তনু হত্যার বিচার চেয়ে গণজাগরণ মঞ্চের কুমিল্লা মুখি লং মার্চের দিনে, শীত-নিদ্রায়, একাউন্ট ডিএকটিভএট করার সিদ্ধান্ত নিয়াও দুইটা কথা না বলে একেবারেই পারতাছি না।
এইটা একটা দেখার মত বিষয় যে, আওয়ামী লিগের আমলে, সিস্টেমের বিরুদ্ধে গন মানুষের ক্ষোভ থেকে যে আন্দোলন সেইটাও আলটিমেটলি আওয়ামী লীগের পক্ষে থাকে, বিপক্ষে যেতে পারেনা।
দেশে দেশে গন আন্দোলন নিয়ে যারা রিসার্চ করেন, তাদের জন্যে তনু হত্যা নিয়ে এই আন্দোলন একটা মাস্টার-ক্লাস হয়ে থাকলো । দেশের মানুষের ক্ষোভকে নিয়ন্ত্রণে রাখা, প্রয়োজনে উগড়ে দেওয়া আবার টাইম হইলে পা চাপা দেয়াতে এই সরকার কত বড় কামেল, সেইটা আবার প্রমান হইলো। সেলাম।
তনু হত্যার আন্দোলনে, জনগণের একটা পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে। সবাই আমরা বুঝতে পারছি, আমরা একটা অসহায় সময়ে বাস করছি। রক্ষক এই খানে ভক্ষক। যার কাছে বিচার নিয়ে যাবো- সে নিজেই রেপিস্ট, সে নিজেই খুনি-সর্বোচ্চ পরিমাণ টাকা এবং ক্ষমতা যার আছে তার পক্ষেই থাকবে আমাদের সেই রক্ষক । এবং আমাদের যাওয়ার কোন জায়গা নাই। ক্যান্টনমেন্ট এবং হিজাব- যা মানুষের নিরাপত্তার প্রতীক সেইটাও নাগরিকের ন্যূনতম নিরাপত্তা দিতে পারছেনা।
সেই ক্ষোভ থেকে একটা নৈতিক মুভমেন্ট নাগরিকদের মধ্যে জেগে উঠেছে।
কিন্ত, এই খানে সামনের সারিতে দেখা যাইতেছে এমন কিছু মুখ, দল এবং প্রেশার গ্রুপ যারা ঐতিহাসিক ভাবে এই অনৈতিক সরকারের গ্রিন সিগনাল না পাইলে এক পাও নড়েনা , বাংলাদেশের জনগণের জন্যে আইনের শাসন নিয়ে যাদের বিন্দুমাত্র কমিটমেন্ট নাই এবং এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে রক্ষার জন্যে যারা যে কোন মানুষকে কুপিয়ে বিনা দ্বিধায় খুন করতে পারবে ।ঐতিহাসিক ভাবে এরা সরকারের কোন প্রয়োজন হলেই সামনে আসে, নইলে সিস্টেমের উচ্ছিষ্ট এবং আগা তলা খাওয়ার সময়ে কোন ধরনের অন্যায়ে, তাদের আন্দোলনের টাইম হয়না।
জনগণের নৈতিক এবং ন্যায্য এই আন্দোলনে, শাহবাগের মতই কে তিন নাম্বার সন্তান এবং কার হাতে ঘুটি সেইটা ধরা যাইতেছে।
কিন্ত, প্রশ্ন হইলো সরকারকে সব সময়ে রক্ষা করতে আগ্রহী গ্রুপটা কেন এই সময়ে একটা মিনি আন্দোলন ফেনায় তুলতে চাইতেছে? এই ধরনের শান্তিপূর্ণ বিরোধীদল হিন স্ট্যাটাস কো পিরিয়ডে আওয়ামী লীগ কেন শুধু শুধু একটা আন্দোলন চাইবে?
একটা পারস্পেক্টিভ হইলো, এইটাকে আমরা কন্ট্রোলড এক্সপ্লোশানের বা নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরনের সাথে তুলনা করতে পারি।
এই দেশে ক্রমাগত হত্যা, খুন এবং ধর্ষণের সরকারি ছত্রছায়ায় বিচার হীনতার যে সংস্কৃতি তার বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ সেইটাকে একটা কন্ট্রোল্ড এক্সপ্লোশনের মাধ্যমে সরকার রিলিজ করায় দিতেছে।
সাবজেক্টটা সেফ । তনু হত্যা ক্যান্টনমেন্টে হওয়াতে সরকারি লোকজন কইতে পারতেছে, ক্যান্টনমেন্টের ঘটনা-তাই বিচার না হওয়ার দায় ক্যান্টনমেন্টের -রাষ্ট্র পরিচালক হিসেবে আমার না।
রক্ষক হয়ে ভক্ষক হওয়ার, রেপ করার, খুন করার, লুটপাটের যেই চর্চা সরকারের লোক জন করছে, তাদের দিক থেকে ক্ষোভটা একটা হাটুবুদ্ধি,নিজের পাবলিক রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্টে স্ট্রাকচারালি অক্ষম প্রতিষ্ঠানের দিকে ঘুরায় দিয়া, আবার আমাকে সেন্সর করছে, আমাকে সেন্সর করছে বইলা পেপারে বড় করে বিবৃতি দেয়ার যে রাজনীতি সেইটা একটা দেখার মত রাজনীতি হইছে।
বোঝা যাইতেছে, আওয়ামী লিগের প্রোপাগান্ডা মেশিন, এঞ্জিও লীগ এবং কন্ট্রাক্ট মুভমেন্ট স্পেশিয়ালিস্টদের কাছে আইএসপিআর দুগ্ধপোষ্য শিশু মাত্র ।
ধর্ষিতা হিসেবে তনুর লাশ ইউনিক। এক দিকে সে হিজাবী, অন্য দিকে নাট্য কর্মী , তার পরিচয় সে নারী এবং পাওয়া গ্যাছে ক্যান্টনমেন্টে।
বাংলাদেশের ক্ষমতার রাজনীতিতে এত ইউনিক লাশ ডেইলি ডেইলি পাওয়া যায়না। তনুর মত একজন হিজাবী, নাট্যকর্মী নারীর ক্যান্টনমেন্টে পাওয়া লাশ সবাইরে তাদের প্রতিপক্ষকে এক হাত ধোলাই করার সুযোগ করে দিছে।
বিএনপি মারতেছে আওয়ামী লীগ ,বামেরা মারতেছে আর্মি , হিজাবী মারতেছে সেকুলার, সেকুলার মারতেছে মারতেছে হিজাবী , নারীবাদীরা মারতেছে ইস্লামিস্ট , ইস্লামিস্টরা মারতেছে নারীবাদী আর ইন্টেরেসটিংলি আওয়ামী লীগ প্ল্যাকার্ড হাতে দাড়ায় বলতেছে বিচার চাই, বিচার চাই।
বিচার হীনতার সংস্কৃতি সৃষ্টির দায় যাদের এবং বিচার করার দায়িত্ব যাদের – সেও তনু হত্যার বিচার চাই বইলা প্ল্যাকার্ড নিয়া দাড়াইছে।
পিউর ক্লাস এক্ট।
তনু হত্যার বিচারের মাধ্যমে একটা সামাজিক আন্দোলন তৈরি করে বিচার হীনতার সংস্কৃতি থেকে জবাবদিহিতার সংস্কৃতি এবং বিচার বিভাগের আমূল পরিবর্তন করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কারো নাই।
সবাই চাইতেছে ধর্ষিতা তনূর লাশটাকে ব্যবহার করে নিজের প্রতিপক্ষ সাইজ করতে।
এই টাই বাংলাদেশের যোনি রাজনীতির সঠিক রূপ।
মৃত্যুর পরে লাশটাকেও যে যে যার যার উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যে এক বার ব্যবহার করে নিতেছে, তার শত্রু সংহারের মাধ্যমে। এইটাকে ইংরেজিতে একটা সুন্দর, টক শোতে এবং সেমিনারে বলার মত টার্ম আছে।
একে নেক্রোফিলিয়া বলে।
সরি তনু, আমাদেরকে ক্ষমা কইরো।
আমাকেও ক্ষমা কইরো।
আমিও লাইক কামাইতে তোমাকে ইউজ করলাম।
বি:দ্র: লিখাটি পূর্ব প্রকাশিত ফেইস বুকে, কমেন্ট এখানে দেখতে পারেন