
96 জন পড়েছেন
সকল সমাজ, কাল ও ভূখণ্ডে মানুষের মধ্যে সুকর্ম-দুষ্কর্ম, সাধু-কাজ, প্রতারণা, সুনীতি-দুর্নীতি, জোর-জুলুম ইত্যাদির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এগুলোর মাত্রা কখনো বাড়ে, কখনো কমে, তবে কম-বেশি সব সময়ই থেকে থাকে। কিন্তু মানব ইতিহাসের ধারায় কিছু লোক নিজেদের আত্মপ্রতিষ্ঠা, রাজ্য-প্রতিষ্ঠা, ক্ষমতা-আত্তীকরণ ইত্যাদির জন্য সমাজের নেতিবাচক সমস্যার অজুহাত সামনে এনে সমাজকে উলট-পালট করতে দেখা যায়। তবে হ্যাঁ, কখনো কখনো স্বার্থবিহীন, যশ ও ক্ষমতার-লোভ-বিহীন কিছু মানুষের সংস্কারমূলক চিন্তা ও উদ্যোগও পাওয়া যায়। তবে মানব চরিত্রের নেতিবাচক দিকগুলোর কারণ ও সংশোধনের পথ কী – এ নিয়ে আদিকাল থেকেই পাশাপাশি আলোচনা চলে আসছে।
বিশ্বের নানান ধর্মও এসব বিষয়ে আলোচনা করেছে। আমরা এখানে দুটি চিন্তার কথা আলোচনা করব যেগুলো কোন কোন ধর্মে পাওয়া যায়। এর একটি হল শয়তান নামক এক অদৃশ্য সত্তার নিয়ন্ত্রণের কারণে ব্যক্তি ও সমাজের অবনতি ঘটে। অপরটি হল কিছু মানুষের আত্মা উত্তম ও পবিত্র, ও কিছু মানুষের আত্মা অধম ও অপবিত্র যেখান থেকে অর্থাৎ দ্বিতীয়োক্ত স্থান থেকে সমস্যাগুলোর উদ্ভব ঘটে।
এ ক্ষেত্রে সমাধান কী হতে পারে? যাদের আত্মা অপবিত্র, মন্দ, যারা প্রকৃতিগতভাবে খারাপ, তাদেরকে ‘নির্মূল’ করে যদি ভাল আত্মার লোকদের দিয়ে নতুন সমাজ গঠন করা হয়, তবে সেই সমাজ উত্তম সমাজ হবে বলে উল্লেখিত ধারণায় নিহিত। এমন প্রেক্ষিতে সমাজিক ম্যাসাকারের ইতিহাসও পাওয়া যায় এবং এমন কাজে স্রষ্টাকেও সংযুক্ত করা হয়। স্রষ্টা নাকি উত্তম প্রকৃতির লোকদেরকে বাছাই করার জন্য তার একজন মনোনীত ব্যক্তিকে আহ্বানকারী করেন যিনি তাদেরকে তার ‘আনুগত্য’ করতে ও ভাল কাজ করতে ও মন্দ কাজ ত্যাগ করতে আহ্বান করেন। যারা স্রষ্টা-নির্বাচিত এই ব্যক্তির আহবানে সাড়া দেয়, তাদেরকে দিয়ে একটি নতুন দল গড়েন। আর যারা সেই আহবানে সাড়া দেয় না, তাদের বংশ-পরিবার, জাত-গোষ্ঠীকে এই নতুন দল দিয়ে ‘নির্মূল’ করে, অথবা তিনি নিজেই ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, ভূমিকম্প বা সর্বগ্রাসী প্লাবন দিয়ে সেইসব অপবিত্র, মন্দ প্রকৃতির সবাইকে ধ্বংস করে নতুন সমাজের সূচনা করেন। আবার, এই নতুন সমাজের মধ্য থেকে কেউ যদি এই পবিত্র আদর্শের প্রতি বিশ্বাস হারায়, এবং সেকথা প্রকাশ করে দেয়, তবে তাকে হত্যা করা হয়, যাতে করে পবিত্র-ধারা সংক্রমিত না হয়। আর যারা হত্যার ভয়ে আত্মগোপন করে -মনের কথা প্রকাশ করে না – তাদেরকে প্রামাণিকতার অভাবে বেঁচে থাকতে দেয়া হয়।
কিন্তু সামাজিক অবক্ষয়, অন্যায়-অবিচার এসবের সাথে শয়তান অথবা অপবিত্র-মন্দ আত্মার ধারণা জড়িত করে এই যে ব্যাখ্যা, এবং এই যে সামাজিক ‘সংস্কার’, এর কোনটিই সঠিক বলে সমাজের বিজ্ঞ শ্রেণী তাদের ঐতিহাসিক কালে মেনে নেয়নি, এমনকি এক সময় তলোয়ারের মোকাবেলায় পরাজিত হলেও তারা শুধু নীরবতা অবলম্বন করেছে। তাদের ধারনা এমন মামুলি সমাজ-বিশ্লেষণ নিছক পাগলামি এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত। এজন্য তারা স্রষ্টা-নির্বাচিত বিষয়টি মানতে পারেনি এবং এতে সাড়াও দেয়নি। তাদের ধারণায় বিশ্বলোকের স্রষ্টা এতে সংযুক্ত হওয়া যুক্তিবহির্ভূত। তবে এই শ্রেণী অস্ত্রের মুখে পরাজিত হবার পরেও সমাজ কখনো দুর্নীতিমুক্ত, প্রতারণামুক্ত, জুলুমমুক্ত হয়নি, বরং অনেক রক্তারক্তির পর সমাজের কর্তৃত্ব, ভূমি ও সম্পদ কেবল এক হাত থেকে অন্য হাতে গিয়েছে মাত্র, যদিও উল্লেখিত আদর্শবাদীগণ সেই স্বপ্ন জ্বালিয়ে রাখেন।
ধর্মীয় দ্বিতীয় ধারণাটি হচ্ছে শয়তান নামক এক অশরীরী সত্তার প্ররোচনা ও প্রভাবের ফলে মানুষ অনৈতিক কাজ করে। এই বিষয়টি প্রথমোক্ত বিষয়টির সাথে সাংঘর্ষিক। যদি শয়তান নামক কোন সত্তা থাকে, এবং মানুষের অনৈতিক কাজের উৎস সে’ই হয়, তবে একটি সমাজের নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ সবাইকে ম্যাসাকার করে নতুন সমাজ গড়ার কোনো অর্থই হয় না, যদি না শয়তানকে হত্যা করে ফেলা হয়। কিন্তু তা কখনো হয় না। শয়তান নিয়ে যে গল্পের অবতারণা হয় সেই গল্পে, সেই সমাজের বিজ্ঞ শ্রেণী স্রষ্টার সমস্যা শয়তানের সাথে দেখতে পান। তাদের পাঠে স্রষ্টার নিজ সৃষ্ট শয়তানই তার অবাধ্য হয়ে পড়ে, এবং এতে তিনি যেন কৈশর-আবেগের ন্যায় উদ্বেলিত হয়ে তার সাথে ‘বাজী’ খেলতে নামেন। কিন্তু এই খেলাটা হয়ে যায় আগুনের খেলা। এই গল্প মেনে নেয়া মানি গল্পকারের কাছে আত্মসমর্থন করা, তারপর এক দল ‘শয়তানের দল’ আর আরেক দল ‘স্রষ্টার’ –এই দুই দলে বিভক্ত হয়ে যুদ্ধ, মারামারি ও ঘৃণা-বিদ্বেষের আবেগে জড়িয়ে যাওয়া। এমন ধরণের একটি রক্তক্ষয়ী, প্রাণনাশী, সাংঘাতিক বিষয় শুরু হয়ে যাবে, অথচ এই বিষয়ে স্রষ্টার সাথে কথা বলার অবকাশ থাকবে না, শয়তানের সাথেও কথা বলার অবকাশ থাকবে না – এখানে শুধু থাকবেন একজন গল্পকার। এখানে স্রষ্টা অদৃশ্য, শয়তান অদৃশ্য, গল্পের রচনাও অদৃশ্য জগতে, কিন্তু মধ্যখানে মানুষের জন্য আগুনের নাটক। মানুষকে ভয় দেখিয়ে গল্পকারের চরম-গোলামীতে আত্মহুতির আহবান। এই গল্পে যুক্তি ও ন্যায়-বিচার প্রধানত অনুপস্থিত থাকে। সকল নেতিবাচক কাজ শয়তান প্রভাবিত, কিন্তু সকল দোষের দোষী মানুষ এবং এজন্য স্রষ্টা নাকি তাদেরকে অনন্তকাল আগুনে পুড়ায়ে ছারখার করতে থাকবেন। বড় সমস্যা হল: যে শয়তান মানুষের পঞ্চেন্দ্রিয়ের বাইরে, যে শয়তানকে সে দেখেনা, স্পর্শ করতে পারে না, যার চলাচল আঁচ করতে পারেনা, সে শয়তানই যখন তাকে প্রভাবিত করে অনৈতিক কাজ করায়, তখন এই ধরনের গল্পের মাধ্যমে সামাজিক সমস্যা বুঝা, এবং এর বিহিত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যৌক্তিক পরিকল্পনার আওতাভুক্ত থাকে না।
এটাও দেখতে পাওয়া যায় যে শয়তান ও পবিত্র আত্মার বিষয়কে কেন্দ্র করে ক্লাসিক্যাল, ক্লাসিক্যালপূর্ব ও মধ্যযুগে কিছু কিছু ক্যারিশমাটিক ও একসেন্ট্রিক ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব ঘটেছিল, এবং অনেক উদ্ভট সমাধানের প্রয়াস চালানো হয়েছিল, কিন্তু সেগুলোতে মূলত কোন সমাধান আসেনি। অনেক জাতি-বংশ ম্যাসাকার হয়েছে, অনেক যুদ্ধ সাধিত হয়েছে, অনেক পরিবার নিঃশেষ হয়েছে, অনেক হিংসা-বিদ্বেষের প্রসার ঘটেছে, মানুষে মানুষে বিভেদের পাহাড় রচিত হয়েছে, কিন্তু সমস্যাগুলো যেখানে ছিল সেখানেই রয়ে গিয়েছে। অবশেষে এটাও দেখা গিয়েছে যে যেসব সমাজের মানুষের মধ্যে মন্দ-আত্মা, মন্দ প্রকৃতির মানুষের ধারণা প্রবল, সেইসব সমাজেই অনৈতিক কার্যকলাপের ফিরিস্তি সর্বাধিক, এবং এগুলো পবিত্র আন্দোলনের (puritan movement) জন্মলগ্ন থেকেই। এর মূল কারণ হচ্ছে মানব সমাজের নেতিবাচক দিকগুলোকে বস্তুনিষ্ঠভাবে বুঝতে না-পারা, এবং ফলত সঠিক সমাধানও না-আসা।

মানুষ অন্যান্য প্রাণীর মতই এক প্রাণী-শ্রেণী। প্রাণী হিসেবে তাদের চাহিদা থাকে এবং যখন কিছু লোক তাদের চাহিদা মেটানোর সঠিক সামর্থ্য ও যথার্থ উপায়-উপকরণ খুঁজে পায়না, বা সামাজিক অর্থব্যবস্থায় নানান প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয় তখন তারা সামাজিক নীতির উল্টো উপায়ে তাদের প্রয়োজন পূরণে সাড়া দেয়। এই পদক্ষেপ ও কার্যক্রম সমাজের দৃষ্টিতে নেতিবাচক হয়ে দেখা দেয়। এখানে পবিত্র আত্মা আর অপবিত্র আত্মার কিছু নেই।
শয়তানের গল্পকেও অনেকে ভিন্নভাবে দেখেছেন। ধর্মের সুফিতাত্ত্বিক একটি ধারায় শয়তান বলে কিছু নেই। এই ধারায় শয়তানকে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক একটি দিক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ড. জাওয়াদ নুরবাকস তার “দ্যা গ্রেট সাতান ইবলিস (The Great Satan Eblis) পুস্তকে শেখ আব্দুল করিম আল-জিল্লির ‘কিতাব আল-ইনসান আল-কামিল’ ও আজিজ উদ্দিন আন-নাফাসির ‘কিতাব আল-ইনসান আল-কামিল’ থেকে উদ্ধৃত করে একটি উপশিরোনাম এভাবে আনেন: “Eblis as imagination (wahm) and Adam as intellect (‘aql) in the macrocosm”। ওখানে এক পর্যায়ে শয়তানকে মানব প্রকৃতির একটি দিক বলেও উল্লেখ করা হয়েছে (Nurbaksh, J. (1986), THE GREAT SATAN EBLIS, London: Khaniqahi-Nimatullahhi Publicaitons, p.70)।
তবে আত্মা বাদ দিয়ে ‘রক্তের পবিত্র ধারণায়’ গণহত্যার উদাহরণ ধর্মীয় অঙ্গনের বাইরেও পাওয়া যেতে পারে। এই সেদিন বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে জার্মানিতে জাতীয় রক্তের পবিত্রতার নামে ইয়াহুদী হত্যা হয়েছিল। এই ফ্যাসিবাদের পিছনে ছিল আর্য-রক্তের উত্তম ধারণা। এই ধারণাকে ইউরোপ বোটায় নির্মূল করতে পেরেছিল। বিংশ শতাব্দীতে পেশি-শক্তি ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে প্রাক্তন রাশিয়া ও অন্যত্র অঞ্চলে যে কমিউনিস্ট শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যেখানে সুশাসন ও আর্থিক সুসম বণ্টনের অজুহাতে মানুষে মানুষে বিভক্তি সৃষ্টি করে মানুষ হত্যা, প্রতিপক্ষের ধনসম্পদ কেড়ে নেয়া, অধিকার ও বাক-স্বাধীনতা হরণ, চিন্তার স্বাধীনতায় গোয়েন্দাগিরি ও হত্যা – এগুলোই চলেছিল। এভাবে শান্তি ও ন্যায়ের আওয়াজ তুলে মানব ইতিহাসে অনেক জঘন্য ধারণা ও আদর্শ চালিয়ে নেয়া হয়েছিল। তবে ফ্যাসিবাদী ধারণা যেহেতু মানব ইতিহাসে রয়েছে, তাই সেটাকে বার বার কিছু লোক নতুন ব্যাখ্যায় হাজির করার প্রয়াস চালাবে এবং জাতী ও ধর্মের নামে সেটাকে জাস্টিফাই করবে – এটাও বাস্তবতায় রয়েছে। বিংশ শতাব্দীর জার্মান সাইকো-এনালিস্ট এরিক ফ্রম তার ‘দ্যা ফিয়ার ফ্রম ফ্রিডোম’ পুস্তকে এই আলোচনাটিই করেছেন। তিনি সেখানে মানুষের নানান ইনসিকিউরিটির (অনিরাপত্তার) ভিত্তি ও তৎকেন্দ্রিক বিচ্ছিন্ন-বাস্তবতার (alienation) বিষয় বিবেচনায় গ্রহণ করেন। সমাজিক সমস্যার কোন আঙ্গিকে যখন কেরিশমাটিক/আদর্শবাদী লোকেরা সহিংসবাদী সমাধান হাজির করে, তখন তাদের হাতে অনেক লোক নিজেদের স্বাধীনতা ও জীবন বিলিয়ে দিতে পারে, এবং তাদের আহবানে উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্যদের জীবনও কেড়ে নিতে পারে (Fromm, E. (1942/classic reprint 2001), The Fear From Freedom, London: Routledge)। এডোলফ হিটলারের পিছনে উচ্চ-শিক্ষিত লোকজনও ছিল, তারাও তার আহবানে যুক্তি পেয়েছিল, জাস্টিফিকেশন দেখেছিল। ফ্রম তার পুস্তকে এই মানসিকতার ব্যাখ্যা করেন।
সমাজের নৈতিক অবক্ষয় ও দুষ্কর্মের স্থান শয়তান বা অপবিত্র আত্মায় নয় বলে অতীত কাল থেকে অনেক বস্তুনিষ্ঠ চিন্তা ধারাবাহিকতা পেয়েছে। এই ধারায় আধুনিক ইউরোপ মানুষের মনস্তত্ত্ব ও সমাজ নিয়ে সর্বাধিক অধ্যয়নের প্রয়াস চালিয়েছে। এতে সমাজের উপকরণ, সংগঠন, শ্রেণী, অর্থ-ব্যবস্থা এগুলোর সম্পর্ক বিবেচনায় নিয়েছে। মানুষের সংস্কৃতি, তাদের পরিবেশ, তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে তাদের আচরণ দেখার চেষ্টা করেছে। ফলশ্রুতিতে শয়তান নামক সত্তা ও পবিত্র-অপবিত্র আত্মার ধারণা বাদ দিয়ে যে সমাজ গঠিত হয়েছে সেটি অতীতের সকল সমাজ থেকে উত্তম বলে প্রামাণিক রূপ লাভ করেছে। এই সামাজিক ধারণায় এক শ্রেণী আরেক শ্রেণীকে নির্মূল করার গল্প নেই, অমুক দল শয়তান প্রভাবিত, তমুক দল স্রষ্টা-অভিশপ্ত এসব গল্পের অবতারণা নেই, কেননা যা নিছক ব্যাখ্যা সাপেক্ষ, যা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে তা যে-কারো উপর অর্পিত হতে পারে –ধর্মযাজকের উপরেও। ফলত, ইউরোপীয় সমাজ ব্যবস্থায় মানুষের সামাজিক ধ্যান-ধারণা অতীতের চাইতে অধিক বস্তুনিষ্ঠ ও জ্ঞানগর্ভ রূপ লাভ করেছে। এই সমাজ-ব্যবস্থা খৃষ্টিয়ান বা জৌডো-খৃষ্টিয়ান নয় –এটি ইউরোপীয় এনলাইটনম্যান্ট আন্দোলনের ফসল।
অবশেষে, আজকের সমাজ অতীতের চেয়ে ব্যাপক উন্নত হলেও আজও সুকর্ম-দুষ্কর্ম, সাধু-কাজ, অসাধু-কাজ, সুনীতি-দুর্নীতি, জোর-জুলুম ইত্যাদি পাওয়া যায়। কিন্তু এগুলোকে অপবিত্র আত্মা, কোন অদৃশ্য মন্দ-সত্তা, বা কোন উগ্র ধারণায় সাজিয়ে এক সম্প্রদায় অপর সম্প্রদায়কে প্রান্তিক করা, হিংসা-বিদ্বেষ করা, দেশ থেকে বহিষ্কার করা, নির্মূল করা কোনটিই সঠিক চিন্তা নয়। এসব সমস্যা সমাজের অর্থ-ব্যবস্থা, শাসন-ব্যবস্থা, শিক্ষা-নীতি, মানুষের অধিকার নিশ্চিতকরণ, সুষ্ঠু বিচার-ব্যবস্থার প্রণয়ন ও প্রতিষ্ঠার সাথে জড়িত। আজকের বিশ্ব অতীতের গোত্রীয় বা সামন্ততান্ত্রিক শ্রেণী বিন্যাস, ভৌগলীক ও সাম্প্রদায়িক সংগঠন ও শাসন ব্যবস্থা থেকে ভিন্ন। এই সমাজকে ক্লাসিক্যাল বা মধ্যযুগীয় সামন্তবাদী আদর্শ, ধর্ম, দর্শন ও আবেগের মাধ্যমে সাজানো সম্ভব নয়। কিন্তু কিছু কিছু ধর্ম সামন্ততান্ত্রিক মধ্য ও ক্লাসিক্ল্যাল-যুগীয় ধ্যান-ধারণাকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ধারাবাহিকতায় জিয়ে রেখেছে। কিন্তু মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞান যেহেতু কালের বিবর্তন-ধারায় ক্রমবর্ধিত হয়ে চলেছে, তাই আজ যারাই কোন অতীতকে আদর্শ ভেবে সেটাকে একালে প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালাবে, তারা ব্যর্থতার মধ্যেই হামাগুড়িই খাবে – এতে সন্দেহের লেশ মাত্র নেই। আজকের সামাজিক ও ব্যক্তিক সমস্যার সমাধান আজকের জীবন-ধারায় পেতে হবে – এটাই যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক।
96 জন পড়েছেন