গণতন্ত্রের উৎস সন্ধানে

দেশে গণতন্ত্র নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। কিন্তু গণতন্ত্রের তাত্ত্বিক রূপ নিয়ে হচ্ছে না তেমন কোনো আলোচনা। সেটা হওয়া প্রয়োজন। বর্তমান প্রবন্ধের ল্য হচ্ছে এ বিষয়ে কিছু আলোচনা করা। আমাদের আলোচনা হবে ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষতে। অনেক পুরনো কথাও আসবে ইতিহাসের পথ ধরে।

আমাদের ভাষায় ‘সভা’ ও ‘সমিতি’ শব্দ দু’টি বেশ পুরনো। বহুকাল আগে থেকেই এ দেশের গ্রামীণ সমাজজীবনে কোনো সমস্যা দেখা দিলে এর সমাধান করা হতো সভা করে। প্রয়োজনে গঠন করা হতো সমিতি। সভা ছিল একটি সাময়িক ব্যাপার। সেটা করা হতো কোনো একটি বিশেষ সমস্যা সমাধানের উপল।ে কিন্তু সমিতি গড়া হতো দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সমাধানের ল্েয। সভা ও সমিতির মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় গণতন্ত্রের আদি রূপ। গণতন্ত্রের ধারণার আবির্ভাব যে হঠাৎ হতে পেরেছে এমন নয়। আমাদের দেশে গ্রামে গ্রামে ছিল পঞ্চায়েত। গ্রামগুলো চলেছিল মূলত পঞ্চায়েতি ব্যবস্থা অনুসরণ করে; যাকে স্যার চার্লস ম্যাককাফ উল্লেখ করেছেন ভিলেজ রিপাবলিক বা গ্রাম্য প্রজাতন্ত্র হিসেবে। ম্যাককাফ ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চাকুরে। কিন্তু তিনি ছিলেন কিছুটা ভিন্নমনা ব্যক্তি। এ দেশের সমাজজীবন সম্পর্কে তার জানার ও বোঝার আগ্রহ ছিল। তিনি কিছু দিনের জন্য নিযুক্তি পেয়েছিলেন ভারতের বড় লাট হিসেবে (১৮৩৫)। এ দেশে ইংরেজ আসার আগে ছিল মহাশক্তিধর রাজতন্ত্র। কিন্তু রাজাকেও মানতে হতো কিছু-না-কিছু সামাজিক এবং ধর্মীয় নিয়ন্ত্রণ। তবে এ দেশের মানুষ বিলাতের মানুষের মতো সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের কথা ভাবেনি। সাংবিধানিক সরকারের ধারণা আমরা পেয়েছি বিলাতের কাছ থেকে।
বিলাতের বা ব্রিটেনের কোনো লিখিত সংবিধান নেই। কিন্তু আছে কতকগুলো লিখিত মৌলিক আইন, যা কখনোই ভঙ্গ করা হয় না। আর এটাই হলো সে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তি।
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে বিলাতে (ইংল্যান্ডে) মানুষ স্বেচ্ছাচারী রাজার বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ করে। অলিভার ক্রমওয়েলের (১৫৯৯-১৬৫৮) নেতৃত্বে যুদ্ধ করে দখল করে মতা। কাটা যায় রাজার মাথা। অনেকের ধারণা, বিলাতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেতে পেরেছে খুবই শান্তিপূর্ণভাবে। কিন্তু ইতিহাস তা বলে না। ক্রমওয়েলের শাসনের পর সেখানে রাজতন্ত্র ফিরে আসে। কিন্তু আগের মতো আর রাজতন্ত্র স্বেচ্ছাচারী হতে পারেনি। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বিলাতে রাজনীতি নিয়ে কোনো রক্তাক্ত কাণ্ড বা সঙ্ঘাত ঘটেনি। কেননা, রাজতন্ত্র তখন আর ছিল না ইউরোপের অনেক দেশের মতো স্বেচ্ছাচারী হয়ে। বিলাতে রাজনীতি এগিয়েছে শান্তিপূর্ণভাবে। এ কারণে আমাদের দেশে অনেকের ধারণা হতে পেরেছে যে, সে দেশে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হতে পেরেছে রক্তবিহীন সঙ্ঘাতের মাধ্যমে। কিন্তু ইতিহাস তা বলে না। বিলাতে ধর্মবিশ্বাস রাজনীতিতে পালন করেছে বিশেষ ভূমিকা। অলিভার ক্রমওয়েল ছিলেন গোঁড়া পিউরিটান বা গোঁড়া খ্রিষ্টান। তারা বিশ্বাস করতেন মানব সমতায়। মনে করতেন, রাজতন্ত্র হলো খ্রিষ্টীয় ধ্যান-ধারণার পরিপন্থী।
ব্রিটেনে রাজতন্ত্র ফিরে আসার পর পিউরিটানদের বেশির ভাগই চলে যান বর্তমানে যা যুক্তরাষ্ট্র, সেখানে। মূলত এই পিউরিটানদের নেতৃত্বেই হতে পেরেছিল যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতাযুদ্ধ। আর তার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল মার্কিন প্রজাতন্ত্র। যুক্তরাষ্ট্রে কেউ হয়ে উঠতে চাননি অথবা হতে পারেননি রাজা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন (১৭৩২-১৭৯৯) ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রধান সেনাপতি। পরে তিনি হন সে দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট। তিনি প্রথম দু’বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তৃতীয় বার নিজেই আর দাঁড়াতে চাননি নির্বাচনে। বলেছিলেন, আমি রাজা হতে চাই না। রাজনীতির প্রশ্ন হলো, সমাজজীবনে শাসনমতা বণ্টনের প্রশ্ন। ক্ষমতা মানুষকে জেদি, পীড়ক ও স্বার্থপর করে তুলতে চায়। মার্কিন সংবিধানে এটা বিভিন্নভাবে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। আগে মার্কিন প্রেসিডেন্টের হাতে যে পরিমাণ মতা ছিল, এখন আর তা নেই। ১৯৫১ সালে আইন প্রণীত হয়েছে, কেউ দু’বারের বেশি (আট বছরের বেশি) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না।

ণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজন জনমত, রাজনৈতিক দল এবং মুক্ত অবাধ নির্বাচনের। এই তিনটি বিষয়ে ঘাটতি ঘটলে গণতন্ত্র হয়ে উঠতে চায় অকার্যকর। বাংলাদেশে গণতন্ত্র হোঁচট খাচ্ছে এই তিনের ঘাটতির কারণে। কোনো দেশেই গণতন্ত্রে কোনো দলকে চিরদিনের জন্য মতা দেয়া হয় না। মতা দেয়া হয় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশের একটি দল মতায় থাকতে চাচ্ছে চিরদিনের জন্য। এখানেই দেখা দিয়েছে বিশেষ সঙ্কট। এসব থাকতে হবে আমাদের উপলব্ধিতে। এ প্রসঙ্গে মার্কসবাদ ও লেনিনবাদ নিয়ে কিছুটা আলোচনা প্রাসঙ্গিক। কারণ, যে দলটির ভূমিকার জন্য আমাদের দেশে গণতন্ত্র বিপন্ন হয়ে উঠেছে, তার মধ্যে কাজ করে চলেছে মার্কসবাদ লেনিনবাদের প্রভাব। প্রথমেই বলা প্রয়োজন, মার্কসবাদ ও লেনিনবাদ সমার্থক নয়। মার্কসের চিন্তা ও লেনিনের চিন্তার মধ্যে পার্থক্য ছিল। কাল মার্কসের (১৮১৮-১৮৮৩) জীবনের একটা অংশ কেটেছে বিলাতে। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে বিলাতে আরম্ভ হয় চার্টিস্ট আন্দোলন (Chartist Movement)। চার্টিস্টদের ছিল ছয় দফা দাবি।
এগুলো হলো :
১. সব পূর্ণবয়স্ক পুরুষের ভোটাধিকার।
২. প্রায় একই সংখ্যক জনসংখ্যার ভিত্তিতে নির্বাচনী আসন স্থিরকরণ।
৩. পার্লামেন্টের সদস্যদের জন্য বেতনব্যবস্থা।
৪. আগে পার্লামেন্টের সদস্য হওয়ার জন্য প্রার্থীর থাকতে হতো ন্যূনতম সম্পত্তি, যা না থাকলে কেউ পার্লামেন্টের সদস্য হতে পারত না। এই সম্পত্তি থাকার বিধানের বিলোপ।
৫. প্রতি বছর কম করে একবার করে পার্লামেন্ট অধিবেশন।
৬. গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট প্রদানব্যবস্থা।

কার্ল মার্কস চার্টিস্টদের এই ছয় দফা দাবির পক্ষে ছিলেন। তিনি বলেছেন, ভোটদানের মতা এভাবে বৃদ্ধি পেলে বিলাতের মানুষ ভোটের মাধ্যমে আইন করে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ল্েয অগ্রসর হতে পারবে। কিন্তু লেনিন বলেছিলেন যে, বিলাতের গণতন্ত্র মূলত গণতন্ত্র নয়। বিলাতের গণতন্ত্র আসলে হলো পুঁজিপতিদের একনায়কত্ব মাত্র। এর মাধ্যমে খেটে খাওয়া মানুষের দাবি পূর্ণ হতে পারে না। তবে লেনিনের কথার মধ্যে একটা বড় ফাঁক থেকে যায়। তা হলো, সব ধনীরা কেন এক দল করে না। ধনীদের মধ্যে থাকতে দেখা যায় একাধিক দল। অন্য দিকে বিলাতের শ্রমিকেরাও করে না একটি মাত্র দল। ভাল্দিমির ইলিচ লেনিন (১৮৭০-১৯২৪) ব্যাখ্যা করতে পারেননি, কেন বিলাতে একদলীয় শাসনের উদ্ভব হতে পারেনি। ১৯১৭ সালে ঘটে রুশ বিপ্লব। লেনিন আসেন ক্ষমতায়। রাশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় লেনিনের দল বলশেভিক পার্টির (কমিউনিস্ট পার্টির) কর্তৃত্ব। রাশিয়ায় চলেছিল ৭৪ বছর ধরে এক দলের রাজত্ব। কিন্তু সে দেশে কোনো সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারেনি। ঘোচেনি ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান। সৃষ্টি হতে পেরেছে জটিল আমলাতন্ত্র। তাদের মতার অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব হয়নি। আমলাতন্ত্র পরিণত হয়েছিল একটি বিশেষ সুবিধাভোগী শ্রেণীতে। বিশেষ সুবিধাভোগী শ্রেণীতে পরিণত হয়েছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যরাও। দেশ যেহেতু চলেছিল এক দলের নিয়ন্ত্রণে, সুতরাং আমলাতন্ত্র ও দলতন্ত্র হয়ে ওঠে সমার্থক।

গণতন্ত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো আইন পরিষদ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে মতার ভারসাম্য। কিন্তু রাশিয়ায় ঘটেছে প্রশাসনের সর্বময় কর্তৃত্ব। বিচারকদের শুনে চলতে হয়েছে প্রশাসকের হুকুম। তারা করতে পারেননি কোনো ন্যায়বিচার। রাশিয়া তথা সোভিয়েত ইউনিয়নে এক দলের শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে ভেতর থেকেই। কিন্তু এখনো রাশিয়া একটি বিরাট সামরিক শক্তি। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল ১৫টি রিপাবলিক নিয়ে গঠিত। কিন্তু কার্যেেত্র ছিল রুশ প্রাধান্য। জাতিসঙ্ঘে সোভিয়েত ইউনিয়নের তিনজন প্রতিনিধি থাকতেন। এদের একজন হতেন রুশ, একজন হতেন ইউক্রেনিয়ান আর একজন হতেন বাইলোরাশিয়ান। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে ১৫টি রিপাবলিকের সমান অধিকার ছিল না। রাশিয়ার পরেই সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী ছিল ইউক্রেন। এখন ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে বেধে উঠেছে রক্তরা যুদ্ধ। এটা জারদের (রুশ রাজাদের) শাসনামলে হয়নি। খোদ রাশিয়ায় এখন আর এক দলের রাজত্ব চাচ্ছেন না সে দেশের মানুষ। রুশরা চাচ্ছেন তাদের দেশে বহুদলীয় উদার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে। লেনিন আর তাদের কাছে পাচ্ছেন না কোনো মর্যাদা। রাশিয়ায় এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যান্য রিপাবলিকে ভেঙে ফেলা হয়েছে লেনিনের মূর্তি। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের মধ্যে ঢুকে আছেন লেনিনবাদীরা। আর তাদেরই প্রভাবে আওয়ামী লীগ নেত্রী বলছেন, আগে গণতন্ত্র নয়, আগে হতে হবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন। একই কথা বলেছিলেন রুশ বিপ্লবী লেনিন। তিনি আজ তার দেশবাসীর কাছেই ধিকৃত। লেনিনের চিন্তাকে নির্ভর করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন যে এসেছিল, তাও সত্য নয়। তা যদি সত্য হতো, তবে রাশিয়া পরিণত হতে পারত অর্থনৈতিক দিক থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত দেশে। এক সময় ইউক্রেনকে বলা হতো রাশিয়ার শস্যভাণ্ডার। কিন্তু এখন ইউক্রেনিয়ানরা হয়ে উঠেছেন প্রচণ্ড রুশবিরোধী। আওয়ামী লীগে লেনিনবাদী বুদ্ধিজীবীরা এ বিষয়ে কী ভাবছেন, আমরা তা জানি না। কিন্তু লেনিনবাদকে আঁকড়ে থেকে বাংলাদেশে চিরকাল মতায় থাকা যাবে, তাদের এই ধারণাকে বলা যেতে পারে যুক্তিহীন। এ দেশেও তারা ক্ষমতাচ্যুত হবেন এ রকম আশা করাটাই এখন হচ্ছে যুক্তিসঙ্গত। কেননা, লেনিনের যুক্তি এখন হয়ে পড়েছে তাত্ত্বিক দিক থেকেও অচল। চীনে এখনো চলেছে কমিউনিস্ট পার্টির শাসন। চীনেও অদূরভবিষ্যতে পেতে পারে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। চীন গ্রহণ করেছে বাজার অর্থনীতিকে। ছেড়ে দিয়েছে সমাজতন্ত্রের ধারণাকে। একসময় লেনিন চীনেও ছিলেন যথেষ্ট আদৃত চিন্তানায়ক। কিন্তু এখন আর তিনি তা নন। লেনিনের ভাবশিষ্য মাও জেডংকে চীনের কমিউনিস্টরা অর্থনৈতিক েেত্র করতে চাচ্ছেন না অনুসরণ। বাজার অর্থনীতি শেষ পর্যন্ত চীনকে ঠেলে নিয়ে যাবে বহুদলীয় গণতন্ত্রেরই পথে। এ রকম আশা করাটাই সঙ্গত।

অনেক কিছুই শুনতে পাচ্ছি আমরা। শোনা যাচ্ছে, রাশিয়া নাকি চাচ্ছে ‘রিক’ গঠন করতে (Russia=R, India=I I China=C; এই তিনে মিলে হলো RIC= রিক)। এর উদ্দেশ্য হলো ইউরো মার্কিন জোটের বিরুদ্ধে একটি পাল্টা শক্তিশালী জোট গঠন। কিন্তু এটা সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না। কেননা চীন ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ এখনো মিটেনি। এ সমস্যা মেটা সহজ হবে না। তা ছাড়া এই জোটে ভারত যোগ দিতে যাবে কিসের আশায়? মনে হচ্ছে, আওয়ামী লীগের তাত্ত্বিকরা চাচ্ছেন রিক গঠিত হোক এবং বাংলাদেশ রিকে শরিক হোক। তাই আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে কেবল সমালোচনাই নয়, সাবেক কায়দায় সাম্রাজ্যবাদী বলতে।
কিন্তু বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক জনসমষ্টি চাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠতা। প্রধানত তিনটি বিষয় বিবেচনা করে তারা এটা চাচ্ছে :
১. একটা কারণ হলো ভাষাগত। আমরা ইংরেজি ভাষাভাষী দেশ নই। কিন্তু ঐতিহাসিক কারণেই ইংরেজি ভাষা জানা দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলে আমরা ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে অনেক সহজে পেতে পারব বিজ্ঞান ও উন্নত প্রযুক্তির জ্ঞান। আমেরিকা আছে কলকব্জা তৈরিতে সবচেয়ে এগিয়ে। বিশ্বের শতকরা ৬০ ভাগ বৈজ্ঞানিক পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে ইংরেজি ভাষায়। ভাষার এই বাস্তবতাকে অস্বীকার কর ঠিক হবে না।
দ্বিতীয় কারণ হলো আদর্শিক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী গণতন্ত্র। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠতা বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে করবে মজবুত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশ হতে পারবে লাভবান। তৃতীয় কারণ হচ্ছে অর্থনৈতিক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছা করলে বাংলাদেশকে পুঁজি দিয়ে সাহায্য করতে পারবে। এটা অন্য দেশের পে অত সহজসাধ্য নাও হতে পারে। বাংলাদেশের মানুষ তাই চাচ্ছে না বৈরী সম্পর্ক স্থাপনে। তারা তাই ‘রিক’ গঠনে পাচ্ছে না সে রকম উৎসাহ। আওয়ামী লীগ যদি ভাবে রিক গঠন করে সে ক্কষয় স্থায়ী হতে পারবে, তবে সেটাও হবে ভুল। কেননা, রিক কখনোই বিজয়ী হতে পারবে না ইউরো-আমেরিকান ব্লকের সাথে কোনো সঙ্ঘাত সৃষ্টি হলে। কারণ, সমর বিজ্ঞানে ইউরো-আমেরিকান ব্লক আছে এগিয়ে। অর্থনীতির দিক থেকেও তারা পারবে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ চালিয়ে যেতে। জাপান কোনো নগণ্য শক্তি নয়। জাপান আসবে না রিকে। বরং জাপান চাইবে ইউরো-আমেরিকান শক্তির সাথে থাকতে। কেননা, জাপানের সাথে চীনের সীমান্ত বিরোধ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। সব মিলিয়েই ভাবতে হবে আমাদের। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কেবল এ দেশের ঘরোয়া রাজনীতির ওপর নির্ভর করছে না। নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিরও ওপর। আর আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি থাকছে না আওয়ামী লীগের রাজনীতির অনুকূল হয়ে।

আমরা আলোচনা করছিলাম গণতন্ত্রের উৎস নিয়ে। আমাদের গণতন্ত্রের ধারণা এসেছে বিলাত থেকে। আমাদের দেশে প্রাচীনকালে রাজনৈতিক দল বলে কিছু ছিল না। দলের ধারণা আমরা পেয়েছি বিলাতের কাছ থেকে। এই উপমহাদেশের প্রথম রাজনৈতিক দল হলো জাতীয় কংগ্রেস। কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন Allan O. Hume নামে একজন সাবেক ইংরেজ আইসিএস অফিসার। এর অনেক পরে ১৯০৬ সালে ঢাকায় প্রথম গঠিত হয় মুসলিম লীগ। এ দেশের রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে ব্রিটিশ রাজনৈতিক দলের আদর্শে। আমাদের গণতন্ত্রের উৎস বিশেষভাবেই নিহিত রয়েছে, যাকে সাধারণভাবে উল্লেখ করা হয় Anglo-Saxon সভ্যতা, তার মাঝে। আমরা রুশ সভ্যতার সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলাম না; এখনো নই। রুশ ভাষা আমরা জানি না। কিন্তু ইংরেজি ভাষা জানি। বিরাট রুশ সাহিত্যের সাথে আমরা পরিচিত হয়েছি ইংরেজি অনুবাদের মাধ্যমে; রুশ ভাষা শিখে নয়।

গণতন্ত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো আইন পরিষদ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে মতার ভারসাম্য। কিন্তু রাশিয়ায় ঘটেছে প্রশাসনের সর্বময় কর্তৃত্ব। বিচারকদের শুনে চলতে হয়েছে প্রশাসকের হুকুম। তারা করতে পারেননি কোনো ন্যায়বিচার। রাশিয়া তথা সোভিয়েত ইউনিয়নে এক দলের শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে ভেতর থেকেই। কিন্তু এখনো রাশিয়া একটি বিরাট সামরিক শক্তি। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল ১৫টি রিপাবলিক নিয়ে গঠিত। কিন্তু কার্যেেত্র ছিল রুশ প্রাধান্য। জাতিসঙ্ঘে সোভিয়েত ইউনিয়নের তিনজন প্রতিনিধি
থাকতেন। এদের একজন হতেন রুশ, একজন হতেন ইউক্রেনিয়ান আর একজন হতেন বাইলোরাশিয়ান। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে ১৫টি রিপাবলিকের সমান অধিকার ছিল না। রাশিয়ার পরেই সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী ছিল ইউক্রেন। এখন ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে বেধে উঠেছে রক্তরা যুদ্ধ। এটা জারদের (রুশ রাজাদের) শাসনামলে হয়নি। খোদ রাশিয়ায় এখন আর এক দলের রাজত্ব চাচ্ছেন না সে দেশের মানুষ। রুশরা চাচ্ছেন তাদের দেশে বহুদলীয় উদার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে। লেনিন আর তাদের কাছে পাচ্ছেন না কোনো মর্যাদা। রাশিয়ায় এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যান্য রিপাবলিকে ভেঙে ফেলা হয়েছে লেনিনের মূর্তি। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের মধ্যে ঢুকে আছেন লেনিনবাদীরা। আর তাদেরই প্রভাবে আওয়ামী লীগ নেত্রী বলছেন, আগে গণতন্ত্র নয়, আগে হতে হবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন। একই কথা বলেছিলেন রুশ বিপ্লবী লেনিন। তিনি আজ তার দেশবাসীর কাছেই ধিকৃত। লেনিনের চিন্তাকে নির্ভর করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন যে এসেছিল, তাও সত্য নয়। তা যদি সত্য হতো, তবে রাশিয়া পরিণত হতে পারত অর্থনৈতিক দিক থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত দেশে। এক সময় ইউক্রেনকে বলা হতো রাশিয়ার শস্যভাণ্ডার। কিন্তু এখন ইউক্রেনিয়ানরা হয়ে উঠেছেন প্রচণ্ড রুশবিরোধী। আওয়ামী লীগে লেনিনবাদী বুদ্ধিজীবীরা এ বিষয়ে কী ভাবছেন, আমরা তা জানি না। কিন্তু লেনিনবাদকে আঁকড়ে থেকে বাংলাদেশে চিরকাল মতায় থাকা যাবে, তাদের এই ধারণাকে বলা যেতে পারে যুক্তিহীন। এ দেশেও তারা ক্ষমতাচ্যুত হবেন এ রকম আশা করাটাই এখন হচ্ছে যুক্তিসঙ্গত। কেননা, লেনিনের যুক্তি এখন হয়ে পড়েছে তাত্ত্বিক দিক থেকেও অচল। চীনে এখনো চলেছে কমিউনিস্ট পার্টির শাসন। চীনেও অদূরভবিষ্যতে পেতে পারে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। চীন গ্রহণ করেছে বাজার অর্থনীতিকে। ছেড়ে দিয়েছে সমাজতন্ত্রের ধারণাকে। একসময় লেনিন চীনেও ছিলেন যথেষ্ট আদৃত চিন্তানায়ক। কিন্তু এখন আর তিনি তা নন। লেনিনের ভাবশিষ্য মাও জেডংকে চীনের কমিউনিস্টরা অর্থনৈতিক েেত্র করতে চাচ্ছেন না অনুসরণ। বাজার অর্থনীতি শেষ পর্যন্ত চীনকে ঠেলে নিয়ে যাবে বহুদলীয় গণতন্ত্রেরই পথে। এ রকম আশা করাটাই সঙ্গত।

অনেক কিছুই শুনতে পাচ্ছি আমরা। শোনা যাচ্ছে, রাশিয়া নাকি চাচ্ছে ‘রিক’ গঠন করতে (Russia=R, India=I I China=C; এই তিনে মিলে হলো RIC= রিক)। এর উদ্দেশ্য হলো ইউরো মার্কিন জোটের বিরুদ্ধে একটি পাল্টা শক্তিশালী জোট গঠন। কিন্তু এটা সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না। কেননা চীন ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ এখনো মিটেনি। এ সমস্যা মেটা সহজ হবে না। তা ছাড়া এই জোটে ভারত যোগ দিতে যাবে কিসের আশায়? মনে হচ্ছে, আওয়ামী লীগের তাত্ত্বিকরা চাচ্ছেন রিক গঠিত হোক এবং বাংলাদেশ রিকে শরিক হোক। তাই আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে কেবল সমালোচনাই নয়, সাবেক কায়দায় সাম্রাজ্যবাদী বলতে।
কিন্তু বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক জনসমষ্টি চাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠতা। প্রধানত তিনটি বিষয় বিবেচনা করে তারা এটা চাচ্ছে :

১. একটা কারণ হলো ভাষাগত। আমরা ইংরেজি ভাষাভাষী দেশ নই। কিন্তু ঐতিহাসিক কারণেই ইংরেজি ভাষা জানা দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলে আমরা ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে অনেক সহজে পেতে পারব বিজ্ঞান ও উন্নত প্রযুক্তির জ্ঞান। আমেরিকা আছে কলকব্জা তৈরিতে সবচেয়ে এগিয়ে। বিশ্বের শতকরা ৬০ ভাগ বৈজ্ঞানিক পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে ইংরেজি ভাষায়। ভাষার এই বাস্তবতাকে অস্বীকার কর ঠিক হবে না।

দ্বিতীয় কারণ হলো আদর্শিক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী গণতন্ত্র। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠতা বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে করবে মজবুত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশ হতে পারবে লাভবান। তৃতীয় কারণ হচ্ছে অর্থনৈতিক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছা করলে বাংলাদেশকে পুঁজি দিয়ে সাহায্য করতে পারবে। এটা অন্য দেশের পে অত সহজসাধ্য নাও হতে পারে। বাংলাদেশের মানুষ তাই চাচ্ছে না বৈরী সম্পর্ক স্থাপনে। তারা তাই ‘রিক’ গঠনে পাচ্ছে না সে রকম উৎসাহ। আওয়ামী লীগ যদি ভাবে রিক গঠন করে সে ক্ষমতায় স্থায়ী হতে পারবে, তবে সেটাও হবে ভুল। কেননা, রিক কখনোই বিজয়ী হতে পারবে না ইউরো-আমেরিকান ব্লকের সাথে কোনো সঙ্ঘাত সৃষ্টি হলে। কারণ, সমর বিজ্ঞানে ইউরো-আমেরিকান ব্লক আছে এগিয়ে। অর্থনীতির দিক থেকেও তারা পারবে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ চালিয়ে যেতে। জাপান কোনো নগণ্য শক্তি নয়। জাপান আসবে না রিকে। বরং জাপান চাইবে ইউরো-আমেরিকান শক্তির সাথে থাকতে। কেননা, জাপানের সাথে চীনের সীমান্ত বিরোধ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। সব মিলিয়েই ভাবতে হবে আমাদের। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কেবল এ দেশের ঘরোয়া রাজনীতির ওপর নির্ভর করছে না। নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিরও ওপর। আর আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি থাকছে না আওয়ামী লীগের রাজনীতির অনুকূল হয়ে।

আমরা আলোচনা করছিলাম গণতন্ত্রের উৎস নিয়ে। আমাদের গণতন্ত্রের ধারণা এসেছে বিলাত থেকে। আমাদের দেশে প্রাচীনকালে রাজনৈতিক দল বলে কিছু ছিল না। দলের ধারণা আমরা পেয়েছি বিলাতের কাছ থেকে। এই উপমহাদেশের প্রথম রাজনৈতিক দল হলো জাতীয় কংগ্রেস। কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন Allan O. Hume নামে একজন সাবেক ইংরেজ আইসিএস অফিসার। এর অনেক পরে ১৯০৬ সালে ঢাকায় প্রথম গঠিত হয় মুসলিম লীগ। এ দেশের রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে ব্রিটিশ রাজনৈতিক দলের আদর্শে। আমাদের গণতন্ত্রের উৎস বিশেষভাবেই নিহিত রয়েছে, যাকে সাধারণভাবে উল্লেখ করা হয় Anglo-Saxon সভ্যতা, তার মাঝে। আমরা রুশ সভ্যতার সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলাম না; এখনো নই। রুশ ভাষা আমরা জানি না। কিন্তু ইংরেজি ভাষা জানি। বিরাট রুশ সাহিত্যের সাথে আমরা পরিচিত হয়েছি ইংরেজি অনুবাদের মাধ্যমে; রুশ ভাষা শিখে নয়।

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে রাশিয়া চেয়েছিল আফগানিস্তান অঞ্চল জয় করে তদানীন্তন ব্রিটিশ ভারতের এক অংশ অধিকার করতে। তার ল্য ছিল এভাবে সাম্রাজ্য বিস্তার করে আরব সাগরের তীরে একটি রুশ বন্দর স্থাপন করা। রাশিয়ার সব বন্দরেই শীতকালে বরফ জমে। রাশিয়া চেয়েছিল, আরব সাগরের তীরে একটি বরফমুক্ত বন্দর গড়তে। এই উদ্দেশ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের এক অংশ দখল করে এগিয়ে যেতে চায় আরব সাগরের তীরে। এ সময় ১৯৮০ সালের ১৩ জানুয়ারি বাংলাদেশের তদানীন্তন রুশপন্থী কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ঘোষণা করে, বাংলাদেশে আফগানিস্তানের মতো বিপ্লব ঘটাতে হবে। কিন্তু রাশিয়া আফগান যুদ্ধে পেতে পারেনি সাফল্য। বাংলাদেশের কমিউনিস্টরা বলতে থাকেন ভিন্ন কথা। তারা বলেন, দেশে ফসলের উৎপাদন বাড়াতে হবে। ফসলের উৎপাদন বাড়াতে আগে বাড়াতে হবে সেচের সুবিধা। তারা যোগ দেন জিয়াউর রহমানের খাল খননের প্রচেষ্টায়। জিয়াউর রহমান চাচ্ছিলেন স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে খাল খনন করে সেচব্যবস্থার উন্নয়ন। সিপিবি
এখন আছে আওয়ামী লীগের অনুকূলে। বেগতিক দেখলে তারা অন্য আর কোনো দলের সাথে হাত মেলানোর কথাও চিন্তা করতে পারে। এটা অতীতে তারা বহুবারই করেছে।

বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র সাফল্য পাবে। কারণ, সাধারণভাবে এটা বাংলাদেশের মানুষ চাচ্ছে। তারা চাচ্ছে বহুদলীয় উদার গণতন্ত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি নিজস্ব উদার সভ্যতার সৃষ্টি করতে।

লেখক : প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *