83 জন পড়েছেন
এই প্রশ্নের উত্তর সমাজের সার্বিক বাস্তবতার দিকে তাকালেই বোঝা যাবে। ওখানে দেখা যাবে যে মানুষের তাকওয়া বা খোদা-ভীতি গত বছর রোজা রাখার আগে যেমন ছিল, রোজা রাখার পরেও তেমন ছিল। এর আগের বছর যেমন ছিল, পরের বছরও তেমন ছিল, এবং বিগত জীবন ব্যাপী এভাবেই।
আমাদের জীবনকাল সামনে রেখে মুসলিম বিশ্বের দিকে তাকালে বিষয়টা অস্পষ্ট থাকার কথা নয়। রোজা রাখার কারণে লোকজনকে কি অধিক মোত্তাকি হতে দেখা যায়? সামাজিক নৈতিকতা কী দেখিয়ে যায়? যেই সেই? গত বছর যেমন, আগের বছরও তেমন? এর আগের বছর? জীবনভর? আমরা নিজেদের কথাই ভাবতে পারি। আমার জীবনে কী হয়? আগের বছর? পরের বছর? বয়সের ভারে অন্য পরিবর্তন? হ্যাঁ, নানান কারণে মানুষের মধ্যে কিছু পরিবর্তন আসে, সেটা সকল সমাজে, সকল শ্রেণীতে দেখা যায় -এটা ভিন্ন।
আমাদের বাস্তবতা যা দেখিয়ে যায় তা হল রমজানে রোজা রাখা সমাজ-ধর্মের একটি সংস্কৃতিগত প্রথা। এটি পৈতৃকসূত্রে প্রাপ্ত। আমাদের পূর্ববর্তী সমাজ এই প্রথাকে হাজার বছর ধরে পালন করে আসছে, তাই আমরাও পালন করি। প্রতি বছর এগারো মাসের জড়তা থেকে কিছু বিচ্ছেদ ঘটে; আমাদের বাৎসরিক অভ্যাসের পরিবর্তন হয়। খাবারের সময় পরিবর্তন হয়, ঘুমেরও কিছু পরিবর্তন হয়। সারাদিন উপবাস থেকে সন্ধ্যায় খাবার খেতে স্বাদ বেশি পাওয়া যায়। খাবারও ফ্রেস থাকে। একে অন্যকে খাবারের (ইফতারের) দাওয়াত দেয়া হয়। গোটা মাস যেন উৎসবের মাস হয়ে উঠে। ইফতারের সভা হয়। কিছু বক্তৃতা দেয়া হয়। জুমার খুৎবা ভিন্ন হয়। প্রত্যেক বছরই এগুলো সমানভাবে হয়, আগের বছরের ন্যায়। এইসব বক্তৃতার বিষয় হয় পরহেজগারি, কোরান তেলায়ত, নফল নামাজ ইত্যাদি। মসজিদে তারাবির নামাজ হয়। মাসের পরে ঈদ হয়, তার পর আবার আগের রুটিনে যাওয়া হয় এবং এভাবেই চলে কালের পর কাল। আমাদের বাচ্চারা এগুলো দেখে। তারপর তারাও বড় হয়ে এই কথাগুলো আমাদের মত বলে, এবং এই সংস্কৃতি এভাবেই প্রজন্ম পরম্পরায় চলে। এটাই মানুষের সংস্কৃতি।
এই রমজান মুসলিম সাংস্কৃতিক জীবনের একটি অংশ। সকল সমাজের ও সংস্কৃতির মানুষ ১২ মাসে, এবং বিভিন্ন ঋতুতে কিছু কিছু কাজ পৈতৃক জীবনের ধারায় করে যায়। মুসলিম সমাজের কর্ম ধারায়ও এক মাস রোজা রাখা সমাজ জীবনের একটি প্রথা।
রোজার সাথে তাকওয়া আছে -এটা বিশ্বাসে আছে। এই মাসে শয়তান বন্দী থাকে –এটাও বিশ্বাসে আছে। তবে এই মাসেও ঝগড়া-বিবাদ হয়, ঘুষের লেন-দেন হয়, রাগ-গোস্বার প্রকাশ হয়। তবে তাকওয়ায় না গিয়ে, বিষয়টা অন্যভাবেও দেখা যায়: মানুষের মধ্যে কিছু লোক ভাল হয়, কিছু লোক মন্দ হয়। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। যারা ভাল, তারা ভাল। যারা মন্দ লোক, তারা মন্দ – এভাবেই। হ্যাঁ, মাঝে মধ্যে নানান কারণে ভাল লোক মন্দ হয়, আবার মন্দ লোকও ভাল হয়। সব সমাজেই এভাবে।
আমরা এখানে ‘বাস্তবতার রূপ’ নিয়ে কথা বলছি, কিন্তু সকল কথাই মূলত বক্তারই কথা, তারই প্রেক্ষিতের কথা, সুতরাং এতে অন্যরা দ্বিমত করতে পারেন। এতে তর্কের কিছু নেই, ঝগড়ারও কিছু নেই।
মানুষের চিন্তা নানান ঘটনা ও প্রেক্ষিতের আঙ্গিকে প্রকাশ পায়। বয়সের সাথেও চিন্তার পরিবর্তন আসে ―বাস্তবধর্মী হয়। এভাবে ব্যক্তি জীবনের রূপ সব সমাজে, সব ধর্মে একই। মানব-প্রকৃতিও সব ধর্মে, সব সমাজে একই। বাস্তবতার দিকে তাকান। সব ব্যবসায়ী নিজেদের পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে বলতে হয় তাদের পণ্যই উত্তম। কেননা, কেউ কারও পণ্য মন্দ বলে বাজারে বিক্রি করা সম্ভব নয়। সৃষ্টিশৈলী গুণ ব্যবহার করে পণ্যের নানান গুণের কথা বলতে হয়। জগত সংসার এভাবেই।
83 জন পড়েছেন