সবাইকে ঈদ মোবারক ও কিছু কথা

গরু জবাইয়ের দৃশ্য আমার অসহনীয় লাগে। আমি কখনো গরু জবাইয়ের সামনে দাড়িয়ে থাকিনি। এবং ছোট বাচ্চাদেরকে আমি এই সময়ে খেয়াল করে দূরে রাখি, যাতে ওদের এই দৃশ্যটা দেখতে না হয়। কিন্তু, একি সাথে আমি জানি, আমার শরীরের প্রয়োজন মেটাতে মাছ, মাংস, মুর্গী সব কিছুই খেতে হয়।
এই বৈপরীত্য নিয়ে ভাবতে গিয়ে আমি দেখেছি, আমাদের মানব জন্মের অস্তিত্বের একটা প্রয়োজনীয় উপাদান খাদ্যের জন্যে, আরেকটা প্রানিকে হত্যা করা। পুরো বিশ্বে মানব শুধু একটা প্রানি। সকল প্রানি, আরেকজন প্রানিকে হত্যা করে তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে। এইটা ফুড চেইন।
মানুষ মাছ খায় । মাছ খায়, প্ল্যাঙ্কটন নামের একটা জীব বা আরেকটা মাছ। মানুষ গরু খায়, বা অন্য নিরামিষাশী প্রানি খায়। এই নিরামিষাশী প্রানি খায়, ঘাস। সেই ঘাসেরও কিন্তু প্রান আছে। এই একি ফুড সাইকেলে বাঘ , হরিণ খায়। হরিণ ঘাস খায়।এই ফুড চেইন আমরা ক্লাস ফাইভেই পড়ছি । সহজ জিনিষ কিন্তু, চিন্তা করলে দেখবেন, আপনার মানব অস্তিত্ব, এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডকে টিকিয়ে রাখে এই ফুড চেইন। মডার্ন মানুষ হটাত, এই গুলো না বুঝে কিবোর্ড চেপে মুসলমানদেরকে গালি দিয়ে , ফ্রিজ থেকে বার্গার খায়। শুধু মাত্র দেখেনা বলেই সে ভাবে বার্গার খাওয়া মানবিক। কিন্তু, গরুকে জবাই করে, অমানবিক মানুষেরা।

বাস্তবতা হচ্ছে, আপনার যেই শরীরকে সৃষ্টি করা হয়েছে তাকে চালু রাখতে হলে, আপনার খাদ্যের প্রয়োজন। সেইটা মাংস হোক, ভেজিটেবল হোক। এবং মাংস এবং ভেজিটেব ল সব কিছুরি প্রান থাকে। সেই প্রানকে হরন করার সময়ে তার যন্ত্রণা হয়। যারা ভেজিটেরিয়ান, তারা কিন্তু জেনেও না জেনে থাকেন যে, উদ্ভিদের প্রান আছে, স্নায়ু আছে, উদ্ভিদকে কাটা হলে সে ব্যাথা পায়। উদ্ভিদের যে প্রান আছে এইটা সায়েন্সের অত্যন্ত নবীন আবিষ্কার। আমরা সকলেই জানি, স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু আবিষ্কার করেছিলেন, উদ্ভিদকে ইলেক্ট্রিক শক দিলে তার অন্য প্রানিদের মত স্প্যাজম বা একটা সঙ্কোচন হয়। কিন্তু গাছের নারভাস সিস্টেম নাই বলে এখন বিজ্ঞানিরা এই বিষয়ে বিভিন্ন রকম মতামত পোষণ করেন। সাম্প্রতিক সময়ের রিসারচে এসেছে, গাছ ইলেক্ট্রোক্যামিকাল সিগনালের মাধ্যমে একে অপরের সাথে যোগাযোগও করতে সক্ষম।
এই ভেজিটেরিয়ানরা ভেজিটেবল রান্না করার সময়ে যে পানি সিদ্ধ করে,সেই পানিতে কোটি কোটি ব্যাকটেরিয়া মারা যায়। এবং অত্যন্ত যন্ত্রণা পেয়ে মারা যায়। সেই ব্যাক্টেরিয়ারও কষ্ট হয়। (যদিও এই বিষয়ে বিজ্ঞানিদের দ্বিমত আছে।)
বুঝতে পারছেন, এই স্ট্যাটাসটা দেয়ার কারন, কোরবানির আগে, কিছু মানুষের ইসলামকে গালাগালি করার একটা উত্তর দেয়া। এইটা প্রাসচাত্যের লোকেরা বেশি করে, ইসলামকে অমানবিক ধর্ম হিসেবে প্রচার করার একটা অজুহাত হিসেবে ।
এই বিষয়ে একটা ঘটনা বলি। আমি ইউকে থাকতে, পেপারে একটা জিনিষ দেখলাম একবার, বেজার কাল করা হবে। ( badger cull)। আমি কোন মতেই ধরতে পারতেছিলামনা বেজার কাল বিষয়টা আবার কি।
তো পরে যেইটা বুঝলাম সেইটা হইলো, বেজার হইলো, কাঠবেড়ালি । যেই গুলো ইংল্যান্ডের কিছু অঞ্চলের জঙ্গলে পাওয়া যায়। এই গুলোর মধ্যে, হটাত র্যা বিস হইছে,( এক ধরনের ছোঁয়াচে রোগ। মারনঘাতি নয়) তো সরকার সিদ্ধান্ত নিছে কিছু এলাকার সকল কাঠবিড়ালি মেরে ফেলবে।
আমার কাছে খুব অবাক লাগছিল যে, এইটা কিভাবে সম্ভব। র্যা বিস হইলে ওষুধ খাবা। র্যা বিসের তো ওষুধ আছে, সব কাঠবিড়ালি মেরে ফেলতে হবে কেন।
http://en.wikipedia.org/wiki/Badger_culling_in_the_United_Kingdom
কিন্ত অরা সেইটা করছে। কিছু এলাকার সব কাঠবিড়ালি মেরে ফেলছে, সেই গুলো র্যািবিস আছে বলে।
এইটাই হইলো প্রাসচাত্যের হিপোক্রেসি। ওরা সামান্য অসুখের কারনে, একটা পুরো প্রজাতিরে মেরে ফেলে, কিন্তু মুসলমানরা গরু খাইলে খারাপ।
এই খানে ইস্যুটা হইলো, গরুটাকে যদি এত যন্ত্রণা না দিয়ে যদি মারা যাইতো। আজকে একটা স্ট্যাটাসে পড়লাম, গরুকে ক্লরোফরম দিয়ে অজ্ঞান করে মেরে ফেলা যায়। এই বিষয়ে, জানতে আমি আরো আগ্রহী। যদি ধর্মীয় ভাবে এলাউড হয়, এইটা হইতে পারবে। এই বিষয়ে ইসলামিক এক্সপার্টরা মতামত দিতে পারেন।( দয়া করে কেউ সুযোগ পেয়েই, নিজে নিজে হাদিস বানায়, দিয়েন না। বাঙ্গালীর একটা অভ্যাস, হাদিস বানানো। সেই রকম জ্ঞান থাকলে শেয়ার করেন। জানতে চাই)।
একটা জিনিষ বুঝতে হবে যে, কোরবান করা কিন্তু ভোগ না, স্যাক্রিফাইস। আমরা অনেকে সেইটা বুঝি না। একটা প্রানিকে আপনি আল্লাহর রাহে স্যাক্রিফাইস করলেন। একটা প্রানির প্রান নিলেন। এইটার আত্মিক মহত্য বোঝা এত সহজ নয়। এইটা অনেক গভীর ভাবে উপলব্ধির একটা বিষয়। আমার ধারনা, খুব কম মুসলমান এই লেভেলটায় পৌছাতে পারে। যাক, তাদের সমালোচনা আমার কাজ না।আমি জাস্ট বললাম।
সব শেষে প্রতি বছর, এই কথা গুলো বলি। আবার বলছি
প্লীজ
ক| শিশুদের কুরবানীর সিন থেকে দুরে রাখবেন |
খ | নিজের গরুর বা খাসির কোরবানির ময়লা নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার করবেন |
গ | কেও প্লিজ মৃত গরুর জবাই এর ছবি আপলোড করবেন না | এইটার জন্যে করজোরে মিনতি করি |
ঘ | গরিব দের যেই ভাগ সেই ভাগে হাড্ডি কম দিবেন |
ঙ | কোরবানির গোস্ত সারা বছর এর জন্যে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিবেন না |

সবাইকে ঈদ মোবারক। আল্লাহ আপনাদের সবার কোরবানি কবুল করে নিবে, এই দোয়া রেখে ইদ মোবারক।

Loading

জিয়া হাসান

About জিয়া হাসান

লেখক: প্রাবন্ধিক। প্রকাশিত গ্রন্থ : শাহবাগ থেকে হেফাজত: রাজসাক্ষীর জবানবন্দি -

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *