সংশয়বাদ, নাস্তিকতা ও ধর্মান্ধতা

ভূমিকা :
মহাবিশ্বের স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে যেসব বিভিন্ন সক্ষমতা ও দক্ষতার গুণ দিয়েছেন তা যে সব সময় সুস্থ থাকবে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।

আধ্যাত্মিকতা এরকমই একটি নিয়ামত কিন্তু সেটি যদি নষ্টা বা রোগাক্রান্ত হয়ে যায় তখন কারো কাছ থেকে ধর্মীয় চিন্তা আশা করা যায় না। “সংশয়বাদ ও নাস্তিকতা আসলে একটি আধ্যাত্মিক রোগ” বলেছেন প্রখ্যাত ইসলামি স্কলার শেখ ইয়াছির ক্বাদী। তবে আমার কথা হচ্ছে, একথাও বলা যেতে পারে যে ধর্মীয় ব্যাপারে চরমপন্থা অবলম্বন করাটাও তেমনি আরেকটি আধ্যাত্মিক রোগ।
সংশয়বাদ ও নাস্তিকতা বিষয়ক আলোচনার আগে প্রথমেই অনুরোধ করব স্রষ্টা বা আল্লাহর অস্তিত্বের প্রশ্নে নিচের মাত্র কয়েক মিনিটের ভিডিওটি একটু দেখে নিতে।

(আসুন একটু ভেবে দেখি – ৪র্থ পর্ব)

এখন আমরা যদি সংশয়বাদ ও নাস্তিকতাকে একটি আধ্যাত্মিক রোগ বলি তা হলে তাকে মোকাবিলা করা তাদের পক্ষে কখনই সম্ভব নয় যারা ধর্মীয় উগ্রতায় তাদের আধ্যাত্মিকতাকে রোগাক্রান্ত করে নিয়েছেন! কেননা সে রোগ যার হবে তিনি রেশনাল চিন্তা ও যুক্তিকে বিসর্জন দিয়ে কেবল জাহান্নামের ভয়ভীতি দেখিয়ে মানুষকে ধর্ম পালন করতে বাধ্য করতে চাইবেন কিন্তু বর্তমান যুগে তা যে কাজে লাগবে না সেটি আমাদেরকে বুঝতে হবে।

এবারে রমজান মাসের শুরুতে আমেরিকার ইসলামি স্কলার শেখ ইয়াসির ক্বাদী ও প্রখ্যাত ইসলাম প্রচারক ড: জাঁকির নায়েকের মাঝে একটি অন লাইন ইউটিউব ভিডিও কসফারেন্স দেখলাম। ভিডিওটিকে সংক্ষিপ্ত আকারে এখানে রাখছি।
ড: জাকির নায়েকের কাছে শেখ ইয়াসির ক্বাদীর প্রশ্ন ছিল, “আজকাল সংশয়বাদ ও নাস্তিকতার যে উত্থান আমরা দেখতে পাচ্ছি বিশেষ করে আমেরিকার মুসলিম সমাজের একটি অংশের মাঝে সেটি কিভাবে সামল দেয়া যায়? আমরা তাদেরকে কি পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দিতে পারি তাদের ঈমান ও বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে বিশেষকরে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মনে ধর্মীয় বিশ্বাসকে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখতে?

ড: জাকির নায়েকের উত্তর ছিল সেটি কেবল আমেরিকা নয় পুরো বিশ্বজুড়ে এ সমস্যা দেখা যাচ্ছে এমন কি যখন ২০১৪ সালে তিনি সৌদি আরব গিয়েছিলেন সেখানেও একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে নাস্তিকতার বিষয়ে কিছু বলতে অনুরোধ করায় তিনি অনেকটা অবাক হলেও বুঝতে পেরেছেন এ সমস্যা আজ বিশ্বব্যাপী সকল মুসলিম দেশে ছড়িয়ে পড়েছে!
তিনি বলেন, “আমি মনে করি আগে যখন মুসলিম দেশ থেকে বিশেষ করে গ্লাফ কান্ট্রিজ বা আরব দেশ থেকে কেউ পশ্চিমা দেশে লেখাপড়া করতে যেত তাহলে তাদের মাঝে শতকরা ১ – ২ % তার ধর্মবিশ্বাসে বিভ্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ছিল কিন্তু সেটি এখন সেটি ২৫% হতে পারে”! ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে এগুলো কোন সুখবর বলা যায় না।

ড: জাকির নায়েকের মতে যারা নিজেদেরকে ইসলামের প্রচারক মনে করেন বা সে খেদমতে নিয়োজিত আছেন তাদের উচিত ধর্ম বিরোধী লেখালেখি বা অভিযোগ কি তা পড়া বা জানা যাতে সে সবের বিপক্ষে সঠিক যুক্তি ও তথ্য সরবরাহ করা যায় জ্ঞান ও যুক্তির ভিত্তিতে। তিনি বলেন আমি যদি দুটি বই দেখি একটি পক্ষের এবং অন্যটি বিপক্ষে তাহলে আগে বিপক্ষের বইটি কিনে পড়ি। কারণ সমস্যা কোথায় সেটি বুঝতে না পারলে জবাব দিতে প্রস্তুত হবেন কিভাবে?

আলহামদুলিল্লাহ, আমি হাজারো সংশয়বাদী ও নাস্তিকদের সাথে বিতর্ক করেছি এবং জবাব দিয়েছি। আমার একটি ভিডিও লেকচার আছে Does God Exists? যেখানে আমি বিজ্ঞান ও যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করেছি। তিনি বলেন, অতীতে দেখা যেত ধর্ম বিষয়ে কোন প্রশ্ন করলে তাকে থামিয়ে দেয়া হত একথা বলে যে এটি একটি শয়তানী প্রশ্ন কিন্তু আজকাল সেটি করলে হিতে বিপরীত হবে। প্রথম কথা হল প্রশ্ন করতে বাধা দেয়ে যাবে না। একটি প্রশ্ন অযৌক্তিক হতে পারে কিন্তু সেটি বলার সুযোগ দিতে হবে এবং সেটি নিয়ে আলোচনা করে তাকে ভুল প্রমাণ করতে হবে।

তবে জবাব তারাই দিতে সক্ষম হবে যা এ বিষয়ে পারদর্শী। অনেক সময় দেখা যায় পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও জ্ঞানের অভাবে শুধু আবেগ দিয়ে জবাব দিতে গিয়ে অনেকে ভুল করেন। দেখা যায় তারা কুরআন ও সুন্নাহর নীতিমালা অতিক্রম করে ফেলেন এবং বিজ্ঞান ও যুক্তিকে ব্যবহার করতে চাননা। নাস্তিকদের কাছে ইসলাম প্রচারের জন্য বিজ্ঞান হচ্ছে একটি খুব ভাল সরঞ্জাম কেননা নাস্তিকেরা বিজ্ঞান ও যুক্তিকে সব কিছুর মাফকাঠি ভাবে। তাই বিজ্ঞানের যুক্তি দিয়ে তাদের কিভাবে জবাব দেয়া যায় সেটি জানতে হবে।

ধর্মীয় অঙ্গনে অনেক সময় কিছু পুরানো তথ্য বা নিছক প্রাক কল্পনা (Pre conceived) বা ধারনাকে বিজ্ঞানের সাথে সাংঘাষিক মনে হচ্ছে দেখে বিজ্ঞানকে ছুড়ে ফেলে দেয়ার প্রবণতা দেখা দেয়, যা ঠিক নয়। কেননা প্রাক কল্পনার ধারনাটি আসলে যে ধর্মের কোন বিষয় নয় সেটি বুঝতে হবে।

ড: জাকির নায়েক বলেন, আল্লাহর অস্তিত্ব বিষয়ে আমার লেকচারের এক অংশে আল্লাহর অস্তিত্বের পক্ষে আমি কুরআন ও বিজ্ঞান ব্যবহার করেছি অন্য অংশে যুক্তি ব্যবহার করেছি তৃতীয় অংশে আল্লাহর অস্তিত্ব না থাকলে কি হত সে যুক্তি দিয়েও আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ করেছি।

আলোচনাটির উপসংহারে শেখ ইয়াসির ক্বাদী বলেন যখনই আমাদের ছেলেমেয়েরা ধর্ম বিষয়ে কোন প্রশ্ন করবে তখন তাদেরকে নিরুৎসাহিত করলে বা সে প্রশ্ন উপেক্ষা করে জবাব দিতে না চাইলে নাস্তিকেরা তাদেরকে ভুল বুঝায়ে বিপথগামী করবে। অতএব এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে না জানলে জ্ঞানীদের সাহায্য নিতে হবে।

তবে সংশয়বাদ ও নাস্তিকতা থেকে কাউকে বাহির হয়ে আসতে হলে শুধু বিজ্ঞানের যুক্তি দিয়ে সে আস্তিকতার গন্তব্য স্থানে পৌছাতে পারবেনা যতক্ষণ সংশয়বাদ ও নাস্তিকতা যে আসলে একটি আধ্যাত্মিক রোগ এ বিষয়টি উপলব্ধিতে না আসে। আর ধর্মের নামে যারা বাড়াবাড়ি করে উগ্রতা ছড়ায় তারাও অন্য ধরণের আধ্যাত্মিক রোগে ভুগছে তাদের সংকীর্ণ বোধশক্তির কারণে। আর সেটি হচ্ছে মানুষের তার নিজস্ব মানবিক দূর্বলতা ও অক্ষমতার কারণে যা অতীতে যেমন ছিল এখনও আছে অনেক জনপদে সে জন্য ধর্মকে দুষ দেয়া যায় না। ধর্মকে বুঝতে হবে ধর্মের আদর্শ ও নীতি দিয়ে।

শেষ কথা হল মানুষের জীবনে আধ্যাত্মিকতা তার হৃদয়ের একটি অনুপম চাহিদা যা সঠিকভাবে পূরণ করতে পারলে মনে সঞ্চারিত হয় এক অনাবিল মানসিক প্রশান্তি যা বিশ্বাসের ছায়াতলেই সম্ভব অন্য কোথায় নয় তবে তা উপলব্ধি করতে না পারলে কিছু করা যাবে না।

Comments are closed.