সুদ এবং রিবা এক জিনিস নয় বলে অর্থমন্ত্রীর সংসদে বক্তব্য কোরআনবিরোধী

bnp-sajahan omar

ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে ফ্রড বা প্রতারণা হিসেবে আখ্যায়িত করা এবং সুদ ও রিবা এক জিনিস নয় বলে অর্থমন্ত্রী সংসদে যে বক্তব্য দিয়েছেন সে বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ব্যাংকিং বিশেষ করে শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পর্কে অভিজ্ঞরা জানিয়েছেন ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থা অবশ্যই ফ্রড বা প্রতারণামূলক নয়। প্রচলিত শোষণমূলক ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিপরীতে এটি একটি কল্যাণধর্মী ব্যাংকিং ব্যবস্থা এবং সে কারণেই সারা বিশ্বে দ্রুত এ ব্যবস্থা স্বীকৃতি লাভ করেছে।অর্থমন্ত্রীর এ বিষয়টি সম্পর্কে ভালো কোনো ধারণা নেই বোঝা গেল। তাই তিনি এমন কথা বললেন। অর্থমন্ত্রীর মতো দায়িত্বপূর্ণ পদে থেকে এবং সংসদের মতো জায়গায় দাঁড়িয়ে এ ধরনের কথা বলাটা কোনো দায়িত্বসুলভ কাজ নয়। তার এ কথায় অনেকে হয়ত কষ্ট পাবেন কিন্তু এতে কোনো সমস্যা হবে না তাদের। বর্তমানে আটটি ইসলামী ব্যাংক দেশে চালু আছে এবং তিনিও সম্প্রতি ইউনিয়ন ব্যাংক নামে একটি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক অনুমোদন দিয়েছেন। ইসলামি ব্যাংক ফ্রড হলে তিনি এ অনুমোদন দিলেন কেন।

সুদ ইহুদি ধর্মেও নিষিদ্ধ ছিল। ইহুদিরাই চালু করেছে এ সুদ ব্যবস্থা। পবিত্র কুরআনে সুদ বিষয়ে রিবা শব্দ ব্যবহার করেছেন আল্লাহ। ইহুদিরা কুরআনের রিবা শব্দের অনুবাদ করেছে ‘ইউজুরি’। রিবাকে তারা চক্রবৃদ্ধির সুদ ধরে নিয়েছে। ইউজুরি এবং ইন্টারেস্টকে তারা আলাদা করার চেষ্টা করেছে। ইহুদিদের মতে রিবা নিষিদ্ধ কিন্তু বর্তমানে যে সুদ চালু আছে এটা খারাপ নয়। দুই ধরনের সুদের ধারণা ইহুদিরা চালু করেছে এবং অর্থমন্ত্রী সেই ফাঁদে পা দিয়েছেন বুঝে হোক আর না বুঝে হোক। ইহুদিরা সুদও খেতে চায় এবং ধার্মিকও থাকতে চায়। সে কারণেই তারা দুই ধরনের সুদের ধারণার জন্ম দিয়েছে। যারা সুদের সাথে জড়িত তারাই নরম সুদ আর কড়া সুদের তত্ত্ব আবিষ্কার করেছে। কারণ যারা সুদ খায় তারা জানে এটা খারাপ কাজ। তাই তারা এ দুই তত্ত্বের উদ্ভব ঘটিয়েছে। কুরআনে শুধু রিবা শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। নরম সুদ কড়া সুদ বলতে কিছু নেই।
কুরআনে যখন আল্লাহ বললেন, তোমরা সুদ ছেড়ে দাও তখন কাফেররা বলল সুদ এবং ক্রয় বিক্রয় তো একই জিনিস। কিন্তু আল্লাহ ব্যবসায় এবং ক্রয়-বিক্রয়কে করেছেন হালাল আর সুদকে করেছেন হারাম। সুদ নিষিদ্ধের জবাবে কাফেররা যেমন জবাব দিয়েছিল অর্থমন্ত্রীও তেমনিভাবে বলে দিলেন রিবা আর সুদ এক জিনিস নয়। সুদ তার দৃষ্টিতে মানবিক। অথচ আল্লাহ একে করেছেন হারাম। আর সুদ এবং রিবা এক জিনিস নয় বলে অর্থমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন তাও গ্রহণযোগ্য নয় এবং এ জাতীয় বক্তব্য কুরআনবিরোধী। সুদ এবং রিবা একই জিনিস। কুরআনে রিবা শব্দ এসেছে। রিবা শব্দটা আরবি। আর সুদ শব্দটা ফারসি। সুদের বাংলা করা হয়েছে লাভ। কুরআনে যে রিবাকে হারাম করা হয়েছে সেই রিবা এবং বর্তমানে চালু থাকা সুদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। রিবা খারাপ আর সুদ ভালো এমন ভাবা এবং এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য করার কোনো সুযোগ নেই। ইসলামের মূলনীতি হলো যা হারাম তার বেশিও যেমন হারাম কমও তেমনি হারাম। যেমন মদ হারাম। এখন কেউ যদি বলে বিয়ার অতটা কড়া মদ নয় যেমনটা কড়া ভদকা বা শ্যাম্পেইন। তাই বিয়ার খাওয়া হারাম নয় এ ফতোয়া চলবে না। ইসলামে কোনো কিছু হারাম হয় তার বৈশিষ্ট্যের কারণে পরিমাণ বা মাত্রাগত পার্থক্যের ভিত্তিতে নয়।
রাসূল সা:-এর সময় দুই ধরনের সুদ ছিল। যেমন কেউ পাঁচ দিনার দিয়ে ছয় দিনার আদায় করত আবার কেউ এক মণ খেজুর দিয়ে দেড় মণ আদায় করত। জাহেলিয়াতের সময় থেকে এটা চালু ছিল এবং এ দুইটিই সুদ। রাসূল সা: এ দুই ধরনের সুদকেই হারাম করেছেন। ‘সুদ সমাজ অর্থনীতি’ নামক বইয়ে রাসূলের সময়কার সুদ বিষয়ে কমপক্ষে ১০০টি হাদিস উল্লেখ করা হয়েছে যা থেকে এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়।
 জাহেলিয়াতের সময় থেকে রাসূলের সময় পর্যন্ত যে সুদ ব্যবস্থা চালু ছিল তাতে যা দেয়া হতো তার চেয়ে বাড়তি আদায় করা হতো। সে কারণে সেটা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে যে প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সুদ নামে যা চালু আছে এটি হচ্ছে তাই যা ইসলামে হারাম করা হয়েছে। বেশি নেয়া যাবে না। বেশি নেয়া যাবে শুধু ব্যবসার মাধ্যমে। বিশ্বে এমন কোনো আলেম নেই যারা বলেছে টাকা বেশি নিলে তা সুদ হবে না। পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট বর্তমান সুদকে রিবা হিসেবেই আখ্যায়িত করেছে। সুদের কারণেই অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফতুর হয়ে যাচ্ছে। কারণ সুদ ব্যবস্থায় ব্যবসা মার খেলে বা লোকসান হলে তারা আর ব্যাংকের মূলধন এবং সুদ পরিশোধ করতে পারে না।
রাসূলুল্লাহ সা:-এর আগমনের অতি নিকটবর্তী সময়েও বাইজেন্টাইন সম্রাট শাসিত সিরিয়ায় সব ধরনের শিল্প-বাণিজ্য ও কৃষি খাতে সুদভিত্তিক ঋণের প্রচলন ছিল। সে সময় সুদভিত্তিক ঋণের এতই ব্যাপকতা ছিল যে, সম্রাটকে সুদের হার নির্ধারণপূর্বক আইন জারি করতে হতো। সে সময় সিরিয়ার সাথে আরববাসী, বিশেষ করে মক্কার অধিবাসীদের সুদীর্ঘ বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। এ বাণিজ্যিক সম্পর্কের কারণে আরববাসীরাও বাণিজ্যিক সুদ সম্পর্কে ছিল পূর্ণ সচেতন। এ ছাড়া তৎকালীন আরববাসীদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ধরন থেকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, সে সময় যেমন ভোগ্যঋণের প্রচলন ছিল, তেমনি বাণিজ্যিক ঋণেরও প্রচলন ছিল। ড. জাওয়াদ আলী জাহেলি যুগের আরবদের ওপর গবেষণা করে দেখিয়েছেন, ‘সে সময় সবাই মিলে মুনাফার আশায় বাণিজ্য কাফেলাকে ঋণ দিত।’ ইবনে জারির আত-তাবারি লিখেছেন, বনু আমর গোত্র বনু আল-মুগিরা গোত্রের কাছ থেকে সুদ আদায় করত। ইমাম বুখারি একটি হাদিস উল্লেখ করেছেন। সেখানে দেখা যায়, এক ইসরাইলি অন্য এক ব্যক্তির কাছ থেকে এক হাজার দিরহাম ঋণ নিয়ে সমুদ্রযাত্রায় বের হয়েছিলেন। অন্য এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, এ ঋণ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ সা:-এর সময় যেমন প্রাতিষ্ঠানিক বাণিজ্যিক ঋণের প্রচলন ছিল, তেমনি ব্যক্তি পর্যায়েও বাণিজ্যিক ঋণের প্রচলন ছিল। এ বিষয়ে কুরআন-হাদিস ও ইতিহাসে অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। ফলে কুরআন নাজিলের সমসাময়িককালে আরববাসীদের কাছে বাণিজ্যিক সুদের ধারণা সুস্পষ্ট ছিল। তাই এ কথা বলার কোনো অবকাশ নেই যে, কুরআন যে সুদ নিষিদ্ধ করেছে তা কেবল ভোগ্যঋণের সুদ, বাণিজ্যিক বা ব্যাংকিং সুদ নয়। প্রকৃতপে সর্বপ্রকার সুদই ইসলামে নিষিদ্ধ। শুধু ইসলাম নয়; বরং হিন্দু, খ্রিষ্টান, ইহুদি, বৌদ্ধসহ বহু ধর্মেই সুদ নিষিদ্ধ। এমনকি বহু দার্শনিক যেমন প্লেটো, অ্যারিস্টটল, থমাস একুইনো ও মিসাব্যুর মতো দার্শনিকেরা সুদকে শোষণের হাতিয়ার হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
প্রচলিত অনেক ব্যাংকেও অনেক ধরনের প্রতারণা আছে। এ ছাড়া দেশের বহু সুদভিত্তিক বিভিন্ন ব্যাংক যখন ঋণদানে অনিয়ম ও দুর্র্নীতিতে জড়িয়ে দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে, তখন ইসলামি ব্যাংকগুলো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে দেশের অর্থনীতিকে সুদৃঢ় ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত করে চলেছে। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ইসলামি ব্যাংকগুলোর অবদান খ্যাতিমান সবার কাছেই স্বীকৃত। অন্য দিকে ইসলামি ব্যাংকগুলো সুদের বিকল্প হিসেবে লাভ-লোকসানে অংশীদারি পদ্ধতি, ক্রয়-বিক্রয়, ইজারা বা ভাড়া ইত্যাদি শরিয়াহ-সম্মত পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যাংকিং ব্যবসায় পরিচালনা করে। তারা কোনোভাবেই ইসলামের নামে সুদের ব্যবসায় করে না। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও যেসব ইসলামি ব্যাংকিং আছে তারাও ইসলামের মূলনীতির আলোকেই কাজ করছে।  তাই ইসলামি ব্যাংকিংকে ‘ফ্রড’ বলা সমীচীন নয় বলেই মনে হয়। কাজেই ইসলামি ব্যাংকিং কোন ক্ষেত্রে কোন ধরনের প্রতারণা করছে তা নির্দিষ্ট করে বলা উচিত।
বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ সবাই ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তারাও ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে গ্রহণ করতে চাচ্ছে। ১০-১২ বছর আগে যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল মুসিলম বিশ্ব থেকে পাশ্চাত্যের কী কী জিনিস বর্তমানে নেয়ার আছে সে বিষয়ে। তাতে তারা উল্লেখ করেছে মুসলিম বিশ্ব থেকে তারা বর্তমানে ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিতে পারে।
ইসলামি ব্যাংকিং হল উত্তম ব্যাংকিং ব্যবস্থা এবং এটা সমগ্র বিশ্বে স্বীকৃত। বর্তমান বিশ্বে প্রায়ই যে অর্থনৈতিক মন্দা এবং বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে সে ক্ষেত্রে দেখা যায়, অন্যান্য প্রচলিত ব্যাংক যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, দেউলিয়া হয়ে যায় সেভাবে ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থা আক্রান্ত হয় না। কারণ ইসলামি ব্যাংকিং হলো কল্যাণধর্মী ব্যাংকিং ব্যবস্থা। তিনি বলেন, সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে অর্থনৈতিক মন্দা ছড়িয়ে পড়ে কয়েক বছর আগে তাতেও দেখা গেছে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে গেছে। পথে বসেছে লাখ লাখ মানুষ।
ইসলামি ব্যাংকিং কোনো প্রতারণা নয়; বরং এটা ইসলামের অনুসরণ। প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের বিপরীতে এটা একটি ভালো ব্যাংকিং ব্যবস্থা। ৫০ বছর ধরে সারা বিশ্বে চলছে ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থা। বিশ্বের অনেক মুসলিম অমুসিলম গবেষক ইসলামি ব্যাংকিংয়ের ওপর গবেষণা এবং পড়াশুনা করছেন। বর্তমানে সুদের যে শোষণ এবং অন্যায় ব্যবসা চলছে তার বিকল্প কিছু বের করার জন্যই তারা এসব গবেষণা এবং পড়াশুনা করছেন ইসলামি ব্যাংকিং নিয়ে। এটা যদি ফ্রড এবং প্রতারণামূলক একটি ব্যবস্থা হত তাহলে তারা এর ওপর পড়াশুনা এবং গবেষণা করতেন না। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য কুরআন হাদিস এবং ইসলামের প্রতিষ্ঠিত মতের বিরোধী।

সুদ কি মানবিক চিন্তাধারার ওপর প্রতিষ্ঠিত?

সুদ মানবিক চিন্তার ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়, বরং এটির জন্মই হয়েছে শোষণের হাতিয়ার হিসেবে। এটির অপকারিতা শুধ ধর্মেই বর্ণিত নয়, বরং আধুনিক অর্থনীতিবিদদের দৃষ্টিতেও সুদের কোনো শুভ ফল নেই। অর্থনৈতিক মন্দা, আয়বৈষম্য ও বেকারত্ব সৃষ্টির েেত্র সুদের প্রভাব স্পষ্ট। এ েেত্র লর্ড কিনসের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। তিনি বলেন, সুদের হার বাড়লে বিনিয়োগ কমে যায় এবং সুদের হার কমলে বিনিয়োগ বেড়ে যায়। তিনি দেখিয়েছেন, সুদের হার শূন্য হলেই কেবল পূর্ণ বিনিয়োগ সম্ভব হয় এবং দেশের বস্তুগত ও মানবীয় সম্পদের কাম্য ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। এ ছাড়াও সুদের আর্থসামাজিক নেতিবাচক প্রভাব ব্যাপক।

পরিশেষে বলা যায়, আল কুরআনের রিবা ও প্রচলিত সুদ কোনোটির মধ্যেই মানবতার জন্য কোনো কল্যাণ নেই এবং উভয়ের অনিবার্য পরিণতি হলো অর্থনৈতিক মন্দা ও আর্থিক অস্থিতিশীলতা। এ থেকে বাঁচার জন্যই কল্যাণধর্মী ইসলামি ব্যাংক-ব্যবস্থার প্রসার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এটি কোনো নতুন ব্যাংকিং দর্শনও নয়; বরং ইসলামি ব্যাংকিংয়ে জমাগ্রহণ নীতির েেত্র বিশিষ্ট সাহাবি হজরত জুবাইর ইবনুল আওয়াম রা:-এর দৃষ্টান্ত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বহু লোক তার কাছে অর্থকড়ি জমা রাখত এবং প্রয়োজনের সময় আংশিক বা সম্পূর্ণই ফেরত নিয়ে যেত। তিনি জনসাধারণের অর্থ আমানত হিসেবে গ্রহণ না করে করদ হিসেবে নিতেন। এ সম্পর্কে সহি আল বুখারিতে উল্লেখ রয়েছে, কেউ হজরত জুবাইর ইবনুল আওয়াম রা:-এর কাছে অর্থকড়ি আমানত হিসেবে রাখার প্রস্তাব দিলে তিনি বলেন, ‘না, এভাবে নয়; বরং তুমি তা আমার কাছে ঋণ হিসেবে রেখে যাও।’ আব্বাসীয় খলিফা আল মুক্তাদিরের (৯০৮-৯৩২ খ্রি:) আমলে মুসলমানেরা আধুনিক ব্যাংক-ব্যবস্থার বেশির ভাগ মৌলিক কর্মকাণ্ড শুরু করে। এ সময় তারা মুসলিম বিশ্বের সমস্ত সঞ্চিত অর্থকে একত্র করে মূলধন গঠনে সম হয়। দেশ-বিদেশে ব্যবসায় পরিচালনায় সুদমুক্তভাবে অর্থ জোগান দিতেও সম হয়। এ প্রক্রিয়া শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলতে থাকে। কিন্তু অষ্টাদশ শতাব্দীতে নানাবিধ রাজনৈতিক কারণে মুসলমানেরা তাদের অর্থনৈতিক নেতৃত্ব হারিয়ে ফেলে। এ সময় পশ্চিমা শক্তি মুসলিম বিশ্বের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে এবং সুদভিত্তিক ব্যাংক-ব্যবস্থা চালু করে। বর্তমানে ইসলামি ব্যাংক-ব্যবস্থার মাধ্যমে মুসলমানেরা তাদের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারের েেত্র কিছুটা হলেও সফলতা লাভ করেছে। এই মানবদরদি, কল্যাণধর্মী ও সুদমুক্ত ইসলামি ব্যাংক-ব্যবস্থার উন্নয়নে দরদি মনোভাব নিয়ে সবার এগিয়ে আসা কর্তব্য।

লেখক : বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর বীর উত্তম

সৌজন্যে: pnbd24

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *