চলছে হুজুগের বাঙালি এবং বাঙালির হুজুগ

ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি, বিশ্বের খ্যাতনামা বিজ্ঞানী-এ পি জে আবদুল কালাম তার আলোচিত গ্রন্থ-”ইগনাইটেড মাইন্ডস” বইতে একটি রাষ্ট্রের সংগ্রামী বা ওয়ারিওর স্টেজে কথা উল্লেখ করে বলেছেন-“জাতি যখন অর্জিত সাফল্য সামনে নিয়ে অন্যদের মধ্যেও প্রধান্য বিস্তারের জন্য সংগ্রাম শুরু করে। হয়তো তার জন্য তাকে অন্য জাতির ওপর আভিযানও চালাতে হয়। দম্ভ ও অহমিকা তখন হয়ে ওঠে ওই জাতির চালিকা শক্তি। এ পর্যায়ে এসে সে জাতির লোকেরা অন্যদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামে এবং দ্রুত সাফল্য অর্জনের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ব্যক্তির ক্ষেত্রে এ পর্যায়টি ডায়ারের মত উদ্বেগের সৃষ্টি করে। নিজের প্রাধান্য অন্যকে মেনে নিতে বাধ্য করাই এ পর্যায়ের মূল প্রতিপাদ্য হয়ে ওঠে।” ভারতের সাবেক এই রাষ্ট্রপতির নিরপেক্ষ ও ঐতিহাসিক এই বিশ্লেষণ আজ বাংলাদেশের উপর ভারতের অধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে  যেন এক উজ্জ্বল বাস্তবতা।

প্রখ্যাত রাজনৈতিক বিশ্লেষক-আবুল মনসুর আহমদ বলেছেন, “রাজনৈতিক আগ্রাসনের চেয়ে সংস্কৃতির আগ্রাসন অধিক মারাত্মক।” রাজনৈতিক আগ্রাসন হলে দেখা যায় হই চই, ডামাডোল, আর সাংস্কৃতিক আগ্রাসন নিঃশেষ করে দেয় অতি গোপনে তিলে তিলে। ভারত আজ একই সাথে দুুটি অস্ত্রই ব্যবহার করছে। আমাদের রাজনীতি এখন আর রাজনীতিবিদদের হাতে নেই। আমাদের সাংস্কৃতিও আর এ মাটির সাংস্কৃতিক কর্মীদের হাতে নেই। দু’ চারজন যাদের দেখা যাচ্ছে এরাও দেশীয় ছদ্মাবরণে তাদের বেতনভুক্ত পোষ্য।

সংস্কৃতিক আগ্রাসন হচ্ছে A victory without war. এই অদৃশ্য যুদ্ধের সৈনিক হচ্ছে দেশীয় ভাড়াটিয়া সংস্কৃতিক কর্মী, রাজনীতিবিদ, বুদ্বিজীবী ও মিডিয়া। ইদানিং কালে কতিপয় মিডিয়ার ভূমিকা খ্বুই রহস্যাবৃত। এ দেশের সরকারগুলো বিশেষ করে আওয়ামী লীগের অতিমাত্রায় ভারতপ্রীতি, সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর অসচেতনতা, হীনম্মন্যতা, নমনীয়তা, তার সাথে ভারতীয় আধিপত্যবাদীদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থের অভিলাষ এখন বাংলাদেশের জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। তারা এদেশের সকল সম্ভাবনা কুরে কুরে নষ্ট করতে চায়। ভারতীয় আধিপত্যবাদের এই নগ্ন থাবা আমাদের সংস্কৃতি, সাহিত্য, জাতীয় আদর্শ ও জাতীয় ঐক্যেও সবচেয়ে বড় বাধা। ইংরেজরা “ডিভাইড এন্ড রুল” এর যে সূত্র দিয়ে এদেশকে দুশ’ বছর শাসন করেছিল, ভারতের নীতিও আজ একই। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভারত সবার মতামতকে উপেক্ষা করে যেভাবে হস্তক্ষেপ করেছে তা এখন আর বলার অপেক্ষা রাখেনা এদেশের সংস্কৃতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, তাদের নির্দেশ আর মর্জ্জি মোতাবেকই পরিচালিত হবে। সম্প্রতি হয়ে যাওয়া টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তারই প্রতিফলন আমরা দেখেছি। মনে হচ্ছিল ভারতীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রেখেছেন। অনুষ্ঠানে দেশীয় সংস্কৃতি, এবং শিল্পীদের উপেক্ষা ও অপমান করা হয়েছে। দেশের বড় বড় শিল্পীরা তাদের ক্ষোভ অপমান আর দেশীয় সংস্কৃতিকে নির্বাসনে পাঠানোর সমালোচনা করেছেন অনেকটা প্রকাশ্যে।

বিষয়টি মিডিয়া আর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এভাবেই- ”বিশ্বে বাংলাদেশ পরিচিতি পাচ্ছে; ইমেজ বাড়ছে মূলত ক্রিকেটের মাধ্যমে। এর আগে এ দেশটি বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের দেশ হিসেবেই পরিচিত ছিল। সেটা ঘুচাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করেই বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য সেলিব্রেশনে বিশ্ব্ দরবারে তুলে ধরা যেত। এনিয়ে দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও সংশ্লিষ্টরা একেবারে উদাসীন ছিলেন। কোটি কোটি টাকা খরচ করে ঢাকাকে রঙ্গিন সাজে সাজানো হয়েছে। যে কাজ খেলার ৩/৪দিন আগে শেষ করার কথা সেটা করা হয়েছে এক মাস আগে। ঢাকাকে সাজাতে যাদের এতো আগ্রহ দেশীয় সংস্কৃতি তুলে ধরতে, দেশীয় শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতা করতে তাদের এই উদাসীনতা রহস্যজনক। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের কৃষ্টি-কালচার বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার সুযোগ কাজে লাগানো হলো না। দেশের জারী, সারি, মুর্শিদী, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালী, হাসন-লালন থেকে শুরু করে  বিভিন্ন সময়ের আন্দোলন সংগ্রামের গৌরবগাথা ইতিহাস তুলে ধরা যেত। বাংলাদেশকে শিল্প সংস্কৃতির সমৃদ্ধির দেশ হিসেবে জানতো বিশ্ব। প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কি সেটা তুলে ধরে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সংস্কৃতির ভাবমর্যাদা বৃদ্ধির চেষ্টা করেছি? নাকি বিদেশী সংস্কৃতি তুলে ধরে নিজেদের দৈন্য প্রকাশ করেছি? বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে ফুটিয়ে তুলতে ভারতীয় সংগীত শিল্পী অস্কার বিজয়ী এ আর রাহমানসহ ১৩৫ জন কণ্ঠশিল্পী, নৃত্যশিল্পীকে আনা হলো। তারা কি বাংলাদেশের সংস্কৃতি ফুটিয়ে তুললেন নাকি ভারতের? ভারতীয় শিল্পীর দু’একটি গান ছাড়া পুরো সময় কি ভারতীয় সংস্কৃতি তুলে ধরেনি? যে গেটাপে (পোশাক পরিচ্ছদ) তারা ঘন্টার পর ঘন্টা মঞ্চে নাচলেন গাইলেন সেটা কি বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে মানানসই? অস্বীকার করার উপায় নেই ভারতীয় শিল্পীরা ঢাকার স্টেডিয়ামে ভারতীয় সংস্কৃতি ফুটিয়ে তুলেছেন। সারাবিশ্বে সুযোগ পেলে তারা নিজ দেশের সংস্কৃতি তুলে ধরবে সেটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতীয় শিল্পীরা সেটাই করেছেন। ঢাকায় না হয়ে এ অনুষ্ঠানের ভেন্যু দিল্লি বা কোলকাতায় হলে এটাই করতেন। অনুষ্ঠানে ভারতের অনেক শিল্পীর হিন্দি গান, নাচের চর্চা করলেন দেদারসে। কেউ বুঝে কেউবা না বুঝেই হৈ-হুল্লোড় করলেন। এ যেন হুজুগের বাঙালি; বাঙালির হুজুগ। বাংলাদেশের মানুষের বিদেশী সংস্কৃতি নিয়ে এই হৈ-হুল্লোড়ের সুযোগ নিয়েই বিদেশী অপসংস্কৃতি আমদানিকারকরা উৎসাহ পান। তারা বিদেশী সংস্কৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের মগজ ধোলাই করেন। গুণীজনেরা বলেছেন, কোনো দেশকে দাবিয়ে রাখতে হলে আগে তার সংস্কৃতিকে দুর্বল করতে হয়। আর এটা নতুন প্রজন্মের মগজ ধোলাইয়ের মাধ্যমে করতে হয়। দেশে যেন সেটাই চলছে মহাসমারোহে। (সুত্র: দৈনিক ইনকিলাব-১৭-০৩-২০১৪)

এর আগে বলিউড তারকা কিং শাহরুখ খানের বাংলাদেশে আগমনকে কেন্দ্র করে সরগরম হয়ে উঠছিল গোটা সাংস্কৃতিক অঙ্গন। ছিল ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যা ছোটখাট কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের ভাগ্যেও জোটে না। ঐ সময়েও দৈনিক পত্রিকার শিরোনাম ছিল- কেউ মাতোয়ারা কেউ ুব্ধ হতাশ। বলিউড কিং শাহরুখ খান “ওম শান্তি ওম” এর মধ্যে দিয়ে শুরু হয়। সংপ্তি নগ্ন পোশাকের ললনাদের উদ্বাহু নৃত্য আর প্রতিবেশী সংস্কৃতি তুলে ধরার এই প্রয়াসে অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন। অনেকেই সপরিবারে এসে এমন অশ্লীলতার দৃশ্যে দারুণ বিব্রত হয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে ছিলেন। নিতান্তই এই বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান হলেও শাহরুখ খান শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার নাম এমন একটি অশ্লীল অনুষ্ঠানে উচ্চারণ করে লাভের থেকে আওয়ামী লীগের তিই বেশি হয়েছে। কারণ বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ এখনো এই জাতীয় বেহায়াপনাকে ঘৃণা করে।

বাংলাদেশে সংস্কৃতির  ক্ষেত্রে বিপজ্জনক বিষয় হচ্ছে বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ। বাংলাদেশের ধর্মীয় অনুশাসনের কারণে এখানে এইডসসহ অন্যান্য অসামাজিক ব্যাধি একেবারেই কম। ভারতের অবস্থা এই দিক থেকে ভয়াবহ হওয়ায় ভারত পরিকল্পিত উপায়ে আমাদের দেশে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালাচ্ছে। উন্মুক্ত ও অনৈতিক যৌনাচার এর ফলে এইডসের মরণব্যাধির আগ্রাসন, নানা ধরনের কনসার্ট, ব্যান্ড বিশেষ করে পাশ্চাত্যের পোশাকের নামে উলঙ্গপনা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংসের অতল গহ্বরে নিয়ে যাচ্ছে। আকাশ সংস্কৃতির নামে ডিশ অ্যান্টেনার মাধ্যমে আজকে প্রতিটি ঘরে ঘরে ব্লু-ফিল্ম (?) দিয়ে আমাদের পারিবারিক বন্ধনে দারুণভাবে আঘাত হানছে। এই অপসংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে আমাদের সমাজের কেউ রেহাই পাচ্ছে না। ভারতীয় সিরিয়ালের আগ্রাসনের কারণে এখন অনেক পারিবারিক বন্ধন ভেঙ্গে যাচ্ছে। পারিবারিক কলহ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। ভারতীয় ছায়াছবি, বই ও পত্রপত্রিকা, রেডিও-টেলিভিশন, বেসরকারি টিভি চ্যানেল, অশ্লীল বিজ্ঞাপন, সংবাদপত্র, এনজিও, সাহিত্য, অশ্লীল ম্যাগাজিন ও কার্ড, ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনে সয়লাব। এক গবেষণায় অপরাধের কারণ ও প্রোপট অনুসন্ধানে নিম্নবর্ণিত কারণগুলো খুজে পাওয়া যায়

ক. অশ্লীল ও নগ্ন সিনেমা,
খ. টিভি সিরিয়াল,
গ. চরিত্রবিধ্বংসী অশ্লীল ম্যাগাজিন, পত্র-পত্রিকা ও বই পুস্তক,
ঘ. নাইট কাব ও হোটেলগুলোতে নগ্ন, অর্ধনগ্ন নারী নৃত্য ও ড্যান্স,
ঙ. যৌন সুড়সুড়িমূলক পোস্টার ও ছবি,
চ. যৌন উত্তেজক বিজ্ঞাপন,
ছ. অর্ধনগ্ন লেবাস পরে নারীদের অবাধ চলাফেরা,
জ. সহশিা,
ঝ. বাজার, কাব, স্কুল, কলেজ, পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা
ঞ. মাদক ও নেশাজাত দ্রব্যের ব্যাপক প্রসার ইত্যাদি।

ভারত পরিকল্পিতভাবে এইসব বাংলাদেশে রফতানি করছে। আর এদেশে এগুলো বাজারজাত করণের দায়িত্ব পালন করছে কতিপয় সাংস্কৃতিক নামধারী প্রতিষ্ঠান, এনজিও, ভাড়াটে সাংস্কৃতিক কর্মী, কতিপয় মিডিয়া আর বহুজাতিক কোম্পানি। বাংলাদেশের অবস্থা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় তা অত্যন্ত নগ্ন, ভয়ঙ্কর, রূপ ধারণ করেছে। এই বিপদজনক অবস্থা চলতে থাকলে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির কবলে পড়তে পারে।

পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু তার “Discovery of India” গ্রন্থে হিন্দু ধর্মকে ভারতীয় সংস্কৃতির মূল প্রবাহ বলে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও  মুসলিম দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমাদের  ক্ষেত্রে এই নীতি মানা হয় না। ইসলামই হলো বাংলাদেশের সংস্কৃতির প্রাণপ্রবাহ।

আরনল্ড ম্যাথিউ বলেছেন, “পৃথিবী সম্বন্ধে যা উৎকৃষ্ট বলা বা চিন্তা করা হবে তা জানাই সংস্কৃতি।” আবুল মনসুর আহমদ সংস্কৃতির সংজ্ঞায় বলেছেন, “কালচার বা সংস্কৃতি মানুষের মন ও বিকাশের স্তরবোধক।”

তাহলে একথা স্পষ্ট যে কোনো সমাজ বা জাতির মনে কোনো একটা ব্যাপারে একটা ব্যবহার বিধি, সার্বজনীন চরিত্র আচরণ বা আখলাকের রূপ পরিগ্রহ করলেই সেটাকে ঐ মানবগোষ্ঠীর কালচার বলা হয়ে থাকে।

এইচ জে লাস্কি বলেন- “Culture is that what we are”.  T S Eliot-এর মতে, ‘সংস্কৃতির দু’টি বড় চিহ্ন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ- একটি ভাবগত ঐক্য, আর দ্বিতীয়টি তার প্রকাশেেত্র সৌন্দর্যের কোনো রূপ বা দিক।’ তার মতে ধর্ম সংস্কৃতির উৎস। সংস্কৃতি হচ্ছে একটি জাতির আয়নাস্বরূপ। এটা মানবগোষ্ঠীর রীতিনীতির পরিশীলিত, কর্ষিত এবং ঐতিহ্য পরম্পরাগত অনুভবের দৃঢ়তা থেকে উদ্ভূত হয়। সংস্কৃতিরও নানামাত্রিক উপাদান রয়েছে।

ইসলামে যে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিকশিত হয়েছে, তার মূল উপাদান হচ্ছে তাওহীদ ও রিসালাত। ফলে ইসলামী সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বিশ্বজনীনতা, বিশ্বভ্রাতৃত্ব, বিশ্বশান্তি, পবিত্রতা, দায়িত্ববোধ ও ভারসাম্য। এগুলোর পরিপন্থী এমন কোনো উপাদান ইসলামী সংস্কৃতির অন্তর্গত হতে পারে না। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির ব্যাপ্তি যেমন বিশাল, তেমনি বিশাল এর সৌকর্য ও সৌন্দর্য। স্বকীয় সংস্কৃতি হচ্ছে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের রাকবচ। কোনো জাতিকে কমজোর করে পদানত রাখতে চাইলে আগে তার সংস্কৃতিকে দূষিত ও বিনষ্ট করতে হবে। কেননা সংস্কৃতি জাতির প্রাণশক্তি, আর এই প্রাণশক্তিই জাতিকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করায়। মূলত একটি জাতি তার স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে, যে চেতনার বলে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন সেই চেতনাকে ভোঁতা করে দেয়। একটি জাতি কতটা সফল হয়েছে তার নিরিখে তার সংস্কৃতি স্বাধীনতার পরিমাপ করা যায়। এদিক থেকে আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের এই দীর্ঘ কালকে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় স্বাধীনতার পর থেকে এ দেশে সংস্কৃতির চেতনায় বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে।

এসব অপসংস্কৃতির আগ্রাসনের মোকাবেলায় আমাদের জাতীয় আদর্শ নির্ধারণ করা আজ সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি। এ দাবি পূরণে এগিয়ে আসতে হবে আমাদের সবাইকে। বুঝতে হবে আমাদের লালিত, ঐতিহ্যমণ্ডিত স্বতন্ত্র মুসলিম সংস্কৃতিকে। আজ এ দেশের মানুষের প্রত্যয় হোক আগ্রাসী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে। এজন্য আমাদের শিাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। নতুন প্রজন্মকে তথা বর্তমান ছাত্রসমাজকে নৈতিক শিায় গড়ে তুলতে হবে। দেশীয় ও মুসলিম জাতিসত্তাকে অক্ষুণœ রেখে আমাদের আচার-অনুষ্ঠান পালনই রুখতে পারে অপসাংস্কৃতিক অগ্রাসন। আমাদের বর্জন করতে হবে বিজাতীয় সংস্কৃতি। বিশ্বের দরবারে মাথাউঁচু করে দাঁড়াতে হবে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে।

Comments are closed.