( ২য় পর্ব)-
শয়তান কিভাবে তুচ্ছ একটি ঘটনাকে সাজিয়ে ধ্বংসযজ্ঞের সূচনা করে, তিলকে তাল করে তার উদাহরণ ছিল এই ঘটনাতে। ঘটনাটি এরকমঃ ল্যাম্প পোষ্টের গায়ে হেলান দিয়ে বসেছেন একজন ব্যক্তি, নাকের সর্দি ঝেড়ে ফেলে হাতটি মুছলেন ল্যাম্প পোষ্টে। একটু পরেই আরেকজন পান চিবোতে চিবোতে এসে বসলেন ল্যাম্প পোষ্টের কাছে। হাতের চুন ল্যাম্প পোষ্টে মুছতে গিয়ে প্রথম ব্যক্তির সর্দি মুছার জায়গায় আঙ্গুল মুছে আবার মুখে দিলেন। চুনের সাথে সর্দি মিশ্রিত এক বিশ্রী স্বাদ তার জিহ্বায় লাগার সাথে সাথে ‘ওয়াক থু’ বলে পাশের লোকের উপর চড়াও হলেন।
পাশের লোক নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করছেন। তখন ২য় ব্যক্তি বলছেন ”এখানে তো আর কেউ ছিল না- তাজা সর্দি তুমি ছাড়া এখানে আসবে কোত্থেকে?” বলেই আরও তেড়ে আসলেন। এ সময় শয়তান দূরে দাড়িয়ে ঘটনা দেখছিল। সে এলাকার এক ছ্যাচ্চর মাস্তান কে বুঝিয়ে সুঝিয়ে কিছু খাবার হাতে দিয়ে ঘটনাস্থলে পাঠালো। ৩য় ব্যক্তি (মাস্তান )ল্যাম্পপোষ্টের কাছে এসে খেতে খেতে ১ম এবং ২য় ব্যক্তির তর্ক শুনছিল। ঐ সময় একটি বড় মাছি সর্দি মিশ্রিত চুনের উপর বসে আবার উড়ে এসে মাস্তানের (৩য় ব্যক্তির) খাবারে বসলো। শয়তান সুযোগের অপেক্ষায় ছিল, দৌড়ে এসে কানে কানে মাস্তানের (৩য় ব্যক্তিকে ) বললো ”ওদের জন্যই তো তোমার সব খাবার নষ্ট হয়ে গেল, তুমি ওদেরকে ছেড়ে দিবে?” তৎক্ষণাত মাস্তান ১ম ও ২য় ব্যক্তির গালে কষে ২টি চড় লাগালো। অবস্থা তখন কন্ট্রোলের বাহির। দূরে থেকে শয়তান তৃপ্তির হাসি হাসলো, এতক্ষন তো সে এই সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিল, মুহুর্তেই তিনজনের (১ম , ২য় এবং ৩য় )তিন গ্রামের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে খবরটি পৌছে দিল শয়তান। লাঠি সোটা বন্দুক নিয়ে ৩ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ মুখোমুখী , মারামারিতে শত শত লোক হতাহত হলো। থানা পুলিশ আসলো। ল্যাম্প পোষ্টের তুচ্ছ ঘটনাটি শয়তানের প্ররোচনায় অত্র এলাকায় দীর্ঘ দিনের এক সামাজিক অশান্তির জন্ম দিল। শয়তান তার কাজের সফলতার জন্য তৃপ্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।
প্রিয় পাঠক শয়তানের ডায়রী’র এটি একটি ছোট্ট ঘটনা মাত্র। আমি মাঝে মধ্যে অনেক জটিল ঘটনা নিয়ে আমার এক বন্ধুর দ্বারস্থ হই। জগতের সকল কঠিন প্রশ্নের উত্তর তার কাছে খুব সহজেই পাওয়া যায় । আর যাই হোক বন্ধুটি যে কিছু জানে তা স্বীকার করতেই হয় । শয়তানের ডায়রীর কিছু প্রসঙ্গ নিয়ে তার জ্ঞানের গভীরতা দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি যা আগামী সংখ্যায় আলোচনা করবো।
চলবে —
প্রশ্ন হল শয়তানের ফাঁদ থেকে রক্ষার উপায় কি তা জানা দরকার।
বলেন তো বাংলাদেশে এখন শয়তান কার উপর ভর করেছে সবচেয়ে বেশী?
আমরা ছোট বেলায় একজন আরেক জনের মধ্যে আংগুল দিলে বলতাম- কি রে ভাই গুড় লাগাচ্ছো নাকি!
এই গুড় লাগানোর কাহিনীর সাথে আপনার কাহিনীর মিল দেখে পাচ্ছি!
গুড় লাগানোর কাহিনী হচ্ছে- শয়তান কখনও বনি আদমকে শান্তিতে থাকতে দিতে চায় না। তাই সময় ও সুযোগ বুঝে গুড় লাগিয়ে যায়।
এ রকম এক গুড় লাগানোর গল্প হচ্ছে-
এক এলাকার মানুষের মধ্যে পরস্পরের মধ্যে দারুন সম্প্রীতি ভাল বাসা বিরাজ করা দেখে শয়তানের তা ভাল লাগে নাই। তাই সে সেখানে অশান্তি সৃষ্টির জন্য পথ খুজতে থাকে।
এক দোকানে কাচের বৈয়ামের মধ্যে চকলেট চানাচুর ইত্যাদি পণ্য রাখাছিল। তো শয়তান ঐ বৈয়ামের গায়ে সামান্য একটু গুড় আংগুলের ডগা দিয়ে লাগিয়ে দিয়ে যায়। এই গুড়ের গন্ধে গুড় খাবার জন্য একটি পিপড়া সেখানে যায়। এই পিপড়া দেখে একটি টিকটিকি সে পিপড়াকে খেতে সেখানে যায়। এই অবস্থায় পাশের বাড়ির বেড়াল টিকটিকিকে দেখে তা শিকার করতে লাফ দিয়ে বৈয়ামের গায়ে আছড়ে পড়ে। আর তার ফলে ঐ বৈয়াম মাটিতে পড়ে ভেঙ্গে যায়। যার ফলে বৈয়ামের মালিক বিড়ালটিকে তাড়া করে লাঠি পেটা করে মেরে ফেলে। বিড়ালের মালিক তার বিড়ালকে মেরে ফেলতে দেখে সেও লাঠি নিয়ে এসে বৈয়ামের মালিককে পিঠাতে থাকে। আর এই বৈয়ামের মালিকে পক্ষে গ্রামের একদল আর বিড়ালের মালিকের পক্ষে গ্রামের আরেকদলের মধ্যে তমুল লড়াই বেধে যায়। এবং এই লড়াই থেকে আরো লড়াই, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তের তা বেড়ে যেতেই থাকে। আর শয়তান দূরে থেকে তা দেখে মজা পেতে থাকে। ধন্যবাদ।
আসলে সর্দি চুনের সাথে খাওয়া যদিও বাস্তবে হচ্ছে কিন্তু পড়ে বমির উদ্রেক হওয়াতে আমি এই কাহিনী উল্লেখ করতে হল। আশাকরি ভেবে দেখবেন। ধন্যবাদ।