সরল ও পরিমিত পন্থায় দ্বীন পালন

সৃষ্টিগতভাবেই মানুষের মাঝে দুর্বলতা রয়েছে। আর সে কারনেই তারা খুব সহজেই ভুল পথে পরিচালিত হয়। অনেকে ছোটখাট ভুল কোরে নিজের উপরে জুলুম করেন। আবার অনেকে বড় বড় অপরাধ করেন। এভাবে তারা অন্যের উপরেও জুলুমের স্টিম রোলার চালান। ফলে নিজেরা যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হন, তেমনি অপরকেও ক্ষতিগ্রস্থ করেন। আল্লাহতায়ালা তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে মানুষকে সৃষ্টি করে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। সেইসাথে মানব জাতি যেন শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারে ও কল্যাণ প্রাপ্ত হয় সেই লক্ষ্যে সহজ-সরল জীবনবিধান প্রেরণ করেছেন। শুধু তাই নয়, যুগে যুগে নবী ও রাসূল প্রেরণ কোরে সেই ঐশী বিধান সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করার দিশা দেখিয়েছেন। পবিত্র কোরআন হলো রসুল (সাঃ) এর উপর নাযিলকৃত সর্বশেষ ঐশী জীবনবিধান। জীবনকে সুন্দর ও সঠিকভাবে পরিচালনা করার লক্ষ্যে এই বিধান যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলেই পরম শান্তি ও মুক্তি মিলতে পারে।

মানুষ অনেক সময় স্রষ্টা প্রেরিত বিধানকে ভুলে গিয়ে স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে। কেউ কেউ এতটাই উদাসীন হয়ে যান যে, স্রষ্টার বিধানকে ছেড়ে মনগড়া ভ্রান্ত পথে চলতে গিয়ে ক্ষতির মধ্যে পতিত হন। কেউ আবার নানা মুণির নানা মতের দোহাই তুলে সার্বজনিন বিধানকে কুক্ষিগত করে রাখতে চান। আবার অনেকে তো স্রষ্টা প্রেরিত সরল বিধানের উপর অন্যের কাছ থেকে ধার করা অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না। শাশ্বত ঐশী বিধানকে অবজ্ঞা করা যেমন অন্যায়, তেমনি জটিল কোরে তোলার এখতিয়ারও কি কোন মানুষকে দেয়া হয়েছে? না, কখনই না। বরং স্বয়ং আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রাসূল (সাঃ) সকল অতিরঞ্জন ও জটিলতা থেকে মুক্ত করেই দ্বীন ইসলাম পালনের শিক্ষা ও নির্দেশনা দিয়েছেন। বোধশক্তিসম্পন্ন মানুষ মাত্রই এই দিকনির্দেশনাই মেনে চলা উচিত এবং যারা জানেন না তাদের কাছে সেভাবেই তুলে ধরা উচিত।

আল-কোরআন, ৪ নং সূরা আন নিসা (মদীনায় অবতীর্ণ)

(০৪:২৬) অর্থ- আল্লাহ তোমাদের জন্যে সব কিছু পরিষ্কার বর্ণনা করে দিতে চান, তোমাদের পূর্ববর্তীদের পথ প্রদর্শন করতে চান এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করতে চান, আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, অত্যন্ত বিচক্ষণ।

(০৪:২৭) অর্থ- আল্লাহ তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হতে চান, কিন্তু যারা প্রবল অনুরাগের অনুসারী তারা চায় যে, তোমরাও বিচ্যুত হয়ে পড় মহা বচ্যুতির পথে।

(০৪:২৮) অর্থ- আল্লাহ তোমাদের জন্য (পথকে) সহজ, হালকা করতে চান। সৃজন করা হয়েছে মানুষকে দুর্বলরূপে।

সূরা আল-যুমার (মক্কায় অবতীর্ণ)

(৩৯:১৮) অর্থ- যারা মনোযোগের সাথে কথা শুনে, অতঃপর তা থেকে যা উত্তম তার অনুসরণ করে, এরাই তারা- যাদেরকে আল্লাহ পথ প্রদর্শন করে থাকেন এবং তারাই তো বোধশক্তিসম্পন্ন।

সূরা কাহফ (মক্কায় অবতীর্ণ)

(১৮:৮৮) অর্থ- এবং যে বিশ্বাস স্থাপন করে সৎকর্ম করে তার জন্য প্রতিদান হলো কল্যাণ এবং আমার কাজে তাকে সহজ নির্দেশ দেব।  

    সূরা আল মায়েদাহ (মদীনায় অবতীর্ণ)

(০৫:০৬) অর্থ- হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাযের জন্যে উঠ, তখন স্বীয় মুখমন্ডল ও হস্তসমূহ কনুই পর্যন্ত ধৌত কর এবং পদযুগল গিটসহ। যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও এবং যদি তোমরা রুগ্ন হও, অথবা প্রবাসে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর, অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও, অতঃপর স্বীয় মুখ-মন্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান-যাতে তোমরা কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর।

সূরা হাজ্জ্ব (মদীনায় অবতীর্ণ)

(২২:৭৮) অর্থ- তোমরা আল্লাহর জন্যে শ্রম স্বীকার কর যেভাবে শ্রম স্বীকার করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে পছন্দ করেছেন এবং ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন জটিলতা আরোপ করেন নাই। তোমরা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের ধর্মে কায়েম থাক। তিনিই তোমাদের নাম মুসলমান রেখেছেন পূর্বেও এবং এই কোরআনেও, যাতে রসূল তোমাদের জন্যে সাক্ষ্যদাতা এবং তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলির জন্যে। সুতরাং তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে শক্তভাবে ধারণ কর। তিনিই তোমাদের মালিক। অতএব তিনি কত উত্তম মালিক এবং কত উত্তম সাহায্যকারী।

সূরা আল বাক্বারাহ (মদীনায় অবতীর্ণ)

(০২:১৮৫) অর্থ- রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানব জাতির জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথনির্দেশ আর (ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী) মানদণ্ড/ বিচারের মাপকাঠি। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে নির্ধারিত সংখ্যা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য কষ্টকর পরিস্থিতি কামনা করেন না, যেন তোমরা নির্ধারিত কাল পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহতা’আলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর এবং যেন তোমরা কৃতজ্ঞ হও।

সূরা আত্ব-ত্বালাক্ব (মদীনায় অবতীর্ণ)

(৬৫:৪) অর্থ- তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যারা মাসিকের ব্যপারে নিরাশ হচ্ছে, তাদের ব্যাপারে সন্দেহ হলে তাদের ইদ্দত হবে তিন মাস এবং যাদের এখনও মাসিক শুরুই হয়নি, তাদেরও (অনুরূপ ইদ্দতকাল হবে)। গর্ভবর্তী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন।

(৬৫:০৭) অর্থ- বিত্তশালী ব্যক্তি তার বিত্ত অনুযায়ী ব্যয় করবে। যে ব্যক্তি সীমিত পরিমাণে রিযিকপ্রাপ্ত, সে আল্লাহ যা দিয়েছেন, তা থেকে ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যা দিয়েছেন, তদপেক্ষা বেশী ব্যয় করার আদেশ কাউকে করেন না। আল্লাহ কষ্টকর পরিস্থিতির পর সহজসাধ্যতা এনে দেবেন।

সব সময় মনে রাখতে হবে যে, দ্বীন ইসলাম পালনের ক্ষেত্রে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে চরমপন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে আল-কোরআনের মৌল নির্দেশনা বহির্ভূত অতিরিক্ত আরোপ কোরে বাড়াবাড়ি করা যেমন অন্যায়, তেমনি একেবারে উদাসীন থাকা অথবা নিজের সুবিধা মত কাটছাট কোরে নেয়াও অন্যায়। এই দুইয়ের কোনটাই কাম্য নয়, বরং জুলুম করারই নামান্তর।

আল-কোরআন-

সূরা আল ফাতিহা (মক্কায়অবতীর্ণ ক্রম- ৫)

(০১:০৬) অর্থ- আমাদেরকে সরল-সোজা পথ দেখাও,

সূরা বাকারা (মদীনায় অবতীর্ণ ক্রম- ৮৭)

(০২:১৪২) অর্থ- মানুষের মধ্য থেকে নির্বোধরা বলবে, কিসে তাদেরকে ফিরিয়ে দিল তাদের ঐ কেবলা থেকে, যার উপর তারা ছিল? আপনি বলুন, পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা সোজাসরল পথে পরিচালিত করেন।

(০২:১৪৩) অর্থ- আর এমনিভাবে আমরা (আল্লাহ- সম্মান সূচক) তোমাদেরকে (وَسَطًا أُمَّةً) মধ্যবর্তী/ মধ্যপন্থী/ আদর্শ/ উত্তম  সম্প্রদায় করেছি যাতে করে তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমণ্ডলীর জন্যে এবং যাতে রসূল সাক্ষ্যদাতা হন তোমাদের জন্য। আর আমরা বানাতাম না প্রার্থনার দিকটি যার উপরে তুমি ছিলে, যদি না আমরা যাচাই করতাম যে, কে রসূলের অনুসারী থাকে আর কে পিঠটান দেয়। বস্তুত নিঃসন্দেহে এটা ছিল এক মস্ত বিষয়, কিন্তু তাদের জন্যে নয় যাদেরকে আল্লাহ পথপ্রদর্শন করেছেন। আল্লাহ এমন নন যে, তোমাদের ঈমান নিষ্ফল করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ, মানুষের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল, পরম-করুণাময়।

(وَسَطًا – Wasat – just and the best– চরমপন্থী ও আত্মম্ভরী-দাম্ভিক নয় কিংবা উদাসীন ও নির্বোধ নয়, বরং এ দুয়ের মধ্যবর্তী বা মধ্যপন্থী অর্থাৎ ন্যায়ানুগ, সুবিচারপূর্ণ, আদর্শ, উত্তম সম্প্রদায়)

সূরা লোকমান (মক্কায় অবতীর্ণ ক্রম- ৫৭)

(৩১:১৭) অর্থ- হে বৎস! নামায কায়েম কর, সৎকাজে নির্দেশ দাও ও মন্দকাজ নিষিদ্ধ কর, আর তোমার উপরে যাই ঘটুক তা সত্বেও সবর কর। নিশ্চয় এ ব্যপারে দৃঢ়সংকল্পের প্রয়োজন হয়।

(৩১:১৮) অর্থ- আর মানুষের প্রতি তোমার চিবুক ঘুরিয়ে নিও না এবং পৃথিবীতে মহোল্লাসে চলাফেরা করোনা। নিঃসন্দেহে আল্লাহ কোন দাম্ভিক আত্মম্ভরীকে পছন্দ করেন না।

(৩১:১৯) অর্থ- আর পদচারণায়/ চলাফেরায় মধ্যবর্তিতা/ মধ্যপন্থা (اقْصِدْ) অবলম্বন কর এবং কণ্ঠস্বর নীচু কর। নিঃসন্দেহে সমস্ত আওয়াজের মধ্যে সর্বাপেক্ষা কর্কশ হচ্ছে গাধারই স্বর।

(৩১:৩২) অর্থ- যখন তাদেরকে মেঘমালা সদৃশ তরঙ্গ আচ্ছাদিত করে নেয়, তখন তারা আল্লাহকে ডাকতে থাকে- দ্বীনের প্রতি একানিষ্ঠ হয়ে। অতঃপর তিনি যখন তাদেরকে স্থলভাগের দিকে উদ্ধার করে আনেন, তখন তাদের মধ্য থেকে কেউ হয় (مُقْتَصِدٌ) মধ্যপন্থী এবং অস্বীকার করেনা আমার নিদর্শনাবলীকে– প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতক ও অকৃতজ্ঞ ব্যতিত।

সূরা ফাতির (মক্কায় অবতীর্ণ ক্রম- ৪৩)

(৩৫:৩২) অর্থ- অতঃপর আমরা (আল্লাহ- সম্মান সূচক) এ কিতাবের উত্তরাধিকারী করেছি তাদেরকে যাদেরকে আমরা আমাদের (আল্লাহ- সম্মান সূচক) বান্দাদের মধ্য থেকে মনোনীত করেছি। অতঃপর তাদের মধ্য থেকে কেউ নিজেই নিজের প্রতি জুলুম/ ক্ষতি করে, আর তাদের মধ্য থেকে কেউ হয় (مُقْتَصِدٌ) মধ্যপন্থী এবং তাদের মধ্য থেকে কেউ হয় আল্লাহর অনুমতিক্রমে ভাল কাজে অগ্রগামী। এটাই তো মহা অনুগ্রহ।

হাদিছ-

Narrated Abu Sa’eed Al-Khudri: from the Prophet (sw), that he said about this Ayah: ‘Then We gave the Book the as inheritance to such of Our worshipers whom We chose. Then of them are some who wrong themselves, and of them are some who follow a middle course, and of them are some who are, by Allah’s Leave, foremost in good deeds (35:32). He said: “All of these people are of the same rank, and all of them are in Paradise.”

Grade: Da’if (Darussalam), English reference: Vol. 1, Book 44, Hadith 3225

(সূত্র- http://sunnah.com/urn/642580)

বুখারী শরীফ১০ম খণ্ড (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা৫৭)

    ২৭০০. অনুচ্ছেদ: আমলে মধ্যপন্থা অবলম্বন নিয়মিত করা

    ৬০১৯ : আদাম (র)…..আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)  বলেছেনঃ কস্মিনকালেও তোমাদের কাউকে তার নিজের ‘আমাল নাজাত দিবে না। তাঁরা বললেন, ইয়া আল্লাহর রাসূল! আপনাকেও না? তিনি বললেনঃ আমাকেও না। তবে আল্লাহতায়ালা আমাকে তাঁর রহমত দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। তোমরা যথারীতি ‘আমাল কর, ঘনিষ্ঠ হও। তোমরা সকালে, বিকালে এবং রাতের শেষাংশে আল্লাহর কাজ কর। মধ্যম পন্থা অবলম্বন কর। আঁকড়ে ধর মধ্যম পন্থাকে, তোমরা অবশ্যই সফলকাম হবে।

৬০২০ : আব্দুল আজীজ ইবন আবদুল্লাহ (র)….. আয়শা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: তোমরা ঠিকভাবে মধ্যম পন্থায় নেক আমল করতে থাক। আর জেনে রাখ যে, তোমাদের কাউকে তার আমল বেহেশতে নেবে না এবং আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল হলো, যা নিয়মিত করা হয়। তা অল্পই হোক না কেন।

    সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, অধ্যায়ঃ ৫২/ কিয়ামত, জান্নাত জাহান্নামের বিবরণ

    হাদিস নম্বরঃ ৬৮৫১। কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তির আমলই তাকে নাজাত দিতে পারবেনা। এ কথা শুনে জনৈক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনিও কি নন? তিনি বললেন, হ্যা, আমিও নই। তবে যদি আল্লাহ তাআলা তাঁর রহমত দ্বারা আমাকে আবৃত করে নেন। তোমরা অবশ্য মধ্যম পন্থা অবলম্বন করবে। ইবনু আবদুল আলা আস সাদাফী (রহঃ) বুকায়র ইবনু আশাজ্জ (রহঃ) থেকে এ সনদে অনুরুপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে ‘বি রাহমাতিন মিনহু’ এর সাথে ‘অ ফাদলিন’ শব্দটিও বিদ্যমান আছে। কিন্তু এতে ‘অলা কিন সা’দ্দিদু’ কথাটি উল্লেখ নেই।

    হাদিস নম্বরঃ ৬৮৫৬। মুহাম্মদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ তোমরা মধ্যম পন্থা অবলম্বন কর এবং এর নিকটবর্তী তরীকা ইখতিয়ার কর। তোমরা জেনে রাখ, তোমাদের কেউ আমলের দ্বারা নাজাত লাভ করতে পারবে না। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আপনিও নন? তিনি বললেন,হ্যা, আমিও নই। তবে আল্লাহ তাআলা যদি স্বীয় রহমত ও অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে আবৃত করে নেন।

    হাদিস নম্বরঃ ৬৮৬১। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (অন্য সনদে) মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর স্ত্রী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ মধ্যম পন্থা অবলম্বন কর, এর নিকটবর্তী পন্থা ধারণ কর এবং শুভ সংবাদ গ্রহণ কর, কারো আমলই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারবে না। সাহাবীগন প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনিও কি নন? তিনি বললেনঃ আমিও নই। তবে যদি আল্লাহ তাআলা আমাকে তার রহমত দ্বারা আবৃত করে নেন। তোমরা জেনে রাখ, সার্বক্ষণিক আমলই আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল, যদিও তা পরিমাণে কম হয় না কেন।

[সূত্র- http://hadithbd.com/show.php?pageNum_RsHadith=4&BookID=2&SectionID=172]

সুতরাং ইহকালীন ও পরকালীন শান্তি ও মুক্তি লাভের জন্য মুসলিম মাত্রই আল-কারআনের মৌল বিধান ও সেই অনুসারে রাসূল (সাঃ) আদর্শ পালনে সচেষ্ট হতে হবে। ধর্মের ব্যাপারে অতিরঞ্জন ও উগ্রতা কিংবা অবহেলা ও উদাসিনতা নয়, বরং আবেগ-উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রেখে বাঁকা পথ ছেড়ে সরল-সোজা পথে চলার জন্য মধ্য তথা পরিমিত পন্থা অবলম্বন করাই উত্তম ও কল্যাণকর। সৎকর্ম করার সাথে সাথে ভুল-ত্রুটির জন্য সর্বদা মহান স্রষ্টার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। মহান আল্লাহতায়ালা চাইলে যাকে খুশি তাকে সৎকর্মে অগ্রগামী করে দিতে পারেন এবং এটাই মুক্তি ও শান্তির একমাত্র পথ।

Comments are closed.