ক্রাইমিয়ান সমস্যা ও মুসলমানদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

আমরা সবাই অবগত যে ক্রাইমিয়া (Crimea) এখন এক চরম সমস্যার মুখামুখি এবং এর ভবিষৎ নিয়ে বিশ্ববাসী শঙ্কিত। এই অবস্থার উপর এটি একটি সংক্ষিপ্ত ও দ্রুত লিখিত ব্লগ যা পরিস্থিতির সাথে মুসলমানদের বিস্মৃত ইতিহাসের উল্লেখ করবে।

এক সময় তাতারি ও তুর্কি মিশ্রণের মুসলমানরা ক্রাইমিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক ছিল যাদেরকে এখন আমরা শুধু তাতারি বলে উল্লেখ করব।

১৭৮৪ সালে রুশ সাম্রাজ্য ক্রাইমিয়া দখল করে নেয়। তখন তাতারি মুসলিমগণ হত্যা ও নির্যাতনের মুখামুখি হন এবং অনেকে দেশ ছেড়ে পালায়ন করেন।এই ঘটনার প্রায় ১৩৩ বছর পরে ১৯১৭ সালে যখন কমিউনিস্ট রুশ বিপ্লব সংঘটিত হয় তখন মুসলমানদের উপর বেশি আঘাত আসে। এই ধারাবাহিকতায় ১৯৪০ দশকের প্রথম দিকে জোসেফ স্টালিন হাজার হাজার তাতারি মুসলমানদেরকে নির্যাতন করেন এবং দেশ থেকে বিতাড়িত করেন। আজ ক্রাইমিয়ায় মুসলমানদের সংখ্যা মাত্র ১২%। সংখ্যালঘু হিসেবে যারা এখন সেখানে আছেন তারা সদাসর্বদা নির্যাতনের শিকার হন, এজন্য এখনও দেশ ছেড়ে বেরিয়ে পড়ার একটা স্রোত রয়েছে।

১৯৯১ সালের আগ পর্যন্ত ইউক্রেন এবং ক্রাইমিয়া উভয় অঞ্চল সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। ১৯৫৪ সালে মস্কো ক্রাইমিয়াকে প্রশাসনিক সুবিধার্থে ইউক্রেনের অংশ করে নিয়েছিল। কালের পরিক্রমায় এই সিদ্ধান্ত ভুল হয়ে দেখা দেয়। ১৯৯১ সালে সৌভিয়েত থেকে ইউক্রেন আলাদা হলে ক্রাইমিয়া ইউক্রেনের সাথে থেকে যায়। কিন্তু এই অঞ্চলের এক বড় অংশের ভাষা ও সাংস্কৃতি রাশিয়ার সাথে অধিক মিতালী রাখে। তবে ক্রাইমিয়ান ও ইউক্রেনের মুসলমানগণ রুপ-পদক্ষের বিপক্ষে। তারা ইউক্রেনের ঐক্য চান। আবার নিদেন পক্ষে স্বাধীনতা, তবে রাশিয়ার অধিনতা নয়। ক্রাইমিয়া ইউক্রনের সাথে থেকেও অনেকটা স্বায়ত্ব শাসনের মত রয়েছে। এই প্রেক্ষিতে ক্রাইমিয়ায় যদি পূর্ণ স্বাধীনতার আওয়াজ উঠে তবে ইউক্রেন সরাসরি সামরিক শক্তি প্রয়োগ করতে সমস্যা দেখবে। কেননা এই অজুহাতে রাশিয়া সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে ‘শান্তির উদ্দেশ্যে’ ক্রাইমিয়া দখল করে নেবে এবং ক্রাইমিয়ার ভিতরে রাশিয়ান সমর্থনকে ব্যবহার করবে। ক্রাইমিয়ায় অসংখ্য লোক রয়েছে যারা ইউক্রেন থেকে সিটকে গিয়ে রাশিয়ার সাথে জড়িত হতে চায়, যেমনটা বাংলাদেশের কিছু লোক এতকাল পরেও এখনো ভারতের সাথে মিলে যেতে ইচ্ছুক, তারা এখনও ভারত বিভক্তি নিয়ে আক্ষেপ করে এবং ভারতের সাথে frontier-less (বর্ডারশুন্য) সম্পর্ক গড়তে চায়।

এ দিকে রাশিয়া সরাসরি ক্রাইমিয়াকে তাদের দেশের অংশ বলছে। ১৯৫৪ সালের সিন্ধান্তকে নিছক একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ভাবছে। এই পরিপ্রক্ষিতে তারা একবার ক্রাইমিয়ার উপর চেপে বসলে আর ফিরে যাবে না। বিশ্ব পরিস্থিতিও খারাপ। সবাই যার যার স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। তাছাড়া রাশিয়া ইউরোপের অনেক দেশে গ্যাস সাপ্লাই দেয়। তাই রাশিয়ার সাথে হঠাৎ সম্পর্ক খারাপ হোক এটা ইউরোপিয়ান দেশগুলো সহজে চাইবে বলে মনে হয় না।

বিষয়: বিবিধ

Loading

About এম_আহমদ

প্রাবন্ধিক, গবেষক (সমাজ বিজ্ঞান), ভাষাতত্ত্ব, ধর্ম, দর্শন ও ইতিহাসের পাঠক।

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *