টক শো খুব একটা দেখিনা। কিন্তু, নেগেটিভিটির প্রতি মানুষের স্বাভাবিক আকর্ষণের জন্যে কিনা জানিনা, টিভি খুললে একাত্তুরেই আটকে যেতাম। সেই খানে প্রায়ই দেখতাম ডক্টর পিয়াস করিমকে।
বাংলাদেশের টক শোতে নতুন কিছু বলার নাই, শেখার নাই, জানার নাই। সেইটা পাবলিক ইন্টেলেকচুয়ালিটির চর্চা হোক আর সরকারের সাথে জনগনের হিস্যা নিয়ে আলাপ হোক। দর্শক হতে শুরু করে, ক্যামেরাম্যান পর্যন্ত সবাই জানে, কে কোন যুক্তি দেবে এবং কোন যুক্তির উত্তরে কে কি বলবে। ফলে, বাংলাদেশের বিভাজিত পলিটিক্সে টক শো হয়ে ওঠে মূলত, যে যা শুনতে চায় সেইটাকে রিইনফোরস করার জায়গা। কারন, দর্শকও জানে টকশোতে কে কি বলবে।কোন প্রশ্নের উত্তরে কার কাছ থেকে কি উত্তর আসবে। এবং সেইটার কাউন্টার যুক্তি কি হবে।
এই অবস্থায় ডক্টর পিয়াস করিম অনেকের অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। এর অন্যতম একটা কারন হইলো শঠতা, ভণ্ডামি, ক্রুরতা, লোভপূর্ণ কিছু মানুষের যথেচ্ছ মিথ্যাচার সম্মুখে, সেই মিথাচারে ক্ষুব্ধ না হয়ে , নিজেকে সর্বোচ্চ পরিমান আত্মসংবরণ করে, ভদ্র ভাষায় তার উত্তর দিয়ে যেতেন তিনি। অনেকে সেইটা গুন হিসেবে দেখেছেন, অনেকে মনে করেছেন পাঞ্ছিং ব্যাগ হওয়ার অসীম ক্ষমতার কারনেই, উনাকেই একাত্তুর বার বার ডাকতো।
তাদের মূলত দুইটা টেকনিক, এক, তারা প্রথমতেই ডক্টর পিয়াস করিমকে ডিলিজিটিমাইজ করেছিল, এই বলে যে উনি একজন দলীয় লোক। ফলে, একজন বৈধ না বা ডিলিটিমাইজ পিয়াস করিম কি বলেছে সেইটা যেহেতু দলীয় অবস্থান তাই এইটাকে আমলে নেয়ার দরকার নাই।
দুই, তারা তাদের দলীয় তল্পিবাহকদের মাইকের উপরে সম্পূর্ণ দখল দিতো যেন তারা আনলিমিটেড প্রোপাগান্ডা চালাতে পারে। এবং ডক্টর পিয়াস করিমকে ওনারা অল্প বলার সুযোগ দিতো এবং যেই খানে বলার মত কিছু আছে সেই খানে, উপস্থাপক বা উপস্থাপিকা মাইক দিতো না। এর ফলে, স্টুডিওতে যে টেনশন সৃষ্টি হইতো এবং এতে সরকার বিরোধী দর্শকের যে ক্ষোভের সৃষ্টি হইতো বা সরকার দলীয়দের একচ্ছত্র অধিপত্তের ফলে তাদরে সমর্থকদের যেই অর্গাজম হইতো সেই দ্বন্দ্বটাই একাত্তুর টিভির মুল আকর্ষণ। এই ভাবে পিয়াস করিম, মূলত একাত্তুর টিভিকে বৈধতা দিতেন, উনার অজ্ঞাতে।
কিছু জায়গায় ওরা উনাকে একটা সুযোগ দিতো, অনৈতিক অবৈধ সরকারের কার্যক্রমের সমর্থনে তাদের সীমাহীন মিথ্যাচারের একটা প্রত্যুত্তর দেয়ার।যেইটাকে তারা কয়েক জন মিলে উত্তর দিয়ে দিতো। ইমেজটা এমন ছিল যে ক্ষুধার্ত নেকড়ের দল একটা মানুষের আসে পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে তাকে খাওয়ার জন্যে, এবং একটা লাঠি দিয়ে মানুষটি নেকড়ে গুলোকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কিন্তু, নেকড়ে গুলো মানুষটাকে খেয়ে ফেলতো। কারন দলান্ধ উপস্থাপক বা উপস্থাপিকা এবং কোটারি রাষ্ট্রীয় জন্ত্রের সুবিধাভোগী সহযোগীরা ফাইনালি তাদের দলের লাইনটাকে চাপিয়ে দিয়েই আলোচনা শেষ করতো। কিন্তু, উনার উপস্থিতি তাদের বৈধতা দিতো। এই জন্যেই, ওরা উনাকে বার বার ডাকতো।
একাত্তুর টিভির এখন আরো একজন ভদ্র পাঞ্ছিং ব্যাগ লাগবে যিনি, সকল মিথ্যাচার , অসত্য কথন আর ভণ্ডামির মুখেও একটা দুর্বল, ডিলিজিটিমাইজড প্রতিপক্ষ হিসেবে, নিজেকে আত্ম সংবরণ করে ভদ্রজনোচিত যুক্তি দিয়ে বিরুদ্ধ পক্ষের খুঁটি কোন মতে ধরে রেখে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিয়ে একাত্তর টিভির টিআরপি রেটিং ধরে রাখতে পারবে।
ডক্টর পিয়াস করিমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। ভালো লোক ছিলেন। দেশপ্রেমিক ছিলেন।