কোরানের আলোকে ইসলামের ইতিহাস (১)

ফেরাউনের সন্ধানে

যারা সত্যকে সত্যের মানদন্ড না ভেবে প্রসিদ্ধ লোকের কথাকে সত্যের মানদন্ড ভাবে , তাদের পক্ষে সত্য জানা কষ্টকর••• জেরাল্ডম্যসি , মিশর বিশেষজ্ঞ। 

ভূমিকা••••

আমরা মুসলমানেরা বিশ্বাস করি কোরান আল্লাহর বই। আল্লাহর বাণী যেহেতু মিথ্যা হতে পারেনা , সে কারনে এই বইয়ে কোরানের আয়াতকে আমরা সত্যের মানদন্ড ভেবে নিয়ে ইসলামের সত্য ইতিহাস জানার চেষ্টা করব।

কোরানের শুরু থেকে মানুষকে যে জ্ঞান শেখানো হয়েছে তার একটি হলো , মানুষ ছাড়াও আরো সত্বা বা শক্তি আছে যারা মানুষের মতোই বুদ্ধিমান, অনুভূতিসম্পন্ন ও স্বাধীন ইচ্ছার অধিকারী।এমনি একটি সত্বা , যাকে আমরা শয়তান বলে জানি, জেনে শুনে অহঙ্কার বশত আল্লাহর উপস্থিতীতে আল্লাহর আদেশ অমান্য করার ধৃষ্ঠতা দেখিয়েছিল।
{সে বললঃ  দেখুন তো, ইনিই সে ব্যক্তি, যাকে আপনি আমার চাইতেও  উচ্চ মর্যাদা দিয়ে দিয়েছেন। ।যদি আপনি আমাকে কেয়ামত দিবস পর্যন্তসময় দেন, তবে আমি সামান্য সংখ্যক ছাড়া তার বংশধরদেরকে সমূলে নষ্ট করে দেব।১৭:৬২}  

এটা পরিস্কার যে, আদমের বংশধরদের সমূলে বিনষ্ট করে দেয়ার শয়তানের এই শপথকে খাটো করে দেখা মানব সমাজের উচিৎ হবে না।
 {সে বলল, আপনার ইযযতের কসম, আমি অবশ্যই তাদের সবাইকে বিপথগামী করে দেব। ৩৩:৮২

শয়তান যে ফাকা বুলি আওড়ায়নি এবং সে যে তার শপথ পুরনে সক্ষম তার প্রমান আমরা পাই এই আয়াতদ্বয়ে।
{আপনি যতই চান, অধিকাংশ লোক বিশ্বাসকারী নয়। অধিকাংশ মানুষ যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরকওকরে। ১২:১০৩,১০৬}               

শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। সে কসম খেয়েছে কেয়ামত পর্যন্ত আদমের বংশধরকে বিপথগামি করেই যাবে। শয়তানের চক্রান্ত থেকে বাচানোর লক্ষ্যে আল্লাহ মানব সমাজের শুরু থেকেই বিভিন্ন নবি ও রসূলের মাধ্যমে  ঐশীগ্রন্থ পাঠিয়ে শয়তানের পরিচিতিও লক্ষ্য সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করেছেন এবং হেদায়েত করেছেন।
{আমরা বল্লাম, তোমরা সবাই  নেমে যাও এখান থেকে। অতঃপর যখন তোমাদের নিকট আমার পক্ষ থেকে কোন হেদায়েত  পৌঁছে, তবে যে ব্যক্তি আমার সে হেদায়েত অনুসারে চলবে, তার উপর না কোন ভয় আসবে, না তাকে দুঃখ করা লাগবে। ২:৩৮, 
তিনি বললেনঃ তোমরা উভয়েই এখান থেকে এক সঙ্গে নেমে যাও।তোমরা একে অপরের শত্রু।এরপর যদি আমারপক্ষ থেকে তোমাদের কাছে হেদায়েত আসে, তখন যে আমার বর্ণিত পথ অনুসরণ করবে, সে পথভ্রষ্ঠ হবে না এবং কষ্টে পতিত হবে না। ২০:১২৩}

পার্থিব জীবণের শুরু থেকেই  মানুষকে আল্লাহর হেদায়েত প্রাপ্তিতে বাধা সৃষ্টির লক্ষ্যে বা হেদায়েতকে অকার্যকর করার জন্য শয়তান উর্ধজগতের সাথে মানুষের যোগাযোগের মাধ্যমে অনুপ্রবেশ ও আড়িপাতার চেষ্টা করেছে।

 { নিশ্চয় আমি নিকটবর্তী আকাশকে তারকারাজির দ্বারা সুশোভিত করেছি এবং তাকে সংরক্ষিত করেছি প্রত্যেক অবাধ্য শয়তান থেকে। ওরা উর্ধ্ব জগতেরকোন কিছু শ্রবণ করতে পারে না এবং চার দিক থেকে তাদের প্রতি উল্কা নিক্ষেপ করা হয় ওদেরকে বিতাড়নের উদ্দেশে। ওদের জন্যে রয়েছে বিরামহীন শাস্তি। তবে কেউ ছোঁ মেরে কিছু শুনে ফেললে জ্বলন্ত উল্কাপিন্ড তার পশ্চাদ্ধাবন করে।৩৭:৬-১০}

আল্লাহর বাণী যাতে অপরিবর্তিতভাবে মানুষের কাছে পৌছায় এবং শয়তান যাতে আঁড়ি না পাত্তে পারে , সে কারনে সবধরনের সুরক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শয়তানের স্বীকারোক্তি পড়ুন। {আমরা আকাশ পর্যবেক্ষণ করছি, অতঃপর দেখতে পেয়েছি যে, কঠোর প্রহরী ও উল্কাপিন্ড দ্বারা আকাশ পরিপূর্ণ। আমরা আকাশের বিভিন্ন ঘাঁটিতে সংবাদ শ্রবণার্থে বসতাম। এখন কেউ সংবাদ শুনতে চাইলে সে জলন্ত উল্কাপিন্ড ওঁৎ পেতে থাকতে দেখে। আমরা জানি না পৃথিবীবাসীদের অমঙ্গল সাধন করা অভীষ্ট, না তাদের পালনকর্তা তাদের মঙ্গল সাধন করারইচ্ছা রাখেন।৭২:৮-১০}

ভাবছেন শয়তান এরপরে হাল ছেড়ে দিয়েছে। না, ওহি নাযিলে ব্যাঘাত সৃষ্টি না করতে পারলেও , ওহি নাযিলের পরে রসূলদের হৃদয়ে ঢুকে আল্লাহর বানীকে বিকৃত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আল্লাহর হস্তক্ষেপে শয়তানের সে চেষ্টাও বিফলে গেছে। 

{আমি আপনার পূর্বে যে সমস্ত রাসূল ও নবী প্রেরণ করেছি, তারা যখনই কিছু কল্পনা করেছে, তখনই শয়তান তাদের কল্পনায় কিছু মিশ্রণ করে দিয়েছে। অতঃপর আল্লাহ দূর করে দেন শয়তান যা মিশ্রণ করে। এরপর আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহকে সু-প্রতিষ্ঠিত করেন এবং আল্লাহ জ্ঞানময়, প্রজ্ঞাময়।২২:৫২}

সুতরাং কোরানের আয়াত অনুযায়ী আল্লাহর বাণী মানুষের কাছে পৌছান পর্যন্ত প্রথম দুই ধাপ আল্লাহ শয়তানের চক্রান্ত থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থাই শুধু করেন নি , এই বাণী কেয়ামত পর্যন্ত অপরিবর্তিত রাখার নিশ্চয়তাও দিয়েছেন।
 {আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থঅবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।১৫:৯}

মানুষের কাছে আল্লাহর হেদায়েত তথা অবিকৃত শয়তানের হস্তক্ষেপমুক্ত কোরান পৌছে গেছে। এই কোরান ভেজালমুক্ত। অতীতেও কেঊ এতে মিথ্যা ঢুকাতে পারেনি , ভবিষ্যতেও পারবেনা।
 {কোন মিথ্যা এতে ঢুকেনি , না অতীতে না ভবিষ্যতে। এটা প্রজ্ঞাময়, প্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। ৪১:৪২}

কোরানে ভেজাল মেশাতে ব্যার্থ  হয়ে শয়তান নুতন পরিকল্পনা আটে। সেটা হলো – মানুষ যেন কোরানের বাণী হৃদয়াঙ্গম করে আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলতে না পারে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমেই যে কাজটি করেছে তা হলো সাধারন মানুষকে বোঝানো যে আলেম ছাড়া কোরান বোঝা যার তার পক্ষে সম্ভব নয়। কোরান বুঝতে বিশাল জ্ঞানের প্রয়োজন , কারন বোঝার জন্য হাদিস বিশারদ হতে হবে , বড় বড় আলেমদের তাফসির পড়া লাগবে ইত্যাদি। শয়তান এব্যাপারে সফল হয়েছে তা নির্দ্বীধায় বলা যায়। আজ কাপড়ে জড়িয়ে চুমু খেয়ে তাকের পরে তুলে রাখা ও না বুঝে অক্ষর প্রতি ১০ নেকির (কোরানে এই নেকির কথা বলা নেই) লোভে না বুঝে পড়া ছাড়া বাঙালি মুসলমানের জন্য কোরানের আর কোন মূল্য নেই। এদের সম্পর্কে কোরানে পূর্ববর্তি সম্প্রদায়ের উদাহরন দিয়ে সাবধান করা হয়েছে –

{যাদেরকে তওরাত দেয়া হয়েছিল, অতঃপর তারা তার অনুসরণ করেনি, তাদের দৃষ্টান্ত সেই গাধা, যে পুস্তক বহন করে, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে, তাদের দৃষ্টান্ত কত নিকৃষ্ট। আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না। ৬২:৫}

কোরানে বহু আয়াতে শয়তান কিভাবে মানুষকে বিপথগামী করে থাকে তার বর্ণনা দেয়া আছে , যাতে মানুষ সাবধান হতে পারে।মুহাম্মদের সময় এমনি এক পদ্ধতি ছিল কোরান তেলাওয়াতের সময় ” লাঘু/ الْغَوْا”  করা, অর্থাৎ অবান্তর  কথা বলে হট্টগোল সৃষ্টি করা।

{আর কাফেররা বলে, তোমরা এ কোরআন শ্রবণ করো না এবং এতে হট্টগোল সৃষ্টি কর, যাতে তোমরা জয়ী হও।৪১:২৬} 

আজকের জমানায় ও এই আয়াতের গুরুত্ব অনুধাবনে আসে যখন মানুষকে কোরানের দিকে আহবান করা হয় , তখন শুনতে হয় নামাজ কিভাবে পড়ব, কুলুখ নিয়ে কয় কদম হাটা লাগবে সেটা কিভাবে জানব ইত্যাদি সব অবান্তর কথাবার্তা।

শয়তানের সকল পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা স্বল্প পরিসরে সম্ভব নয় বা এই বইয়ের উদ্দেশ্যও নয়। মানুষের পরিচিতি ধ্বংশ করে , মানুষে মানুষে হানাহানি সৃষ্টি করে শান্তি নষ্ট করা ও বিভিন্ন ধর্মের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য ইতিহাস বিকৃতি করা শয়তানের একটি হাতিয়ার। বর্তমানে জেরুজালেম নিয়ে মুসলমান ও ইহুদিদের মাঝে যে রক্তক্ষয়ী হাঙ্গামা যুদ্ধ চলছে তার মূলেআছে ইতিহাস বিকৃতি। এই জেরুজালেম কোরানে বর্ণীত আল্কুদ্‌স নয় বা ফেরাঊন ও মিশর কোরানে বর্ণীত ফিরাঊন ও মিছ্‌র নয়। কিভাবে এই ইতিহাস বিকৃতি ঘটেছে তা জানলে আমরা জানতে পারব কিভাবে ইসলামের ইতিহাস বিকৃত হয়েছে।

Comments are closed.