মানুষ পৃথিবীতে একবারই আসে, সীমিত সময়ের জন্য। একটাই জীবন। তাই জীবনটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা উচিত, জীবনের প্রতিটি মূহুর্তকে উপভোগ করা উচিত। সব মানুষ তাই চায়, সবাই সুখী হতে চায়, শান্তিপূর্ণ জীবন চায়, নিরুপদ্রবে বাঁচতে চায়। কিন্তু চাইলেই কি সব পাওয়া যায়? এই পৃথিবীতে পরিপূর্ণ সুখী হওয়া বোধহয় কারো পক্ষে সম্ভব নয়। দুঃখ- কষ্ট, বিপদ-আপদ, রোগ-ব্যাধি, দুর্ঘটনা মানুষের জীবনে ঘটবেই, এড়িয়ে যাবার উপায় নেই। কিন্তু ইচ্ছা করলেই যে কারো পক্ষে এসব বিপর্যয় উপেক্ষা করে সুখে-শান্তিতে জীবন যাপন করা সম্ভব।
সুখ-শান্তি কিসের উপর নির্ভর করে? অর্থ বিত্ত, ধন-সম্পদ, বাড়ি-গাড়ি, সুখ্যাতি?
এসবের মালিক হয়েও অনেক মানুষ আত্মহত্যা করেছেন!
সুখ-শান্তি ধন-সম্পদ বা পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর নির্ভরশীল নয়। ধরুন, দুইজন ধনী ব্যক্তি, সমান ধন-সম্পদ, সমান আয় রোজগার, পরিবারের সদস্য সংখ্যাসহ সবকিছুই সমান। কিন্তু দুইজন হয়ত সমান সুখী নয়। দরিদ্রদের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়। সুখ হল মনের ব্যাপার। সুখ থাকে সন্তুষ্টিতে, যেকেউ তার নিজের অবস্থানে সন্তুষ্ট থাকতে পারলেই সে সুখী। নিজেকে সুখী মনে করলেই সুখী হওয়া সম্ভব।
মানুষের অসুখী হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। তারমধ্যে তিনটি প্রধান কারণ হল- দুশ্চিন্তা, অতীতের অনুশোচনা এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশংকা।
১। দুশ্চিন্তা: দুশ্চিন্তা মানুষের সুখী হওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। মানব দেহের সত্তর ভাগ রোগ দুশ্চিন্তা থেকে সৃষ্টি হয়। সাময়িক অগ্নিমান্দ্য, হৃদরোগ, পেপটিক আলসার, অনিদ্রা, মাথার যন্ত্রণা, প্যারালাইসিস ইত্যাদি। তাছাড়া দুশ্চিন্তা মানুষের শরীরের ক্যালসিয়াম নষ্ট করে যার ফলে দাঁত ক্ষয় হতে শুরু করে, মুখের সৌন্দর্য নষ্ট হয়। আত্মহত্যা ও মস্তিষ্ক বিকৃতির অন্যতম প্রধান কারণও হল দুশ্চিন্তা।
মজার ব্যাপার হল, দুশ্চিন্তার কোন উপকারিতা নেই; শুধুই ক্ষতি। তাহলে শুধু শুধু দুশ্চিন্তা করে নিজের ক্ষতি করার অর্থ কি?
সুতরাং সুখী হতে চাইলে দুশ্চিন্তা মুক্ত জীবন যাপন করতে হবে। দুশ্চিন্তা দূর করার কোন ওষুধ নেই। তাহলে দুশ্চিন্তা দূর করার উপায় কি? দুশ্চিন্তা দূর করার প্রধান উপায় হলঃ এ কথা স্মরণ রাখা যে, “দুশ্চিন্তা করলে আমার কোন লাভ নেই, দুশ্চিন্তা দ্বারা কোন সমস্যার সমাধান হয় না, বরং এটা আমার শরীর ও মনের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর; তাই আমি দুশ্চিন্তা করব না।”
দুশ্চিন্তা করা না করা নিজের উপর নির্ভর করে। যে কেউ ইচ্ছা করলে দুশ্চিন্তা মুক্ত হয়ে শরীর- মন সুস্থ সুন্দর রাখতে পারে।
আমাদের জীবনে ভাল ঘটনা যেমন ঘটে তেমনি খারাপ ঘটনাও ঘটবে। ভাল ঘটনাকে আমরা যেমন খুশী মনে গ্রহণ করি খারাপ ঘটনাকে ঠিক সেভাবে গ্রহণ করতে পারিনা। তাই অশান্তির সৃষ্টি হয়। খারাপ ঘটনায় মন খারাপ করে অস্থির হয়ে উঠলে আমাদের কোন লাভ নেই। উইলিয়াম জেমস বলেছেন,
“যেকোনো দুর্দশাকে এড়ানোর প্রথম পদক্ষেপ হলো- দুর্দশাটাকে মেনে নেয়া।”
সক্রেটিস বলেছেন, “যা ঘটবেই তা হালকা ভাবে গ্রহণ করা উচিত।”
২। অতীতের অনুশোচনা: অতীতে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা ব ভুল-ত্রুটির কথা স্মরণ করে অনেকে অনুতপ্ত বা বিব্রত হয়ে মনের শান্তি নষ্ট করে থাকেন। অতীতকে পাল্টানো যায় না। তাই অতীতের ভুলের জন্য অনুশোচনা করে অশান্তিতে ভোগা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে ভবিষ্যতে যেন তার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে ব্যাপারে সচেতন থাকা উচিত।
৩। ভবিষ্যৎ আশংকা: ভবিষ্যতের অজানা আশংকায় ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে অনেকে হয়তো রাতের ঘুম হারাম করে থাকেন। ভবিষ্যতের নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে নেই। ভাল-মন্দ যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে। ভাল কিছু ঘটলে তো ভাল, আর যদি খারাপ কিছু ঘটে সেজন্য তা মেনে নেয়ার মত মানসিক প্রস্তুতি থাকা উচিত।
[ডেল কার্নেগীর “দুশ্চিন্তাহীন নতুন জীবন” বইয়ের আলোকে লেখা]
এর সাথে আমি কিছু ইসলামি দর্শন যোগ করছি। মুহাম্মদ (সাঃ) ভাল কিছু ঘটলে আলহামদুলিল্লাহ বলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতেন আর খারাপ কিছু হলে বলতেন, “আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল- সর্বাবস্থায় আল্লাহর শুকরিয়া”। অর্থাৎ তিনি সবসময় আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট থাকতেন। আল্লাহতা’লা বলেন,
“ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে তোমরা আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর।” (বাক্বারাঃ ১৫৩)
রাসূল (সাঃ) যখন কোন বিষয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তেন তখন তিনি নফল নামাযে দণ্ডায়মান হতেন। (আবু দাউদ, হা- ১৩১৯)
সুতরাং কোন বিপদ-আপদ আসলে আমরা ধৈর্য ধারণ করব এবং নামায ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করব। সব সমস্যার সমাধান হল ধৈর্য।
সকল অপ্রত্যাশিত অবস্থার মুকাবিলায় একজন মুসলিমের কি করতে হবে বুঝতে চাইলে নিচের ভিডিওটা শুনতে অনুরোধ রইল।