কাউকে না কাউকে বলে যেতেই হবে

শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেবেন না, তিনি পণ করেছেন তার অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। এর পক্ষে তিনি আদালতের বরাত দিচ্ছেন। আদালত রায় দিয়েছে, তিনি আদালতের কথামতোই চলবেন। আদালত ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ইচ্ছা-অনিচ্ছার বাইরে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, সেই সত্য আদালত কিংবা আওয়ামী লীগ দুইয়ের কেউই প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। বলা বাহুল্য, খালেদা জিয়া জানেন, এর অর্থ হচ্ছে নির্বাচনে কারচুপি করে বিরোধী দলকে হারিয়ে দেয়ার পন্থা হিসেবেই শেখ হাসিনা নিজের অধীনে নির্বাচন চাইছেন। অতএব, খালেদা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন করবেন না। তার তত্ত্বাবধায়ক চাই। ক্ষমতাসীনদের অধীনে সিটি কর্পোরেশনগুলোর নির্বাচন হয়ে গেল। সেখানে আওয়ামী লীগের পরাজয় হয়েছে। যদি কারচুপিই হবে তাহলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকেও স্থানীয় নির্বাচনে হারল কেন? বিরোধী দলের যুক্তি হচ্ছে, ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে জনগণের ক্রোধ ও ক্ষোভের মাত্রা যে পর্যায়ে রয়েছে তার কারণে ভোটের সময় জনগণের নজরদারি প্রখর ছিল, তেমনি গণমাধ্যমেরও একটা ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচনের হিসাব-নিকাশ এক নয়। জাতীয় নির্বাচন কিছুতেই শেখ হাসিনার অধীনে করা যাবে না। আঠারো দলীয় জোটের জন্য সেটা হবে আত্মঘাতী। অতএব, জাতীয় নির্বাচন একমাত্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হতে হবে। সে ব্যবস্থা করা মোটেও কঠিন নয়। জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের দিয়ে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। এটাই পথ। নইলে?
নইলে রমজানের পরে আন্দোলন!

এটা সত্য যে, বিপুল ভোটে জিতে এসেও আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মধ্যে মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী কোনো অবস্থান তৈরি দূরের কথা বরং কুশাসন, দুর্নীতি, সহিংসতা, চরম অর্থনৈতিক অব্যবস্থা কায়েম ও আদালতকে দলীয় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে গিয়ে তার সমর্থকদেরও দূরে সরিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া তার ঘাড়ের ওপর ইতিহাসের যে ভার এসে চেপে বসেছে, সেটা ভূতের মতো এই দলটিকে সামনের দিনগুলোতে তাড়িয়ে ফিরবে। তার মধ্যে শুরুতেই রয়েছে বিডিআর হত্যাকাণ্ড। অফিসারদের বিরুদ্ধে সাধারণ জওয়ানদের বিদ্র্রোহের যে কারণই থাকুক, বিপুলসংখ্যক অফিসার ও তাদের অনেকের পরিবারবর্গকে যেভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে তার জন্য অভিযোগের আঙুল এখনও আওয়ামী লীগের দিকেই তোলা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিদ্রোহী জওয়ানদের বন্দি অবস্থায় নির্যাতন ও অনেকের সন্দেহজনক মৃত্যু। অভিযোগ রয়েছে, ঘটনা আসলে কী ঘটেছে তার নির্ভরযোগ্য তথ্যের উৎসগুলো অপসারণ করা হয়েছে। বিডিআর বলে আর কিছু নেই, সেখানে গঠিত হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। দেশের নিরাপত্তার দিক থেকে দেখলে সীমান্ত পাহারা দেয়ার সশস্ত্র বাহিনীর পরিবর্তে সেখানে পুরো বাহিনীকে স্রেফ সীমান্তের দারোয়ানে পরিণত করা হয়েছে, হচ্ছে। তারা সীমান্ত পাহারা দেয়ার জন্য ভারতের বিএসএফকে সহযোগিতা করবে।

দ্বিতীয় যে ভূত আওয়ামী লীগকে তাড়া করে ফিরবে সেটা হচ্ছে মানবাধিকারের বিপর্যয়। এটা বিএনপির আমলেও ছিল। কিন্তু চৌদ্দদলীয় জোটের আমলে সেটা যে মাত্রা লাভ করেছে, তার নিন্দা কুড়িয়েছে আওয়ামী লীগ। আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, হেফাজতে মৃত্যু, মানুষ গুম করা এবং গুম করে খুন কিংবা লাপাত্তা করে দেয়ার সঙ্গে আওয়ামী লীগের নাম জড়িয়ে পড়েছে।

শেখ হাসিনার এই শাসনকাল শেখ মুজিবুর রহমানের বাকশালের চেয়েও ভয়াবহ। বিশেষত এর সঙ্গে যদি আমরা সংবাদপত্র দলন, পীড়ন এবং সাংবাদিকদের গ্রেফতার, রিমান্ড, নির্যাতন ও কারাগারে নিক্ষেপের ঘটনাগুলো একত্র করি। দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এখনও কারাগারে। বে আইনিভাবে পত্রিকার ছাপাখানা বন্ধ। একই সঙ্গে দিগন্ত, ইসলামিক টিভি ও চ্যানেল ওয়ান বন্ধ। সাগর-রুনী হত্যার কোনো মীমাংসা হচ্ছে না। এসব কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমেছে প্রচণ্ড। এসবকে সাময়িক ভাববার কোনো কারণ নেই। আওয়ামী শাসনের ভয়াবহতা তরুণদের বিশাল একটি অংশ নতুনভাবে দেখল। বিশেষত যারা বাকশালী আমল দেখেনি, শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্লোগানে যারা আকর্ষণ বোধ করেছিল, ডিজিটাল শাসনের রূপ কেমন হতে পারে সে সম্পর্কে তাদের হাড়ে হাড়ে অভিজ্ঞতা হয়েছে।

ইতিহাসের তৃতীয় যে ভার ভূতের মতো আওয়ামী লীগের ঘাড়ে চেপে বসেছে সেটা হচ্ছে আলেম-ওলামাদের ওপর নির্যাতন, দমনপীড়ন এবং তাদের নির্বিচারে হত্যা। ৫ মে দিবাগত রাত্রে শাপলা চত্বরে মানুষগুলো লাল রঙ মেখে শুয়েছিল আর পুলিশ আসায় দৌড়ে পালিয়েছে, শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে এ কথা বলে নিজেকে যেভাবে নিষ্ঠুর ও নির্মম শাসক হিসেবে হাজির করলেন, তার কোনো তুলনা চলে না। তার পক্ষে এতদিন যুক্তি দেয়া হচ্ছিল যে বাড়াবাড়ি কিছু হয়েছে, কিন্তু রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিবেচনায় এই ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিকল্প ছিল না। যা ঘটেছে তা বাড়াবাড়ি ছিল না, ছিল গণহত্যা। কিন্তু শেখ হাসিনা বাড়াবাড়ি হয়েছে ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে, নিদেনপক্ষে এই সত্য মানতে, কিংবা আদৌ এই অভিযোগ সত্য কি-না তার নিরপেক্ষ তদন্ত করতেও রাজি নন। আলেম-ওলামাদের রক্তে তার শাসনামল রঞ্জিত। মতিঝিল ধুয়ে সাফ করা যাবে, কিন্তু রক্তাক্ত ইতিহাসের এই দাগ আওয়ামী লীগ নিজের কপাল থেকে মুছতে পারবে না।

আর চতুর্থ যে ভার, সেটা নতুন কোনো ওজন বয়ে বেড়াবার দায় নয়, বরং পুরনো দায়কে কাঁধ থেকে এবার মাথায় তুলে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। সেটা হচ্ছে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক। আওয়ামী লীগ এই ধারণাই পোক্ত করেছে যে, দিল্লির ভূরাজনৈতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বার্থ রক্ষা করার মধ্য দিয়েই একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে টিকে থাকতে চায়। এই স্বার্থ রক্ষা একতরফা। এর পরিবর্তে দিল্লির কাছ থেকে কোনো সুবিধা আদায় করে নেয়া আওয়ামী লীগের লক্ষ্য নয়। এমনকি করিডোর দিয়েও তিস্তার পানি না পাওয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের পররাষ্ট্রনীতির করুণ দুর্দশা ইতিমধ্যেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।

বিএনপি ধরে নিয়েছে এই সব কারণে জনগণের যে ক্ষোভ, তার সুফল তারা পাবে। বলা যায়, পাওয়া শুরু করেছে। কিন্তু বিএনপির রাজনীতি এখনও নেতিবাচক। এই অর্থে যে, এই রাজনীতির প্রধান উপজীব্য আওয়ামী লীগের বিরোধিতা। জনগণ আওয়ামী লীগের ওপর ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত বলে নির্বাচনে বিএনপিকে ভোট দেয়। কিন্তু বাংলাদেশের রাষ্ট্র কিংবা সমাজের আদৌ কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন বিএনপি চায় কি-না এবং চাইলে কী সেই চাওয়া এবং কিভাবে সেই চাওয়াকে বিএনপি সত্যকারের পাওয়ায় নিয়ে যেতে চায়, তার কোনো ইঙ্গিত, ইশারা বা হদিস বিএনপির কাছ থেকে এখনও পাওয়া যায়নি।
যেহেতু আওয়ামী লীগের বিরোধিতাই বিএনপির উপজীব্য, অতএব বিএনপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রচার চালানো আওয়ামী লীগের জন্য খুবই সহজ। সেটা বেশ কার্যকরীও বটে।

সে প্রচার হচ্ছে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের শক্তি, ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাসম্পন্ন রাজনীতির ধারক ও বাহক। বিএনপি সাম্প্র্রদায়িক এবং সে কারণে ধর্মীয় দলগুলোর সঙ্গে তার গাঁটছড়া বাঁধা। এই ক্ষেত্রে গণমাধ্যমগুলোর অধিকাংশই আওয়ামীপন্থী ভূমিকা পালন করে। এই প্রচারের মুখে বিএনপি নিজেও খুব এলোমেলো হয়ে পড়ে। নিজেকে পাল্টা মুক্তিযুদ্ধের দল হিসেবে প্রমাণ করার জন্য বিএনপি ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিংবা নিজেকে একটি আধুনিক চিন্তা-চেতনাসম্পন্ন দল হিসেবে হাজির করার মধ্য দিয়ে বিএনপি আওয়ামী লীগের এই প্রচারের জবাব দিতে চেষ্টা করে।
এই রাজনীতি ভুল। বিএনপি এতে পিছিয়ে পড়বে। পড়ছেও। উপরে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে যে কথাগুলো বলা হল তা বিচার করলে আমরা দেখব, মুক্তিযুদ্ধ, অসাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, কিন্তু সেই ইস্যুগুলোকে বিবেচনায় রাখলেও বাংলাদেশের রাজনীতির ভারকেন্দ্র মোটেও সেখানে নয়। আওয়ামী লীগের প্রচারে ভীত হওয়ার কিছুই নেই।

যে দেশে নব্বই ভাগ মানুষের ধর্ম ইসলাম, সেখানে ইসলাম রাজনীতির নির্ধারক হয়ে উঠবে। কেউ চাক বা না চাক। কিন্তু ইসলাম তো আর একাট্টা এক রকমের নয়। তার নানা বয়ান রয়েছে। এ দেশের জনগণ রাজনীতিতে সেই বয়ানই গ্রহণ করবে, যে বয়ান জালিমের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করে। ইনসাফ কায়েমের জন্য শহীদ হতে ভয় পায় না। মানুষে মানুষে সাম্যের প্রশ্নে নিরাপস ও অটল থাকে। মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত সংগ্রামে পিছু হঠে আসে না। কারণ বাংলাদেশের রাজনীতির ভারকেন্দ্র হচ্ছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণমানুষের আত্মমর্যাদা ও অধিকার কায়েমের লড়াই। গণতন্ত্রের লড়াই। ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থার রূপান্তর চায় মানুষ। জনগণ চায় তাদের মানবিক ও নাগরিক অধিকার কায়েম হোক। এমনভাবে নতুন গঠনতন্ত্র
(Constitution)) প্রণয়ন করা হোক যাতে রাষ্ট্রের নির্বাহী, আইন প্রণয়নী ও বিচার বিভাগ কারোরই জনগণের মৌলিক নাগরিক ও মানবিক অধিকার কেড়ে নেয়ার কোনো ক্ষমতা না থাকে। যাতে যখন-তখন রাষ্ট্রের কনস্টিটিউশন কেউ বদলাতে না পারে। রাষ্ট্রকে জনগণের কাতার থেকে এমনভাবে গড়ে তোলা হোক যাতে সমাজের সব স্তরে প্রতিটি নাগরিকের প্রত্যক্ষভাবে দেশ গঠনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ থাকে। জনগণ কার্যকরভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে। জনগণ ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন চায় না, বরং চায় শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা। রাজধানী ঢাকা আর সব জেলা ও ইউনিয়নের ওপর জোঁকের মতো শাসন-শোষণ চালিয়ে যাক, সেটা কেউই চায় না। বাংলাদেশকে আসলে নতুনভাবে গড়তে হবে। এর বিকল্প নেই।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র মাত্রই অসাম্প্র্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অর্থ ভারতের আগ্রাসন ও আধিপত্য মেনে নেয়া নয়, বরং তার উল্টা। সেই আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব দেয়া। সীমান্তে নিরন্তর যে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী, তার অবসান চায় জনগণ। ভারতের সঙ্গে অবশ্যই এ দেশের জনগণ মৈত্রী চায়। কিন্তু সেটা হতে হবে মর্যাদার ভিত্তিতে। দাসত্বের দাসখৎ দিয়ে নয়। এর জন্য বাংলাদেশের গণপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করে তোলা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। সেটা করতে হলে একদিকে সৈনিকের মর্যাদা ও পেশাদারী দক্ষতা বৃদ্ধি যেমন জরুরি, একই সঙ্গে জরুরি বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা।

বলা বাহুল্য, বিএনপির যে শ্রেণী-চরিত্র তার কারণে এ রাজনীতি গড়ে তোলা কঠিন। এখানেই আওয়ামী লীগের স্বস্তির জায়গা। এ কাজটি ঐতিহাসিকভাবে যারা গণমানুষের রাজনীতি করেন, তাদেরই করার কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও বিএনপির চেয়ে তাদের ধর্মের চুলকানি আরও বেশি। অর্থাৎ তারা অধিকাংশই মনে করেন, ধর্মের বিরোধিতা করাই প্রগতিশীলতা। একাট্টা ধর্মের বিরোধিতার কারণে জনগণ থেকে তারা বিচ্ছিন্ন। একটি বিদ্যমান রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙে তাকে নতুনভাবে গড়ার যে রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি ও বিচক্ষণতা দরকার, সেটা তাদের নেই। তাদের কাছ থেকে আমরা ইতিবাচক কিছু আশা করতে পারি না।

ঐতিহাসিক কারণে জনগণের মধ্যে নানা ভুল চিন্তা, ভুল মতাদর্শ ও ভুলভাবে নিজেদের স্বার্থ হাজির করার প্রবণতা থাকে। তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। যদি জনগণের সঙ্গে কাজ করাই ঐতিহাসিক কর্তব্য বলে কেউ গণ্য করে, তাহলে বিদ্যমান রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনগণের যে কোনো লড়াই-সংগ্রামের সময় জনগণের আকাক্সক্ষার দিকটি বুঝতে পারা ও তাকে স্পষ্ট করে তোলা জরুরি কাজ। ওর মধ্য দিয়ে ইতিহাসের অভিমুখকে শনাক্ত করে তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক দূরদৃষ্টি, ধৈর্য ও বিচক্ষণতার দরকার। সমাজ যখন বড় কোনো রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য তৈরি হয়, তখন সে কাজটা সরলরেখায় সরলভাবে সম্পন্ন হয়- ইতিহাসে তার পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।

ফলে আমাদের এখনকার কাজ হচ্ছে রাজনৈতিক কর্তব্যগুলোকে সুস্পষ্টভাবে শনাক্ত করা এবং বারবার সেই কর্তব্যের কথা বলে যাওয়া। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং চৌদ্দ দলকে হঠিয়ে দিয়ে আঠারো দলকে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসানোর রাজনীতি প্রবল হয়ে উঠবে কি-না জানি না। কিংবা আদৌ নির্বাচন হবে কি-না সেটাও তো নিশ্চিত করে বলা কঠিন।
কিন্তু গণমানুষের দরকার রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর। সে কথা কাউকে না কাউকে তো বারবার বলে যেতেই হবে।

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *