খাদ্যে ফরমালিনঃ বাঁচার উপায় কী?

ঢাকার নাগরিক জীবন এমনিতে নানান সমস্যায় জর্জরীত। আইন শৃঙ্খলার ক্রমাগত অবনতি, দ্রব্যমূল্যের বিরামহীন ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুত, গ্যাস, ও পানির জন্য কারবালাসম হাহাকার, রাস্তায় যানজট, তার ওপর বৃষ্টি হলে সৃষ্টি হয় জলজট, স্কুল-কলেজগামী ছেলেমেয়েদের মাদকাশক্তির আশঙ্কা, অভাব অনটন, অসুখ বিসুখ, ইত্যাদি নিয়ে মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম। এর মধ্যে খাদ্যে ফরমালিন, ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’ ছাড়া আর কী? খাদ্যে ভেজাল কম বেশি আদিকাল থেকেই চলে আসছিল, কিন্তু ফরমালিন সমস্যা অপেক্ষাকৃত নতুন এক উপদ্রপ। দেশে গত কয়েক বছর ধরে যত্রতত্র এর ব্যবহার মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। তাজা ফলমূল, তরিতরকারি, মাছ গোশ্ত, ও অন্যান্য খাবারে ফরমালিন শহরবাসীর জীবন-পেরেশানিতে যোগ করেছে আরেক নতুন মাত্রা।

মৌসুমের শুরুতে বাজারে যখন নতুন ফলের আমদানি হয় তখন ধনী গরিব সবারই সাধ্যমত ফল কিনে খেতে ইচ্ছে হয়। বাবা মা’রা ছেলেমেয়েদেরকে একটু আধটু খাওয়াতে চায় সুগন্ধ, স্বাদ, ও পুষ্ঠির জন্য। এ ছাড়াও আরেকটি ব্যাপার আছে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা বছরেও যদি একবার পরিতৃপ্ত হয়ে পাকা তাজা মৌসুমি ফল খেতে না পায়, তাহলে নিজ দেশের ফলমূল চিনবেইবা কী করে? কিন্তু ফরমালিনের উপদ্রপে আজকাল নিরাপদে ফলফসল কেনার আর কোনো উপায় নেই। এ কেমন অবস্থা! ভাবতেও গা শিউরে ওঠে! কত অসহায় আমরা! কোথায় যাব? কে করবে এর প্রতিকার? এ ধরণের সামাজিক অপরাধ গ্রহণযোগ্য নয়, এটা অসহ্য! একে নিন্দা জানাবার ভাষা আমার জানা নেই! দু’পয়সা বাড়তি মুনাফার জন্য মানুষ আর কত নিচে নামতে পারে! ভেজাল কারবারি যারা তারাও তো এদেশেরই সন্তান, ভাই হয়ে কী করে পারে ভাইবোনদের বিষ খাওয়াতে! পাশবিকতারও তো একটি মাত্রা আছে। বিশ্ববাসী দেখ, আমরা আমাদের লোভের কাছে কত সহজে মনুষ্যত্বকে বেচে দিতে পারি! ভাবতে আমার কাছে লজ্জা লাগে, অবারও অবাকও হই – যে জাতির তরুণ সম্প্রদায় ১৯৭১ সালের মুক্তি যুদ্ধে একটি সশস্ত্র ও দূর্ধর্ষ বিদেশি বাহিনীকে বলতে গেলে খালি হাতে পরাজিত করে অসম্ভব সম্ভব করল, দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করল, তাদেরই একটি অংশ বা প্রজন্ম এমনভাবে কেমন করে পচে যেতে পারে!

থাক! আবেগ দিয়ে কাজ হবে না। ফিরে আসি কাজের কথায়। বছর খানেক আগে অতি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় একজন কন্ঠশিল্পীর ভীষণ স্পর্শকাতর একটি লেখা পড়েছিলাম দৈনিক কালের কন্ঠে। খাদ্যে ফরমালিন মিশ্রত বিষ কীভাবে তাঁর ও তাঁর পরিবারের জীবনকে বিষিয়ে তুলেছে তিনি ওই নিবন্ধে তার একটি হ্রদয়গ্রাহী ছবি এঁকেছিলেন। সেদিন প্রথম জেনেছিলাম, তিনি শুধু একজন সার্থক সঙ্গীত শিল্পীই নন বরং একজন সফল কথাশিল্পীও বটে। শিল্পীর মধুর সঙ্গীতের সুর যেমন বাতাসে মিলিযে যাওয়ার পরও অনেকক্ষণ কানে বাজে, তেমনি সেদিন তাঁর ফরমালিন মাখা মনের দুঃখকথা পড়ে আমার হৃদয় বার বার কেঁপে উঠছিল। লেখাটা আমি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েছিলাম এবং তত্ক্ষণাত ভেবেছিলাম এ নিয়ে আরেকটু বিস্তারিত একটি কলাম লিখব। কিন্তু প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত খোঁজে বের করার আলসেমিতে সে লেখা আর হয়ে ওঠেনি। কিন্তু মাত্র কয়েকদিন আমার মনটি পাল্টে দিল আমারই এক অনুজপ্রতিম ময়মনসিং টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যাপক মোঃ মুজিবুর রহমান। মুজিবের সঙ্গে প্রায়ই আমার টেলিফোনে কথা হয়। কথায় কথায় সেদিন মুজিব বলছিল, দিনাজপুরে সম্প্রতি বিষাক্ত লিচু খেয়ে ১১টি শিশু মারা গেছে। মুজিব বলল, আপনি একটা কিছু লিখুন। আমি আপনাকে পত্রিকায় প্রকাশিত কিছু তথ্য উপাত্ত দেব, দিয়েছেও সে। পরে দেখলাম মৃত শিশুর সংখ্যা বিভিন্ন কাগজে উঠেছে ১৩ জন, তারপরে ৩০ জুন যুগান্তরের সম্পাদকীয় কলামে দেখলাম এটা আরো বেড়ে হয়েছে ১৪জন। মৃতের কারণ আমি প্রথমে সন্ধেহ করেছিলাম ফরমালিন, কিন্তু যুগান্তরের সম্পাদকীয় থেকে নিশ্চিত হলাম মৃত্যুর কারণ ছিল লিচুতে কীটনাশক ওষুধের ব্যবহার। ফরমালিন, কার্বাইড, কিংবা কীটনাশক যা-ই হোক খাদ্যদ্রব্যের ওপর এসবের লাগামহীন ব্যবহার কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ ক্ষতি যা হওয়ার তা তো হয়েই গেল।

মুজিবের কথায় লিখতে বসেছি আজকের এই নিবন্ধ, সুতরাং এ লেখার কৃতিত্ব সম্পূর্ণটাই তাঁর পাওনা, তবে ভুলভ্রান্তি কিংবা দূর্বলতা যদি কিছু থেকে থাকে তার দায়ভার পুরোটাই আমার একার। আর লেখাটি উতসর্গ করলাম অকালমৃত্যুতে ঢলেপড়া দিনাজপুরের ১৪টি নিষ্পাপ শিশুর বিদেহী আত্মার প্রতি। গত দু’তিন দিনে খাদ্যে ভেজাল ও ফরমালিনের ওপর দৈনিক কাগজে অনেক লেখা উঠেছে। আমার চোখে যে কয়টি পড়েছে তার শিরোনামের নমুনা এরকম, ‘আমরা খাবার থেকে নিয়মিত বিষ পান করছি,’ ‘ভেজাল রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে,’ ‘জীবন বাঁচাতে আরো কঠোর ব্যবস্থা জরুরি’, ‘খাদ্যে ভেজাল রোধে আইন আছে প্রয়োগ নেই’, ‘কেমিক্যাল মিশ্রিত ফল আমদানি বর্জন করুন’, ‘কুমিল্লার আম কাঁঠালে ব্যবহৃত হচ্ছে বিষাক্ত রাসায়নিক’, ইত্যাদি, ইত্যাদি। আমি জানি যারা ফরমালিনের কারবার করে তারা এসব পড়ে না, পড়লেও কানে নেয় না। আমার লেখাও যে পড়বে না, তা মোটামুটি জোর দিয়েই বলতে পারি। আর পড়লেই বা কী? চোরা না শুনে ধর্মের কাহিনি! কিন্তু আমি আশা করব আইন আদালত ও আইন প্রয়োগকারি সংস্থার ঘুম ভাঙবে, মানুষকে বাঁচাতে তারা এগিয়ে আসবে, যার যার অবস্থান থেকে যার যেটুকু সম্ভব সেটুকুই করবে। আমি আরো আশা করব আমার প্রিয় পাঠকরা আরেকটু সচেতন হবেন এবং আশেপাশের মানুষজনকে ফরমালিনের বিষের ব্যাপারে সচেতন করবেন। শুধু সরকারের উপর ভরসা করে বসে থাকলে হবে না। জায়গায় জায়গায় নিজেরা সংগঠিত হন, তবে মনে রাখবেন আইন কক্ষণো নিজের হাতে তুলে নেবেন না, দেয়ালে পিঠ ঠেকার আগে ভেজালকারিদের প্রতিরোধ করুন, প্রতিহত করুন, এদেরকে আইনের হাতে তুলে দিন। বিষাক্ত পণ্য বয়কট করুন। লেখাটি পড়ে একজন লোকও যদি এ কাজে উত্সাহিত হয়, তবে আমার আজকের নিবন্ধটিকে আমি শতভাগ সফল মনে করব।

রসায়ণ শাস্ত্র ঘাঁটাঘাঁটি করলে দেখা যায় ফরমালিনের উত্স ফরমালডেহাইড নামে এক ধরণের বায়বীয় রাসায়নিক পদার্থ। জনৈক রাশিয়ান কেমিস্ট আলেকজান্ডার বাটলেরভ ১৮৫৯ সালে প্রাথমিকভাবে ফরমালডেহাইড শনাক্ত করেন। আরো ১০ বছর পর জার্মান বিজ্ঞানী অগাস্ট উইলহেলম ভন হফ্ম্যান এই রাসায়নিক দ্রব্যের শনাক্তকরন চূড়ান্ত করেন। ৩৭ থেকে ৪০ শতাংশ ফরমালডেহাইড পানিতে দ্রবীভূত হলে তৈরি হয় ফরমালিন নামক তরল রাসায়নিক দ্রব্য।

পশ্চিমা দেশে অনেক দিন থেকেই ফরমালিনের বিভিন্ন ধরণের বাণিজ্যিক ব্যবহার হয়ে আসছে। এটা বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয় ফটোগ্রাফীতে ফিল্ম পরিষ্কার করার কাজে। এ ছাড়াও এর ব্যবহার আছে বিভিন্ন জাতের কাঠের কাজে, ক্যাবিনেট্রি, টেবিলটপ, রেস্টুরেন্ট, অফিস-আদালত, ও ব্যাংকের কাউন্টার তৈরিতে। কাঠের উপরিভাগে প্লাস্টিক ল্যামিনেট লাগাতে এটা ব্যবহার অনিবার্য। টেকস্টাইল, পেপার, পেইন্ট কারখানায় প্রতিদিন লাগে প্রচুর পরিমাণ ফরমালিন। আমেরিকা কানাডায় বিণ্ডিং ম্যাটেরিয়েলেও এই রাসায়নিক উপাদানটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়ে থাকে। প্লাইউড এবং ঘরের কার্পেটিংও আছে ফরমালিনের প্রয়োগ।

তবে সমস্যা শুরু হয় যখন এর ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ে ডিসইনফেকশন এবং অ্যান্টিব্যাটেরিয়াল কাজে। প্রিজার্ভেটিব হিসেবে ফরমালিনের ব্যবহার শুরু হয় আরো পরে। বিংশ শতকের গোড়ার দিকে আমেরিকায় ডেইরি ফার্মগুলোতে দুধ প্রিজার্ভেশনের জন্য ফরমালিন ব্যবহৃত হত। তখন এর টক্সিসিটি বা ক্ষতিকারক দিক সম্মন্ধে মানুষ পুরোপুরি জানত না। ফরমালিনের মারাত্মক টক্সিসিটির কথা জানার পর এখন উন্নত বিশ্বে যেসব জায়গায় এটা ব্যবহার করা হয় তা খুব সীমিত আকারে, এবং পরিমাণ মত। যদিও ফরমালিন প্রচুর পরিমাণে উত্পাদিত হয়, তথাপি এর ব্যবহার সবদেশে খুবই নিয়ন্ত্রিত। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে প্রতি বছর ৫ হাজার কোটি পাউন্ড ফরমালিন তৈরি হয় এবং বিভিন্ন ধরণের শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত হয়। সাধারণ মানুষ এর কাছে ধারে যায় না, এর ব্যবহার টেরও পায় না। জনগণের দৃষ্টির ভেতরে ফরমালিনের যে ব্যবহার তা হয় মৃত মানুষের লাশ প্রিজার্ভেশনের কাজে।

এই সুযোগে ভেজালকারিরা শুরু করেছে ফরমালিনের অপব্যবহার। তারা ফরমালিনকে নিয়ে আসছে মানুষের খাবার টেবিলে। অতি সমান্য পরিমাণ ফরমালিন মাখা খাবার থেকে মানুষের বিভিন্ন রকমের অসুখ বিসুখ হতে পারে। প্রথম যে অসুবিধা হয় তা হজম প্রক্রিয়ায়। এটা মানুষের খাদ্যনালীতে মারাত্মক ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে। ফরমালিন মাখা বিষের অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে আছে নাকে ও চোখে পানি পড়া, মাথাধরা, গলার ভেতরে জ্বালাপোড়া, হাঁচিকাশি, শ্বাসকষ্ট, এজমা, ব্রোঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, স্কিন ডারমিটাইটিস, বমি, আমাশয়, রক্তামাশয়, অ্যাসিডেসিস, প্রশ্রাবে রক্ত, ভার্টিগো, অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন ইত্যাদি। ফরমালিনের মাত্রা আরেকটু বেশি হলে ফুসফুস ঠিকমত কাজ করবে না, প্রাপ্ত বয়স্ক নারীদের পিরিওড সাইকেলে ওলটপালট দেখা দেবে। দীর্ঘদিন ধরে শরীরে ফরমালিন প্রবেশ করলে ক্যান্সারসহ (লিকোওমিয়া) কিডনি, লিভার, ও লাঙে অনেক জটিল রোগ দেখা দিতে পারে। এসব কারণে ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ফরমালিনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আরো শক্ত নতুন নতুন আইন পাশ হচ্ছে। আমদানি রপ্তানিতে আসছে নানা ধরণের বাড়তি কড়াকড়ি।

যেসব জায়গার ফরমালিনের বেআইনী ব্যবহার সবচেয়ে বেশি তা হল, তাজা ফলমূল, তরিতরকারি, মাছ, গোশত, সিফুড, টফু, নুডুলস ইত্যাদি। কীসে ফরমালিন আছে তা বোঝার জন্য কিছু কিছু উপায় বের হয়েছে। মাছ মাংসে ফরমালিন আছে কী না তা বোঝার উপায় কী? বাজারের কাঁচা মাছ বা গোশ্তে হাত দিয়ে টিপলে যদি অস্বাভাবিকরকম শক্ত বা রাবারের মত লাগে, স্বাভাবিক গন্ধ থাকে না, আশেপাশে মাছি ভন্ভন্ করে না, তাহলে সন্ধেহ করতে হবে ওগুলোতে ফরমালিন আছে। শুকনো লবন মাখা মাছ বা মাছের শুঁটকি খাওয়া উচিত নয়। কারণ এর মাঝে ফরমালিন আছে কী না তা সজজে বোঝা খুবই কঠিন। মাছ গোশ্তে ফরমালিন মেশালে ওইসব খাদ্যবস্তু রান্নার পর শক্ত এবং রাবারের মত হয়ে যায়। টফু এবং নুডুলস্ েএটি থাকলে সেগুলো হয় শক্ত এবং আঠা আঠা।

ইন্টারনেট সূত্রে যে তথ্য আমার হাতে এসেছে তাতে দেখা যায় সাম্প্রতিককালে ২০০৫ সালে সবার আগে খাদ্যে ফরমালিন ব্যবহারকারি গ্যাঙ প্রথম ধরা পড়ে ইন্দোনেশিয়ায়। খবরটি শুনে আমি রীতিমত অবাক হয়েছি। ইন্দোনেশিয়া সম্মন্ধে আমার ধারণা ছিল অন্য রকম। আমার এক খালাশ্বাশুড়ী যিনি এক সময় ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন তাঁর কাছে শুনেছি সেদেশের মানুষ খুব কর্মট ও ধার্মিক। ফজরের আযানের সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশের মানুষ একসাথে জেগে ওঠে এবং সম্ভবতঃ এশার আযান পর্যন্ত থাকে একইভাবে কর্ম চঞ্চল। আমার এক বন্ধুর কাছে শুনেছি ইন্দোনেশিয়ানদের সম্মন্ধে আরেকটি মজার গল্প। জাতিসংঘের কাজে ইন্দোনেশিয়ায় সে বহুদিন ছিল। সেদেশের লোকজনের সঙ্গে বেশ কিছুদিন কাজ করেছে, তরুণ ইন্দোনেশিয়ানদের অনেক কাছে থেকে দেখেছে। সে বলেছে, ‘ইন্দোনেশিয়ানরা খুব সহজ সরল, মানুষ। বাংলা ভাষায় যাকে ‘চাল্লু’ বলে সেরকম নয়। তাদেরকে কিছু করতে বললে বা তাদের কাছে কিছু চাইলে পারত পক্ষে কখনো ‘না’ করে না। তবে যদি কোনো কাজে একবার ‘ইনশাল্লাহ্’ বলে ফেলে, তাহলে ধরে নিতে হবে সেকাজটি আর করবে না। আমার বলতে ইচ্ছে করে, ‘ফরালিন গ্যাঙে যোগ দেওয়ার প্রস্তাবে ওই ইন্দোনেশিয়ান তরুণরা যখন হ্যাঁ বলেছিল তখন তারা নিশ্চয়ই ‘ইনশাল্লাহ্’ বলেনি। ওই শক্তিশালী শব্দটি যদি ভুলবশতঃ তাদের মুখ থেকে বেরিয়ে যেত তাহলে তারা হয়ত ফরমালিন গ্যাঙস্টার হতে পারত না।

এ অপরাধের ভাগিদার ইন্দোনেশিয়া একা নয়। কারণ ২০০৭ সালে একই রকম ঘটনা জানাজানি হয়েছে ভিয়েতনামে। সবশেষে বড় ধরণের ফরমালিন গ্যাঙ ধরা পড়েছে ২০১১তে থাইল্যান্ডে। চীনেও এ সব কারবার চলছে অনেক দিন ধরে। এ কুকর্মে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশের ভেজালকারিরা অনেক কিছুতেই আজকালে ফরমালিন এস্তেমাল করে থাকে। ফরমালিনের ব্যাপারে বাংলাদেশের সরকার সরব না নিরব তা আমি ভাল জানি না, তবে সম্প্রতি একটি পত্রিকায় দেখলাম দেশে এখন কিডনি রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ, ক্যান্সার রোগী ১ কোটি, লিভার ও লাঙের রোগ চারিদিকে হুহু করে বাড়ছে। ফরমালিন কারবারিরা নগর থেকে শহর বন্দর, ও গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছড়িয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় দেশ ও দেশের মানুষকে এ বিষক্রিয়া থেকে বাঁচাতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সাধরাণ মানুষের মধ্যে যত সম্ভব ফরমালিন সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া। সঙ্গে সঙ্গে সরকারের উচিত সারা দেশে ভেজাল বিরোধী অভিযান আরো জোরদার করা। এক ম্যাজিস্ট্রেট রোকোনুদ্দৌলার বদলে সারা দেশে হাজার হাজার রোকোনুদ্দৌলাকে ছড়িয়ে দেওয়া।

Loading


Comments

খাদ্যে ফরমালিনঃ বাঁচার উপায় কী? — 2 Comments

  1. “ফরমালিনের ব্যাপারে বাংলাদেশের সরকার সরব না নীরব তা আমি ভাল জানি না, তবে সম্প্রতি একটি পত্রিকায় দেখলাম দেশে এখন কিডনি রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ, ক্যান্সার রোগী ১ কোটি, লিভার ও লাঙের রোগ চারিদিকে হুহু করে বাড়ছে। ফরমালিন কারবারিরা নগর থেকে শহর বন্দর, ও গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছড়িয়ে পড়ছে।”
    আমার মনে হয় কোন সরকারই এ ব্যাপারে সতর্ক ছিলনা আর বর্তমান সরকার তো নয়ই। ম্যাজিস্ট্রেট রোকোনুদ্দৌলার মত কাউকে আর এগিয়ে আসতেও দেখা যায় না। এই তো সেদিন বাংলাদেশে ভেজাল লিচু খেয়ে মারা গেল কত শিশু! হাজারো অপরাধের মত এই অপরাধও শুধু পত্রিকার হেডিং ছাড়া আর কিছু হয়নি বাংলাদেশে!
    তথ্যবহুল পোষ্ট, আপনাকে ধন্যবাদ

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *