মুসলমানদের একাধিক বিয়ের বিষয়

চিন্তাশীল ইসলামী স্কলারদের অনেকই বলতে শুনেছি নিছক অজ্ঞতার কারণে আমাদের ধর্ম অঙ্গনে কিছু অতি উৎসাহী ব্যক্তিরা এবং ইসলাম বিদ্বেষী গোষ্ঠী কুরআনের সুরা নিসার ৩ নং আয়াতের একটি বাক্যের সূত্র ধরে নিজেদের সুবিধা-মত যে ব্যাখ্যা দিয়ে ইসলামকে বিতর্কিত করতে চান তাদের থেকে সাবধান হতে হবে। যেমন সুরা নিসাতে মুসলমানদের একাধিক বিয়ের বিষয়। আসুন আমরা সেই আয়াত পড়ে দেখি। অবশ্য তার আগে সুরা নিসার ২ নং আয়াতটিও পড়তে হবে ৩ নং আয়াতটির প্রেক্ষাপট কি ছিল তা বুঝতে।

কোরআন যারা বুঝে পড়েন বা তেলাওয়াত করেন তারা জানেন কুরআনের অধিকাংশ আয়াত নাজিল হত যখন রাসুলের (স:) দাওয়াতী কাজে বাধা আসত এবং তখনকার আরব সমাজে যেসব সমস্যা সংকট দেখা দিত তার জবাব দিতে কিংবা সে লক্ষ্যে রাসুলকে কি করতে হবে তা শিক্ষা দিতে।

একইভাবে তখনকার সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার জড়িত রীতি রেওয়াজ ও ভ্রান্ত ধ্যানধারণাকে সংশোধন করতে এবং সে সময়ের সামাজিক সমস্যার সমাধান করতে একটি ন্যায় নীতি পূর্ণ ভারসাম্য সম্পন্ন সমাধান দিতে আল্লাহর পক্ষ থেকে যে ওহি আসত সেটাই কুরআনে বিভিন্ন বাক্যে লিখিত আছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিশেষ করে সে যুগের যুদ্ধংদেহী (warmongering) সমাজের হত্যাযজ্ঞের একটি বিরাট কুফল ছিল যুদ্ধে পরাজিত গোত্রের বিধবা মহিলাদের ও অগণিত এতিম ছেলে সন্তানদের অসহায়ত্ব। যারা পরবর্তীকালে বিজয়ীদের দাস-দাসীতে পরিণত হত এবং বাধ্য হয়ে তাদেরকে মালিকের ঘরে কাজ করতে হত। তাই সে সমাজের বিভিন্ন প্রভাবশালী মানুষের ঘরে তখন এরা মালিকের হুকুম পালনে বাধ্য হয়ে অসহায়ের মত জীবনযাপন করতে হত। নিঃসন্দেহে এটি একটি মানবিক সমস্যা ছিল। ইসলাম মূলত এ সমস্যার সমাধান প্রদান করতে চেয়েছিল অত্যন্ত প্রজ্ঞা ও বাস্তবসম্মত পন্থা অবলম্বন করে সে সমাজ ব্যবস্থার প্রেক্ষাপঠে।

আমরা যদি কোরআনের সুরা নিসার ২ এবং ত নং আয়াতগুলো পড়ি সেখানে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় যে সে সমাজের একটি বিরাট সমস্যা ছিল বিধবা, এতিম মেয়ে এবং যুবতী দাসীদেরকে নিয়ে। সে সমস্যা দূর করতে এতিম মেয়েরা যখন প্রাপ্তবয়স্ক হবে তখন তাদেরকে বিয়ে করার কথা আল্লাহ বলছেন এবং বিশেষ করে মালিকাধীন থাকা দাসীদের বিয়ের কথাও এসেছে। এখানে সমস্যা সমাধানে আল্লাহ একটি পন্থা অবলম্বনের আদেশ দিচ্ছেন সেটি ছিল সম্পূর্ণ তখনকার অবস্থার প্রেক্ষিতে খুবই জরুরী। একাধিক বিয়ে হচ্ছে একটি প্রিভিলেইজ সেটি অধিকার নয়। আজ সমস্যা হচ্ছে প্রিভিলেইজ আর অধিকার কি সেটিই বা কয়জনে বুঝতে চায়? Privilege vs right লিখে গুগুলে সার্চ করে দেখতে পারেন তফাৎ কি?

সে যাক এখন সেই দুটি আয়াতে দেখা যাক সেখানে একাধিক বিয়ের কথাটি কিভাবে বলা হয়েছে?

وَآتُواْ الْيَتَامَى أَمْوَالَهُمْ وَلاَ تَتَبَدَّلُواْ الْخَبِيثَ بِالطَّيِّبِ وَلاَ تَأْكُلُواْ أَمْوَالَهُمْ إِلَى أَمْوَالِكُمْ إِنَّهُ كَانَ حُوبًا كَبِيرًا
এতীমদেরকে তাদের সম্পদ বুঝিয়ে দাও। খারাপ মালামালের সাথে ভালো মালামালের অদল-বদল করো না। আর তাদের ধন-সম্পদ নিজেদের ধন-সম্পদের সাথে সংমিশ্রিত করে তা গ্রাস করো না। নিশ্চয় এটা বড়ই মন্দ কাজ। [ সুরা নিসা ৪:২ ]

وَإِنْ خِفْتُمْ أَلاَّ تُقْسِطُواْ فِي الْيَتَامَى فَانكِحُواْ مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاء مَثْنَى وَثُلاَثَ وَرُبَاعَ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلاَّ تَعْدِلُواْ فَوَاحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ذَلِكَ أَدْنَى أَلاَّ تَعُولُواْ

আর যদি তোমরা ভয় কর যে, এতীমদের হক যথাযথভাবে পূরণ করতে পারবে না, তবে মহিলাদের থেকে যাদের ভাল লাগে (what seems suitable) তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে, একটিই অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদেরকে; এতেই পক্ষপাতিত্বে জড়িত না হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা। [ সুরা নিসা ৪:৩ ]

এখানে আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি একাধিক বিয়ে করার পরামর্শ শর্তসাপেক্ষে দেয়া হয়েছিল এবং তিন নং আয়াতটি ২ নং আয়াতের এতিমের প্রক্ষিতে এসেছে এখানে সব যুগে সব ধরনের মহিলাকে বিয়ে  করে কৌটা পুরনের কথা আসে নাই। লন্ডনে আমার এক  ব্যরিষ্টার বন্ধু যিনি কোরআন নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে গবেষনা করেন সম্প্রতি আমাকে তিনি বিষয়টির সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষন করেন। আমি তার সাথে এক মত।

আজকের যুগে সেই সমস্যা নাই বরং এ অনুমতীকে পরবর্তী কালের মানুষ যদি দেখতে পায় অপব্যবহার হচ্ছে বা হতে পারে তা হলে প্রথম স্ত্রীর অনুমতীক্রমে ২য় বিবাহ করার আইন একটি দেশে থাকতেই পারে সেটি ইসলাম বিরোধী হয় না। কেননা কোন স্বামী ২য় বিয়ে করতে যাচ্ছে শুনলে এটি  প্রথম স্ত্রীর অধিকার তিনি স্বামীর সাথে থাকবেন কি  থাকবেন না?

 কিন্তু ধর্মীয় তকমার লোকেরা সে  অধিকার দিতে চায় না কি কারণে আমাদের বোধগম্য হয় না।

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *