্ড মুক বেজড এডুকেশান সিস্টেম তৈরি করতে হবে।
৮। আমাদের দেশে ১৬ কোটি মানুষ থাকতে পারে, কিন্তু, আমাদের স্কিলড ছাত্র এবং প্রফেশনালের ব্যাকপ সঙ্কট আছে।
৯। আল্লাহ, আমাদের এই ভয়াবহ অবস্থা ক্যান ??