হকার ও হেড লাইন

১২ বছর বয়সের কাসেম একজন হকার। রোজ সকালে সূর্য ওঠার আগেই ওকে ছুটতে হয় ষ্টেশনের দিকে। আনিচ চাচার দোকান থেকে প্রতিদিনের নানা রকম তাজা খবরে ভরপুর পত্রিকা নিয়ে ষ্টেশনে কিংবা বাসে যাত্রীদের কাছে বিক্রি করে অভাব অনটনের সংসারে মাকে কিছুটা সাহায্য করার দায়িত্ব এ বয়সেই ওর কাঁধে এসে পড়েছে। বাবা ছিল রিক্সা চালক। একদিন রোড এক্সিডেন্টে পুঙ্গ হলে মায়ের কাঁধে পড়ে পুরো সংসারের ভার। সেই সাথে কাসেমও এ বয়সে জীবনের প্রয়োজনে জীবিকার সন্ধানে নেমেছে।

পত্রিকা বিক্রি করতে কাসেমের খুব মজা লাগে। কত রকমের খবর থাকে পত্রিকায়। যদিও ও পড়তে পারেনা কিন্তু মানুষকে মনোযোগ দিয়ে পড়তে দেখলে অনেক ভাল লাগে আর মনে মনে অনুভব করে পত্রিকা পড়ার মজা। যানজটের এই শহরে গাড়ীতে অনেক মানুষকে পত্রিকা হাতে অন্য জগতে চলে যেতে দেখে কাসেমেরও খুব পড়ার লোভ হয়। তখনই ছোট্ট হৃদয়ে জমতে থাকে স্কুলে যেতে না পারার কষ্ট।

রোজ সকালে পত্রিকা আনার সময় কাসেম আনিচ চাচাকে বারবার জিজ্ঞেস করে বড় বড় অক্ষরে লেখা হেড লাইন গুলো জানতে চায়। হেড লাইন বলে কাস্টমারের কাছে গেলে পত্রিকা বিক্রি বেশী হয়। কিন্তু আনিচ চাচা বদ মেজাজি মানুষ। হেড লাইন জিজ্ঞেস করলেই গরম চোখে তাকায়। তখন কাসেম ভাবে ঈশ! আমি যদি পড়তে পারতাম। মাঝে মাঝে পাঠকদের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে দু একটি হেড লাইন জেনে নিতে গিয়েও অনেকের ঝাড়ি শুনতে হয় কাসেমকে।

প্রতিদিনের মত আজ ও কাসেম বাসের জানালা দিয়ে পত্রিকা বিক্রি করছে যাত্রীদের কাছে। এ বাসে পত্রিকা বিক্রি শেষ হলে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে অন্য বাসের জন্য অপেক্ষা করছে কাসেম। হঠাৎ চোখ পড়ে ওর কাছ থেকে পত্রিকা কেনা বাসের ভেতর এক যাত্রীর দিকে। যাত্রী তার ৬-৭ বছরের ছোট্ট মেয়েকে পরম মমতায় কোলে নিয়ে পত্রিকা পড়াচ্ছে। নানা রকম ছবি দেখাচ্ছে আর বানান করে পত্রিকার পাতার শব্দ গুলো শিশু হৃদয়ে গেঁথে দিচ্ছে পরম মমতায়। কাসেম দুর থেকে দেখে আর মনে মনে ভাবে এভাবে ওকে পড়ানোর জন্যও যদি কেউ মমতার হাত বাড়াত….!!!

Loading


Comments

হকার ও হেড লাইন — 3 Comments

  1. আসলে আজকের এই অনুগল্পে গল্পের স্বাদ যেন কম! আজকে মনে হচ্ছে প্রতিবেদন টাইপের কিছু লেখা!
    এটি আমার একান্ত অনুভুতি! ভুল হতে পারে! ভুল বললে ক্ষমা করবেন।
    একটি কথা মনে রাখবেন প্রতিটি গল্প যেন এক বিষয় ভিত্তিক না হয়ে উঠে। ব্যতিক্রমী ধর্মীয় কাহিনীর বিন্যাস ঘটাতে চেষ্টা করবেন। ধন্যবাদ।

  2. গরীব দুঃখী মানুষের কাহিনী শুনে মনটা কাঁদে। এদের জন্য মানুষ ভাবতে চায়না। সবাই ব্যস্ত তাদের নিজেদের ধান্ধায়! কাল রোজ হাশরে কি জবাব দিব আমরা? {silent-crying}

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *