সব চেয়ে বড় প্রশ্ন?

ডঃ লরেন্স বি ব্রাউন বড় প্রশ্ন সমূহের ব্যাপারে তার এক প্রবন্ধে লিখেছেন, আমাদের সবার মনে কোন না কোন এক সময় যে প্রশ্ন জাগে তা হল কে আমাদেরকে সৃষ্টি করল এবং কেনইবা আমরা এখানে? সত্যিই যদি প্রশ্ন করা হয় কে আমাদেরকে সৃষ্টি করল এবং এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা কে? এর উত্তরে একজন নাস্তিক হয়ত বিগ ব্যং (Big Bang) ও বিবর্তনবাদ তত্ত্বের কথা বলবে, আর বাকি সবাই স্রষ্টা বা আল্লাহর কথাই বলবেন। তবে যারা জানিনা বলে স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে অর্থাৎ যারা নাস্তিক তাদের ব্যর্থতা হচ্ছে আসলে স্রষ্টার অস্তিত্ব যে আছে তা তাদের অনুভব করার অক্ষমতা।

প্রশ্ন হল বিগ ব্যং তত্ত্ব দিয়ে বিশ্ব সৃষ্টির একটা ব্যখ্যা দেয়া যেতে পারে তবে তারও আগে যে ধূলিকণা মিশ্রিত কুয়াশা তথা প্রাইমোরডিয়েল ডাষ্ট ক্লাউড ( primordial dust cloud) বিদ্যমান ছিল তার অস্তিত্বের কোন ব্যখ্যা দিতে পারেনি। সুত্র অনুসারে আগে থেকে বিদ্যমান প্রাইমোরডিয়েল ডাষ্ট ক্লাউড একত্রিত হয়ে জমাট বেঁধে প্রচণ্ড চাপে তথা কমপ্যাক্ট হয়ে পরে বিরাট আকারের বিষ্ফোরণ ঘটে। কিন্তু সেই প্রাইমোরডিয়েল ডাষ্ট ক্লাউড কোথা থেকে এলো তার উত্তর নাই!

একইভাবে বিবর্তনবাদ তত্ত্ব ফসিল রেকর্ড ইত্যাদির কথা বলবে কিন্তু মানুষের আত্মার বা রুহের ব্যখ্যা দিতে অপারগ! মহাকাশে হঠাৎ সেই বিষ্ফোরণ ঘটে কারো কোন পরিকল্পনা ছাড়াই প্রাকৃতিক এই নিয়ম-কানুন সম্মিলিত মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে এবং বিশাল সৌরজগতের অসংখ্য গ্রহ-নক্ষত্র সম্মিলিত এই মহাবিশ্বের প্রাকৃতিক সবকিছু যেভাবে সম্পূর্ণ এক নিখুঁত ও ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থাসহ চলে আসছে বিলিয়ন বিলিয়ন বছর ধরে তার পিছনে কোন বুদ্ধিমত্তার তথা স্রষ্টার অস্তিত্বের অবকাশ নাই বলে যাদের ধারণা – তার সাথে একথার কোন তফাৎ নাই যদি কেউ বলে যে পুরানো জিনিষের এক আস্থানায় তথা কোন এক জান্ক ইয়ার্ডে হঠাৎ বোমা মেরে বিষ্ফোরণ ঘটার কিছুদিন পর সেখান থেকে সৃষ্টি হয়ে আসছে সুন্দর ডিজাইনের এক মার্সিডিজ বা টয়োটা গাড়ী!

বিবেকবান প্রতিটি মানুষ এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, কোন নিয়ন্ত্রিত প্রভাব ছাড়া তথা লাগাম বিহীন যে কোন ব্যবস্থার পরিণতি হচ্ছে অরাজকতা বা বিশৃঙ্খলা। তবে বিগ ব্যং ও বিবর্তনবাদ তত্ত্ব কিন্তু তার উল্টোটাই মানতে বলছে! তাই প্রশ্ন হচ্ছে এটা কি অধিক যুক্তিসম্মত ও সঠিক হবেনা যে বিগ ব্যং ও বিবর্তনবাদ ব্যপারগুলা সম্পূর্ণ প্ল্যন মাফিক একটা নিয়ন্ত্রিত ঘটনা ছিল? অর্থাৎ এটা কোন রেন্ডম বা হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা নয় বরং এর পিছনে ছিল স্রষ্টার পূর্ব পরিকল্পনা ও ডিজাইন।

নাস্তিকদের আরেকটি পুরানো যুক্তির ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বে বিরাজমান ত্রুটি বিচ্যুতি ও অন্যায় অবিচার অর্থাৎ তাদের কথা হল মহাবিশ্বের কোন স্রষ্টা থাকলে কীভাবে এত অন্যায়, অবিচার, নির্যাতন, হত্যা, ধ্বংস, ক্যান্সার, মহামারী, বন্যা, প্লাবন, খুন-রাহাজানি ইত্যাদি পৃথিবীতে চলতে পারে? তবে পৃথিবীতে যে খারাপ জিনিস আছে সেটা বড় কথা নয় এখানে আসল পয়েন্ট হচ্ছে স্রষ্টাকে অস্বীকার করার তাদের ভিত্তি হচ্ছে দৈবিক শক্তি থাকালে আমাদেরকে একমাত্র ভাল কাজ করার ক্ষমতা ও পৃথিবীতে ন্যায় বিচার প্রতিষ্টা করা ছাড়া অন্য কোন কিছু করার ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টিই করতেন না।

হুম, তা হলে আর কোন রাস্তা নাই?

তবে আসল কথা হল মানব জাতিকে স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস স্থাপন করাতে যুগে যুগে যে সব মহা-মানবেরা তথা নবী-রাসুলেরা এসেছিলেন তারা সবাই একই কথা বলেছেন যে, পৃথিবীর এই জীবনকে স্বর্গরূপে সৃষ্টি করা হয় নাই বরং এ জীবন হচ্ছে একটা পরীক্ষা ক্ষেত্র। চূড়ান্ত শাস্তি ও পুরষ্কার পাওয়ার জায়গা হচ্ছে পরকালের জীবন এবং সেখানেই প্রতিষ্ঠিত হবে সঠিক ন্যায়বিচার। পৃথিবীর জীবন হচ্ছে এক ক্ষণস্থায়ী জীবন আর এই জীবনের কর্মফলের ভিত্তিতে সঠিক শাস্তি ও পুরষ্কার পাবে মৃত্যুর পর। আর সেই সব নবী রাসুলদের সবাই রেখে গেছেন তাদের নিঃস্বার্থ, সুন্দর ও সাফল্যতাপূর্ণ জীবন যাপনের অনুপম উদাহরণ। তবে স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস না জন্মিলে পরকালের জীবনের ব্যাপারে কোন জ্ঞান বা চিন্তা করার ক্ষমতাই হবে না।

আশা করা যায় উপরোক্ত আলোচনায় আমরা সেই বড় প্রশ্নের উত্তর দিতে একমত হতে পারব যে, আমরা হচ্ছি সৃষ্টি এবং আমাদের স্রষ্টা হচ্ছেন গড তথা আল্লাহ। আর একমত হতে না পারলে সম্ভবত এ ব্যাপারে আর অগ্রসর হওয়ার প্রয়োজন নাই। সে যাক, যারা একমত হবেন তাদেরকে নিয়ে পরবর্তী প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যায়। আমরা এখানে কেন এসেছি অর্থাৎ এ জীবনের উদ্দেশ্য কী?

জীবনের আসল উদ্দেশ্যঃ
সত্যি কেন আমরা এই পৃথিবীতে? আমরা কি এখানে শুধুমাত্র প্রচুর ধনসম্পদ কিংবা অনেক খ্যাতি অর্জনের জন্য বা গান বাদ্য ও শিশু সন্তান সৃষ্টির জন্য এসেছি? এর উত্তর যুগে যুগে অনেক মহাপুরুষ ও দার্শনিকেরা দিতে চেষ্টা করেছেন। একটু চিন্তা করুন। শুরুতে, আমরা চর্তুদিকে তাকালে কি দেখতে পাই? যদি কেউ গুহায় বাস না করে তাহলে তার আশেপাশে দেখবে মানুষ আর সেই মানুষের সৃষ্টি অসংখ্য জিনিসপত্র যা মানুষ সৃষ্টি করেছে তার সেবা করার জন্য তাই না? একইভাবে আমাদের স্রষ্টার ব্যাপারেও একথা প্রযোজ্য হবে যে তিনি আমাদেরকে তার সেবা করার জন্যই সৃষ্টি করেছেন।

অতএব জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে স্রষ্টার সেবা করা তথা উপাসনা করা এবং এই বার্তা আমরা পেয়েছি নবী-রাসুলদের কাছ থেকে ও পবিত্র গ্রন্থে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ স্পষ্ট করে বলেছেন, “আমি (আল্লাহ) জীন ও মানুষকে সৃষ্টি করি নাই আমাকে ছাড়া অন্যকিছুর ইবাদত করতে।” (৫১:৫৬) এবং কোরআনে আরো বলা হয়েছে যে, মানুষকে এ পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে স্রষ্টার প্রতিনিধি হিসাবে। (সুরা ২:৩০) অতএব স্রষ্টার নির্দেশিত কাজ পালন না করলে তার প্রতিনিধিত্ব করা হবে না একথা মানতে হবে।

এখন কথা হল যদি আমরা স্রষ্টার অস্তিত্ব স্বীকার করি এবং মেনে নিই আমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে তাঁর সেবা করতে তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে কীভাবে স্রষ্টাকে সেবা করতে হবে? এতে কোন সন্দেহ নাই যে এ প্রশ্নের সবচেয়ে সঠিক উত্তর জানা যাবে স্রষ্টার কাছ থেকেই। তিনি যেহেতু আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব পালন করে তার সেবা করতে অতএব স্বভাবতই তিনি তার দেয়া বিশেষ পদ্ধতিতেই চাইবেন আমাদের কাছ থেকে সেবা নিতে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে কীভাবে আমরা জানতে পারব সেই পদ্ধতি এবং স্রষ্টা আসলেই আমাদের কাছ থেকে কী চান?

একটু চিন্তা করেন, আল্লাহ আমাদেরকে আলো দিয়েছেন যা দিয়ে আমরা রাতের অন্ধকারে চলতে পারি। এমনকি রাতে আমরা পাচ্ছি চন্দ্র ও তারা। পশুকে তিনি দিয়েছেন তার উপযোগী চলার পথের দিক নির্দেশনার সুব্যবস্থা। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলে যেতে পারে উড্ডীয়মান বিহঙ্গ আলোর পলারাইজেশনে। এভাবে শুধু পাখি নয় প্রতিটি জীবের জন্য মহান স্রষ্টা বিভিন্ন উপায় উপকরণ দিয়েছেন যা অনুসরণ করে তারা চলে। কিন্তু মানুষের জন্য কোন দিক নির্দেশনা দিবেন না তা কি ভাবা যায়? অবশ্যই তা হতে পারে না সে জন্যই আসে ওহি বা দৈব বার্তা।

এ প্রসঙ্গে অলোচনার আগে আমাদের এই জাগতিক জীবনে কোন ফ্যাক্টরীর কথাই চিন্তা করুন, আমরা জানি যে, কোন ফ্যাক্টরীতে কোন বস্তু বা দ্রব্য প্রস্তুত করতে অনুসরণ করা হয় প্রকৌশলীর নির্দেশিত সুনির্দিষ্ট নিয়ম তথা স্পেসিফিকেশন এবং তা যদি কোন জটিল যন্ত্রপাতি বা কোন মেশিনারী হয় তাহলে দেয়া হয় ইউজার ম্যানুয়্যাল তার সঠিক ব্যবহার পদ্ধতির নিমিত্তে। আমরা আরো দেখতে পাই ফ্যাক্টরীর উৎপাদিত দ্রব্য যখন কাংখিত কার্যপালনে ব্যর্থ হয় তখন তার রিপেয়ার করার প্রশ্ন আসে অথবা তাকে ধ্বংস করা হয়। এখন আমরা যদি স্রষ্টার সৃষ্টি হয়ে তার কাজ পালনে ব্যর্থ হই তাহলে আমাদের শেষ পরিণতি কী হতে পারে ভাবতে ভয় লাগে তাই না?

আসলে মানুষের জন্য ওহির মাধ্যমে যুগে যুগে দেয়া হয়েছে দৈবিক নির্দেশনাসহ পুস্তক বা কিতাব যাকে আমরা মানুষ যন্ত্রের জন্য স্রষ্টা প্রদত্ত ইউজার ম্যানুয়্যাল বলতে পারি যা মানুষের সঠিক পথে চলার নির্দেশ দিবে। অবশ্য কালের পরিবর্তনে সেই সব পুস্তকের আসল বক্তব্য যখন হয়ে যায় বিকৃত তখন তা সংস্কারের নিমিত্তে যুগে যুগে প্রেরিত হন নবী-রসুল। যার ধারাবাহিকতায় এসেছেন বিশ্ব নবী মোহাম্মদ (সঃ) মানুষ জাতির কল্যানে এবং তাঁর মাধ্যমে মানব জাতির জন্য যে পুস্তক দেয়া হয়েছে তাহল কোরআন। আর কোরআন যাতে পরিবর্তন না হতে পারে সে জন্য রাখা হয়েছে উত্তম ব্যবস্থা। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি যদি পৃথিবীর সকল লাইব্রেরী ও মুসলিমদের কাছ থেকে বলপুর্বক কোরআন কেড়ে নিয়ে ধ্বংস করে দিতে চায় তবু এই কোরআন-কে নিশ্চিহ্ন করতে ব্যর্থ হবে। কুরআন্ সংরক্ষণের দায়িত্ব কুরআনের রচয়িতা আল্লাহ নিজেই করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন আর সে জন্যই হয়ত আল্লাহ এমন এক আকর্ষণ ও বৈশিষ্ট দিয়েছেন এই কুরআনে যে হাজারো বছর পর আজও পৃথিবীতে লাখো লাখো মানুষ মুখস্থ করে আছে সম্পূর্ণ কোরআন। প্রাচ্য ও প্রাশ্চাত্যে পাওয়া যাবে অসংখ্য হাফেজে কোরআন। কোরআন যেহেতু ঘোষণা দেয় যে পৃথিবীর শেষ দিন অর্থাৎ কেয়ামত পর্যন্ত মানুষের সঠিক পথে চলার নির্দেশ দিবে তাই এই চির সত্যের বাস্তবতার প্রয়োজনেই হয়তবা মহান আল্লাহ কোরআন-কে চিরকাল সংরক্ষণের জন্য করেছেন এই অন্যান্য ব্যবস্থা। পৃথিবীর অন্য কোন ধর্ম গ্রন্থের নেই এরকম কোন ব্যবস্থা। বস্তুতঃ শত অপপ্রচার উপেক্ষা করে আজও বিশ্ব জুড়ে বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বে অসংখ্য মানুষ গ্রহণ করছে কোরআন। এ ব্যাপারে সন্দেহ থাকলে ইন্টারনেটের সাহায্য নিতে পারেন অর্থাৎ নিউ মুসলিম শব্দ লিখে গুগল সার্চ করলেই তা যাচাই করা যাবে।

দৈব বাণী বা ওহির কী প্রয়োজন?
এ পর্যন্ত আলোচনায় আমরা যে দুটি বড় প্রশ্নের উত্তর সন্ধান পেলাম তা হচ্ছে কে আমাদেরকে সৃষ্টি করল? আল্লাহ এবং কেন আমরা এখানে? আল্লাহর উপাসনা বা সেবা করতে। আর এ প্রসঙ্গে ৩য় যে প্রশ্নটি জাগে, “যদি স্রষ্টা আমাদেরকে সৃষ্টি করে থাকেন তার সেবা ও উপাসনা করতে তাহলে কীভাবে তা করা যাবে?” উপরোক্ত আলোচনায় একথাও জানা গেল যে, একমাত্র খোদা প্রদত্ত নির্দেশ যা ওহি হিসাবে এসেছে তা মেনেই সম্ভব স্রষ্টার সেবা করা।

অনেকেই প্রশ্ন করবে আমাদেরকে ওহি পালন করার কী প্রয়োজন? মানুষ তার বিবেক বুদ্ধি দিয়ে ভাল কাজ করলেই হল এবং আমরা প্রত্যেকেই তার নিজের গড়া পদ্ধতিতে স্রষ্টার সেবা করলেই কি যথেষ্ট নয়? প্রথম কথা হল ভাল কাজ কী তা নিয়েইত অনেক বিতর্ক। কারো কাছে যে কাজ ভাল মনে হবে তা অন্যের কাছে হয়তবা মনে হবে অনেক খারাপ। বস্তুত এই বিতর্কের অবসান করতেই প্রয়োজন মানুষের গড়া ভাল মন্দের মাপকাঠি ছেড়ে স্রষ্টার নির্দেশকেই চূড়ান্ত মাপকাঠি নির্ণয় করা আর তা না করলেই হবে সমস্যা এবং স্রষ্টাও হবেন আমাদের উপর অসন্তুষ্ট। মনে করেন আপনার ঘরে ছেলেমেয়েদেরকে লালন পালন করতে গিয়ে কিছু নিয়ম কানুন ঠিক করলেন এবং তাদের সবাইকে তা মেনে চলার নির্দেশ দিলেন কিন্তু দেখা গেল তাদের মাঝ থেকে একজন বলে বসল যে সে এই সব নিয়ম-কানুন মানবে না সে তার নিজের মর্জিমত নিয়ম তৈরী করে চলবে। তখন আপনার মনের অবস্থা কেমন হবে? আপনি নিশ্চয় রাগ করে বলতে পারেন, ”গোল্লায় যাও বা গো টু হেল।” একিই ভাবে আমরা যারা স্রষ্টার সৃষ্টি হয়ে তাঁর নির্দেশ অমান্য করছি তাদের বেলায়ও ”গোল্লায় যাও বা গো টু হেল” বলা খুবই স্বাভাবিক স্রষ্টার পক্ষ থেকে যদি তিনি ক্ষমা না করেন।

প্রযুক্তির উৎকর্ষ ও দুনিয়ার জীবন পরীক্ষা ক্ষেত্র
ভুলক্রমে যে প্রশ্নটা অনেকের মনে আসে তা হচ্ছে যেহেতু মানুষ আজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে অনেক কিছু আবিস্কার করতে এবং অনেক রোগের চিকিৎসা করতে পারছি অতএব আধুনিক বিশ্বে দুনিয়ার জীবনকে পরীক্ষা ক্ষেত্র বলা হচ্ছে এক পুরান কথা যা মেনে চলার কোন প্রয়োজন নাই। বস্তুত যখনই মানুষের মনে এ ধারণা জন্মে তখন তার পক্ষে স্রষ্টার কথা মেনে চলার বা সে অনুসারে সমাজ জীবন তথা রাষ্ট্রীয় নিয়ম-কানুন পরিচালনার প্রশ্নই আসেনা। একটু চিন্তা করুন সত্যিকার অর্থে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ স্রষ্টার সৃষ্টি থেকেই কিছু একটা তৈরী করছে বা তাঁর সৃষ্টির অজানা কোন তথ্য বা রহস্য আবিস্কার করছে তাই বলে কি আসল স্রষ্টার অস্তিত্বের অবসান হয়ে যাবে? একই রোগে, একই হাসপাতালে একই ডাক্তারের একই চিকিৎসা নিয়ে কেউ ঘরে ফিরে সুস্থ হয়ে আবার কেউ যায় গোরস্থানে। কেন এমন হয় এ কথা কি আমরা চিন্তা করি? কোন ধর্ম যদি হয় সত্যিই বিজ্ঞান-বিরোধী অবশ্যই তা বর্জনীয়। তবে তা সত্যিই কি বিজ্ঞান-বিরোধী না করো বোঝার ভুল তাও দেখতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে বিজ্ঞানের অপব্যাখা দিয়ে কি কোন অপবিজ্ঞানী ধর্মকে অস্বীকার করছে কিনা তাও দেখতে হবে আর ধর্মের ব্যাখ্যার ঠিকাদারী যদি চলে যায় অজ্ঞ বা বিজ্ঞান-বিরোধীদের কাছে যাদের মনে অনুসন্ধানী ও উদ্ভাবনী চিন্তার নাই কোন আগ্রহ তখনই হয় আরো সমস্যা। অন্য দিকে বস্তুতান্ত্রিক ভোগ্যবাদী সমাজ ব্যবস্থার কায়েমী স্বার্থের মিডিয়ার অপপ্রচার মানুষকে করে তোলে আরো বিভ্রান্ত। আজ পৃথিবীতে সাধারণ মানুষের জীবন দিন দিন কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। মানুষ ব্যস্ত জীবিকার অন্নেশনে আর তাদের অবসর সময়কে ব্যস্ত রাখার জন্য বিশ্বজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল বিনোদন শিল্প যা অবিরাম উপস্থাপিত হচ্ছে টিভি ও ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন মাধ্যমে যার নেশায় মানুষ হচ্ছে মাতাল। জীবন এতই ব্যস্ত যে এক মুহুর্ত সময় নাই জীবনের আসল উদ্দেশ্য কী সে বিষয়ে কিছু চিন্তার!

সঠিক ধর্ম তা হলে কী?
আসলে সঠিক ধর্ম একমাত্র একটিই যা অতীতে ছিল এখনও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে – কেউ গ্রহণ করুক আর না করুক। তা হচ্ছে স্রষ্টার প্রতি শুধুমাত্র তাঁর প্রদত্ত স্বর্থে আত্মসর্ম্পণ করা এবং তিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য না মানা অর্থাৎ তাঁর সৃষ্টির কোন কিছুকে তার সমকক্ষ বা উপাসনায় শরিক না করা। বস্তুত ইতিহাস প্রমাণ করে সকল যুগের নবী রাসুলেরা মানুষকে এই উপদেশই দিয়েছেন সর্বদা। সময়ের বিবর্তনে তথাকথিত অনুসারীরা নিজেদের স্বার্থে ধর্মের নামে অনেক কুসংস্কার চালু করে ধর্মকে করেছে বিকৃত। অতএব স্রষ্টা প্রদত্ত সঠিক ধর্ম এবং জীবন ব্যবস্থা কী তা খুঁজে পাওয়াও হচ্ছে দুনিয়ার জীবনের পরীক্ষার অংশ। আর আমরা যদি বিশ্বাস করি যে আমরা স্রষ্টার সৃষ্টি তা হলে স্রষ্টা প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা কী তা আমাদেরকে খুঁজে দেখতে হবে। তাই আজ সময়ের দাবী সে চেতনাকে বিশ্বের প্রতাটি মানুষের মনে উজ্জিবীত করার এবং তা না করলে একদিকে মানুষ তৈরী হবে ভৌগ্যবাদী অমানুষে আর চলতে থাকবে অন্যায় অবিচার অন্যদিকে ধর্মের নামে চলতে থাকবে চরমপন্থীর উত্থান যারা জান্নাতের আশায় পৃথিবীকে পরিণত করবে জাহান্নামে। সমস্যা হচ্ছে আধুনিক বস্তুতান্ত্রিক ভোগ্যবাদী সমাজ ব্যবস্থার ধুম্রজালে নিমজ্জিত মানব সমাজ যাতে সে চিন্তার অনুপ্রেরণা কিংবা সময় সুযোগ না পায় সে প্রচেষ্টা চলছে বিশ্বজুড়ে।

 [youtube]http://www.youtube.com/watch?v=KdNLZboiMus[/youtube]

Loading


Comments

সব চেয়ে বড় প্রশ্ন? — 2 Comments

  1. Wonderful. আপনি দীর্ঘ-ব্লগ কম লিখলেও এটা অত্যন্ত সুন্দর হয়েছে। বিশ্বের মানুষকে যত থিওরি আর যত ব্যাখ্যাই দেয়া হোক না কেন, মানুষের মনের ভিতরে আরেকটা জিজ্ঞাসা রয়েছে আর তা হল, সে কোথা থেকে এসেছে এবং কোথায় যাচ্ছে। তার এই জিজ্ঞাসার উত্তর দিতে যারা ব্যর্থ হবে, মানুষ তাদের কথা শুনবে না – আত্মাকে অবহেলা করে কোন ব্যাখ্যাই ঠিকে থাকবে না। এই হচ্ছে bottom line.

    “সঠিক ধর্ম … হচ্ছে স্রষ্টা[তে] আত্মসমর্পণ করা এবং তিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য না মানা অর্থাৎ তাঁর সৃষ্টির কোন কিছুকে তার সমকক্ষ বা উপাসনায় শরিক না করা। … আজ সময়ের দাবী সেই [তাওহীদি] চেতনাকে বিশ্বের প্রত্যকটি মানুষের মনে উজ্জীবিত করার এবং তা না করলে একদিকে মানুষ তৈরি হবে ভৌগ্যবাদী অমানুষে আর চলতে থাকবে অন্যায় অবিচার অন্যদিকে ধর্মের নামে চলতে থাকবে চরমপন্থির উত্থান যারা জান্নাতের আশায় পৃথিবীকে পরিণত করবে জাহান্নামে। সমস্যা হচ্ছে আধুনিক বস্তুতান্ত্রিক ভোগবাদী সমাজ ব্যবস্থার ধুম্রজালে নিমজ্জিত মানব সমাজ যাতে সে চিন্তার অনুপ্রেরণা কিংবা সময় সুযোগ না পায় সে প্রচেষ্টা চলছে বিশ্বজুড়ে।”

    Wonderful and well said.

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *