কোরআন সত্যি খোদা প্রদত্ত বানী তার আরও একটা প্রমাণ

আসলে কোরআন নিয়ে চিন্তা করলে অনেক তথ্য সামনে আসে যার ফলে কোরআন যে সত্যিই খোদা প্রদত্ত বানী তা অস্বীকার করার উপায় নাই। এমনি একটি প্রমাণ পাবেন যদি সুরা রোমের ভবিষ্যতবাণী বা প্রিডিক্সন সংক্রান্ত ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে। এটা অবশ্য অনেক মুসলমানের জানার কথা তবু যারা অবগত নন বা ব্যাপারটা সেভাবে চিন্তা করেননি তাদের সেবায় আমার এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।
তবে সুরা রোমের এই ভবিষ্যৎবাণী বা প্রিডিক্সন সংক্রান্ত আয়াতগুলো যখন নাজিল হয়েছিল তখনকার বিশ্ব পরিস্থিতি তথা জিওপলিটিকেল অবস্থা বিশেষ করে মুসলমানদের সত্যিকার অবস্থা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা না থাকলে এ প্রমাণটির তাৎপর্য বুঝা সম্ভব নয়।
এই সুরা যখন নাজিল হয় তখন রোমান সাম্রাজ্য এবং পারস্য সাম্রাজ্য নামে পৃথিবীতে দুটা সুপার পাওয়ার ছিল। আর তখনকার সেই উভয় শক্তি পরস্পরের বিরুদ্ধে করছিল সাম্রাজ্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা। তখন হেরাকিালয়াস ছিলেন রোম সম্রাট আর এদিকে পারস্য সম্রাট ছিলেন খসরু। সে সময় আরবের সঙ্গে মিলিত জর্ডান, সিরিয়া ও ফিলিস্তিন পর্যন্ত ছিল রোমানদের দখলে। পারস্য সম্রাট খসরু রোমানদের কাছ থেকে সে অঞ্চল দখল করতে যুদ্ধ শুরু করে এবং রোমানরা পরাজিত হয় । এ বিজয়ের পর পারস্য সৈন্যরা জর্ডান, সিরিয়া ও ফিলিস্তিন ও সিনাই উপদ্বীপের সমস্ত এলাকা দখল করে মিশরের সীমানা পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। এদিকে মুসলমানদের অবস্থা তখন ছিল অতি দুর্বল। মুসলমানদের অবস্থা এত খারাপ ছিল যে মুসলমানদের এক বড় সংখ্যা মক্কার মুসরিকদের অত্যাচার ও নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে নিজেদের ঘরবাড়ী ছেড়ে আবেসিনিয়ার খৃষ্টান রাজ্যে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। আর ঠিক সে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যখন সুরা রোমের আয়াত নাজিল হল এই বলে,
”রোমানরা নিকটবর্তী ভূখণ্ডে পরাজিত হয়েছে। নিজেদের এই পরাজয়ের কয়েক বছরের মাঝে তারা বিজয়ী হবে। আসল এখতিয়ার আল্লাহরই রয়েছে পূর্বেও এবং পরেও। আর তা হবে সেইদিন, যেদিন আল্লাহর দেয়া বিজয়ে মুসলমানেরা আনন্দিত হবে”। (সুরা ৩০ আয়াত ২-৫)

উপরোক্ত আয়াতে দুটি ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল যার একটি ছিল রোমানদের ব্যাপারে এবং আরেকটি ছিল মুসলমানদের ব্যাপারে। তখনকার অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এর একটিরও সম্ভাবনার কোন লক্ষণ ছিলনা বিন্দু মাত্র।

এমন কোন এনালিস্ট ছিলনা যে ভাবতে পেরেছিল যে রোমানরা আবার এত শীঘ্র বিজয়ী হতে পারবে পারস্যদের বিরুদ্ধে। ইংরেজ ঐতিহাসিক গিবন্ এর কথা অনুসারে কুরআন মজীদের ভবিষ্যদ্বাণীর পরও সাত আট বছর অবস্থা এমন ছিল যে, রোমান সাম্রাজ্য কোনদিন পারসিকদের উপর বিজয়ী হতে পারবে এমন ধারনা পর্যন্ত কেই করতে পারছিলনা। বিজয় তো দূরের কথা এ রাজ্যটি ঠিকে থাকতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ ছিল অনেকের।| ( Gibon, Decline and Fall of the Roman Empire. Vol 11, P 788, )

আর মুসলমানদের বিজয়ের ব্যাপারটা তো ছিল কাফিরদের কাছে আরও হাস্যকর ও খুবই ঠাট্টা-বিদ্রূপের বিষয়।জীবনের নিরাপত্তার খাতিরে এবং চারিদিকে ভীষণ বৈরী অবস্থার চাপে পড়ে নিজেদের জন্ম স্থান ছেড়ে মুষ্টিমেয় কিছু লোক এসে আস্তানা গেড়েছে নতুন এক শহরে যেথায় না আছে তাদের অর্থবল না আছে জনবল! আর সত্যি বলতে কি মুসলিমদের তখনকার অবস্থার বিবেচনায় “তাদের বিজয় হবে” কথাটা শুনে কাফেরদের কাছে অনেকটা “ঢাল নেই তালোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার!” এর মত হাস্যকর লেগেছিল।

বিজয়ের সময়ের ব্যাপারে আল্লাহ কোরআনে যে শব্দ ব্যবহার করেছেন তা হল ”ফি বিদ’য়ি ছিনিন  (في بضع سنين)”। আরবীতে بضع তিন থেকে দশ বছরের সময়কে বুঝায়। সেজন্য কাফেররা এর সত্যতা প্রকাশ হওয়ার উপর শর্ত করে মুসলমানদের সঙ্গে বাজী ধরে।

আর ঠিক নয় বছরের মাথায় রোমানরা নৌবাহিনী দিয়ে আক্রমণ করে পারস্যদেরকে পরাজিত করে। আর এদিকে ঠিক একই সময়ে মুসলমানেরা বদরের যুদ্ধে কাফিরদের তিন হাজার শক্তিশালী সৈন্যদের বিরুদ্ধে মাত্র এক হাজার সৈন্য নিয়ে যুদ্ধ করে কাফিরদেরকে পরাজিত করে বিজয় আনন্দ লাভ করে !

অতএব কোরআন যে সত্যিই খোদা প্রদত্ত বানী এবং মোহাম্মদ (সঃ) তাঁর প্রকৃত সত্য নবী তার অকাট্য প্রমাণ সমূহের মধ্যে এটি এক অতীব উজ্জ্বল প্রমাণ!


Comments

কোরআন সত্যি খোদা প্রদত্ত বানী তার আরও একটা প্রমাণ — 8 Comments

  1. “আল্লাহ তাঁর ওয়াদা ভঙ্গ করেন না। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানেনা!”
    ভাল একটি বিষয় উপস্থাপনা করেছেন।

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *