আপনার সন্তানকে কখনোই যা বলবেন না-

http://www.youtube.com/watch?v=Oc8aDj5MYkQ

সব বাবা-মা ই চান তার সন্তানটি সেরা হোক, সব কিছুতে ভালো হোক, চৌকস হোক৷ এজন্য তারা অনেক চেষ্টা করেন, ত্যাগ করেন, সময় দেন, সামর্থ অনুযায়ী অর্থ ব্যয় করেন৷ এরপর ও যখন কাঙ্খিত ফল পান না তখন কষ্ট পান , মুষড়ে পড়েন৷ তারা তাদের কষ্টের এ অনুভুতি প্রকাশ করেন বিভিন্ন ভাবে –
– কেউ রাগ করেন
– কেউ চেচামেচি করেন
– কেউ অভিযোগ করেন
– কেউ Nagging করেন ….
যে কারণে তারা রাগ, চেচামেচি, অভিযোগ বা Nagging করেন তার যৌক্তিকতা আছে৷ বাবা-মা সন্তানের ভালো চান বলেই এগুলো করেন , কিন্তু তারা যে এই রাগ চেচামেচি করছেন, তার ফল কি হচ্ছে ? – অবশ্যই খারাপ৷ অর্থাত- কারণ যুক্তিযুক্ত হলেই আপনার কাজ ভালো ফল আনবে তা নয় ৷ কারণ যুক্তযুক্ত হতে হবে এবং Action positive হতে হবে – তবেই result positive হবে ৷

ভালো কারণ + Positive Action = Positive Result
ভালো কারণ + Negative Action = Negative Result

একটি কেস স্টাডি বলছি –

তাহমিদের বয়স ৭ বছর ৷ সে চঞ্চল প্রকৃতির ছেলে ৷ ফলে চেয়ারে অনেকক্ষণ বসে থেকে নিবিষ্ট মনে পড়তে বা লিখতে পছন্দ করে না ৷ লিখতে বসলে প্রথম দিকে হাতের লেখা ভালই হয় – কিন্তু কিছুদুর গিয়ে আকাবাঁকা হতে শুরু করে ৷ তার মা অনেক চেষ্টা করেছে , অনেক অনেক চেষ্টা -নানা রকম চেষ্টা ৷ এতে কিছুটা কাজ হয়, কিন্তু ততটা না ৷

অথচ পাশের বাসার তাদভীনের হাতের লেখা কত সুন্দর ৷ শান্ত হয়ে বসে সে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখে ফেলছে , তার মাকে তেমন কষ্ট করতে হয় না ৷ ফলে তাহমিদের মা রেগে গিয়ে বলেন-
– ” তোকে নিয়ে কত চেষ্টা করলাম , কোনো কাজই হয় না ”
– ” তোকে দিয়ে কিছু হবে না ”
– ” এটাই পারিস না , জীবনে কি করবি?”
– ” এরকম করলে কিন্তু আর ভালবাসবনা ”
– ” দেখ গিয়ে পাশের বাসার ছেলেটা কত ভালো ”
– ” তুই তো কিছুই শিখতে চাস না ”

তাহমিদের মা ফোনে তার বোনকে দুঃখ করে বলেন –
– ” ওকে নিয়ে এত চেষ্টা করি , কিছুতেই কিছু হয় না ..”

তাহমিদের মা এর এ কথা গুলো বলার কারণ কি? – তিনি মনে করছেন এভাবে বললে তাহমিদ শুধরে যাবে৷ কিন্তু আসলে ফল কি হচ্ছে ?
– তাহমিদ আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে – আসলেই কি তার মধ্যে কোনো যোগ্যতায় নাই?
– সে চেষ্টা করার Motivation হারিয়ে ফেলছে
– সে মনে করছে তার মার কাছে সে মূল্যহীন ৷
এ বয়সে তার মা-বাবা আর স্কুলের বন্ধুরাই তার কাছে গোটা বিশ্ব ৷ তার মনে হচ্ছে তার উপর আকাশ ভেঙ্গে পরছে , তার বিশ্বের বড় অংশটাই অন্ধকার হয়ে গেছে ….
– সে নিজের অজান্তেই rude ভাবে কথা বলতে শিখছে … ফলে সেও অন্যদেরকে এভাবেই আঘাত করে কথা বলবে …

এ কেস স্টাডি থেকে আমরা কি জানলাম?-
আমরা দেখলাম এই কথা গুলো বলার পেছনে আপনার উদ্দেশ্য ছিল তাহমিদের উন্নতি করা , ভালো করা৷ কিন্তু ফল হচ্চ্ছে উল্টো -তার ক্ষতি হচ্ছে ৷
আপনি এত কষ্ট করার পর কি সন্তানের ক্ষতি চান? যদি না চান , তাহলে আর একটু ধৈর্য্য বাড়ান৷ আপনার যত কষ্টই হোক কখনই আপনার সন্তানকে এটা বলবেন না যে-
– তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না …
– তোমার মত ছেলে/মেয়ে আমার দরকার নাই ..
-কখনই তার সঙ্গে ওর সমবয়সী কারো তুলনা করবেন না ৷ যদি কাউকে মডেল হিসাবে সামনে রাখতে চানতাহলে মহত মানুষদের ছোট বেলার গল্প বলতে পারেন বা তার থেকে বড় কারো কথা বলতে পারেন ৷ বড়দের অনুকরণ করতে বাচ্চারা পসন্দ করে কিন্তু সমবয়সী কাউকে না ৷

– অন্যের কাছে তার নামে কখনও অভিযোগ করবেন না , অন্তত তখন করবেননা যখন সে তা শুনতে পায় ৷ এতে বাচ্চারা মনে করে মা (বা বাবা ) তার সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখে না ..তার বদনাম করে …৷ এতে তার মন খারাপ হয় এবং তার self esteem কমে যায় ৷ তবে এর মানে এই না যে আপনি বাচ্চার সমস্যা নিয়ে অন্যের সঙ্গে আলোচনা করবেন না ৷ বাচ্চাদের সমস্যা গোপন না রেখে অভিজ্ঞ কারো সাথে এ নিয়ে আলোচনা করলে সুফল পাওয়া যায় ৷ তবে এক্ষত্রে যা মনে রাখতে হবে তাহলো এটা বাচ্চার সামনে কখনই করা যাবে না ৷ এমনকি তাকে পাশের ঘরে রেখেও না – অনেক সময় মনে হয় তারা শুনছে না বা খেলা নিয়ে ব্যস্ত আছে …কিন্তু আসলে তারা শোনে৷ তার সম্পর্কে negative কোনো কথার একটি শব্দ ও যদি তার কানে যায় তাহলে সে আপনার প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে , মনে করবে ” মা মনে হয় সব সময়েই আমার নামে এসব কথা বলে…” ৷ তাছাড়া বাচ্চারা তার সম্পর্কে বাবা- মার মন্তব্য শুনতে খুবই আগ্রহী ৷ আপনি তার সম্পর্কে কিছু বলতে শুরু করলেই সে কান খাড়া করে তা শুনে , কিন্তু ভান করে যে সে আপনার কথায় একেবারেই মনোযোগ দিচ্ছে না ৷ কাজেই তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলুন ” তাহমিদ অনেক চেষ্টা করে …সে আগের চেয়ে উন্নতি করছে …আর একটু চেষ্টা করলে সে অনেক ভালো করবে …” ৷ নিজের সম্পর্কে এ রকম মন্তব্য শুনলে বাচ্চারা তাদের চেষ্টা বাড়িয়ে দিবে এবং আপনার সঙ্গে তার সম্পর্ক সদৃঢ় হবে ৷

মনে রাখবেন আপনার সঙ্গে আপনার বাচ্চার সম্পর্ক অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে তার সঠিক Development এর জন্য বেশী জরুরী ৷

শেষ কথা –
এ কথা গুলো বলা যত সহজ করা তত সহজ না ৷ আসলেই এটা কঠিন একটি কাজ৷
একটু চিন্তা করুন – আপনি কি চাচ্ছেন ? সন্তান মানুষ করতে…এটা স্বাভাবিক একটি চাওয়া কিন্তু ছোট চাওয়া না ৷ পৃথিবীর সবথেকে কঠিন কাজটি আপনি করছেন- Human Resource Development ৷ পৃথিবীর সবথেকে উন্নত জীব কে গড়ছেন আপনি ৷ এটা অন্য যে কোনো কাজের চেয়ে Challenging৷ কাজেই অন্য যেকোনো কাজের চেয়ে বেশী ধৈর্য ও বুধিমত্তার প্রয়োজন এ কাজে ৷ এবং সেটা আপনাকেই করতে হবে -কারণ, আপনি আপনার সন্তানের ভালো চান ৷

Loading


Comments

আপনার সন্তানকে কখনোই যা বলবেন না- — 5 Comments

  1. ভাল লাগল আপনার তথ্যবহুল পোষ্ট টি, ধন্যবাদ ।

  2. ভাল লাগল ভিডিও সহ আপনার লিখাটি। আরো আসবে সে আশা করছি।
    পরামর্শ বা ফিড ব্যক দিতে বলতে চাই,
    ডিডিওটা একেবার সলো না করে কেইস স্টাডিতে কাউকে দিয়ে রোল প্লে করায়ে সিন পরিবর্তন করলে ভাল হত। আর পুরা ভিডিওতে ভয়েস অনেকটা মনোটঊন হয়ে গিয়েছে।
    নিচের ফোরামে একটু দেখে আসতে পারেন:
    http://www.essayforum.com/speech-writing-8/qualities-good-speech-255/

    • অনেক ধন্যবাদ , আসলে ভিডিওতে এখনো expert হইনি, শিখতে চেষ্টা করছি …

  3. {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54} {54}

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *