
67 জন পড়েছেন
রচনা ক্যাটাগরি: বিনোদন
বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর মোটেই পিছিয়ে নেই। এই কথাটি প্রশস্ত করার জন্য এই ছোট্ট ব্লগের অবতারণা।
ধর্ম মূলত পৈতৃক-সূত্রে প্রাপ্ত বিষয় – যার জন্ম যে ধর্মে বা যে বিশ্বাসে সেটাই তার সত্য। দেওয়ানবাগীর প্রথায় জন্ম হলে দেওয়ানবাগী হযরতের কথাবার্তায় অলৌকিকতা পাওয়া যাবে, মহাসত্যের নিগুড় রহস্য পাওয়া যাবে, অনেক ভবিষ্যতবাণী ও বিজ্ঞানও পাওয়া যাবে। “অন্তরে মহর-মারা লোকজন” শেক্সপিয়ারের নাটকের পঙক্তি উদ্ধৃত করে সেখানে এক্সপান্ডিং ইউনিভার্স রয়েছে বলে হাসাহাসি করেন। তবে প্রত্যেক যুগের কিছু চাহিদা থাকে, এবং পৈতৃক-বিশ্বাসে বড়-হওয়া লোকজন যুগের সেই চাহিদা নিজেদের বিশ্বাসে সংযোগ করেন। এটা হিন্দুধর্মসহ সব ধর্মে। তাই পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি করেও দেব-দেবীর পূজায় অন্তরের সুখ পান, পারিবারিক শান্তি অনুভব করেন, আপদ-বিপদের নিরসন দেখেন। তারপর এগুলোর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আবিষ্কার করেন, তিলকে তাল করেন, শব্দ ঘুরিয়ে-পিছিয়ে আনেন, এক কথার সাথে নিজেদের ১১০ কথা জড়ান। তারপর এগুলো দিয়ে একটি কন্সেপ্টের প্যাকেজ করেন, তারপর মাল্টিমিডিয়া ও ভিজুয়াল-এইডের মাধ্যমে দৃশ্যগতভাবে খাটি ডক্যুমেন্ট্রির কায়দায় ও আবরণে সজ্জিত করেন। তারপর সুকণ্ঠের উচ্চারণ ও ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক দিয়ে বিজ্ঞানের “মোজেজা” তৈরি করে ইউটিউবে ঢালেন। 𝅘𝅥𝅮𝅘𝅥𝅮 𝅘𝅥 মজা মাইলো দারুণ চোরায় কলিজায় সান্ধাইয়া …𝅘𝅥𝅮𝅘𝅥𝅮 𝅘𝅥 ]।
দেওয়ানবাগী হযরতের পিছনে যে “বৈজ্ঞানিক” বিষয়-আশয় রয়েছে সেটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। অবশ্যই না -এটা মেনে নেয়া যাবে না। তবে আল্লাহ যাদের অন্তরে মহর মেরে দিয়েছেন তারা কিন্তু দেখেও দেখবে না, শোনেও শুনবে না। আল্লাহ যাদের অন্তর থেকে হেদায়ত সরিয়ে নিয়েছেন তাদের সামনে মোজেজা প্রকাশ পেলেও তা দেখতে পাবে না, ‘বিজ্ঞান’ সুস্পষ্ট হয়ে উঠার পরেও তারা বিজ্ঞান নাই বলবে!
তারা আরও বলবে হুজুরের বাণীতে যে বিজ্ঞান ও অলৌকিকতা রয়েছে সেগুলো নাকি “ব্যাখ্যাবাজিতে” তৈরি। এভাবেই তারা হুজুরের বাণীর অন্তর্নিহিত নিগুড় রহস্য এড়িয়ে যাবে। কিন্তু সত্য কথা হল আল্লাহ যদি কাউকে তার নেয়ামত দিয়ে ধন্য করেন তবে বিরোধীরা তাদের সমালোচনা দিয়ে উড়িয়ে দিতে পারবে না। মোটেই না। না না।
https://www.youtube.com/watch?v=hMvfHLxHxIo&ab_channel=Vision24
তবে এই স্থানটিতেও রহস্য নিহিত। কেউ যেখানে, অর্থাৎ বাস্তবে, নবুয়তির কথা মুখে আনলে তার মাথা গর্দানে টিকিয়ে রাখতে পারে না, সেখানে দেওয়ানবাগী হুজুরের কী থমথমে অবস্থা! এটা কি অমনি অমনি হচ্ছে? মোটেই না -আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা। আল্লাহর সাহায্য ও মদদ না পেলে হুজুর কি টিকে থাকতে পারতেন? তার মুরিদানের সংখ্যা কি হু হু করে বাড়তে থাকত? তার কারামতি ও মোজেজা দিবালোকের মত স্পষ্ট না হলে মুরিদগণ কি সেগুলো দেখতে পেত? এই সত্যের স্বীকৃতি তারা কি প্রকাশ্যে দিতে পারত? হযরতের সহবতে থেকেই তো তারা তাদের মনের রহস্য ভেদ করতে পারছে। তাদের নিজ হাতে অর্জিত হালাল টাকা-পয়সা হুজুরের দরবারে আপন ইচ্ছায় বিলিয়ে দিতে পারছে এবং এসবের কারণে তাদের অন্তর উজ্জ্বল হচ্ছে, তারা আধ্যাত্মিকতার সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করছে! সমস্বরে বলা উচিৎ: আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ!
তবে হেদায়তে-অন্ধ ব্যক্তিরা বলে থাকেন, যাবতীয় ব্যাখ্যাবাজিতে তারাই অর্থ নিয়োগ করে থাকেন যাদের এই ময়দানে “কায়েমি স্বার্থ” রয়েছে। কিন্তু এই ব্যাখ্যাবাজির ম্যাজিক না চালালে বিশ্বাসীদের মন জয় হবে কিভাবে? কিভাবে তাদের পকেটের টাকা ঝর ঝর করে নিজেদের পকেটে আনা হবে? তারপর যাদের কায়েমি স্বার্থ নেই তাদের মনের খোরাকও যদি এই স্থান থেকে আসে, তাহলে তো সোনায় সোহাগা!
তবে এই কথাটিও স্বীকার্য যে হযরত দেওয়ানবাগী ও এমন পীর-মুরশেদরা সাধারণত উগ্র বা হিংসাত্মক নন। তারা কোন ধরনের যুদ্ধংদেহীতায় নেই, কোন অস্ত্র চালাচালিতে নেই, তাদের ভাষা ও বাণীতে এগুলো অনুপস্থিত। এদিক থেকে তাদের অবস্থান জনগণের জন্য নিরাপদ।
আরও কিছু লেখা
আমার ২০২০ সালের লেখা ব্লগলিস্ট
গ্রন্থিক যুগে ফিরার আহবান বনাম এ-কালের জীবন ও সমাজের প্রতি যৌক্তিক অভিনিবেশ
দেওয়ানবাগী ও সামাজিক সত্যের এপিঠ ওপিঠ
প্রোটো ধর্ম ও প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম
টেক্সট ও টেক্সটের কেনোনাইজেশন (canonisation)
67 জন পড়েছেন