আসুন সহজে আরবি শিখি – (প্রথম পর্ব)

ভূমিকা:

আরবি শিখার ব্যাপারে আমার অনেক দিনের আগ্রহও থাকলেও নানা কারণে সে ব্যাপারে বাস্তব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছিল না। সম্প্রতি চিন্তা করে দেখলাম এ ব্যাপারে আর দেরী করা ঠিক নয় তাই কিছুদিন আগে আরবি শিখার কোর্সে যোগ দিলাম। হঠাৎ খেয়াল হল আমি যা শিখছি তা যদি সাইবার জগতে অন্যদের সাথে শেয়ার করি তাহলে হয়তবা কারো কাজে লাগতে পারে। সে উদ্দেশ্যে আজকের এই পোষ্টটি প্রকাশ করছি।

তবে যারা কোরআন পড়তে অপারগ বা আরবি অক্ষর জানেননা তাদের জন্য “কিভাবে অল্প সময়ে কোরআন পড়া শিখা যায়” শিরোনামের সে  টিউটোরিয়াল পোষ্টটি    আগে দেখা জরুরী।  

শুরুতেই বলে রাখি,আরবি ভাষা হচ্ছে শব্দ উচ্চারণ  এবং নিদর্শন (sound and sign) নির্ভরশীল অনুপম একটি  ভাষা এবং এর ব্যাকরণ বিষযটিও  ব্যাপক। অতএব এ বিষয়ে  সত্যিকার অর্থে পারদর্শী বা দক্ষতা অর্জন করতে অনেক গভীর অধ্যয়ন ও জ্ঞানের দরকার। সে হিসাবে এখানে আমার এই প্রচেষ্টা নিতান্ত প্রাথমিক শিক্ষা (Elementary lesson) বলা যায়।

তবে আমার বিশ্বাস  যারা আরবি শিখতে চান এ টিউটোরিয়ালটি  তাদের  আনেকের মনে আরবি ব্যাকরণ শিখার ভয়টি কাটিয়ে তোলতে সহায়ক হবে । 

এ প্রসঙ্গে বলতে চাই,

এখানে আমি যা লিখেছি সেটি আমার ক্লাস নোট থেকে এবং এর সব কিছু সবার কাছে যে বোধগম্য হবে এমন নয়। তাই বেশ কিছু ভিডিও লিংক  দেয়া আছে যেগুলো কয়েক বার মনোযোগ সহকারে দেখা ও শুনার দাবী রাখে  যদি আরবি ব্যাকরণ সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা নিতে চান।

লিখাটি  বিভিন্ন পর্বে প্রকাশ করার চেষ্টা করব। আশা করি মহান আল্লাহ সে প্রচেষ্টা সহজ করে দিবেন।

আরেকটি কথা বলতে চাই তা হল কেউ যদি এখানে সম্পূরক তথ্য রাখতে চান বা আরবি কেন শিখতে হবে সে ব্যাপারে কিছু বলতে চান তা হলে আরো ভাল হবে। আসলে বাংলাদেশের মানুষের মনকে পৌত্তলিকতা ও ধর্মের নামে কুসংস্কারে নিমজ্জিত করতে যে ক্রুসেড চলছে তা সহজে বন্ধ করা যাবে না যদি  এ সমাজের মানুষের জ্ঞান অর্জনের পরিধিকে বিস্তৃত করতে না পারা যায়। সে প্রেক্ষিতে আরবি ভাষা শিখার গুরুত্ব অপরিসীম। অতএব আমাদের আধুনিক শিক্ষিত সমাজকে বিশেষকরে আমাদের ভবিষ্যত  প্রজন্মকে আরবি শিখার ব্যাপারে  উৎসাহিত ও সহায়তা প্রদান করা সময়ের দাবী।

শুরু করা যাক তা হলে…

আরবি ভাষার সকল শব্দকে তিন ধরণে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়:

আরবি ভাষার সকল শব্দকে তিন ধরণে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়:

১. اسم – (ইসম)
এটি বাংলায় বিশেষ্য বা নামপদ অর্থাৎ ইংরেজিতে Noun। কিন্ত  اسم – (ইসম) শুধু বিশেষ্য বা Noun নয়। “ইসম” এ নাম বাচক বা গুণবাচক শব্দও থাকে যেমন Noun, Verbal noun, Adverb/বিশেষ্য, ক্রিয়াবাচক বিশেষণ, ক্রিয়া বিশেষণ। অর্থাৎ এটা সাধারণত কোন কিছুর নাম বা কোন বিশেষ গুণের নাম। আবার কোন কিছুর অবস্থাও এটা দ্বারা বুঝানো হয়। যেমন দ্রুত, ধীরে, রাগ, আনন্দ ইত্যাদি সবই  আরবি ব্যাকারণে ইসম এর শ্রেণীভুক্ত।

২. فعل – (ফীল)
(ক্রিয়া/verb) – সাধারনত এটা দ্বারা কোন কাজ বুঝানো হয়। এর দ্বারা কাজের সময়ও বোঝা যায়। যেমন অতীত কাল, ভবিষ্যত কাল অথবা বর্তমান কাল।

৩. حرف – (হারফ) –
অন্য একটি শব্দের পরে বসে সেই শব্দের অর্থ বোঝাতে সহায়তা করে। ইংরেজি conjunction বলা যেতে পারে।

এ তিনটি বিষয়ের সংজ্ঞার্থ আরো পরিস্কারভাবে এই ভিডিও তে পাবেন
এখন এই তিন রকমের মধ্যে প্রাথমিক অবস্থায় আমরা কেবল اسم ( nouns ) নিয়ে কাজ করব কয়েকটি পোষ্টে।فعل এবং حرف এর পরে কাজ করব। আরবি ব্যাকরণ বিভিন্ন উস্তাদ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় শিক্ষা দেন আমি এখানে আমার উস্তাদ, হামজা ওয়ারদাকের দেয়া রোড ম্যাপ অনুসরণ করেই লিখার চেষ্টা করব। তিনি ইসম দিয়ে আগে শুরু করেছেন তাই আমিও সে ভাবে অগ্রসর হচ্ছি। সাথে থাকুন ইনশাআল্লাহ আমরা গন্তব্যে পৌছতে সক্ষম হব।

একজন নবীন ছাত্র হিসাবে আমার মনে হয় একটি কনসেপ্ট প্রথমেই জেনে রাখা ভাল যে,  ক্ষেত্র বিশেষে আরবি  nouns and adjectives – বিশেষ্য এবং বিশেষণ গুলোর শব্দরূপে কিন্তু পরিবর্তন বা পতন ঘটে (nouns and adjectives decline)  যার বিস্তারিত আলোচনা পরে আসছে। আপাতত এতটুকু জেনে রাখা দরকার যে এদের পরিবর্তন বা পতন ঘটে বিভিন্ন কারণে যেমন অবস্থা, লিঙ্গ, এবং সংখ্যা ইত্যাদি অনুযায়ী। নিচের মাত্র কয়েক সেকেন্ডের দুটি ভিডিওটি দেখলে এ বিষয়ে উদাহরণ সহ বুঝতে সক্ষম হবেন।

اسم– (ইসম) এর ব্যাপারে জানা দরকার যে  اسم এর সাধারণত চারটা বৈশিষ্ট্য থাকে ।

اسم “ইসম” এর ব্যাপারে একটা মজার ব্যাপার হল আল্লাহ আদমকে (আ.)  اسم শিক্ষা দিয়েছেন।

যাই হোক اسم এর চারটি বৈশিষ্ট্য হল এই:

১) অবস্থা – Status
২) লিংগ – Gender
৩) বচন – Number
৪) প্রকারভেদ – Type

এখন আমরা اسم এর “অবস্থা” বা State/Status নিয়ে আলোচনা করব।
اسم  এর তিন ধরনের  “অবস্থা” বা Status আছে।

১) কাজ সম্পাদনকারী Doer Status  একে বলে রাফও  رفع  
২) যার   উপর কার্য্য সম্পাদন হয়  একে বলে নাসব نصب  
৩) অধিকারসূচক বা মালিকানাসূচক, সম্বন্ধসূচক শব্দটি হচ্ছে  জারর جر

Status বুঝতে শব্দের সাথে দাম্মা, ফাতাহ ও কাসরার ব্যবহার দেখতে হবে।

নিচের ছবিতে দেখানো হয়েছে।

اسم – (ইসম) এর সাথে একটি বা দুটি দাম্মাহ থাকলে  রাফা  رفع হবে। যেমন, مُسْلِمٌ 

আর নাসাব نصب হলে   اسم – (ইসম) এর সাথে এক বা দুইটি ফাতাহ  থাকবে। যেমন, مُسْلِمًا

এবং জার جر হলে (ইসম) এর নীচে একটি বা দুটি কাছরা  থাকবে। যেমন, مُسْلِمٍ

কোরআন থেকে একটি উদাহরণ দেই।

إِنَّ اللَّهَ لَعَنَ الْكَافِرِينَ   আল্লাহ কাফেরদেরকে অভিসম্পাত করেছেন

এখানে আল্লাহ হচ্ছেন রাফা আর কাফেররা হচ্ছে নাসাব।

একি ভাবে   وَقَتَلَ دَاوُودُ جَالُوتَ

এখানে دَاوُودُ হচ্ছেন  رفع
কাকে হত্যা করা হয়েছে? জালুতকে।  তাই جَالُوتَ হচ্ছে   نصب

এবার جر  উদাহরণ দেখা যাক।

এখানে মোহাম্মাদিন্   হচ্ছে جر  এর উদাহরণ আর এ বাক্যে সে শব্দটির অবস্থান হচ্ছে مَجْرُورٌ  – মাজরুর।

তা হলে

  • যে কাজ করে তখন সে হল رفع
    আর কোন বাক্যে  শব্দের অবস্থা যখন তা হয় তাকে বলা হয় مرفوعٌ  মারফু’উ ।
  • যার উপর কাজ সম্পন্ন হয় সেটি হল نصب
    আর কোন বাক্যে  শব্দের অবস্থা যখন তা হয় তাকে বলা হয় مننصوب মানসুব
  • অধিকার বা মালিকানা বাচক হলে বলা হয় জার جر
    আর কোন শব্দ যখন তা হয় তাকে  مَجْرُورٌ  মাজরুর বলা যায়।( মাজরুর একটু জটিল এবং বিস্তৃত  হরফুল جر এর সাথে সম্পৃক্ত তবে আপাতত সে গভীরে না গিয়ে কেবল এতটুকু বুঝে  যাত্রা শুরু করা যায় যে  বাক্যে অধিকারসূচক বা মালিকানাসূচক, সম্বন্ধসূচক শব্দটি হচ্ছে  জারর جر  এবং কাসরা থাকবে)

এখন আপনাকে নিচের ভিডিওটি শুনতে হবে আজকের  পোষ্টির বিষয় ভালভাবে বুঝতে।

মারফু’উ, মানসুব, মাজরুর মনে রাখতে নিচের অডিওটি  শুনে রাখতে পারেন।

 

তাহলে এ পর্বের সারাংশ হচ্ছে।

  • আরবি ভাষার সকল শব্দকে তিন ধরণে শ্রেণীবদ্ধ করা যায় > ইসম, ফীল ও হরফ
  • اسم এর চারটি বৈশিষ্ট্য হল এই: ১) অবস্থা – State ২) লিংগ – Gender ৩) বচন – Number ৪) প্রকারভেদ – Type
  • আজ শুধু اسم  এর  State  বা অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে ।
  • কোন বাক্যে اسم এর অবস্থা কখন   مرفوعٌ  মারফু’উ ,  مننصوب মানসুব  مَجْرُورٌ মাজরুর হবে ও কিভাবে হয় তা আমরা শিখলাম।

ইসম্ اسم সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জানার আছে যা আগামি পর্বে থাকছে যার মধ্যে ইসম্ اسم এ নিচের চারটি গুন বিষয়েও জানা যাবে।

নির্দিষ্ট – Definite কিংবা অনির্দিষ্ট – Indefinite বৈশিষ্ট্যসূচক শব্দ
বচন – Number – এক বচন বা বহু বচন
লিংগ – Gender – পুংলিঙ্গ বা স্ত্রীলিঙ্গ
প্রকারভেদ বা রুপ – Type –

বিস্তারিত আসছে আগামী পোষ্টে .. …

Comments are closed.